আল্লাহ্
আল্লাহ্ (আরবি: الله) একটি আরবি শব্দ, ইসলাম ধর্মানুযায়ী যার দ্বারা "বিশ্বজগতের একমাত্র স্রষ্টা এবং প্রতিপালকের নাম" বোঝায়।[1][2][3] "আল্লাহ" শব্দটি প্রধানতঃ মুসলমানরাই ব্যবহার করে থাকেন। মূলতঃ “আল্লাহ্” নামটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার সাধারণভাবে বহুল-ব্যবহৃত নাম; এটি ছাড়াও মুসলমানরা তাকে আরো কিছু নামে সম্বোধন করে থাকে যেমন খোদা। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের কথা উল্লেখ আছে; তার মধ্যে কয়েকটি হল: সৃষ্টিকর্তা, ক্ষমাকারী, দয়ালু, অতিদয়ালু, বিচারদিনের মালিক, খাদ্যদাতা, বিশ্বজগতের মালিক প্রভৃতি।
আল্লাহ তায়ালা |
---|
সিরিজের অংশ |
![]() |
তালিকা
|
|
তবে আরবের খ্রিস্টানরাও প্রাচীনকাল থেকে "আল্লাহ" শব্দটি ব্যবহার করে আসছেন। বাহাই, মাল্টাবাসী, মিজরাহী ইহুদি এবং শিখ সম্প্রদায়ও "আল্লাহ" শব্দ ব্যবহার করে থাকেন।[4][5]
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা'আলার আসমাউল হুসনা হলো মোট ৯৯ টি| আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে এ সকল নামের মাধ্যমে তার নিকট দোয়া প্রার্থনা করতে আদেশ করেছেন|[6][7] যে ব্যক্তি আল্লাহ্র এ গুণবাচক ৯৯টি নাম মুখস্হ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে| অন্য এক বর্ণনায় আছে, 'যে ব্যক্তি ৯৯টি গুণবাচক নাম মুখস্থ করবে এবং সর্বদা পড়বে, সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে|' ---সহীহ মুসলিম[8][9]
শব্দের ইতিহাস

১. আলিফ
২. হামযাতুল ওয়াসল (همزة وصل)
৩. লাম
৪. লাম
৫. তাশদীদ (شدة)
৬. খাড়া আলিফ (ألف خنجرية)
৭. হা'
"আল্লাহ" শব্দটি আরবি "আল" (বাংলায় যার অর্থ সুনির্দিষ্ট বা একমাত্র) এবং "ইলাহ" (বাংলায় যার অর্থ ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা) শব্দদ্বয়ের সম্মিলিত রূপ, বাংলায় যার অর্থ দাড়ায় "একমাত্র সৃষ্টিকর্তা" বা "একক ঈশ্বর"।[10]। একই শব্দমূল-বিশিষ্ট শব্দ অন্যান্য সেমিটিক ভাষাতেও পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, বলা যায়, হিব্রু এবং আরামাইক ভাষার কথা। প্রাচীন হিব্রু ভাষায় শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বহুবচন এলোহিম אֱלֹהִ֔ים (কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে একবচন) হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। আর আরামাইক ভাষায় শব্দটির রূপ এলাহা ܐܠܗܐ বা আলাহা ܐܲܠܵܗܵܐ। কিন্তু এই শব্দটির অর্থ এই সব ভাষাতেই সমার্থক, "একক ঈশ্বর"। গুরু গ্রন্থ সাহিব অর্থাৎ শিখদের ধর্মগ্রন্থে "আল্লাহ" (ਅਲਹੁ) শব্দটি ৩৭বারের চেয়ে বেশি বার ব্যবহৃত হয়েছে।[11]
ইসলাম-পূর্ব আরবেও আল্লাহ নামের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তা কেবল সৃষ্টিকারী দেবতা এবং খুব সম্ভবতঃ সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা বুঝাতে ব্যবহার করা হতো।[12][13] আল্লাহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন ধারণা থাকলেও পৃথিবীর প্রধান তিনটি ধর্মের অনুসারীদের অর্থাৎ মুসলমান, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের কাছে আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, অদ্বিতীয়, একমাত্র অভিভাবক এবং একমাত্র আরাধনাযোগ্য, একই সঙ্গে আদি-অন্তহীন, অবিনশ্বর এবং সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
