ইরাক

ইরাক (আরবি: العراق (শ্রবন করুন ) সরকারিভাবে ইরাক প্রজাতন্ত্র, একটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র। বাগদাদ ইরাকের রাজধানী। ইরাকের দক্ষিণে কুয়েত এবং সৌদি আরব, পশ্চিমে জর্ডান, উত্তর-পশ্চিমে সিরিয়া, উত্তরে তুরস্ক এবং পূর্বে ইরান (কোর্দেস্তন প্রদেশ (ইরান)) অবস্থিত।

Republic of Iraq
جمهورية العراق (আরবি)
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: الله أكبر   (Arabic)
"Allahu Akbar"  (transliteration)
"Allah is the Greatest"
জাতীয় সঙ্গীত: 
Mawtini
(موطني‎)  
"My Homeland"
ইরাকের অবস্থান
ইরাকের অবস্থান
রাজধানীবাগদাদ
৩৩°২০′ উত্তর ৪৪°২৬′ পূর্ব
বৃহত্তম শহর capital
সরকারি ভাষা আরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ Iraqi
সরকার Federal parliamentary republic
   President Fuad Masum
   Prime Minister হায়দর আল-আবাদি [1]
   Speaker of Council of Representatives
Independence
   from the United Kingdom 3 October 1932 
   Declaration of the republic 14 July 1958 
   Current constitution 15 October 2005 
আয়তন
   মোট ৪,৩৮,৩১৭ কিমি (59th)
১,৬৯,২৩৪ বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) 1.1
জনসংখ্যা
   2011 আনুমানিক 30,399,572[2] (39th)
   ঘনত্ব 73.5/কিমি (125th)
১৮৭.৬/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
2011 আনুমানিক
   মোট $125.665 billion[3] (63rd)
   মাথা পিছু $3,826[3] (126th)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) 2011 আনুমানিক
   মোট $108.418 billion[3] (62nd)
   মাথা পিছু $3,301[3] (110th)
মানব উন্নয়ন সূচক (2011)0.573 [4]
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর
মুদ্রা Iraqi dinar (IQD)
সময় অঞ্চল GMT+3 (ইউটিসি+3)
   গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) not observed (ইউটিসি+3)
গাড়ী চালনার দিক right
কলিং কোড 964
ইন্টারনেট টিএলডি .iq

রাজনীতি

ইরাকের রাজনীতি একটি ফেডারেল সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় অণুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে, আর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার ও ইরাকের জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে ন্যস্ত। একটি গণভোটের পর ২০০৫ সালের ১৫ই অক্টোবর দেশটির সবচেয়ে নতুন সংবিধান পাস হয়।

ইরাকের জাতীয় সংসদের আসনসংখ্যা ২৭৫। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে এর জন্য জাতীয় নির্বাচন অণুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত সরকার ২০০৬-২০১০ সালের জন্য ক্ষমতায় থাকবে।

হায়দার-আল-আবাদি ইরাকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ফুয়াদ মাসুম দেশের রাষ্ট্রপতি।

