মক্কা

মক্কা[2] (আরবি: مكة‎‎ˈmɛkkɛ/), পূর্ণ নাম: মাক্কাহ্‌ আল মুকার্‌রামাহ্‌, আরবি: مكة المكرمة ম্যাক্ক্যাল্‌মুক্যার্‌র‌্যাম্যা /ˈmɛkkɛlmuˈkɛrrɛmɛ/) সৌদি আরবের হেজাজের একটি শহর ও মক্কা প্রদেশের রাজধানী। সমুদ্রতল থেকে ২৭৭ মিটার (৯০৯ ফুট) উপরে একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত, যা জেদ্দা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) দূরে।২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী এখানে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু শহরটিতে এর প্রায় ৩ গুন মানুষ হিজরী জিলহজ্জ্ব মাসে হজ্জ্ব করতে আসেন।

মক্কা
مكّة المكرمة
মক্কা আল মুকাররাম্মাহ
মাক্কায় হাজিদের তাওয়াফ করার দৃশ্য
ডাকনাম: উম্ম আল কুউরা (মায়ের গ্রাম)
স্থানাঙ্ক: ২১°২৫′০″ উত্তর ৩৯°৪৯′০″ পূর্ব
দেশ সৌদি আরব
প্রদেশমক্কা প্রদেশ
মক্কার নির্মাণ+২০০০ খৃষ্টপৃর্ব
প্রতিষ্ঠিতইব্রাহিম
সৌদি আরবে যোগ দিয়েছে১৯২৪
সরকার
 • মেয়রওসামা আল-বার
 • প্রদেশের প্রশাসকখালিদ আল ফয়সাল
জনসংখ্যা (২০০৭)
 • শহর১৭,০০,০০০
 • পৌর এলাকা২০,৫৩,৯১২
 • মহানগর২৫,০০,০০০
 মক্কার পৌরসভার হিসাব অনুসারে[1]
সময় অঞ্চলAST (ইউটিসি+৩)
ওয়েবসাইটমক্কা পুরসভা

মক্কা ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম নগরী হিসেবে স্বীকৃত। এই শহরে মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম এবং এখানেই তিনি কুরআনের প্রথম ওহী লাভ করেন (বিশেষভাবে, হেরা গুহায় যা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে)। মুসলিমরা প্রতি বছর হজ্জ্ব ও উমরাহ পালনের জন্য এখানে আসেন। মক্কার প্রাণকেন্দ্রে কাবা অবস্থিত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কাবা হলো পৃথিবীর প্রথম মসজিদ। মুসলিমরা প্রতিদিন পাঁচ বার নামায আদায়ের সময় এই কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখেন। এটি তাদের প্রার্থনার সময় দিক নির্দেশ করে। দীর্ঘদিন এই শহর মুহাম্মদ (সাঃ)এর বংশধররা শাসন করেছে। ১৯২৫ সালে ইবনে সৌদ এর মাধ্যমে সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সৌদ বংশ মক্কার দায়িত্ব লাভ করে। বর্তমানেও উক্ত রাজবংশ মক্কা শাসন করছে। আধুনিক যুগে এসে শহর বহুগুন সম্প্রসারিত হয়েছে। এর অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, নাগরিক সুবিধা ইত্যাদির অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম ভবন মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার এই শহরেই অবস্থিত। উক্ত ভবনের মেঝের আয়তন সারা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। শহর সম্প্রসারণের কারনে অনেক ঐতিহাসিক কাঠামো এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন আজিয়াদ দুর্গ হারিয়ে গেছে। প্রতি বছর ১৫ মিলিয়ন মুসলিম মক্কা শহর ভ্রমণ করে। ফলশ্রুতিতে শহরটি সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিশ্বজনীন শহরে পরিণত হয়েছে। এই শহরে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। [3][4][5]

