তাওহিদ
তাওহীদ (আরবি: توحيد) ইসলাম ধর্মে এক ঈশ্বরের ধারণাকে বোঝায়।[1] তাওহীদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ৷[2] ইসলামী পরিভাষায় তাওহীদ হল সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সকল ইবাদাত-উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য করা, অন্য সবকিছুর উপাসনা ত্যাগ করা, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীকে তার জন্য সাব্যস্ত করা এবং দোষ ত্রুটি থেকে আল্লাহকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা।[3][4]
কুরআনে বলা হয়েছে,[5]
কুরআনের অন্যস্থানে বলা হয়েছে,
"বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই।"[কুরআন 112:1–4]
তাওহীদের প্রকারভেদ
- তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ : একমাত্র স্রষ্টা, রিযিকদাতা, সবকিছুর একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে বিশ্বাস করা।
- তাওহীদুল ঊলূহিয়্যাহ : শুধুমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা,[টীকা 1] তাগুতকে বর্জন করা।
- তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত : কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে উল্লেখিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীগুলো বিকৃতি, ধরন নির্ধারণ, সাদৃশ্য প্রদান ছাড়াই বিশ্বাস করা।
কুরআনে উল্লেখ
কুরআনের অনেক আয়াতে তাওহীদের ঘোষণা রয়েছে যার মধ্যে কয়েকটি হল:
"তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর উপাসনা করো। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর তত্ত্বাবধায়ক।"[কুরআন 6:102]
"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো আর তাগুতকে বর্জন করো।..."[কুরআন 16:36]
"আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।"[কুরআন 20:8]
"...তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক। সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই। আর তোমরা আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো (যাদের কাছে দুআ করো), তারা তো খেজুর আঁটির উপরে পাতলা আবরণেরও (অতি তুচ্ছ কিছুরও) মালিক নয়।"[কুরআন 35:13]
শির্ক
তাওহীদের বিপরীত ধারণা হল শির্ক। ইসলামে শির্ক হল আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা। সাধারণত বিভিন্ন মূর্তি, পাথর, গাছ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, জ্বিন, মৃতব্যক্তি ইত্যাদি বস্তু ও জীবের ইবাদত বা উপাসনা করা হয়। এসব উপাস্যকে ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাকা, বিপদে তাদের কাছে সাহায্য, আশ্রয়, উদ্ধার প্রার্থনা করা, তাদের নামে যবাই ও মানত করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
তাওহিদের গুরুত্ব
ইসলামে ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো তাওহিদ৷[6] অর্থাৎ মুমিন বা মুসলিম হতে হলে একজন মানুষকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাস আনতে হবে৷ ইসলামের সকল শিক্ষা ও আদর্শ তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত৷ দুনিয়াতে যত নবি-রাসূল এসেছেন সকলেই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন৷ তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নবি-রাসূলগণ অাজীবন সংগ্রাম করেছেন৷
আরও দেখুন
টীকা
- ইলাহ্ (আরবি: ﺍﻻﻟﻪ) অর্থ হলো: সম্মান ও বড়ত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যার উপাসনা করা হয়। আর ইবাদত বা উপাসনা সেই সব কাজকে বলা হয়, যা কোনো ইলাহ্-র সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তাঁর অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়।
তথ্যসূত্র
- "From the article on Tawhid in Oxford Islamic Studies Online" (ইংরেজি ভাষায়)। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-২৪।
- "Allah"। Encyclopædia Britannica Online (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-২৮।
- ড. সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান। আক্বীদাতুত তাওহীদ। শাইখ মুখলিসুর রহমান মানসুর কর্তৃক অনূদিত। মাকতাবাতুস সুন্নাহ।
- "The Fundamentals of Tawhid (Islamic Monotheism)" (ইংরেজি ভাষায়)। ICRS (Indonesian Consortium of Religious Studies। ২০১০-১০-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-২৮।
- Vincent J. Cornell, Encyclopedia of Religion, Vol 5, pp.3561-3562 (ইংরেজি ভাষায়)
- D. Gimaret, Tawhid, Encyclopedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)