ইরাক বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার জন্য সারা বিশ্বের বুকে গৌরবে মহীয়ান। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীদ্বয়কে কেন্দ্র করে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ বছর আগে গড়ে ওঠে এ সভ্যতা। বর্তমান আরব বিশ্বের ইরান, কুয়েত, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান, কুয়েত প্রভৃতি দেশের অংশবিশেষ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাক্তন সুমেরীয়, অ্যাসেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও ক্যালডীয় সভ্যতা বৃহত্তর মেসোপটেমীয় সভ্যতারই বিভিন্ন পর্যায়। তবে বিশ্বব্যাপী মেসোপটেমীয় সভ্যতার কারণে ইরাকের মহিমা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় অনেকটাই ম্রিয়মাণ। কারণ একদিকে রয়েছে ইরাকের বর্তমান দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো, অন্যদিকে আল কায়েদা, আইএস সহ নানা জঙ্গিবাদী ও পরাশক্তি সমর্থনপুষ্ট নানা সরকার বিদ্রোহী গেরিলাগোষ্ঠীর অভ্যুদ্যয়। নব্বইয়ের দশক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতার মাধ্যমেই মূলত দেশটির রাজনৈতিক স্থবিরতা শুরু হয়। ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইরাক কুয়েতে আগ্রাসন চালায় এবং কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ ঘোষণা করে। ইরাকের দখলদারি থেকে কুয়েতকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের বিরুদ্ধে ২রা আগস্ট ১৯৯০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত 'অপারেশন ডেজার্ট স্ট্রম' নামক অপারেশন পরিচালনা করে। এটি প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ নামেও পরিচিত। এর প্রায় এক দশক পর ইরাকে মারাত্নক বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে এ কারণ দর্শিয়ে ইরাকে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করে মার্কিন ও ইংরেজ যৌথ বাহিনী। ইতিহাসে এ ঘটনা দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচির। এছাড়া মার্কিন বাহিনী ইরাকের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর 'অপারেশন রেড ডন' নামক আরেকটি অপারেশনও পরিচালনা করে। এভাবে গত কয়েক দশকে বিভিন্ন অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণে ইরাকের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুর্দশা নেমে আসে। সাম্প্রতিকতম সময়ে আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেটস ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্তে) নামক সন্ত্রাসী সংগঠন ইরাকের ভূমিতে গঠিত হয় এবং মসুলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে। এছাড়া দেশটির উত্তর সীমান্তবর্তী কুর্দিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদ সমস্যাও ইরাকের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ইরাকের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দুর্বল সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে দেশটির গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

ইরাক উনিশ গভর্নরেট (বা প্রদেশ) দ্বারা গঠিত হয়। ইরাকী কুর্দিস্তান (ইরাকী, দোহুক, সুলাইমানিয়া এবং হালাবজা) ইরাকের একমাত্র আইনানুযায়ী নির্ধারিত অঞ্চল, যার নিজস্ব সরকার এবং আধা সরকারী বাহিনী রয়েছে ।

উত্তর ইরাক প্রদেশ

নিনাওয়া প্রদেশ

পশ্চিম ইরাক প্রদেশ

আল আনবার প্রদেশ(সবথেকে বৃহত্তম প্রদেশ)

মধ্য ইরাক প্রদেশ

বাগদাদ প্রদেশ(সবথেকে জনবহুল প্রদেশ)

দক্ষিণ ইরাক প্রদেশ

  1. আল মুসান্না প্রদেশ
  2. বাসরাহ প্রদেশ

ভূগোল

ইরাক মূলত মরুময় দেশ, কিন্তু দজলা ও ফোরাতের মধ্যবর্তী অববাহিকার ভূমি উর্বর। নদীগুলি প্রতিবছর প্রায় ৬ কোটি ঘনমিটার পলি বদ্বীপে বয়ে নিয়ে আসে। দেশটির উত্তরাঞ্চল পর্বতময়। সর্বোচ্চ পর্বতের নাম চিকাহ দার, যার উচ্চতা ৩,৬১১ মিটার। পারস্য উপসাগরে ইরাকের ক্ষুদ্র একটি তটরেখা আছে। সমুদ্র উপকূলের কাছের অঞ্চলগুলি জলাভূমি ছিল, তবে ১৯৯০-এর দশকে এগুলির পানি নিষ্কাশন করা হয়।

ইরাকের জলবায়ু মূলত ঊষর। শীতকাল শুষ্ক ও ঠাণ্ডা; গ্রীষ্মকাল শুষ্ক, গরম, ও মেঘহীন। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে ভারী বরফ পড়ে এবং এতে মাঝে মাঝে বন্যার সৃষ্টি হয়।

