সাইয়েদ কুতুব

সাইয়েদ কুতুব (/ˈktəb/[1]/ˈkʌtəb/; মিশরীয় আরবি: ˈsæjjed ˈʔotˤb, আরবি: [ˈsæjjɪd ˈqʊtˤb]; আরবি: سيد قطب (১৯০৬ - ২৫ আগস্ট ১৯৬৬) হলেন একজন মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন সরকার ফাঁসির আদেশ দেয় এবং এভাবেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

সাইয়েদ কুতুব
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে জামাল আবদেল নাসেরের শাসনামলে সাইয়েদ কুতুবের বিচার
জন্ম(১৯০৬-১০-০৯)৯ অক্টোবর ১৯০৬
মুশা, উসইউত, মিশর খেদিভাত
মৃত্যু২৯ আগস্ট ১৯৬৬(1966-08-29) (বয়স ৫৯)
কায়রো, মিশর
জাতিভুক্তমিশরীয়
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলমধ্যপ্রাচ্য
মাজহাবশাফি
মূল আগ্রহইসলাম, রাজনীতি, তাফসির
উল্লেখযোগ্য ধারণাজাহিলিয়াহ, উবুদিয়া
লক্ষণীয় কাজইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা, কোরআনের ছায়ায়

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি

সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালের ৯ অক্টোবর মিসরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[2] সাইয়েদ কুতুবের মূল নাম হল সাইয়েদ; কুতুব তার বংশীয় উপাধি। তার পূর্বপুরুষরা আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিশরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করে। তার পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব; তিনি চাষাবাদ করতেন। তার মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান; যিনি অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা ছিলেন। তারা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। তার অপর ভাই হলেনঃ মুহাম্মাদ কুতুব এবং বোনেরা হলেনঃ নাফীসা কুতুব, হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়।[3]

কর্মজীবন

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি শৈশবেই কুরআন হেফয করেন। পরবর্তীকালে তার পিতা কায়রো শহরের উপকণ্ঠে হালওয়ান নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। সাইয়েদ তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষা সমাপ্ত করে কায়রোর বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

কিছুকাল অধ্যাপনা করার পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রোণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তাকে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি পড়া-শুনার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। তিনি দু’বছরের র্কোস শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। আমেরিকা থাকা কালেই তিনি বস্তুবাদী সমাজের দুরবস্থা লক্ষ্য করেন এবং তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, একমাত্র ইসলামই সত্যিকার অর্থে মানব সমাজকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে।

আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পরই তিনি ইখয়ানুল মুসলেমুন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী যাচাই করতে শুরু করেন।[4][5][6][7] ১৯৪৫ সালে তিনি ঐ দলের সদস্য হয়ে যান।[8][9] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধ শেষে মিসরেক স্বাধীনতা দানের ওয়াদা করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইখওয়ান দল ব্রিটিশদের মিসর ত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। এর ফলে তাদের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেড়ে যায়।[3]

গ্রেফতার

১৯৫৪ সালে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী-“ইখওয়ানুল মুসলিমুন”- এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছ’মাস পরই কর্নেল নাসেরের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। কারণ, ঐ বছর মিসর সরকার ব্রিটিশের সাথে নতুন করে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন, পত্রিকাটি তার সমালোচনা করে। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পর নাসের সরকার এ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। একটি হত্যা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগে ইখওয়ানুল মুসলিমুন দলকে বেআইনি ঘোষণা করে দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ইখওয়ান নেতাদের মধ্যে সাইয়েদ কুতুবও ছিলেন। তাকে মিসরের বিভিন্ন জেলে রাখা হয়। গ্রেফতারের সময় তিনি ভীষণভাবে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সামরিক অফিসার তাকে সে অবস্থায় গ্রেফতার করেন।

১৯৬৪ সালের মাঝামাঝি ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফ মিসর যান। তিনি সাইয়েদ কুতুবের মুক্তির সুপারিশ করায় কর্নেল নাসের তাকে মুক্তি দিয়ে তারই বাসভবনে অন্তরীণাবদ্ধ করেন।[10]

আবার গ্রেফতার ও দন্ড

এক বছর যেতে না যেতেই তাকে আবার বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অথচ তিনি তখনও পুলিশের কড়া পাহারাধীন ছিলেন। শুধু তিনি নন, তার ভাই মুহাম্মাদ কুতুব, বোন হামিদা কুতুব ও আমিনা কুতুবসহ বিশ হাযারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় সাত শ’ ছিলেন মহিলা।

১৯৬৫ সালে কর্নেল নাসের মস্কো সফরে থাকাকালীন এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুন তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এবং এরপর মিসরে ইখওয়ান নেতা ও কর্মীদের ব্যাপক ধরপকড় শুরু হয়। ১৯৬৪ সালের ২৬শে মার্চে জারীকৃত একটি নতুন আইনের বলে প্রেসিডেন্টকে যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার, তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ প্রভৃতি দণ্ডবিধির অধিকার প্রদান করা হয়। তার জন্যে কোন আদালতে প্রেসিডেন্টের গৃহীত পদক্ষেপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলেও ঘোষণা করা হয়।

কিছুকাল পর বিশেষ সামরিক আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। প্রথমত ঘোষণা করা হয় যে, টেলিভিশনে ঐ বিচারানুষ্টানের দৃশ্য প্রচার করা হবে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ অপরাধ স্বীকার করতে অস্বীকার এবং তাদের প্রতি দৈহিক নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ করায় টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর রুদ্ধদার কক্ষে বিচার চলতে থাকে। আসামীদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না।

