কাতার

কাতার পারস্য উপসাগরের একটি দেশ।[9] এটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত কাতার উপদ্বীপে অবস্থিত। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব, এবং এর পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মত কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। এখানে ভূ-পৃষ্ঠস্থ কোন জলাশয় নেই এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও যৎসামান্য। বেশির ভাগ লোক শহরে, বিশেষত রাজধানী দোহা শহরে বাস করে। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ আছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৯শ শতকের শেষভাগ থেকে আল-থানি গোত্রের লোকেরা কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দেশটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯৭১ সালে এটি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্তও এটি একটি তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশ ছিল। ঐ সময় দেশটিতে পেট্রোলিয়ামের মজুদ আবিষ্কৃত হয় এবং এগুলি উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি।[10]

دولة قطر (Arabic)
Dawlat Qatar
পতাকা Emblem
জাতীয় সঙ্গীত: السلام الأميري
As Salam al Amiri  (transliteration)
আমীরী স্যালুট


কাতার এর অবস্থান ( সবুজ অংশ )
কাতার এর অবস্থান ( সবুজ অংশ )
রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
Doha
সরকারি ভাষা আরবী
Recognised languages ইংরেজী
জাতিগোষ্ঠী(2010[1])
  • 25.0% Indian
  • 15% Nepalese
  • 12.1% Qatari
  • 8% Bangladeshi
  • 6.2% Somalis
  • 4% Sri Lankan
  • 3.8% Pakistani
  • 52.5% Other
ধর্ম ইসলাম
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ Qatari
সরকার Unitary constitutional monarchy
   Emir Tamim bin Hamad Al Thani
   Deputy Emir Abdullah bin Hamad bin Khalifa Al Thani
   Prime Minister Abdullah bin Nasser bin Khalifa Al Thani
আইন-সভা Consultative Assembly
সংস্থাপন
   কাতার জাতীয় দিবস ১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ 
   স্বাধীনতা ঘোষনা
1 September 1971 
   Independence from the United Kingdom
3 September 1971 
   মোট ১১ কিমি (164th)
৪.৬ বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) 0.8
জনসংখ্যা
   ২০১৬ আনুমানিক ২,৬৭৫,৫২২[a][2] (১৪২ তম)
   ২০১০ আদমশুমারি ১,৬৯৯,৪৩৫[3] (১৪৮ তম)
   ঘনত্ব ১৭৬/কিমি (76th)
/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০১৭ আনুমানিক
   মোট $৩৫৩.১৪৩ বিলিয়ন[4] (৪৯ তম)
   মাথা পিছু $১৪৫,৮৯৪[4] (1st)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) ২০১৫ আনুমানিক
   মোট $১৮৫.৩৯৫ বিলিয়ন[4]
   মাথা পিছু $৬৮,৯৪০[5] (4th)
জিনি সহগ (2007)41.1[6]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪) ০.৮৫০[7]
অতি উচ্চ · ৩২ তম
মুদ্রা Riyal (QAR)
সময় অঞ্চল AST (ইউটিসি+3)
গাড়ী চালনার দিক right[8]
কলিং কোড +974
ইন্টারনেট টিএলডি

ইতিহাস

প্রাগৌতিহাসিক কাতারে স্থায়ী জনবসতির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তবে প্রাগৌতিহাসিক কাল থেকে কাতারে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রত্নতত্তবিদ ডে কার্ডির মতে, কাতারে প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো। এখানের আবহাওয়া ছিলো বৃষ্টিবহুল, জলপ্রপাত, উচু ঘাস ও স্বচ্ছ পানির নালা ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আধুনিক ইতিহাসের জনক হেরাডোটাসের মতে, কাতারে 'কান্নানিয়ান' নামক জেলে সম্প্রদায়ের বসবাস ছিলো। এরা মাছ ধরার মৌসুমে অস্থায়ী অভিযান করে মাছ শিকার করত। খ্রিঃপূঃ ৪৯৯-৪৪৯ অব্দে পারস্য ও প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্যের যুদ্ধের রেকর্ড হতে এ তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে কাতারের বিভিন্ন প্রত্নতত্ত যেমন, মাটির বাসন, চকমকি পাথর, পাথর কাটার যন্ত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, এ কাতারের পূর্ব উপকূল রাস আব্রুখের সাথে মেসোপটেমিয়ান আল উবায়েদ গোত্রের ব্যবসা ছিলো। পরবর্তিতে টলেমির মানচিত্রে কাতারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেখানে একে কাথারা ও এর একটি শহর কাদারা নামে দেখানো হয়।

