মালদ্বীপ

মালদ্বীপ বা মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র (ধিবেহী: ދިވެހިރާއްޖޭގެ ޖުމްހޫރިއްޔާ, ধিবেহী রাজ্যে জুমহূরিয়া) ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ।[2]

মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র
  • ދިވެހިރާއްޖޭގެ ޖުމްހޫރިއްޔާ
  • ধিবেহী রাজ্যে জুমহূরিয়া
পতাকা প্রতীক
জাতীয় সঙ্গীত: কাউমি সালাম
জাতীয় সালাম
ভারত মহাসাগরে অবস্থান
ভারত মহাসাগরে অবস্থান
রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
মালে
৪°১০′ উত্তর ৭৩°৩০′ পূর্ব
সরকারি ভাষা ধিবেহী
জাতিগোষ্ঠী(২০১১) ≈১০০% মালদ্বীপি[1]
ধর্ম ইসলাম
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ মালদ্বীপি
সরকার প্রজাতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি আব্দুল্লাহ ইয়ামিন
আইন-সভা গণমাজলি
স্বাধীনতা
   যুক্তরাজ্য থেকে ২৬ জুলাই ১৯৬৫[2] 
   বর্তমান সংবিধান ৭ আগস্ট ২০০৮ 
আয়তন
   মোট ২৯৮[3] কিমি (২০৬তম)
১১৫ বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) নগণ্য
জনসংখ্যা
   জুলাই ২০১৩ আনুমানিক ৩৯৩,৫০০[4] (১৭৫)
   ২০১৪ আদমশুমারি ৩৪১,৩৫৬[5]
   ঘনত্ব ১,১০২.৫/কিমি (১১)
২.৪/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০১৬ আনুমানিক
   মোট $৪.৯৩৫ বিলিয়ন[6] (১৬২)
   মাথা পিছু $১৩,৯৫৪[6] (৬৯)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) ২০১৬ আনুমানিক
   মোট $৩.২২৮ বিলিয়ন[6]
   মাথা পিছু $৯,১২৬[6]
জিনি সহগ (২০০৫-২০১৩)37.4[7]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪) 0.706[8]
উচ্চ · ১০৩তম
মুদ্রা মালদ্বীপীয় রুফিয়া (MVR)
সময় অঞ্চল মালদ্বীপ মান সময় (ইউটিসি+৫)
তারিখ বিন্যাস দদ/মম/বব
গাড়ী চালনার দিক বাম
কলিং কোড +৯৬০
ইন্টারনেট টিএলডি .mv
ক. বিদেশী বাদে

মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত "মালে দিভেহী রাজ্য" হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত 'মালা দ্বীপ' অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা 'মহিলা দ্বীপ' অর্থ নারীদের দ্বীপ হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত। প্রাচীন সংস্কৃতে যদিও এরকম কোনও অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ নামক এক অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। লক্ষদ্বীপ বলতে মালদ্বীপ ছাড়াও লাক্কাদ্বীপ পুঞ্জ অথবা চাগোস দ্বীপপুঞ্জকেও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। অপর একটি মতবাদ হল তামিল ভাষায় 'মালা তিভু' অর্থ দ্বীপমাল্য হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত ।

মধ্যযুগে ইবন বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে 'মহাল দিবিয়াত' নামে উল্লেখ করেছেন। আরবীতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়।[2]

অবস্থান

শ্রীলঙ্কা হতে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ১০১০টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত।

মালদ্বীপ নামকরণ

মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ দাবি করেন মালদ্বীপ অর্থ হচ্ছে ‘মেল দ্বীপ রাজ’ বা পুরুষশাসিত রাজ্য। মূলত ‘দ্বীপ’ একটি সংস্কৃত শব্দ আর ‘মাল’ শব্দটি দেশটির রাজধানীর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক আমলে ডাচ্রা তাদের নথিপত্রে এ দ্বীপপুঞ্জের নাম মালদ্বীপ বলে উল্লেখ করেন। পরে ব্রিটিশরাও একই নাম ব্যবহার করেন, যা দেশটির স্থানীয় নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শ্রীলঙ্কান প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তবে কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত মালাদ্বীপ থেকে যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এ দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্কাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে এক হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও এক লাখ দ্বীপ নেই। আবার আরব পর্যটক ইবনে বতুতা এ দ্বীপকে বলেছেন ‘মহল দ্বীপ’ বা রাজপ্রাসাদের দ্বীপ। আর মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে ইবনে বতুতার ব্যাখ্যার নিরিখে এখনো মহল বা রাজপ্রাসাদের ছবি ব্যবহৃত হয়।[2]