ইসলাম-পূর্ব আরবে পৌত্তলিক আরবরা একশ্বরবাদী ছিল না; তারা আল্লাহকে একক এবং অদ্বিতীয় মনে করতো না, বরং তার সাথে সঙ্গী-সাথী, এবং পুত্র-কন্যার ধারণা সংযুক্ত করেছিলো, যা ইসলামী যুগে সমূলে উৎপাটন করা হয়। ইসলামে আল্লাহ শব্দটি দ্বারা এক, অদ্বিতীয় এবং অবিনশ্বর ঈশ্বরের দিকে ইঙ্গিত করা হয়, এবং সমস্ত স্বর্গীয় গুণবাচক নামকে সেই একক সত্তার নাম বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[14] ইসলামী ভাষ্যনুযায়ী, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, সমস্ত-জগৎের-সৃষ্টিকর্তা, সর্বত্র বিরাজমান, একক অধীশ্বর। এই কারণে বর্তমান-যুগের আরব-খ্রিস্টানেরা মুসলিমদের থেকে পার্থক্য সৃষ্টি করতে Allāh al-ʾAb (الله الأب, "God the Father" (অর্থাৎ, ঈশ্বর-পিতা) শব্দ ব্যবহার করে।[15] এমনভাবে কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ শব্দার্থ, এবং হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত আল্লাহ শব্দের অর্থে মিল এবং অমিল দুই-ই আছে।[16]
ইউনিকোডে আরবি আল্লাহ শব্দের জন্য একটি বিশেষ কোড, ﷲ = U+FDF2, সংরক্ষিত রাখা আছে।[17] অনেক আরবি ফন্টেও ﷲ শব্দটিকে একটি অখণ্ড অক্ষর হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে।[18]



আরবিতে ব্যবহার
ইসলাম-পূর্ব আরব
ইসলাম-পূর্ব আরবে, মক্কাবাসী পৌত্তলিকরা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা দেবতা হিসেবে ধারণা করতো, এবং খুব সম্ভবতঃ সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা হিসেবে।[19] কিন্তু একক এবং অদ্বিতীয় ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে নয়। বরং পৃথিবী-সৃষ্টিকারী এবং বৃষ্টি-দানকারী সত্তা হিসেবে। আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ তাদের ধারণায় খুব পরিষ্কার ছিল না।[10] তাদের ধারণা ছিলো যে, আল্লাহর আরো সঙ্গী-সাথী আছে, যাদেরকে তারা অধীনস্থ দেবতা হিসেবে পূজা করতো। তারা আরো ধারণা করতো যে, আল্লাহর সঙ্গে জ্বিনজাতির আত্মীয়তা-ধরনের কোনো সম্পর্ক আছে[20] তারা আল্লাহর পুত্র বলেও সাব্যস্থ করেছিলো [21] এবং তৎকালীন আঞ্চলিক দেবতা লা'ত, উজ্জা, মানাতকে তারা আল্লাহর কন্যা সাব্যস্থ করেছিলো [22]। খুব সম্ভবতঃ, মক্কার আরবরা আল্লাহকে ফেরেশতা বা স্বর্গীয় দূত হিসেবে ধারণা করতো।[23][24] যার কারণে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তারা আল্লাহ ডাকতো।[24][25] এমনকি নিজেদের নামকরণেও তারা আব্দুল্লাহ(অর্থাৎ, আল্লাহর বান্দা বা গোলাম) শব্দটি ব্যবহার করতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মুহাম্মাদ(স.) এর পিতার নাম ছিলো ʿAbd-Allāh(عبدالله ) আব্দুল্লাহ'[24]।
ইসলাম