মক্কা শব্দের ব্যুৎপত্তি ও ব্যবহার

আরবি 'مكة' শব্দের অনুবাদ ইংরেজিতে‎‎ "Mecca" হিসেবে পরিচিত। [6][7] তবে সৌদি সরকার এই বানানরীতি ব্যবহার করেনা। তারা এই শহরের ইংরেজি নাম করেছে 'Makkah', যা আরবি মূল শব্দের উচ্চারণের সবচেয়ে কাছাকাছি। গত শতকের আশির দশকে সৌদি সরকার এই বানান চালু করে, কিন্তু তবুও তা বিশ্বজুড়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। মক্কার আনুষ্ঠানিক নাম হলো مكة المكرمة (বাংলাঃ মক্কা-আল-মোকাররমা, ইংরেজিঃ Makkah al-Mukarramah বা Makkatu l-Mukarramah)। এর অর্থ সম্মানিত মক্কা। তবে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় পবিত্র শহর মক্কা হিসেবে। ইংরেজিতে‎‎ "Mecca" শব্দের অর্থ হলো এমন একটি জায়গা যা অনেক মানুষকে আকর্ষণ করে। বাস্তবেও এই শহর সারা বিশ্বের মুসলিমদের আকর্ষণ করে। [6][6]

ইতিহাস

প্রাচীন ইতিহাস

সামূদ জাতির শিলালিপি

ইসলামী ঐতিহ্য

মুহাম্মদ (সাঃ) এবং মক্কা বিজয়

মধ্যযুগীয় ও প্রাক-আধুনিক সময়

বিদ্রোহ


ঐতিহাসিক ভবন ধ্বংস

তীর্থযাত্রা

তীর্থযাত্রার ঘটনা

ভূগোল

নিকটাঞ্চলীয় ভূগোল

জলবায়ু

আরবের অন্য দেশের মত মক্কাও শীতকাল এ দিনে তাপমাত্রা ১৮ °সে (৬৪ °ফা) রাতে ৩০ °সে (৮৬ °ফা) তে ওঠা নামা করে।

মক্কা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ °সে (°ফা) রেকর্ড ৩৭٫৪
(৯৯)		 ৩৮٫৩
(১০১)		 ৪২٫৪
(১০৮)		 ৪৪٫৭
(১১২)		 ৪৯٫৪
(১২১)		 ৪৯٫৬
(১২১)		 ৪৯٫৮
(১২২)		 ৪৯٫৭
(১২১)		 ৪৯٫৪
(১২১)		 ৪৭٫০
(১১৭)		 ৪১٫২
(১০৬)		 ৩৮٫৪
(১০১)		 ৪৯٫৮
(১২২)
সর্বোচ্চ °সে (°ফা) গড় ৩০٫৫
(৮৭)		 ৩১٫৭
(৮৯)		 ৩৪٫৯
(৯৫)		 ৩৮٫৭
(১০২)		 ৪২٫০
(১০৮)		 ৪৩٫৮
(১১১)		 ৪৩٫০
(১০৯)		 ৪২٫৮
(১০৯)		 ৪২٫৮
(১০৯)		 ৪০٫১
(১০৪)		 ৩৫٫২
(৯৫)		 ৩২٫০
(৯০)		 ৩৮٫১
(১০১)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ২৪٫০
(৭৫)		 ২৪٫৭
(৭৬)		 ২৭٫৩
(৮১)		 ৩১٫০
(৮৮)		 ৩৪٫৩
(৯৪)		 ৩৫٫৮
(৯৬)		 ৩৫٫৯
(৯৭)		 ৩৫٫৭
(৯৬)		 ৩৫٫০
(৯৫)		 ৩২٫২
(৯০)		 ২৮٫৪
(৮৩)		 ২৫٫৬
(৭৮)		 ৩০٫৮
(৮৭)
সর্বনিম্ন °সে (°ফা) গড় ১৮٫৮
(৬৬)		 ১৯٫১
(৬৬)		 ২১٫১
(৭০)		 ২৪٫৫
(৭৬)		 ২৭٫৬
(৮২)		 ২৮٫৬
(৮৩)		 ২৯٫১
(৮৪)		 ২৯٫৫
(৮৫)		 ২৮٫৯
(৮৪)		 ২৫٫৯
(৭৯)		 ২৩٫০
(৭৩)		 ২০٫৩
(৬৯)		 ২৪٫৭
(৭৬)
সর্বনিম্ন °সে (°ফা) রেকর্ড ১১٫০
(৫২)		 ১০٫০
(৫০)		 ১৩٫০
(৫৫)		 ১৫٫৬
(৬০)		 ২০٫৩
(৬৯)		 ২২٫০
(৭২)		 ২৩٫৪
(৭৪)		 ২৩٫৪
(৭৪)		 ২২٫০
(৭২)		 ১৮٫০
(৬৪)		 ১৬٫৪
(৬২)		 ১২٫৪
(৫৪)		 ১০٫০
(৫০)
গড় অধঃক্ষেপণ মিমি (ইঞ্চি) ২০٫৮
(০٫৮২)		 ৩٫০
(০٫১২)		 ৫٫৫
(০٫২২)		 ১০٫৩
(০٫৪১)		 ১٫২
(০٫০৫)		 ০٫০
(০)		 ১٫৪
(০٫০৬)		 ৫٫০
(০٫২)		 ৫٫৪
(০٫২১)		 ১৪٫৫
(০٫৫৭)		 ২২٫৬
(০٫৮৯)		 ২২٫১
(০٫৮৭)		 ১১১٫৮
(৪٫৪)
অধঃক্ষেপণ দিনের গড় ৪٫০ ০٫৯ ১٫৮ ১٫৮ ০٫৭ ০٫০ ০٫৩ ১٫৫ ২٫০ ১٫৯ ৩٫৯ ৩٫৬ ২২٫৪
গড় আর্দ্রতা (%) ৫৮ ৫৪ ৪৮ ৪৩ ৩৬ ৩৩ ৩৪ ৩৯ ৪৫ ৫০ ৫৮ ৫৯ ৫৯
মাসিক গড় সূর্যালোকের ঘণ্টা ২৬০٫৪ ২৪৫٫৮ ২৮২٫১ ২৮২٫০ ৩০৩٫৮ ৩২১٫০ ৩১৩٫১ ২৯৭٫৬ ২৮২٫০ ৩০০٫৭ ২৬৪٫০ ২৪৮٫০ ৩,৪০০٫৫
দৈনিক গড় সূর্যালোকের ঘণ্টা ৮٫৪ ৮٫৭ ৯٫১ ৯٫৪ ৯٫৮ ১০٫৭ ১০٫১ ৯٫৬ ৯٫৪ ৯٫৭ ৮٫৮ ৮٫০ ৯٫৩
উৎস #১: জেদ্দা আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র[8]
উৎস #২: Deutscher Wetterdienst (sun, 1986–2000)[9]

