মসজিদ আল-হারাম অবরোধ

১৯৭৯ সালের নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে ইসলামী চরমপন্থীরা সৌদি আরবের, মক্কা শহরে অবস্থিত মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদ আল-হারাম দখল করে, যা ছিল মূলত সউদ রাজ পরিবাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে যে, 'মাহাদি'র হিসেবে তাদের নেতা চলে এসেছে এবং মুসলমানরা তাকে মেনে চলবে।

মসজিদ আল-হারাম অবরোধ
তারিখ২০ নভেম্বর - ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৯
অবস্থানমক্কা, সৌদি আরব
ফলাফল

সৌদি আরবের জয়

  • দুই সপ্তাহ পর
  • জুহাইমান আল-ওতোয়বী এবং তার অনুসারীদের মৃত্যুদন্ড
  • অধিকতর ইসলামী অনুশাসন কায়েম
যুধ্যমান পক্ষ
জুহাইমান বিদ্রোহীরা
সেনাধিপতি
  • সৌদি রাজা খালিদ
  • যুবরাজ ফাহাদ
  • যুবরাজ সুলতান
  • যুবরাজ আব্দুল্লাহ
  • যুবরাজ নায়েফ
  • বদর বিন আব্দুল-আজিজ
  • তুর্কি বিন ফয়সাল
  • ব্রিঃ জেঃ ফাতেহ আল ধারেহি
  • লেঃ এ. কুধেইবি
  • মেঃ এম. যুয়েদ আল নেফাই
  • কর্নেল নেসার আল-হমাইদ
  • ফ্লাঃ লেঃ আলি সালমান
  • জুহাইমান আল-ওতোয়বী
  • এম. আব্দুল্লাহ আল-কাহতানি  
  • এফ. মোহাম্মদ ফয়সাল
  • মোহাম্মদ ইলিয়াস
শক্তি
  • ~১০,০০০ সৌদি আরব ন্যাশনাল গার্ড সদস্য
  • কমপক্ষে ৩ জন ফ্রান্সের কমান্ডো [2]
৪০০ ~ ৫০০ জঙ্গি
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
  • নিহত ১২৭
  • আহত ৪৫১
  • (সৌদি আরবের)
  • নিহত ১১৭[3]
  • আহত অজ্ঞাত
  • ফাঁসি ৬৮

এই ঘটনা মুসলিম বিশ্বকে বিস্মিত করে কারণ হজব্রত পালনরত হাজার হাজার মুসলিমকে বন্দী করা হয়। মসজিদের নিয়ন্ত্রন পুনুরুদ্ধারের জন্য লড়াই-এ শতশত জঙ্গি, নিরাপত্তা বাহিনী ও বন্দী নিহত হয়। দুই সপ্তাহ যুদ্ধ শেষে মসজিদ জঙ্গিমুক্ত হয়।[4] হামলার পর, সৌদি রাষ্ট্রে অধিকতর ইসলামী অনুশাসন কায়েম করা হয়।[5]

পটভূমি

জুহাইমান আল-ওতোয়বী সম্ভ্রান্ত নাজদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন যার নেতৃত্বে এই অবরোধ হয়। তিনি ঘোষণা করেন যে, তার ভগ্নীপতি মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল কাহতানি মাহদী হিসেবে কয়েক বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তার অনুসারীরা এই মতবাদ মেনে নিল যে, আল- কাহতানি-র নাম এবং তার পিতার নাম - মোহাম্মদ (সা:) –এর নাম ও পিতার নাম একই। উপরন্তু, তারা আক্রমণের দিন হিসেবে (২০ নভেম্বর, ১৯৭৯), ১৪০০ হিজরী সালের প্রথম দিন নির্ধারণ করে, কারণ হাদীস অনুসারে প্রত্যেক শতাব্দিতে একজন মুজাদ্দিদের আগমন হয়।[6]

জুহাইমান আল-ওতোয়বী শীর্ষস্থানীয় ‘’নাজদ’’ পরিবাবের সদস্য। তার পিতামহ সাথে সউদ বংশের দীর্ঘদিনের শত্রুতা। "[7] তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক, সৌদি ন্যাশনাল গার্ডের প্রাক্তন কর্পোরাল, শেখ আব্দেল আজিজ আল-বাজ-এর সাবেক ছাত্র, যিনি সৌদি আরবের আভিজাত মুফতি হতে চেয়েছিলেন। যখন আল-কাহাতানি ও তার লোকজনকে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী হিসেবে স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা পুলিশ আটক করে তখন শেখ বিন বাজএর অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। [8] জুহাইমান আল-বাজ-এর বিরুদ্ধাচারন করেন। এবং ইসলামের মূল পথে ফিরে আসা, পশ্চিমাদের প্রত্যাখ্যান, নারী শিক্ষা বন্ধ, টেলিভিশন নিষিদ্ধ এবং অ-মুসলিমদের বহিষ্কারের আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ঘোষণা করেন, দুর্নীতি , দাম্ভিকতার কারণে আল-সউদ রাজবংশ বৈধতা হারিয়েছে এবং আক্রমণাত্মক পশ্চিমীকররেন কারণে সৌদি সংস্কৃতি ধংস হয়ে গেছে। "[7]