ইসলাম পূর্ব যুগে কাতার আরব উপ দ্বীপের অন্যান্য দেশের মতোই পারস্যের 'শাসানী' রাজবংশের অধিনস্থ ছিলো। পরবর্তিতে সপ্তম শতকে সমগ্র আরব উপ দ্বীপে ইসলাম প্রসার লাভ করলে এ অঞ্চলও ইসলামের ছায়ায় চলে আসে। এ সময় বনু আমের বিন আবদ উল কায়েস, বনু সা'দ বিন যায়েদ মিনাহ বিন তামি্ম নামক বিভিন্ন গোত্রের বসবাস ছিলো। বর্তমান শাসক গোষ্ঠী আল-থানি, আ্ল তামিমিরই একটি শাখা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম দক্ষিণ আরবীয় অঞ্চলে ইসলাম প্রসারে আলা আল হাদরামি কে প্রেরণ করেন ৬২৮ সালে। তখন কাতার অঞ্চলে শাসন করছিলো স্থানীয় বনু তামিম গোত্র। বনু তামিমের গোত্র প্রধান মুনযির বি্ন সাওয়া আল তামিমি ইসলাম গ্রহণে সম্মত হন এবং পরবর্তীতে অন্যান্য গোত্রে ইসলাম প্রসারে ভূমিকা রাখেন।

ইসলামের প্রথম যুগে, কাতারে স্থায়ী বসবাস ছিলো। এছাড়া 'মুরওয়াব' নামক স্থানে একটি দুর্গ ও একশটির মতো পাথুরে বাড়ীর সন্ধান মিলে। এ সময় কাতারের মূল ব্যবসা মাছ এর পাশাপাশি উট ও ঘোড়া পালন ও বিক্রয় ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। হাদীস থেকে জানা যায়, কাতারে এক ধরনের কাপড় তৈরি হতো উটের পশম থেকে। এটিও কাতারের অন্যতম ব্যবসায়িক আকর্ষণ ছিলো। উমাইয়া (৬৬১-৭৫০ খ্রী) ও আব্বাসীয় (৭৫০-১২৫৮ খ্রী) আমলে দামেস্ক ও বাগদাদ কেন্দ্রিক ব্যবসা গড়ে ওঠে। উমাইয়া আমলে এ অঞ্চল বিখ্যাত উট ও ঘোড়া ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়। আব্বাসীয় আমলে মুক্তা ব্যবসার উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। কাতারি মুক্তার চাহিদা প্রাচ্যের দেশগুলোয় বেড়ে চলে, চীনেও কাতারি মুক্তার চাহিদা ছিলো।

পরবর্তীতে ব্যবসায়র প্রাণকেন্দ্র হয় দুইটি উপসাগর ও লোহিত সাগর। ষোড়শ শতকে কাতার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতার মুখে পড়ে। এ শতকের প্রথমার্ধ ছিলো মামলুকের অধিকারে। পরবর্তীতে মামলুকের প্রভাব কমে যাওয়ায় আরব অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয় উসমানীয় সালতানাত। এছাড়া, স্থানীয় শক্তি ছিলো হরমুজ। উসমানীয় সালতানাত মামলুককে সরিয়ে আরব অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। ইরানের সাফাভি রাজবংশ উসমানীয় থেকে বাগদাদ দখল করে। একই সময় স্প্যানিশ- পর্তুগীজদের হাতে মুসলিম ইউরোপীয় শক্তি আল আন্দালুসের পতন হয়। পর্তুগীজ নৌ শক্তি বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তারে ছড়িয়ে পরে। এরা খুব অল্প সময়ে দূর্ধর্ষতার জন্য খ্যাতি অর্জন করে। ১৫০৯ সালে উসমানিয়া, মামলুক ও ভারতীয় মুসলিম রাজশক্তি মিলিত হয়ে পর্তুগীজদের দমনে শক্তি প্রয়োগ করেন। ইতিহাসে এটি তিন রাজার যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে পর্তুগীজ দের নৌবহরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