বিশেষত্ব

অর্থনীতি

স্বাস্থ্য সেবা

হাজিদের জন্য সকল স্বাস্থ্য সেবা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। [10]

  • আজইয়াড হাসপাতাল (Arabic: مستشفى أجياد)
  • বাদশাহ ফয়সাল হাসপাতাল (Arabic: مستشفى الملك فيصل بحي الششه)
  • বাদশাহ আব্দুল আজিজ হাসপাতাল (Arabic: مستشفى الملك عبدالعزيز بحي الزاهر)
  • আল নূর বিষেশায়িত হাসপাতালl (Arabic: مستشفى النور التخصصي)
  • হিরা হাসপাতাল (Arabic: مستشفى حراء)
  • মা ও শিশু হাসপাতাল (Arabic: مستشفى الولادة والأطفال)
  • বাদশাহ আব্দুল্লাহ মেডিকেল সিটি (Arabic: مدينة الملك عبدالله الطبية)

সংস্কৃতি

খাদ্য

জনমিতি

মক্কা নগরীতে খুবই ঘন জনবসতি। মক্কার দীর্ঘ মেয়াদের স্থায়ী বাসিন্দারা পুরাতন শহরে বাস করে এবং অনেকেই হজ্বের কাজ করে যা স্থানীয়ভাবে হজ্বশিল্প নামে পরিচিত। সৌদি আরবের হজ্ব মন্ত্রী আইয়াদ মাদানী বলেন, "আমাদের হজ্ব প্রস্তুতি কখনোই শেষ হয় না।"[11]

বছরজুড়েই হজ্বযাত্রীরা শহরে আসতে থাকেন উমরা হজ্ব পালন করতে। প্রতিবছর গড়ে ৪০ লক্ষ মুসলমান মূল হজ্বে অংশ নিতে মক্কা নগরীতে জমায়েত হয়।[12]

