প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ড (আইরিশ ইংরেজি: Ireland আই‌র্লন্ড্‌, আইরিশ গ্যালিক: Éire এরা, আল্‌স্টার স্কট্‌স: Airlann অ্যার্লান্‌) উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। আধুনিক সার্বভৌম রাষ্ট্রটি আয়ারল্যান্ড দ্বীপের পাঁচ-ষষ্ঠাংশ নিয়ে গঠিত যা ৩ মে ১৯২১ সনে যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রথমে আইরিশ ফ্রি স্টেট এবং পরবর্তিতে প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড গঠন করে। দেশটির রাজধানী ডাবলিন যা আয়ারল্যান্ড দ্বীপের সর্ববৃহৎ শহর।

আয়ারল্যান্ড
Éire
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় সঙ্গীত: Amhrán na bhFiann  
The Soldier's Song
আয়ারল্যান্ডের অবস্থান
রাজধানীডাবলিন
৫৩°২৬′ উত্তর ৬°১৫′ পশ্চিম
বৃহত্তম শহর capital
সরকারি ভাষা আইরিশ, ইংরেজি
সরকার প্রজাতন্ত্রী এবং সংসদীয় গণতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি ম্যারি ম্যাকএলিজ
   Taoiseach Brian Cowen
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে
   ঘোষিত এপ্রিল ২৪ ১৯১৬ 
   Ratified জানুয়ারি ২১ ১৯১৯ 
   Recognised ডিসেম্বর ৬ ১৯২২[1] 
   বর্তমান সংবিধান ডিসেম্বর ২৯ ১৯৩৭ 
   জল/পানি (%) ২.০০
জনসংখ্যা
   ২০০৬ আনুমানিক ৪,২৩৯,৮৪৮ (১২১তম)
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
২০০৬ আনুমানিক
   মোট $১৭৭.২ বিলিয়ন (৪৯তম)
   মাথা পিছু $৪৩,৬০০ (২য়)
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) ২০০৬ আনুমানিক
   মোট $২০২.৯ বিলিয়ন (৩০তম)
   মাথা পিছু $৫০,১৫০ (৫ম)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৪) ০.৯৫৬
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ৪র্থ
মুদ্রা ইউরো ()1 (EUR)
সময় অঞ্চল WET (ইউটিসি+0)
   গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) IST (WEST) (ইউটিসি+1)
কলিং কোড ৩৫৩
ইন্টারনেট টিএলডি .ie2
১. ১৯৯৯ এর আগে: আইরিশ পাউন্ড.
২. The .eu domain is also used, as it is shared with other European Union member states.

ইতিহাস

আদি অবস্থা - গ্রেট বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ড

ইংল্যান্ড বিভিন্ন বংশের রাজা ও রানীদ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। তবে পদবীর মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে দুইবার। স্কটল্যান্ড কয়েকবার স্বাধীনতা হারালেও ১৭০৭ সন পর্যন্ত কম বেশি স্কটিশ রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে। অপর দিকে ওয়েলস ১২৮২ সন পর্যন্ত বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে নিজস্ব শাসকদ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে। তবে ইংল্যান্ড বা স্কটল্যান্ড এর মত এতটা ঐক্যবদ্ধ তারা কখনই ছিল না।

অপর দিকে আয়ারল্যান্ড দ্বীপ জুড়ে ছিল একটি রাজ্য আয়ারল্যান্ড। ১১৯৮ সন পর্যন্ত এই রাজ্যটি একক রাজার শাসনে ছিল যাদের বলা হতো হাই কিং অব আয়ারল্যান্ড। কিন্তু পরবর্তিতে ছোট ছোট রাজার অধীনে ১৫৪১ সন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ভাবে দ্বীপটি শাসিত হয়েছে।

