খিলাফত

খিলাফত (আরবি: خلافة khilāfa) হল সরকারের ইসলামী রুপ যা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক একতার প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থার সরকার প্রধানকে খলিফা বলা হয়। [1][2]

খলীফা

খলীফা (আরবি: خليفة) শব্দটির আভিধানিক অর্থ উত্তরাধিকারী, প্রতিনিধিত্বকারী, সেনাপ্রধান। ইসলামী পরিভাষায় খলীফা হলেন এমন ব্যক্তি যিনি যাবতীয় বিষয়ে শরীআত অনুযায়ী সমস্ত উম্মাতকে পরিচালিত করেন। ইসলামী রাষ্ট্রে খলীফা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর, শাসক, নেতা, [কাজি|কাযী] নিযুক্ত করেন।

খলিফা হওয়ার শর্তাবলি

শর্তগুলোর প্রধান কয়েকটি হল:

  • মুসলিম হওয়া
  • প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া
  • নেতৃত্ব গ্রহণের প্রতি আগ্রহ না থাকা
  • পুরুষ হওয়া
  • স্বাধীন হওয়া
  • ন্যায়পরায়ণ হওয়া
  • বিবেকসম্পন্ন হওয়া
  • জ্ঞান (ইলম) থাকা
  • আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারি হওয়া
  • উম্মাহ দরদী ও কাফেরদের সাথে আপোষহীন।

কুরআনে উল্লেখ

কুরআনে নবী দাউদকে খিলাফাত দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,

"হে দাঊদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার করো আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।"

খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পদ্ধতি

  1. শূরা পরিষদের দ্বারা নিযুক্ত হওয়া
  2. পূর্বের খলিফা দ্বারা নিযুক্ত হওয়া

বাইআত

ইসলামে বাই'আত হল আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়া[টীকা 1] খলিফার আনুগত্য করার উপার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।

খলিফাকে অপসারণ

যেসব কারণে খলিফাকে অপসারণ করা হয়:

  1. কুফরী করলে বা ইসলাম পরিত্যাগ করলে
  2. সালাত পরিত্যাগ করলে বা সালাতের প্রতি আহ্বান পরিত্যাগ করলে
  3. আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন না করলে
  4. বিবেকবুদ্ধি লোপ পেলে বা শারীরিকভাবে অক্ষম হলে

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা খলিফাকে অপসারণ করে নতুন খলিফা নিযুক্ত করবেন।

বিদ্রোহ

সুস্পষ্ট কুফরে লিপ্ত শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মাধ্যমে বিদ্রোহ করা ইসলামে বৈধ যদি সামর্থ থাকে, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।[3]

ইসলামী খিলাফাতের ইতিহাস

খোলাফায় রাশিদুনের সময়ের সর্বোচ্চ বিস্তার
  ৬২২ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।
   ৬৩২ থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাশিদুন খিলাফতের অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।
  ৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উমাইয়া খিলাফতের অধীনে ইসলামের সম্প্রসারণ।

৬২২ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে খেলাফতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তার ইন্তেকালের পর পরবর্তী খলিফা সাহাবী হযরত আবু বকর (রা) নির্বাচিত হন এবং ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিদুন খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর সাহাবী মুয়াবিয়া (রা) কর্তৃক উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়।উমাইয়া খিলাফতের পর আব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয়।[4][5] ১২৫৮ সালে মঙ্গলদের আক্রমণে খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ ধ্বংস হয় ও খেলাফত বিলুপ্ত হয়। মিশরের মামলুক শাসকদের দ্বারা পুনরায় আব্বাসীয় খেলাফত পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়।এরপর ১৫১৭ উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সেলিম কাছে মিশরের আব্বাসী খলিফা কর্তৃক খেলাফত হস্তান্তরিত হলে উসমানীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়[6] যদিও প্রথম মুরাদ (১৩৬২-১৩৮৯)[7] সালে মামলুক সালতানাতের বৈধ দাবিদার না থাকায় খিলাফাতের দাবি করে। ১৯০৯ সালে তরুণ তুর্কি বিপ্লব এর মাধ্যমে খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ অপসারণ এবং ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মিত্র বাহিনী ও আরব বিদ্রোহ জাতীয়তাবাদীদের হাতে উসমানী খেলাফত বিলুপ্তির মুখে পড়ে। ১৯২৪ সালে সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে নির্বাসিত করে কামাল আতাতুর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত বিলুপ্ত করে।

আরও দেখুন

টীকা

  1. খলিফা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার আদেশ করলে তা মানা বৈধ নয়।

উপরন্তু পড়ুন

তথ্যসূত্র

  1. Kadi, Wadad; Shahin, Aram A. (২০১৩)। "Caliph, caliphate"। The Princeton Encyclopedia of Islamic Political Thought (ইংরেজি ভাষায়): 81–86।
  2. "Gharm Allah Al-Ghamdy" (ইংরেজি ভাষায়)। 2muslims.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৬-০৫
  3. "শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার বিধান"ইসলামকিউএ.ইনফো
  4. Cavendish, Marshall (২০১০)। "6"Islamic Beliefs, Practices, and Cultures। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন 978-0-7614-7926-0।
  5. Blankinship, Khalid Yahya (১৯৯৪), The End of the Jihad State, the Reign of Hisham Ibn 'Abd-al Malik and the collapse of the Umayyads, State University of New York Press, পৃষ্ঠা 37, আইএসবিএন 978-0-7914-1827-7
  6. "caliph – Islamic title"Encyclopædia Britannica
  7. Lambton, Ann; Lewis, Bernard (১৯৯৫)। The Cambridge History of Islam: The Indian sub-continent, South-East Asia, Africa and the Muslim west2। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 320। আইএসবিএন 9780521223102।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.