ইসলামিক ভাষ্যমতে, আল্লাহ হলো একমাত্র প্রশংসাযোগ্য ও সর্বশক্তিমান সত্তার প্রকৃত নাম,[26] এবং তার ইচ্ছা এবং আদেশসমূহের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।[27] "তিনি এক এবং অদ্বিতীয় , সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একক সৃষ্টিকর্তা, এবং সমগ্র মানবজাতির বিচারক"[4][27] "তিনি একক (wāḥid) এবং অদ্বিতীয় (ʾaḥad), পরম দয়ালু এবং সর্বত্র বিরাজমান"[27] কুরআনের "আল্লাহর বাস্তব সত্তা, তার অপরিমেয় রহস্য, বিভিন্ন নাম, এবং সৃষ্টিজগতের জন্য তিনি যা করেন" তার ঘোষণা দেয়।[27]
ইসলামিক ভাষ্যমতে, আল্লাহর গুণবাচক অনেক নাম রয়েছে, যার সংখ্যা কুরআন ও হাদিস মিলিয়ে একশতেরও অধিক, যাদের কে একত্রে আসমাউল হুসনা (অর্থাৎ, সুন্দরতম নামসমূহ) বলা হয়। তন্মধ্যে, একটি প্রসিদ্ধ হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর ৯৯ টি নামের একটি বিশেষ তালিকা আছে, (al-ʾasmāʾ al-ḥusnā lit. meaning: "The best names") যার একেকটি আল্লাহর এক-একটি গুন বা বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে।[4][28] এবং এই সব কয়টি নামই একক সত্তা আল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করে, যা কিনা তার সর্বপ্রধান নাম।[14] এই সমস্ত নামসমূহের মাঝে, সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত হলো, "পরম দয়ালু" (আর-রহমান), "অতিশয় মেহেরবান" (আর-রহীম) এবং "অতিশয় ক্ষমাশীল’’ (গাফুর) ।[4][28]
মুসলিমগন ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পিত কাজের ব্যাপারে আলোচনা করলে তার আগে বা পরে ইনশাল্লাহ (অর্থাৎ "যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন") কথাটি ব্যবহার করেন[29]। ইসলামিক পরিভাষায়, যে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে একজন মুসলিমের বিসমিল্লাহ (অর্থাৎ "আল্লাহর নামে(শুরু করছি)") বলে শুরু করা উচিত, যাতে করে সেই কাজটা আল্লাহ পছন্দ করেন, এবং তাতে সাহায্য করেন[30]।
এগুলো ছাড়াও সবসময় আল্লাহকে অধিক স্মরণ করার উপায় হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে আল্লাহর প্রশংসামূলক আরও কিছু বাক্য বহুল প্রচলিত, তন্মধ্যে "সুবহানাল্লাহ" (সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর), আলহামদুলিল্লাহ(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর), প্রধান কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) এবং আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সুমহান)।[31] সূফী সাধকদের মধ্যে একটি বহুল-প্রচলিত সাধনা হলো, আল্লাহর যিকর, যেটায় সূফীরা নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাস কে নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে মনোযোগ সহকারে আল্লাহ শব্দ অথবা তার কোনো এক বা একাধিক গুণবাচক নাম একাধারে অজস্রবার পাঠ করতে থাকে।[32]
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, "আল-কুরআন জোরালোভাবে ঘোষণা করেছে, মুসলিমরা বিশ্বাস করে, এবং ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত করেছেন যে, মুহাম্মাদ এবং তাঁর অনুসারীরা সেই একই উপাসনা করতেন, যার উপাসনা ইহুদিরা করতো (29:46)। এবং কুরআনের আল্লাহ এবং ইব্রাহিমের আল্লাহ এক এবং অভিন্ন"।[16]।
