আযান
আযান আরবি: أَذَان (অথবা আজান হিসেবে উচ্চারণ করা হয় যেমন: আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, এবং তুর্কমেনিস্তান, ইজান হিসেবে উচ্চারণ করা হয় তুরস্ক, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা), আজন হিসেবে উচ্চারণ করা হয় উজবেকিস্তান, মুয়াজ্জিন কর্তৃক প্রার্থনার উদ্দেশ্য দিনের নির্ধারিত সময়ে ৫ বার আহবান করাকে আযান বলা হয়। সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন।[1] হয়।ʾআযান শব্দের মূল অর্থ দাড়ায় أَذِنَ ডাকা,আহবান করা। যার মূল উদ্দেশ্য হল অবগত করানো। এই শব্দের আরেকটি বুৎপত্তিগত অর্থ হল ʾআজুন। (أُذُن), যার অর্থ হল "শোনা"। পবিত্র কুরআনে মোট পাঁচ স্থানে أذان শব্দটি এসেছে । এর মহাত্ম্য হচ্ছে আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে । তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান ।
ইসলাম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ: |
|
আরো দেখুন
|
![]() |
আরবি |
أَذَان |
অক্ষরীকরণ |
aḏān, আযান, আজান |
অনুবাদ |
নামাজের জন্য আহ্বান |
আযানের প্রচলন
আযানের সময়
প্রতি দিন-রাতে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার আযান দেওয়া হয়। আর আযান তখনই দেওয়া হয় যখন নামাযের সময় হয়। নীচে আযানের সময় দেওয়া হল: ১। ফজর:সবহে সাদিক উদিত হলে। সূর্য পূর্ব আকাশে উদিত হওয়ার আগ মুহূর্তে । ২। যোহর: সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে গেলে । ৩। আছর:সূর্যের প্রখরতা থাকতে । ৪। মাগরিব:সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে । ৫। এশা: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতেরএক তৃতীয়াংশে । [2]
হযরত বেলালের আযান
হযরত বেলাল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আযান দেন। তার আযানের ধ্বনি শুনে মদীনাবাসী একত্র হয়ে মসজিদ-এ-নববীতে আসেন সালাত (নামায) আদায় করার জন্য। রাসুল সা. এর নির্দেশে তিনিই প্রথম মদিনার মসজিদে নববীতে আযান প্রদান করেন । উল্লেখ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আযান ও একামত ছাড়া নামাজ পড়েছেন। [3]
আযানের কথা বা বাক্যসমূহ
সুন্নি[4][5][6][7]
আবৃত্তি | আরবি | প্রতিবর্ণীকরণ | অনুবাদ | বর্ণ |
---|---|---|---|---|
৪ বার* | الله اكبر | আল্লাহু আকবার | আল্লাহ সর্বশক্তিমান | সুন্নী এবং শিয়া |
২ বার | اشهد ان لا اله الا الله | আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ | আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই | সুন্নী এবং শিয়া |
২ বার | اشهد ان محمد الرسول الله | আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ | আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স) আল্লাহর প্রেরিত দূত | সুন্নী এবং শিয়া |
২ বার | حي على الصلاة | হাইয়া আলাস সালা | নামাজের জন্য এসো | সুন্নী এবং শিয়া |
২ বার | حي على الفلاح | হাইয়া আলাল ফালা | সাফল্যের জন্য এসো | সুন্নী এবং শিয়া |
২ বার | الصلاة خير من النوم | আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম | ঘুম হতে নামাজ উত্তম** (Fajr prayer only) | সুন্নি |
২ বার | حي على خير العمل | Hayya 'alā khayril-'amal | Make haste towards the best deed | শিয়া |
২ বার | الله اكبر | আল্লাহু আকবার | আল্লাহ্ মহান | সুন্নী এবং শিয়া |
১ বার** | لا اله الا الله | লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ | আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই | সুন্নী এবং শিয়া |
ফযরের নামাজের আযান
ফযরের নামাজের আযানে একটু ব্যতিক্রম আছে। আর তা হলো এই যে আযানের শেষভাগে "হাইয়া আলাল ফালাহ" দুই বার বলার পরে "আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম(الصلوۃ خیر من النوم)" বাক্যটি দুই বার বলতে হবে। এর পর যথারীতি "আল্লাহু আকবার", "আল্লাহু আকবার", "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে আযার শেষ করতে হবে।
জুমার নামাজের আযান
জুমার নামাজের আযান দুইবার দিতে হয়। প্রথমত নামাযের ওয়াক্ত হলে মুয়াযযিন প্রথমবার আযান দেবেন। আবার মূল খুৎবা শুরুর আগে, ইমাম তথা খতীব মিম্বরে আসীন হলে ঠিক তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুআযযিন দ্বিতীয়বার আযান দিবেন, একে বলা হয় সা-নী আযান। খুৎবা শেষে নামাজ শুরুর প্রাক্কালে মুআযযিন যথারীতি ইকামত দিবেন।
আযানের দোয়া
আযানের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব । মুয়াযযিন যখন আযানের এক-একটি বাক্য বলা শেষ করবেন তখন শ্রোতা তার উত্তরে একই বাক্য পাঠ করবেন। আযান মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। এ সময় কোনো কাজ করা বা কথা বলাও নিষেধ। এমনকি এসময় কুরআন শরীফ পাঠ করা স্থগিত রাখতে হয়। আযান শেষে দরুদে ইবরাহীম বা দরুদ শরীফ পড়ে এই দোয়া পড়তে হয়। আযানের দোয়া হলো:
আরবিঃ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ سَيّدِنَا مُحَمَّدَاً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُودَاً الَّذِي وَعَدْتَهُ وَارْزُقْنَا شَفَا عَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَتِه إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বাহাযিহিদ দাওয়াতিত্তাম্মাহ ওয়া সালাতি ক্বায়িমা, আতি সায়্যিদিনা মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলা ওয়াদ্দারাজাতার রাফিয়াহ, ওয়াব আসহু মাক্কামাম্মাহমুদানিল্লাযি ওয়া আত্তাহ, ওয়ার যুক্বনা শাফা'আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- মিরআত-২/৩৩৪ পৃষ্ঠা।
- ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
- রাহীখুল মাখতুম।
- Sahih Bukhari 89.329 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
- Sahih Muslim : Book 020: Number 4477, 4478, 4480, 4481, 4482, 4483 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ আগস্ট ২০১১ তারিখে
- Sunan Abu Dawood : Book 36: Number 4266 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে
- Sunan al-Tirmidhi (Arabic)
Chapter of Fitan,
2:45 (India) and 4:501 Tradition # 2225 (Egypt)
Hadith #2149 (numbering of al-'Alamiyyah)