অর্থনীতি

যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইরাকে পর্যটন শিল্প স্থবির হয়ে পড়লেও এতে পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান আছে। সামারা শহর একটি ইউনেস্কো World Heritage Site হিসেবে গণ্য। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে প্রায় ৭০০০ বছরের পুরনো সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া গেছে। মূলত মৃৎশিল্পের নিদর্শনই বেশি। আব্বাসিদ খলিফারা ৮ম শতকে বাগদাদ থেকে রাজধানী সামারায় সরিয়ে নেন, এবং এর ফলে এখানে অনেক নতুন স্থাপত্যের সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে অন্যতম হল সামারার বিখ্যাত সর্পিলাকার মসজিদ মিনার। ইরাকে মার্কিন-অবস্থান বিরোধীরা সম্প্রতি ২০০৭ সালে মিনারটিতে বোমা হামলা চালিয়ে ক্ষতিসাধন করেছে। শহরটিতে দুইজন শিয়া ইমামের মসজিদও আছে এবং সেগুলি শিয়া মুসলিমদের তীর্থস্থান।

বাগদাদের প্রায় ১৮০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আল-হাদ্‌র শহরটিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের প্রাচীন আসিরীয় সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এটিকে কেন্দ্র করেই সম্ভবত প্রথম আরব রাজ্য গড়ে উঠে। এটিও ইউনেস্কো World Heritage Site।

দজলার পশ্চিম তীরে অবস্থিত আরেকটি শহর আসুর ছিল আসিরীয় সাম্রাজ্যের এককালের রাজধানী। এখানকার মন্দিরগুলির ধ্বংসাবশেষ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই স্থানটিতে প্রায় ৫ হাজার বছর আগেও, সম্ভবত সুমেরীয় সভ্যতার শেষ দিকে, মনুষ্য বসতি ছিল। এটিও ইউনেস্কো World Heritage Site। তবে ইরাক যুদ্ধের কারণে এর অবস্থা বিপন্ন।

জনসংখ্যা

আরবি ইরাকের সরকারী ভাষা। ইরাকের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি জনগণের মাতৃভাষা আরবি। ইরাকে প্রচলিত আরবি ভাষার লিখিত রূপটি ধ্রুপদী বা চিরায়ত আরবি ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ। কিন্তু কথা বলার সময় ইরাকের লোকেরা আরবির বিভিন্ন কথ্য উপভাষা ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে মেসোপটেমীয় বা ইরাকী আরবিউপভাষাটিতে ১ কোটিরও বেশি লোক কথা বলেন।

সেমিটীয় আরবি ভাষার বাইরে ইরাকে বিভিন্ন ইরানীয় ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে কুর্দি ভাষা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ইরাকের জনগণের প্রায় ২০% কুর্দি ভাষায় কথা বলেন।

এছাড়াও ইরাকের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে নব্য আরামীয় ভাষা, আলতায়ীয় ভাষা (যেমন- আজারবাইজানি, তুর্কমেন, ইত্যাদি), আর্মেনীয় ভাষা, জিপসি ভাষা, ইত্যাদি প্রচলিত।

সংস্কৃতি

ইরাকের রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ইরাকেই গড়ে উঠেছিলো মেসোপটেমিয়া নামক বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা; যা বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ইরাক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারক। দেশটি তার কবি-সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী ও স্থাপত্যশিল্পীদের জন্য আরব বিশ্বের মধ্যে অন্যতম মর্যাদার অধিকারী, যাদের অনেকেই ছিল জগত-খ্যাত। হস্তশিল্প, কার্পেট ইত্যাদি উৎপাদনে ইরাকের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মসুলে আইএস-এর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জয় ঘোষণা ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর
  2. "CIA - The World Factbook"। Cia.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০২
  3. "Iraq"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৪-২১
  4. http://hdr.undp.org/en/media/HDR_2011_EN_Table1.pdf

বহিঃসংযোগ

সরকারী

সাধারণ তথ্য

দেহ এবং জনগণ কোম্পানি

অন্যান্য
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.