প্রধানত মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী মুসলমানেরা হজ্বের উদ্দেশ্যে আসেন। হজ্বযাত্রীদের কেউ কেউ থেকে যান এবং শহরের বাসিন্দা হয়ে যান। বার্মার থেকে যাওয়া লোকেরা এখানে সব থেকে পুরাতন এবং তারা একটি সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পেরেছে যাদের সংখ্যা আড়াই লক্ষের কাছাকাছি।[13] বিগত ৫০ বছরে শত সহস্র কাজ করতে আসা অভিবাসী এখানে জমায়েত হয়েছে।

সৌদি আরবের সাধারণ আইনে অমুসলিমদের মক্কা নগরীতে প্রবেশাধিকার নেই।[4] জালিয়াতির মাধ্যমে প্রবেশের চেষ্টা করলে গ্রেফতার এবং শাস্তি হতে পারে।[14] আহমাদিয়াদেরও প্রবেশাধিকার নেই কারণ সাধারণ মুসলমানেরা তাদেরকে অমুসলমান হিসেবে বিবেচনা করে।[15] যদিও অনেক অমুসলিম এবং আহমাদিয়া শহরটি ভ্রমণ করেছেন। নিবন্ধিত তথ্যানুসারে প্রথম অমুসলিম হচ্ছে লুডোভিকো ডি ভার্থেমা, তিনি ১৫০৩ সালে মক্কা ভ্রমণ করেন।[16] ১৫১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক সাহিব মক্কা ভ্রমণ করেন।[17] বিখ্যাতদের একজন হচ্ছেন রিচার্ড ফ্রান্সি বুর্টন,[18] যিনি আফগানিস্তান থেকে কাদিরিয়া সুফির ছদ্মবেশে ১৮৫৩ সালে মক্কা ভ্রমণ করেন। সৌদি সরকার আল কোরআনের নবম সুরার ২৮ নম্বর আয়াত দ্বারা তাদের নিজেদের অবস্থান সমর্থন করে।

শিক্ষা

ওসমানি খেলাফতের শেষদিকে এবং হাশেমী আমলে মক্কায় ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার উন্নতি হতে শুরু করে। অবস্থার উন্নতির জন্য সর্বপ্রথম জেদ্দার একজন ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ আলি জায়নাল রিদা উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯১১-১২ সালে ৪০০০০০ পাউন্ড ব্যয়ে মাদরাসাত আল-ফালাহ প্রতিষ্ঠা করেন।

মক্কায় ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্কুল রয়েছে। ২০০৫ সালে ছেলেদের জন্য ৫৩২ এবং মেয়েদের জন্য ৬৮১ টি স্কুল ছিল। শিক্ষার মাধ্যম আরবি তবে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে জোর দেয়া হয়। কিছু স্কুল যেগুলো বিদেশীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তারা ফ্রি-মিক্সিংয়ের অনুমতি দেয় যা অন্যান্য স্কুল দেয়না।

উচ্চশিক্ষার জন্য একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৪৯ সালে কলেজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়।

জীবাশ্মবিজ্ঞান

২০১০ সালে সাদানিয়াস ফসিল আবিষ্কারের ফলে মক্কা নগরী প্রাইমেট ইভোলিউশন এর বিচারে জীবাশ্মবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ সাইটে পরিণত হয়েছে। সাদানিয়াসদের প্রাইমেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জীবাশ্ম প্রাপ্তির স্থানটি বর্তমানে লোহিত সাগরের কাছে অবস্থিত যা ২৮ মিলিয়ন এবং ২৯ মিলিয়ন বছর আগে জংগলাকীর্ণ ছিলো।[19]

জীবাশ্মবিজ্ঞানীরা এই এলাকায় আরো জীবাশ্ম পাওয়ার আশায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।[20]

টেলিযোগাযোগ

সৌদি শাসনামলে মক্কা নগরীর টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা বিকশিত হয়। বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল সউদ সুশাসনের মাধ্যম হিসেবে দেখতেন। হেজাজের আলীর শাসনামলে নগরীতে মাত্র ২০ টি টেলিফোন ছিলো, ১৯৩৬ সালে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫০ এ যা দেশের মোট টেলিফোনের অর্ধেক। ১৯৮৫ সালে অন্যান্য শহরের মত মক্কাও আধুনিক টেলিফোন, টেলেক্স, বেতার এবং টেলিভিশন যোগাযোগব্যবস্থা অর্জন করে।[21]