অন্য দেশ থেকে আইনজীবীগণ আসামী পক্ষ সমর্থনের আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। ফরাসী বার এসোসিয়েনের ভূতপূর্ব সভাপতি উইলিয়াম থরপ (Thorp) ও মরোক্কোর দু’জন আইনজীবী আসামী পক্ষ সমর্থনের জন্য রীতিমত আবেদন করেন। কিন্তু তা না মঞ্জুর করা হয়। সুদানের দু’জন আইনজীবী কায়রো পৌছে তথাকার বার এসোসিয়েশনে নাম রেজিষ্ট্রী করে আদালতে হাযির হন। পুলিশ তাদের আদালত থেকে করে দেয় এবং মিসর ত্যাগ করতে বাধ্য করে।

সাইয়েদ কুতুব ও অন্যান্য আসামীগণ ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইবুনালের সামনে প্রকাশ করেন যে, অপরাধ স্বীকার করার জন্যে তাদের উপর অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়।

ইংরেজি ১৯৬৬ সালের আগষ্ট মাসে সাইয়েদ কুতুব ও তার দু’জন সাথীকে সামরিক ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে মৃত্যুদন্ডাদেশ শুনানো হয়। ২৫শে আগষ্ট, ১৯৬৬ সালে ঐ দন্ডদেশ কার্যকর করা হয়।

জ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা

সাইয়েদ কুতুব ছিলেন মিসরের প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যকদের অন্যতম। ছোটদের জন্যে আকর্ষণীয় ভাষায় নবীদের কাহিনী লিখে তার সাহিত্যক জীবনের সূচনা। পরবর্তীকালে ‘আশওয়াক’ (কাটা) নামে ইসলামী ভাবধারাপুষ্ট একখানা উপন্যাস রচনা করেন।

রচিত গ্রন্থাবলীঃ

  1. মুশাহিদুল ক্বিয়ামাহ ফিল ক্বুরআন (কুরআনের আঁকা কেয়ামতের দৃশ্য);
  2. আত্ তাসবিরূল ফান্নি ফিল ক্বুরআন (কুরআনের আলঙ্কারিক চিত্র);
  3. আল আদালাতুল ইজতিমাঈয়া ফিল ইসলাম (ইসলামের সামাজিক সুবিচার);
  4. ফি যিলালিল কুরআন (কুরআনের ছায়াতলে) - কুরআনের তাফসীর;
  5. ইসলাম ও পূজিবাদের দ্বন্দ্ব;
  6. বিশ্বশান্তি ও ইসলাম;
  7. দারাসাতিল ইসলাম (ইসলামী রচনাবলী);
  8. "ভবিষ্যৎ সংস্কৃতি" নামক পুস্তকের সমালোচনা;
  9. কুতুব ওয়া শাখসিয়াত( গ্রন্থাবলি ও ব্যক্তিত্ব);
  10. ইসলামী সমাজের চিত্র;
  11. আমি যে আমেরিকা দেখেছি;
  12. চার ভাই বোনের চিন্তাধারা: সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মদ কুতুব, আমিনা কুতুব ও হামিদা কুতুব;
  13. আশাতিল মাজহুল (কবিতগুচ্ছ);
  14. জীবনে কবির আসল কাজ;
  15. ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা (মা'অালিম ফিত তারিক্ব);
  16. আন নাক্বদুল আদাবি উসুলিহি ওয়া মানাহিযিহি (সাহিত্য সমালোচনার মূলনীতি ও পদ্ধতি);
  17. নবীদের কাহিনী।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Qutb". Random House Webster's Unabridged Dictionary.)
  2. Some sources (e.g., US Library of Congress) give 1903.
  3. "ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা"Shibir Online Library। ২০১৪-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০৫
  4. "Qutb, a one-time literary critic, was not a religious fundamentalist, but a Goebbels-style propagandist for a new totalitarianism to stand side-by-side with fascism and communism." Islamism, fascism and terrorism (Part 2) by Marc Erikson; 8 November 2002, Asia Times Online
  5. "Others, such as Sayyid Qutb, the Muslim Brotherhood's leading intellectual, or bin Laden's first theological mentor, Abdallah Azzam, a Palestinian Sheikh who first conceptualised global jihad, have laid out the theological tenets of jihadist terrorism better than he [Osama bin Laden]." "People of the decade: From Osama to Obama", 25 December 2009, The National
  6. "About that time Sayyid Qutb accepted an appointment to head the Muslim Brothers' propaganda department, called the Propagation of the Message Section." "Sayyid Qutb: The Karl Marx of the Islamic Revolution"
  7. "It is evidence of ideological continuity with the radical Islamist propaganda coming from wartime Berlin. Qutb fused the radical anti-Semitism of modern European history with a radical anti-Semitism rooted in a detailed reading of the Koran. Qutb continued and expanded on the project of cultural fusion and selective appropriation of the traditions of Islam that Husseini and his associates in wartime Berlin had performed."2009 Nazi Propaganda for the Arab World 2009, Jeffrey Herf
  8. "Upon his return to Egypt, he formally joined the Muslim Brotherhood and became the head of its propaganda (tabligh) department." Cultural transitions in the Middle East (1994), Şerif Mardin
  9. "Sayyid Qutb (1906–66) of Egypt provides another example. He became the intellectual spokesman for the Muslim Brotherhood." Muslims: their religious beliefs and practices (2005), Andrew Rippi
  10. "ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা"Shibir Online Library। ২০১৪-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.