ইসলামিক ভাষ্যমতে আল্লাহর প্রধান কয়েকটি নাম
আল্লাহর নাম (আরবি) | অর্থ | কুরআনে যেখানে আছে |
---|---|---|
আল্লাহ | আল্লাহ | ১:১,৩:১৮, ৫:১০৯, ৬:১২৪, ৭:১৮০, ৮:৪০, ১৬:৯১, ২০:৮, ৫৭:৫, ৬৫:৩, ৭৪:৫৬, ৮৫:২০ |
আল খবীর | যিনি গোপন ও প্রকাশ্য, ঘটিত ও অঘটিত সবকিছু সম্বন্ধে অবহিত আছেন | ২:২৩৫, ১৭:৪৪, ২২:৫৯, ৩৫:৪১ |
আস সালাম | ত্রুটিমুক্ত, সম্পূর্ণ, শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত | ৫৯:২৩ |
আল ওয়াদুদ | যিনি সীমাহীন ভাবে ভালোবাসেন এবং ভালোবাসা পান | ১১:৯০, ৮৫:১৪ |
আল মুমিন | বিশ্বস্ত, ওয়াদা পালনকারী | ৫৯:২৩ |
আল হক্ক | সত্য | ৬:৬২, ২২:৬, ২৩:১১৬, ২৪:২৫ |
আল হাই | চিরঞ্জীব | ২:২৫৫, ৩:২, ২৫:৫৮, ৪০:৬৫ |
আল গণী | যার কোন অভাব নেই | ৩:৯৭, ৩৯:৭, ৪৭:৩৮, ৫৭:২৪, ৯:২৮ |
আল মুগণী | যিনি সব ধরনের অভাব দূর করেন | ৯:২৮ |
আস সাবুর | ধৈর্য্যধারণকারী | |
আল গাফুর | অসীম ক্ষমাশীল | |
আল মুইয | সম্মান ও মর্যাদা দানকারী | |
আল দার | শাস্তি দানকারী | |
আর রাহমান | অপার করুণাময় | |
আল কারিম | অসীম দাতা | |
আস সুবহান | সর্বত্রুটিমুক্ত বিধায় পরম পবিত্র |
খ্রিস্টধর্ম
আসিরীয় খ্রিস্টানদের ভাষায়, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার জন্য আরামাইক শব্দ হলো ʼĔlāhā, বা en:Alaha। খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা সহ আব্রাহামীয় সকল ধর্মের আরবি-ভাষী লোকই, ঈশ্বরকে বুঝাতে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করে থাকে।[5] বর্তমান যুগের আরবি-ভাষী খ্রিস্টানদের ব্যবহারের জন্য ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করতে আল্লাহ ব্যতীত উপযোগী অন্য কোনো শব্দই নেই।[15] (এমনকি আরবি-বংশোদ্ভূত মাল্টাবাসী, যাদের অধিকাংশই রোমান ক্যাথলিক, ঈশ্বরকে বুঝাতে Alla(আল্লা) শব্দ ব্যবহার করে)। তবে আরব খ্রিস্টানরা অনেক সময়ই তাদের ত্রিত্ববাদ অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা বুঝাতে Allāh al-ʾab (الله الأب) অর্থাৎ, পিতা ঈশ্বর, ঈসা বা জিসাসকে বুঝাতে Allāh al-ibn (الله الابن) অর্থাৎ, পুত্র ঈশ্বর, এবং জিবরাঈল বা গেব্রিলকে বুঝাতেAllāh ar-rūḥ al-quds (الله الروح القدس) অর্থাৎ,পবিত্র আত্মা কথাগুলো ব্যবহার করে। (খ্রিস্টান ধর্ম-বিশ্বাস অণুযায়ী ঈশ্বরের ধারণার বিস্তারিতের জন্য দেখুন খ্রিস্টান ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা)।
লেখার সময় আরব খ্রিস্টানদের মধ্যে দুই ধরনের প্রচলন পাওয়া যায়, মুসলিমদের থেকে গৃহীত বিসমিল্লাহ এবং অষ্টম-শতক থেকে নিজেদের ত্রিত্ববাদই ধারণার বিসমিল্লাহ[33]। মুসলিমদের থেকে গৃহীত বিসমিল্লাহর অর্থ করা হয়, আল্লাহর নামে, যিনি পরম দয়ালু এবং অতিশয় মেহেরবান। অপরপক্ষে, ত্রিত্ববাদই বিসমিল্লাহর অর্থ করা হয়, এক ঈশ্বরের নামে যিনি পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা। তবে সিরিয়ান, ল্যাটিন বা গ্রিক প্রার্থনার মধ্যে এক কথাটি যুক্ত করা হয় না। এই এক কথাটি যুক্ত করা হয় ত্রিত্ববাদের এক ঈশ্বর ধারণাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এবং কিছুটা মুসলিমদের নিকট গ্রহণযোগ্য রূপ দেয়ার জন্য[33]।