হাশিমী সাম্রাজ্যকালে নির্দিষ্টসংখ্যক বেতার যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন করা হয়। ১৯২৯ সালে অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ওয়্যারলেস স্টেশন বসানো হয়। একটি নেটওয়ার্ক তৈরী হয় যা ১৯৩২ সালে পূর্নাংগ ভাবে চালু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিদ্যমান নেটওয়ার্ক এর ব্যপকহারে বর্ধন ও উন্নয়ন সাধন হয়। সেই সময় হজ্বযাত্রীদের নির্দেশনা দিতে বেতার পরিসেবা ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৫০ সালে আরাফাত দিবস থেকে সম্প্রচার শুরু হয় এবং ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এই ধারা বাড়তেই থাকে। সেই সময়ে রেডিও মক্কা ছিলো মধ্যপ্রাচ্যের সব থেকে শক্তিশালী স্টেশন যার ক্ষমতা ছিলো ৫০ কিলো ওয়াট। পরে ৪৫০ কিলো ওয়াটে উন্নীত হয়। প্রথম দিকে সংগীত প্রচার করা না হলেও আস্তে আস্তে সম্প্রচার শুরু হয়।[21]

পরিবহন

আকাশপথ
হজ্ব টার্মিনাল

মক্কায় ছোট আকারে মক্কা পূর্ব বিমানবন্দর অবস্থিত হলেও কোন উড়োজাহাজ পরিসেবা চালু না থাকায় শহরের কেন্দ্র থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে জেদ্দায় অবস্থিত বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্ত:র্জাতিক বিমানবন্দরের উপর নির্ভর করতে হয়। অধিক সংখ্যক হজ্বযাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে এই বিমানবন্দরে বিশেষ ভাবে নির্মিত টার্মিনাল রয়েছে যেখানে একই সাথে ৪৭ খানা বিমান ওঠানামা করতে পারে এবং হজ্ব মৌসুমে প্রতিঘন্টায় ৩৮০০ জন হজ্বযাত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে পারে।[22]

রেলপথ

আল মাশায়ের আআল মুগাদ্দেসসাহ মেট্রো

আল মাশায়ের আআল মুগাদ্দেসসাহ মেট্রো হচ্ছে মক্কা শহরের একটি মেট্রো লাইন যা ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর চালু হয়।[23] এই ১৮.১ কিলোমিটার বিস্তৃত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা হজ্ব মৌসুমে হজ্বযাত্রীদের আরাফাত পর্বত, মুজদালিফা এবং মিনায় নেওয়া হয়।[24]

মক্কা মেট্রো
মক্কা মেট্রো রুট ম্যাপ

মক্কা মেট্রো দাপ্তরিক ভাবে মক্কা মাস রেইল ট্রান্সপোর্ট নামে পরিচিত, শহরের মধ্যে চার লেনের রেল লাইন।[25] এটি হজ্বমৌসুমে হজ্বযাত্রীদের পরিবহনকারী আল মাশায়ের আল মুগাদ্দেসসাহ'র সাথে যুক্ত হবে।

আন্ত:শহর

সৌদি আরবে একটি উচ্চগতির রেললাইন নির্মাণ চলছে। এটা ৪৪৪ কিলোমিটার বিস্তৃত হবে যা মক্কা এবং মদিনা শহরকে সংযুক্ত করবে।[26] লাইনটি চালু হলে মক্কা থেকে মদিনার পথে যাত্রার সময় ২ ঘন্টা কম লাগবে।[27] স্পেনের একটি বিজিনেস কনসোর্টিয়াম এটা নির্মাণ করবে।[28]

স্থলপথ
জেদ্দা-মক্কা মহাসড়কে মক্কায় প্রবেশের ফটক

মক্কা নগরীকে সংযুক্তকারী কিছু আন্তঃনগর হাইওয়ে হচ্ছে:[29][30]

