আজারবাইজান

আজারবাইজান (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan আজ়্যার্বায়জান্‌), সরকারী নাম আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র (আজারবাইজানি ভাষায়: Azərbaycan Respublikası) এশিয়া মহাদেশের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এটি কৃষ্ণ সাগরকাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী স্থলযোটক দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত রাষ্ট্র। আয়তন ও জনসংখ্যার দিকে থেকে এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া। এছাড়াও ছিটমহল নাখশিভানের মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের একচিলতে সীমান্ত আছে। আর্মেনিয়ার পর্বতের একটি সরু সারি নাখশিভান ও আজারবাইজানকে পৃথক করেছে। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে আর্মেনীয়-অধ্যুষিত এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখের আনুগত্য বিতর্কিত। কাস্পিয়ান সাগরে অবস্থিত অনেকগুলি দ্বীপও আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত। আজারবাইজানের রাষ্ট্রভাষা আজারবাইজানি। এখানে মূলত শিয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী আজেরি জাতির লোকদের বাস। কাস্পিয়ান সাগরতীরে অবস্থিত বন্দর শহর বাকু আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

প্রজাতন্ত্রী আজারবাইজান
Azərbaycan Respublikası
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: None
জাতীয় সঙ্গীত: Azərbaycan marşı
(আজারবাইজানের মার্চ)
আজারবাইজানের অবস্থান
আজারবাইজানের অবস্থান
রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
বাকু
৪০°২২′ উত্তর ৪৯°৫৩′ পূর্ব
সরকারি ভাষা Azerbaijani
সরকার প্রজাতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ
   প্রধানমন্ত্রী আর্তুর রাসিজাদ
স্বাধীনতা লাভ সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে
   ঘোষিত ৩০শে আগস্ট, ১৯৯১ 
   আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজান এসএসআর 
আয়তন
   মোট ৮৬,৬০০ কিমি (১১৩তম)
৩৩,৪৩৬ বর্গ মাইল
   জল/পানি (%) ১.৬%
জনসংখ্যা
   2018 আনুমানিক 9,911,646[1] (91st)
   ঘনত্ব 113/কিমি (99th)
২৯৩/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
2018 আনুমানিক
   মোট $175 billion[2] (72nd)
   মাথা পিছু $17,857[2] (71st)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) 2018 আনুমানিক
   মোট $39.207 billion [2] (110th)
   মাথা পিছু $4,097[2] (110th)
জিনি সহগ (2018)31.8[3]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (2018) 0.759[4]
উচ্চ · 78th
মুদ্রা Manat (AZN)
সময় অঞ্চল (ইউটিসি+৪)
   গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)  (ইউটিসি+৫)
কলিং কোড ৯৯৪
ইন্টারনেট টিএলডি .az

১৮শ ও ১৯শ শতকে ককেশীয় এই দেশটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮শে মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক লাল সেনারা এটি আক্রমণ করে আবার রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে[5][6] এবং ১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে আন্তঃককেশীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়াআর্মেনিয়াতে ভেঙে দেওয়া হয়। তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব্বের সূত্রপাত। নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়ার সাথে একত্রিত হতে চায়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে[7] এই দ্বন্দ্ব্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। ফলে নতুনভাবে স্বাধীন দেশটির প্রথম বছরগুলি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবনতি, এবং নাগোর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে অতীবাহিত হয়। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়রা যুদ্ধে ক্ষান্ত দেয়। এখনও নাগোর্নো-কারাবাখ ও আরও ৭টি আজারবাইজানি জেলা আর্মেনীয়দের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৯৫ সালে আজারবাইজানে প্রথম আইনসভা নির্বাচন অণুষ্ঠিত হয় এবং ঐ বছরই সোভিয়েত-উত্তর নতুন সংবিধান পাস করা হয়।

আজারবাইজানের বাকু তেলক্ষেত্রগুলি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দুর্নীতি, সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ এবং দুর্বল সরকারের কারণে দেশটি খনিজ সম্পদ থেকে সম্ভাব্য মুনাফা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

রাজনীতি

আজারবাইজানে রাজনীতি-র ভিত্তি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র, যেখানে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান, এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও সংসদ উভয়ের হাতে ন্যস্ত। বিচার বিভাগ স্বাধীন।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

আজারবাইজান ১০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল;৬৬ টি রেয়ন এবং ৭৭ টি শহরে বিভক্ত।[8]

ভূগোল

আজারবাইজান ইউরেশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশটির ভূগোলে তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:

  • কাস্পিয়ান সাগর, যার তটরেখা দেশটির পূর্বে একটি প্রাকৃতিক সীমানা সৃষ্টি করেছে।
  • উত্তরের বৃহত্তর ককেশাস পর্বতমালা।
  • দেশটির কেন্দ্রভাগের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি।

আজারবাইজান মোটামুটি পর্তুগাল বা মার্কিন অঙ্গরাজ্য মেইন-এর সম-আয়তনবিশিষ্ট। দেশটির আয়তন প্রায় ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার।

অর্থনীতি

আজারবাইজানের অর্থনীতি বর্তমানে একটি সন্ধি পর্যায়ে বিদ্যমান, যেখানে সরকার এখনও একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে চলেছে। আজারবাইজানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তেলের ভাণ্ডার। বৈচিত্র‌্যময় জলবায়ু অঞ্চলের উপস্থিতির কারণে দেশটির কৃষি খাতের উন্নতির সম্ভাবনাও প্রচুর। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সহযোগিতায় আজারবাইজান একটি সফল অর্থনৈতিক সুস্থিতিকরণ প্রকল্প হাতে নেয়, যার ফলশ্রুতিতে ২০০০ সাল থেকে দেশটির অর্থনীতি ১০% হারে প্রবৃদ্ধি লাভ করে চলেছে। ২০০৭ সালে আজারবাইজানের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পায়। মূলত তেল খাতই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। ২০০৭ সালের স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) ৫২.৮% খনিজ তেল খাত থেকে আসে।

আজারবাইজানের মুদ্রার নাম মানাত।

জনসংখ্যা

আজারবাইজানে প্রায় ৯৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ লোকের বাস। এদের মধ্যে ৯৫% লোক জাতিগতভাবে আজারবাইজানি। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোকের মধ্যে লেজগীয়, রুশ, আর্মেনীয় ও তালিশ জাতির লোক প্রধান। ইসলাম ধর্ম (মূলত শিয়া) আজারবাইজানিদের প্রধান ধর্ম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৬৬%।

সংস্কৃতি

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Аzərbаycаndа dеmоqrаfik vəziyyət" (Azerbaijani ভাষায়)। Azərbaycan Respublikasının Dövlət Statistika Komitəsi। ১৩ অক্টোবর ২০১৭।
  2. "Azerbaijan"। International Monetary Fund।
  3. "Gini Index"। World Bank। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
  4. "Human Development Report 2016 – "Human Development for everyone"" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭
  5. Pipes, Richard (১৯৯৭)। The Formation of the Soviet Union: Communism and Nationalism 1917–1923 (2nd সংস্করণ)। Cambridge, Massachusetts: Harvard University Press। পৃষ্ঠা 218–220, 229। আইএসবিএন 978-0-674-30951-7।
  6. King, David C. (২০০৬)। Azerbaijan। Marshall Cavendish। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 978-0761420118।
  7. "The State Statistical Committee of the Republic of Azerbaijan, Administrative and territorial units of Azerbaijan Republic"। Azstat.org। ১২ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১১

বহিঃসংযোগ

সরকার
সংবাদ মিডিয়া
পর্যটন
সাধারণ তথ্য
অন্যান্য
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.