দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশটি নিয়ে গঠিত। এর সরকারি নাম কোরীয় প্রজাতন্ত্র (কোরীয়: 대한민국 দাএ-হান্-মিন্-‌গুক্‌)। দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পূর্বে কোরিয়া প্রণালী, যা জাপান থেকে দেশটিকে পৃথক করেছে, এবং পশ্চিমে পীত সাগরসিউল হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

কোরীয় প্রজাতন্ত্র
대한민국
দাএ-হান্-মিন্-‌গুক্‌
পতাকা কুলচিহ্ন
নীতিবাক্য: 널리 인간세상을 이롭게 하라 (홍익인간)
("সমগ্র মানব জাতির কল্যাণ")
জাতীয় সঙ্গীত: আএগুক্গা (애국가)
দেশপ্রেমী স্তবগান
দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান
রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
সিউল
৩৭°৩৫′ উত্তর ১২৭°০′ পূর্ব
সরকারি ভাষা কোরীয়
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ দক্ষিণ কোরীয়, কোরীয়
সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন
   প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইউন
   জাতীয় সংসদের স্পিকার মুন হি-সাঙ্গ
   প্রধান বিচারপতি কিম মিইউঙ্গ-সু
   সাংবিধানিক আদালতের রাষ্ট্রপতি/ প্রধান ইউ নাম-সোক
সংস্থাপন
   মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা মার্চ ১ ১৯১৯ (দে জুরি) 
   স্বাধীনতা (জাপান হতে) আগস্ট ১৫ ১৯৪৫ 
   প্রথম প্রজাতন্ত্র আগস্ট ১৫ ১৯৪৮ 
   জাতিসংঘের স্বীকৃতি সেপ্টেম্বর ১৭ ১৯৯১ 
   সংবিধান গঠন ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৯৮৮ 
   প্রথম রাজ‍্য গঠিত অক্টোবর ৩ ২৩৩৩ BC 
আয়তন
   মোট  কিমি (১০৭তম)
 বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) ০.৩
জনসংখ্যা
   ২০১৯ আনুমানিক ৫১,৭০৯,৯০৩ (২৮তম)
   ঘনত্ব ৫০৭/কিমি (২৩তম)
/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০১৯ আনুমানিক
   মোট $২.৩২০ট্রিলিয়ন[1] (১৪ম)
   মাথা পিছু $৪৪,৭৪০ (২৯তম)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৭) ০.৯০৩
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ২২তম
সময় অঞ্চল কোরীয় মান সময় (ইউটিসি+৯)
কলিং কোড +৮২
ইন্টারনেট টিএলডি .kr, .한국

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অংশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা এবং দক্ষিণ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দখলে রেখেছিল। ১৯৪৮ সালে এ থেকে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ের আবির্ভাব হয়। ১৯৫০-১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের পরে ধ্বংসপ্রায় দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯০ সালে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে এশিয়ান চার ড্রাগনে পরিণত হয়।

রাষ্ট্রের নামকরণ

ইতিহাস

অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়| তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদশে সমাজতান্রিক ব্লকে চলে যায়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদি আমেরিকার মতাদশে এর পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দান করে। তখন থেকে কোরিয়া ২টি ভিন্ন নাম যথা উত্তর ও দক্ষিণ তথা ২টি ভিন্ন অথনৈতিক ব্যবস্থাতে চলতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমেরিকার পুঁজিবাদ আর উত্তর কোরিয়াতে সোভিয়েত ইউনিউনের মত সমাজতন্ত্রবাদ চালু হয়। এটিই ১৯৪৮ সালে পথ দেখিয়েছে অবিভক্ত কোরিয়াকে বিভক্তিকরণ। উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া এর রাজধানীর হয় পিয়ং ইয়াং আর দক্ষিণ কোরিয়া এর রাজধানীর হয় সিওল।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসনিক ব্যবস্থা একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত বহুদলীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ১৯৪৮ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধানে ৫টি বড় সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রতিটি সংশোধনী একটি নতুন প্রজাতন্ত্রের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান প্রজাতন্ত্রটি ১৯৮৮ সালের সংবিধান সংশোধনীর পরে বহাল হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৫ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। মুন জে ইন ২০১৭ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপতি।