কারো মতে, ইসলাম-পূর্ব আরব-এ কিছু কিছু আরব খ্রিস্টান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহর সম্মানে কাবায় যেত, তবে তৎকালীন কাবা ছিলো মূর্তি পূজারীদের প্রার্থনাস্থল।[34]
ইহুদীধর্ম
যেহেতু আরবি এবং হিব্রু খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত সেমিটিক ভাষা, এটি বহুল প্রচলিত মতামত যে, আল্লাহ(আরবি শব্দমূল: ইলাহ) এবং বাইবেলে বর্ণিত ইলোহিম এর আদিশব্দ একই। ইহুদি ধর্মগ্রন্থে, ইলোহিম শব্দকে ঈশ্বরের (ইহুদি মতানুযায়ী যাকে ইয়াওহে বা জেহোবা বলা হয়) একটি বর্ণনামূলক নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার একই সাথে শব্দটিকে সময়ের বিবর্তনে এক সময়ে পৌত্তলিকদের দেবতাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যান্য ভাষায় ব্যবহার
ইংরেজি ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান ভাষায়
ইসলাম |
---|
এর ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ: |
|
আরো দেখুন
|
![]() |
ইংরেজি ভাষায় "আল্লাহ" শব্দের ব্যবহার খুব সম্ভবত ১৯ শতকে শুরু হওয়া তুলনামূলক ধর্মালোচনার গবেষণার প্রভাবে যুক্ত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, টমাস কার্লাইল (১৮৪০) কখনও কখনও আল্লাহ শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তা গড থেকে আলাদা কিছু হিসেবে নয়। তবে তিনি তার রচিত (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত) মুহাম্মাদের জীবনতে সর্বদা আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যদিও তার বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, মুহাম্মাদের বর্ণিত আল্লাহ ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের বর্ণিত ঈশ্বরের থেকে ভিন্ন।[35]
কিছু কিছু ভাষা আছে যেগুলোতে ঈশ্বরকে বুঝাতে আল্লাহ শব্দটিকে ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু কিছু কিছু প্রচলিত কথার মধ্যে তা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, আন্দালুস-এ সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনামলের কারণে স্প্যানিশ ভাষায় ojalá এবং পর্তুগীজ ভাষায় oxalá শব্দগুলো পাওয়া যায়, যেগুলো মূলতঃ আরবি (إن شاء الله)(ইনশাল্লাহ) কথা থেকে উদ্ভূত। এই কথাটির আক্ষরিক অর্থ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন(অনেকটাই আশা করি বুঝাতে)। [36]
জার্মান কবি সিগফ্রিড মালমান সর্বকর্তৃত্ত্বময় ঐশ্বরিক শক্তিকে নিয়ে লেখা কবিতার শিরোনাম হিসেবে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তিনি কতটুকু "ইসলামিক" আল্লাহকে বুঝাতে চেয়েছেন তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
মুসলিমরা সাধারণত ইংরেজিতে Allah শব্দটিকে সরাসরি ব্যবহার করে থাকেন[37]।
ইন্দোনেশিয়ান এবং মালয়শিয়ান ভাষায়
অন্যান্য ভাষা এবং বর্ণমালায়