  • হাইওয়ে ৪০ (সৌদিআরব) – সংযুক্ত করেছে জেদ্দাকে মক্কার সাথে এবং মক্কাকে দাম্মামের সংগে।
  • হাইওয়ে ১৫ (সৌদিআরব) – তায়েফকে মক্কার সাথে এবং মক্কাকে মদিনার সংগে সংযুক্ত করেছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র
  1. "Population"। Statistical Yearbook 47 (2011)। Central Department Of Statistics & Information। ১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৩।
  2. Rarely, Bakkah.
  3. Fattah, Hassan M.Islamic Pilgrims Bring Cosmopolitan Air to Unlikely City, The New York Times (20 January 2005).
  4. Peters, Francis E. (১৯৯৪)। The Hajj: The Muslim Pilgrimage to Mecca and the Holy Places। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 206। আইএসবিএন 0-691-02619-X।
  5. Esposito, John L. (২০১১)। What everyone needs to know about Islam। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 9780199794133। Mecca, like Medina, is closed to non-Muslims
  6. Ham, Anthony; Brekhus Shams, Martha & Madden, Andrew (২০০৪)। Saudi Arabia (illustrated সংস্করণ)। Lonely Planet। আইএসবিএন 1-74059-667-6।
  7. Long, David E. (২০০৫)। Culture and Customs of Saudi Arabia। আইএসবিএন 978-0313320217।
  8. "Climate Data for Saudi Arabia"। জেদ্দা আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র। ১২ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৫।
  9. "Klimatafel von Mekka (al-Makkah) / Saudi-Arabien" (PDF)। Baseline climate means (1961–1990) from stations all over the world (German ভাষায়)। Deutscher Wetterdienst। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
  10. "المستشفيات – قائمة المستشفيات". moh.gov.sa.
  11. "A new National Geographic Special on PBS 'Inside Mecca'"। Anisamehdi.com। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১০।
  12. "Makkah al-Mukarramah and Medina"। Encyclopædia Britannica. Fifteenth edition। 23। ২০০৭। পৃষ্ঠা 698–699।
  13. "After the hajj: Mecca residents grow hostile to changes in the holy city"। The Guardian। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৬।
  14. "Saudi embassy warns against entry of non-Muslims in Mecca"। ABS-CBN News। ১৪ মার্চ ২০০৬। ২৬ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০০৮।
  15. Robert W. Hefner; Patricia Horvatich (1997-01)। Islam in an Era of Nation-States: Politics and Religious Renewal in Muslim Southeast Asia। University of Hawai'i Press। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 9780824819576। সংগ্রহের তারিখ 5 June 2014। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  16. "The Lure Of Mecca"। Saudi Aramco World। ১৩ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১০।
  17. Dr Harjinder Singh Dilgeer says that Mecca was not banned to non-Muslim till nineteenth century; Sikh History in 10 volumes, Sikh University Press, (2010–2012), vol. 1, pp. 181–82
  18. "Sir Richard Francis Burton: A Pilgrimage to Mecca, 1853"। Fordham.edu। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১০।
  19. Sample, Ian (১৪ জুলাই ২০১০)। "Ape ancestors brought to life by fossil skull of 'Saadanius' primate"। London: Guardian (UK)।
  20. Laursen, Lucas (২০১০)। "Fossil skull fingered as ape–monkey ancestor"। Nature। doi:10.1038/news.2010.354।
  21. "Makka – The Modern City", Encyclopaedia of Islam
  22. "Saudi terminal can receive 3,800 pilgrims per hour"। Al Arabiya। ২৮ আগস্ট ২০১৪।
  23. "Hajj pilgrims take the metro to Makkah"। Railway Gazette International। ১৫ নভেম্বর ২০১০। ৩ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৭।
  24. "Mecca metro contracts signed"। Railway Gazette International। ২৪ জুন ২০০৯। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০০৯।
  25. "Jeddah and Makkah metro plans approved"। Railway Gazette International। ১৭ আগস্ট ২০১২।
  26. "High speed stations for a high speed railway"। Railway Gazette International। ২৩ এপ্রিল ২০০৯।
  27. "Al Rajhi wins Makkah – Madinah civils contract"। Railway Gazette International। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
  28. El consorcio español firma el contrato del Ave a la Meca el 14 de enero | Economía | EL PAÍS. El País. (9 January 2012). Retrieved 2013-02-03.
  29. "Roads". saudinf.com.
  30. "THE ROADS AND PORTS SECTORS IN THE KINGDOM OF SAUDI ARABIA" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে. saudia-online.com. 5 November 2001

বহিঃসংযোগ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.