Juhayman ibn Muhammad ibn Sayf al Otaibi

রাষ্ট্রদ্রোহীতার কারণে বন্দী অবস্থায় আল-অতায়েবি এবং কাহাতানি মিলিত হন, সেখানে আল-অতায়েবি বলেন তিনি স্বপ্ন দেখেছেন যে, আল্লাহ তাকে বলেছে যে, কাহাতানি মাহাদী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, আসন্ন রহস্যোদ্ঘাটনের প্রস্তুতি হিসেবে একটি দিব্যতন্ত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। তাদের অনুগামীদের মধ্যে অনেকেই মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব ছাত্র। বাকিরা এসেছিল মিশর ইয়েমেন, কুয়েত এবং ইরাক এবং আরও কিছু ছিল সুদানের নিগ্রো মুসলিম।

দখল

পুনরূদ্ধার

ফলাফল

ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি বেতার ভাষণে বলেন, সহজেই অনুমান করা যায়, এই অপরাধমূলক কাজ আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিক ইহুদিরাষ্ট্রবাদীদের।"[9][10]
আমেরিকান বিরোধী বিক্ষোভ ফিলিপাইন, তুরস্ক, বাংলাদেশ, পূর্ব সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতপাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। [11] ইসলামাবাদ, পাকিস্তান উত্তেজিত জনতা ২১ নভেম্বর, ১৯৭৯ আমেরিকার দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সপ্তাহ খানেক পরে, ২ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সালে ত্রিপলি, লিবিয়া।লিবিয়াতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা আমেরিকা।আমেরিকার দূতাবাস আক্রমণ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। [12]

The Saudis: Inside the Desert Kingdom - এর লেখক সান্দ্রা মাকির ভাষায় গ্রান্ড মসজিদকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে, বিদ্রোহীরা মূলত সউদ রাজপরিবারের একনায়কতন্ত্রকে আঘাত করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানে ব্যর্থতার জন্য সউদ রাজা বিদ্রোহিদের কঠিন ভাগ্য নির্ধারণ করার সাহস প্রদান করে, বিদ্রোহীদের ধর্মীয় পাপী হিসেবে জনসন্মুখে ফাঁসি দেয়া হয় যা বাস্তবে রাজনৈতিক অপরাধের শাস্তি।"[13] বিদ্রোহী নেতা জুহাওমান, তার ৬৭ জন অনুসারী - জীবিত সকল পুরুষ র বিচার গোপনে, দোষী সাব্যস্ত এবং জনসন্মুখে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয় সৌদি চার শহরগুলোর প্রকাশ্য স্থানে।[7] বাস্তবে ৬৩ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ৯ জানুয়ারী, ১৯৮০ সালে সৌদি ৮ নগরীতে। [14] ওলামাদের পরামর্শক্রমে, তাদের ফাঁসি আদেশ দেন রাজা খালিদ[14]

তথ্যসূত্র

  1. "Attack on Kaba Complete Video"। YouTube। ২৩ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৩
  2. Da Lage, Olivier (২০০৬)। Géopolitique de l'Arabie Saoudite (French ভাষায়)। Complexe। পৃষ্ঠা 34। আইএসবিএন 2804801217।
  3. Riyadh (১০ জানুয়ারি ১৯৮০)। "63 Zealots beheaded for seizing Mosque"Pittsburgh Post-Gazette। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১০
  4. Benjamin, The Age of Sacred Terror (2002) p. 90
  5. Wright, Sacred Rage, (2001), p. 155
  6. Benjamin, The Age of Sacred Terror, (2002) p. 90
  7. Mecca – 1979 Juhaiman ibn Muhammad ibn Saif al Otaibi, Global Security
  8. Lacey, Robert (২০০৯)। Inside the Kingdom : Kings, Clerics, Modernists, Terrorists, and the Struggle for Saudi Arabia। Viking। পৃষ্ঠা 31।
  9. On This Day, 21 November, BBC
  10. "Khomeini Accuses U.S. and Israel of Attempt to Take Over Mosques", by John Kifner, New York Times, 25 November 1979
  11. Wright, Robin B., 1948. Sacred Rage: The Wrath of Militant Islam. Simon & Schuster, c 2001, p. 149
  12. EMBASSY OF THE U.S. IN LIBYA IS STORMED BY A CROWD OF 2,000; Fires Damage the Building but All Americans Escape – Attack Draws a Strong Protest Relations Have Been Cool Escaped without Harm 2,000 Libyan Demonstrators Storm the U.S. Embassy Stringent Security Measures Official Involvement Uncertain, New York Times, 3 December 1979
  13. Mackey, p. 234.
  14. "Saudis behead zealots"The Victoria Advocate। AP। ১০ জানুয়ারি ১৯৮০। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১২

টীকা

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.