মুদ্রণবিদ্যা

ইউনিকোড
আরবি ভাষার ইউনিকোড সাইনে আল্লাহ শব্দের কোড হল U+FDF2 এবং ইরানের ফারসি ভাষার কোড হল U+262B।
আল্লাহর বৈশিষ্ট্যসমূহ
ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহর কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:[38][39][40][41][42]
- আল্লাহর কোন অংশীদার নেই, কোন সমকক্ষ নেই এবং কোন প্রতিদ্বন্দ্ব্বী নেই;
- তার কোন সন্তান বা স্ত্রী নেই এবং তিনি কারও সন্তান নন;
- তার উপাসনা অথবা সহায়তা প্রার্থনার জন্যে কাউকে বা কিছুর মধ্যস্থতার প্রয়োজন নাই;
- তার কাউকে উপাসনার প্রয়োজন হয় না;
- তিনি সার্বভৌম অর্থাৎ কারো নিকট জবাবদিহি করেন না;
- তিনি কোন ব্যক্তি বা জিনিসের উপর নির্ভরশীল নন, বরং সকলকিছু তার উপর নির্ভরশীল;
- তিনি কারো সহায়তা ছাড়াই সবকিছু সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন;
- কিছুই তার উপরে বা সঙ্গে তুলনীয় নয়;
- বিদ্যমান কিছুই নেই যা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর পরাধীন নয়;
- কেউ প্রতিরোধ করতে পারেন না, যা আল্লাহ প্রদান করে, আর কেউ প্রদান করতে পারেনা যা তিনি প্রতিরোধ করে;
- শুধুমাত্র আল্লাহই কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে, এই ক্ষমতা অন্য কেউ রাখে না;
- তার কোনও অভাব নেই, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন;
- নিদ্রা, তন্দ্রা ও ক্লান্তি আল্লাহকে স্পর্শ করে না;
- তার অনুরূপ কেউ নেই
আরও দেখুন
- ঈশ্বর
- সুন্দরতম নাম ( আসমাউল হুসনা )
- বিশ্বাস ( তাওহীদ )
- স্মরণ ( যিকর )
- ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ
- কাবা
- প্রত্যাদিষ্ট বাণীবাহক ( রাসূল ) বাণীপ্রচারক ( নবী) ইসলামের নবীগণ
তথ্যসূত্র
- "God"। ইসলাম: ঈমানের সাম্রাজ্য (ইংরেজি ভাষায়)। পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস। ২০১৪-০৩-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১০। একের অধিক
|ওয়েবসাইট=
এবং|কর্ম=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য) - "Islam and Christianity", Encyclopedia of Christianity (2001): Arabic-speaking Christians and Jews also refer to God as Allāh.
- গারডেট, এল.। বিয়ারম্যান, পি.; বিয়ানকুইস, টিএইচ.; বসওর্থ, সি.ই.; ভ্যান ডনজেল, ই.; হাইনরিচ, ডাব্লিউ.পি., সম্পাদকগণ। "Allah"। brillonline.com (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিল অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০০৭।
- আধুনিক মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিশ্বকোষ, আল্লাহ
- কলম্বিয়া এনসাইক্লোপিডিয়া, আল্লাহ
- সাঈদ আবদুল্লাহ্ , The Qur'an: An Introduction, pg. 63. London: Routledge, 2008. আইএসবিএন ৯৭৮১১৩৪১০২৯৪৫
- ইবনে্, তামিয়াহ। The Goodly Word: al-Kalim al-Ṭayyib। Islamic Texts Society। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 1-903682-15-0।
- সহীহ মুসলিম, ৩৫:৬৪৭৫ (ইংরেজি)
- ইবনে মাজাহ, Book of Duʿa; মালিক ইবনে আনাস, মুয়াত্তা ইমাম মালিক.