ইতিহাস

মালদ্বীপ বা দ্বীপের মালা; সংস্কৃত শব্দ ‘দ্বীপমালা’ শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কেউ কেউ বলে যে- ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথা থেকে মালদ্বীপ শব্দটির উদ্ভব। ‘মালে দিভেই রাজে’-এই কথার অর্থ, ‘দ্বীপরাজ্য’। অনেকে মালদ্বীপকে মহলদ্বীপও বলে। মহল মানের (আরবিতে ) প্রাসাদ। দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপের মুসলিম শাসন। ইবনে বতুতা মালদ্বীপ গিয়েছিলেন ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কাজী ছিলেন। সংস্কৃতে মালদ্বীপকে লক্ষদ্বীপও বলা হয়েছে। এর অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমাহার। আসলে মালদ্বীপ লক্ষ দ্বীপের সমাহার নয়; রয়েছে ২৬টি অ্যাটোল। (অ্যাটোল মানে লেগুন ঘেরা প্রবালদ্বীপ) ২৬টি অ্যাটোল আর ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ। যার মধ্যে কেবল ২০০টি বাসযোগ্য। প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থে মালদ্বীপকে বলা হয়েছে মহিলা দ্বীপ। সম্রাট অশোকের সময়েই অর্থাৎ সেই খ্রিস্ট ৩য় শতকেই কতিপয় বৌদ্ধ ভিক্ষু নাকি গিয়েছিল লক্ষদ্বীপে । এরপর দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ওই দ্বীপে গিয়ে বাস করতে থাকে। দ্রাবিড় ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সম্ভবত ওখানে গিয়েছিল দক্ষিণ ভারত থেকে। এর পর সিংহলীরা মালদ্বীপ যায়। এরা ছিল বৌদ্ধ। এরপর মুসলিমরা ঐ দ্বীপে মুসলিম সংস্কৃতি প্রোথিত করে। সময়টা দ্বাদশ শতক। ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি -এই ৮০০ বছর ৯২ জন সুলতান নিরবিচ্ছিন্নভাবে শাসন করে দ্বীপটি ।

১৫০৭ সালে পর্তুগীজ পর্যটক দম লোরেনকো দে আলামেইদা মালদ্বীপে পৌঁছায়। সে সময় পশ্চিম ভারতের গোয়ায় ছিল পর্তুগীজদের বাণিজ্য কুঠি। পর্তুগীজরা বলপূর্বক কর আদায় করত । ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দ। মালদ্বীপের সুলতান হলেন সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম। তিনি পর্তুগিজ দের মালদ্বীপ থেকে বহিস্কার করেন। সুলতান থাকুরুফানি আল-আযম মালদ্বীপের নবযুগের দ্রষ্টা। তিনিই নতুন লেখনির প্রচলন করেন। গড়ে তোলেন সামরিক বাহিনী। ব্রিটিশরা ১৮১৫ সালে শ্রীলঙ্কা পদানত করে। এরপর পদানত করে মালদ্বীপও। যা হোক। ১৯৫৩ সালে সালতানাতএর অবসান হয় ও মালদ্বীপ হয়ে ওঠে রিপাবলিক। মালদ্বীপের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমিন দিদি। তিনি নারীস্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। গোঁড়ারা পিছু লাগল। ফলে আমিন দিদি উৎখাত হয়ে যান। এরপর আইনসভা পুনরায় সালতানাত এর পক্ষে রায় দেয়। নতুন সুলতান হন মোহাম্মদ দিদি। ইনি ব্রিটিশদের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দিলে ব্যাপক জনবিক্ষোভ সংগঠিত হয়। যা হোক। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ন স্বাধীনতা লাভ করে।

রাজনীতি

দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন এবং তিনি হচ্ছেন তাদের প্রধান। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। দেশটিতে ৫০ সদস্যের একটি মজলিসে সুরা আছে। এরা পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই ৫০ সদস্যের মধ্যে আটজন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হন। এই একটি উপায়েই মহিলারা সংসদে প্রবেশের সুযোগ পান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ২০০৫ সালে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ দলের নাম ‘দ্য মালদ্বীপিয়ান পিপলস পার্টি’। একই বছর আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয় ‘মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ হিসেবে। এভাবেই দেশটিতে বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়।[2]

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

ক্ষুদ্র হলে দেশটিতে আছে নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দ্য মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এমএনডিএফ) নামে তাদের একটি নিজস্ব যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা। এ বাহিনীর হাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমোদন দেয়া আছে। কোস্টগার্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস, ইনফেন্ট্রি সার্ভিস, ডিফেন্স ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমএনডিএফ’র বাহিনী পরিচালনা করে থাকে।[2]

ভূগোল

অর্থনীতি

প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বলা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্প এখন পর্যটন। মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করা হয়। গত এক দশক যাবৎ দেশটির জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি গড়ে 7.8 শতাংশের বেশি।[2]

জনসংখ্যা

মালদীপের জনসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ । শতকরা ১০০ ভাগ মুসলমান। ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা মালদ্বীপের সরকারি ভাষা। এই দ্বীপগুলির প্রায় সবাই ধিবেহী ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলেন। এছারাও এখানে সিংহলি ভাষা, আরবি ভাষা এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রচলন আছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

সংস্কৃতি

পরিবহন

TMA Terminal

ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মালদ্বীপ প্রধান প্রবেশদ্বার । সরকারি মালিকানাধীন আইল্যান্ড এভিয়েশন সার্ভিসেস ( মালদ্বীভিয়ান ) চেন্নাইতিরুবনন্তপুরম , ভারতবাংলাদেশ এ আন্তর্জাতিক পরিবহন করে থাকে ।

আরও দেখুন

তথ্যসুত্র

  1. Levinson, David (১৯৪৭)। Ethnic groups worldwide: a ready reference handbook। Oryx Publishers। আইএসবিএন 978-1-57356-019-1।
  2. Qposter। "মালদ্বীপ – Country Information"www.qposter.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৫
  3. "FIELD LISTING :: AREA"CIA World Factbook। CIA World Factbook। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৬
  4. "Maldives"CIA World Factbook
  5. "GeoHive – Maldives Population"GeoHive
  6. "Maldives"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ 2014 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  7. "2015 Human Development Report Statistical Annex" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৫। পৃষ্ঠা 17। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
  8. "2015 Human Development Report Statistical Annex" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৫। পৃষ্ঠা 13। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.