আধুনিক কাতারের জন্মঃ কাতার ও বৃটিশ চুক্তি ১৮৬৮ সালে বৃটিশ – আল থানি চুক্তির মাধ্যমে জন্ম লাভ করে আধুনিক কাতারের। ১৮৬৮ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে লুইস পেলি আল ওয়াকরায় মুহাম্মাদ আল থানি ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে মিলিত হন। ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৬৮ সালে মুহাম্মদ বিন থানি চুক্তিবদ্ধ হতে সম্মত হন। বিষয় গুলো ছিলোঃ ১। দোহায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করা। ২। সমুদ্রে অশান্তি সৃষ্টি হতে বিরত থাকা। ৩। যে নিজেদের ও প্রতিবেশীর মাঝে সৃষ্ট যে কোন ধরনের সমস্যায় বৃটিশদের ফয়সালা গ্রহণ করা। ৪। বাহরাইনের তৎকালীন আমীর আলি বিন খলিফার সাথে সুসম্পর্ক রাখা। ৫। বাহরাইনের পূর্ববর্তী আমির মোহাম্মদ বিন খলিফাকে কাতারে পাওয়া গেলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া।

রাজনীতি

কাতারের রাজনীতি একটি পরম রাজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। কাতারের আমীর হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান তামিম বিন হামাদ আল থানি ২০১৩ সালে তার পিতা হামাদ বিন খলিফা আল থানির হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটির আমীর ছিলেন হামাদ বিন খলিফা আল থানি। আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি ২০১৩ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী। কাতারের মোট জনসংখ্যা ১.৮ মিলিয়ন। কাতার বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাষ্ট্র। সৌদি আরব, ওমান এর পর কাতার অন্যতম রক্ষণশীল রাষ্ট্র। কাতারের নাগরিক সুযোগ সুবিধার মান খুবই উন্নত।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

  • দোহা (রাজধানী দোহা'র সাথে যুক্ত আল রাইয়ান ও দায়্যান মিউনিসিপ্যালিটি)
  • আল ওয়াকর‍্যা
  • আল খোর
  • দায়্যান
  • আল রাইয়ান
  • মিসাইড
  • দোক্ষান
  • আল সামাল

অর্থনীতি

জনসংখ্যা

আরবি ভাষা কাতারের সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় ৫৬% লোক আরবি ভাষাতে কথা বলেন। প্রায় এক-চতুর্থাংশ লোক ফার্সি ভাষায় কথা বলেন। বাকীরা ভারতীয় উপমহাদেশের ও ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য ভাষাতে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

সংস্কৃতি

তথ্যসূত্র

  1. "Population structure"। Ministry of Development Planning and Statistics। ৩১ জানুয়ারি ২০১৭।
  2. "Populations"। Qsa.gov.qa। ৯ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১০
  3. "Report for qatar (PPP valuation of country GDP)"। IMF। অক্টোবর ২০১৬।
  4. "Report for Selected Countries and Subjects (PPP valuation of country GDP)"। IMF। অক্টোবর ২০১৬।
  5. "GINI index"। World Bank। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩
  6. "2015 Human Development Report" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
  7. "List of left- & right-driving countries - World Standards"। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৭
  8. Johnstone, T. M. (২০০৮)। "Encyclopaedia of Islam"Ķaṭar। Brill Online। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩ (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  9. "Indices & Data | Human Development Reports"। United Nations Development Programme। ১৪ মার্চ ২০১৩। ১২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৩

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.