- L. Gardet, Allah, Encyclopaedia of Islam
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
- L. Gardet, "Allah", Encyclopedia of Islam
- Smith, Peter (২০০০)। "prayer"। A concise encyclopedia of the Bahá'í Faith। Oxford: Oneworld Publications। পৃষ্ঠা 274–275। আইএসবিএন 978-1-85168-184-6।
- Murata, Sachiko (১৯৯২)। The Tao of Islam : a sourcebook on gender relationships in Islamic thought। Albany NY USA: SUNY। আইএসবিএন 978-0-7914-0914-5।
- Lewis, Bernard; Holt, P. M.; Holt, Peter R.; Lambton, Ann Katherine Swynford (১৯৭৭)। The Cambridge history of Islam। Cambridge, Eng: University Press। পৃষ্ঠা 32। আইএসবিএন 978-0-521-29135-4।
- F.E. Peters, Islam, p.4, Princeton University Press, 2003
- Unicode Standard 5.0, p.479,492
-
- Arabic fonts and Mac OS X ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ মার্চ ২০০৮ তারিখে
- Programs for Arabic in Mac OS X ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে
- See Qur'an 13:16 ; 29:61–63; 31:25; 39:38)
- See Qur'an 37:158)
- See Qur'an (6:100)
- See Qur'an (53:19–22 ; 16:57 ; 37:149)
- See Qur'an (53:26–27)
- Gerhard Böwering, God and his Attributes, Encyclopedia of the Qur'an
- See Qur'an 6:109; 10:22; 16:38; 29:65)
- Böwering, Gerhard, God and His Attributes, Encyclopaedia of the Qurʼān, Brill, 2007.
- Britannica Concise Encyclopedia, Allah
- Bentley, David (১৯৯৯)। The 99 Beautiful Names for God for All the People of the Book। William Carey Library। আইএসবিএন 978-0-87808-299-5। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Gary S. Gregg, The Middle East: A Cultural Psychology, Oxford University Press, p.30
- Carolyn Fluehr-Lobban, Islamic Society in Practice, University Press of Florida, p.24
- M. Mukarram Ahmed, Muzaffar Husain Syed, Encyclopaedia of Islam,Anmol Publications PVT. LTD, p.144
- Carl W. Ernst, Bruce B. Lawrence, Sufi Martyrs of Love: The Chishti Order in South Asia and Beyond, Macmillan, p.29
- Thomas E. Burman, Religious Polemic and the Intellectual History of the Mozarabs, Brill, 1994, p.103
- Marshall G. S. Hodgson, The Venture of Islam: Conscience and History in a World Civilization, University of Chicago Press, p.156
- William Montgomery Watt, Islam and Christianity today: A Contribution to Dialogue, Routledge, 1983, p.45
- Islam in Luce López Baralt, Spanish Literature: From the Middle Ages to the Present, Brill, 1992, p.25
- F. E. Peters, The Monotheists: Jews, Christians, and Muslims in Conflict and Competition, Princeton University Press, p.12
- Hossein Nasr The Heart of Islam, Enduring Values for Humanity (April., 2003), pp 3, 39, 85, 27–272
- "The Noble Qur'an - القرآن الكريم"। quran.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-২৫।
- "My Mercy Prevails Over My Wrath"। www.onislam.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-০৪।
- "Surah Yunus - The Noble Qur'an - القرآن الكريم"। quran.com।
- "The Ninety Nine Attributes of Allah"। al-islam.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-৩১।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিঅভিধানে আল্লাহ শব্দটি খুঁজুন। |
![]() |
উইকিউক্তিতে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত উক্তি আছে:: আল্লাহ |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্স সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে: |
- Names of Allah with Meaning on Website, Flash, and Mobile Phone Software
- Concept of God (Allah) in Islam
- The Concept of Allāh According to the Qur'an by Abdul Mannan Omar
- Allah, the Unique Name of God
- Typography