সমাজতান্ত্রিক ও মার্ক্সবাদী নেতা কিম ইল সংয়ের নেতৃত্বাধীন কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির নিয়ন্ত্রণে উত্তর কোরিয়ায় একদলীয় শাসন চালু হয়, মূলত যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পূণর্গঠনের জন্যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেয়া হয়। তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া উন্নত হতে শুরু করে সমাজতান্ত্রিক পথে। দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদি আমেরিকার মতাদশে এর পুঁজিবাদি ব্লকে যোগ দান করে। কিন্তু এ উন্নতি কোন সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা আমেরিকা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা এই দেশের রাজনীতি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তুলে ও নানা ভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়া এর পতন এর জন্য কাজ শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমেরিকার পুঁজিবাদ চালু হয়। তারা এ দেশ এর মহান নেতা কিম ইল সংয়ের নেতৃত্বকে কখনও অগণতান্ত্রিক, কখনও স্তালিনিয় বা একনায়কতান্ত্রিক শাসন হিসাবে উল্লেখ করে। যদিও সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়া নেতা কিম ইল সংয়ের সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আদর্শতে দেশে প্রচুর উন্নতি সাধন করছিল এবং উন্নয়নে এগিয়ে ছিল । সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তাদের সম্পক ছিল মধুর। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নমুখীতার প্রভাব উত্তর কোরিয়া উপরও দেখা যায়। তবুও পুঁজিবাদি মাকিন যুক্তরাস্ট্র এই উন্নতি মেনে নিতে পারছিল না, যেহেতু সকল সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র ছিল তাদের চোখে শত্রু। তারা সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র যে দুনিয়ার পক্ষে কতটা ক্ষতিকর তা তুলে ধরতে থাকে এবং সকল সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্রই যে মানবজাতি ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকি তা বার বার নানা কুটকথা এর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে থাকে। সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র এর পতন যে নিশ্চিত তা তারা নানা রকম পুঁজিবাদি মডেল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র ব্যবস্থা যে আবার আরেকটি মহাযুদ্ধ শুরু করবে তা নিয়ে পুঁজিবাদি মাকিন যুক্তরাষ্ট্র পুর্বসংকেত করেছিল। যদিও ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত কোন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রই মহাযুদ্ধ শুরু করেনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া এর রাজধানীর হয় সিউল। কোরিয়ার বর্তমান প্রধানমন্তী কিম জং উন।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

ভৌগোলিক অবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পশ্চিমে পীত সাগর, পূর্বে জাপান সাগর এবং দক্ষিণে পূর্ব চীন সাগর। কোরিয়া উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত। উত্তর হতে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৩০% এলাকা নিম্নভূমি এবং বাকী অংশ উচ্চভূমি বা পর্বতমালা। নিম্নভূমির অধিকাংশই সমুদ্র উপকূলে, বিশেষত পশ্চিম উপকূলে প্রধান প্রধান নদীর অববাহিকাতে অবস্থিত। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলি হল সৌল শহরের চারপাশের হান নদী অববাহিকা, সৌলের দক্ষিণে বিয়েওংতায়েক উপকূলীয় সমভূমি, গেউম নদীর অববাহিকা, নাকদং নদীর অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের ইয়েওংসান এবং হোনাম সমভূমিগুলি। দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূল ধরে একটি সরু সমভূমি বিস্তৃত।

অর্থনীতি

দক্ষিণ কোরিয়াকে টাইগার অর্থনীতির দেশ বলা হয়।

জনসংখ্যা

কোরীয় ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় সব লোক কোরীয় ভাষাতে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

শিক্ষা

সাক্ষরতার হারঃ মোট - ৯৮.৩% পুরুষ - ৯৯.৫% নারী - ৯৭.৩%

জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা

সংস্কৃতি

দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি উদ্ভূত হয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে। ১৯৪৮ সালে কোরিয়ার বিভক্ত হওয়ার ফলেউত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির তারতম্য দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি হচ্ছে অত্যাধুনিক। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কারণে পোশাক-পরিচ্ছেদ, রন্ধন, বাসস্থান ইত্যাদিতে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়েছে, আর এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার আধুনিক সংস্কৃতি। কোরিয়া সংস্কৃতি এশিয়া ও বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে বলে একে বলা হয় কোরীয় ঢেউ

উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক বিভক্তিকরণই অপসারণ করেছে আধুনিক কোরীয় সংস্কৃতি। তথাপি উভয় রাষ্ট্রের পাঁচ হাজারাধিক বছরের ইতিহাস এবং বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম। সুদূর প্রাচীনকালে কোরীয় উপদ্বীপ এর লগ্ন থেকেই সেখানে মানবজাতি বসবাস করতে আরম্ভ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি উদ্ভূত হয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে। ১৯৪৮ সালে কোরিয়ার বিভক্ত হওয়ার ফলে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির তারতম্য দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি হচ্ছে অত্যাধুনিক। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কারণে পোশাক-পরিচ্ছেদ, রন্ধন, বাসস্থান ইত্যাদিতে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়েছে, আর এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার আধুনিক সংস্কৃতি। কোরিয়া সংস্কৃতি এশিয়া ও বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে বলে একে বলা হয় কোরীয় ঢেউ।

সামরিক বাহিনী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.