ইংল্যান্ড কতৃক স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস আক্রমন

বরাবরই গ্রেট বৃটেন দ্বীপের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় ছিল ইংল্যান্ড। রাজা প্রথম এডওয়ার্ড-এর সময় ইংল্যান্ড এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে পুরো গ্রেট বৃটেনকেই নিজেদের দখলে আনার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। এ সময় ইংল্যান্ড ওয়েলস দখল করে এবং স্কটল্যান্ডকে প্রায় দখল করে ফেলার মত অবস্থায় চলে যায় যদিও পরে প্রথম এডওয়ার্ড-এর মৃত্তুর পর আর সেটা সম্ভব হয়নি। ১২৮২ সনে ওয়েলসের সর্বশেষ শাসক লিওয়েলিন দ্যা লাস্টকে পরাজীত ও হত্যা করে এডওয়ার্ডের ইংরেজ বাহিনী ওয়েলস দখল করে। ওয়েলস বিজয়ের পর এডওয়ার্ড তার ছেলের সম্মানে প্রিন্স অব ওয়েলস উপাধীটি প্রদান করে। সেই থেকে আজও যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানীর বড় ছেলেকে প্রিন্স অব ওয়েলস বলা হয়।

অপর দিকে ১২৯৬ সনে ইংল্যান্ড প্রথম স্কটল্যান্ড আক্রমন করে। যদিও প্রথমদিকে স্কটিশ বীর উইলিয়াম ওয়ালেস-এর প্রতিরোধে ইংল্যান্ড থমকে যাচ্ছিল তবে পরবর্তিতে ওয়ালেসকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে তারা স্কটল্যান্ড দখলের কাছাকাছি চলেছে যায়। মেলগিবসন অভিনীত জনপ্রিয় চলচিত্র ব্রেভ হার্ট ওয়ালেসরই জীবনের উপর নির্মিত। কিন্তু ওয়ালেসের মৃত্ত্বুর পর রাজা রবার্ট ব্রুস-এর স্কটিশ বাহিনী আবারও সংঘটিত হয় এবং রাজা এডওয়ার্ডের মৃত্ত্বুর পর তার ছেলের ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে স্কটিশরা ইংরেজদের পরাজীত করে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখে। ব্রুসের মৃত্ত্বুর পর ১৩৩২ সন থেকে ১৩৫৭ সন পর্যন্ত আবার ইংরেজরা স্কটল্যান্ড দখলের চেষ্টা চালায় যদিও সেবারও তারা পরাজীত হয়।

১৫৪১ - কিংডম অব আয়ারল্যান্ড গঠন

আয়রল্যান্ডকে কখনও ব্যপকভাবে সামরিক শক্তি দিয়ে আক্রমন না করলেও ইংল্যান্ড রাজত্বের একটি চাপ সব সময়ই আয়ারল্যান্ডের উপর ছিল। এ কারনেই ১৫৪১ সনে আইরিশ পার্লামেন্ট (রাজত্ব থাকলেও দেশগুলোতে পার্লামেন্ট সক্রিয় ছিল) ক্রাউন অব আয়ারল্যান্ড এ্যাক্ট ১৫৪২ পাশের মধ্য দিয়ে কিংডম অব আয়ারল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে এবং নির্ধারিত হয় যে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীই হবেন আয়ারল্যান্ডের রাজা বা রানী। শাসন ব্যবস্থার এই ধরনটাকে পার্সোনাল ইউনিয়নও বলা হয়। এ ক্ষেত্রে শাসক এক হলেও রাজ্য দুটো আলাদা ভাবে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র ছিল। রাজা অষ্টম হেনরী ছিল প্রথম কিং অব আয়ারল্যান্ড। একারনেই হেনরী সহ পরবর্তি রাজাদের দুটো করে পদবী ছিল - কিং অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব আয়ারল্যান্ড। (উদাহরন - রাজা চতুর্থ এডওয়ার্ড, প্রথম মেরী, রানী প্রথম এলিজাবেথ ইত্যাদি।)

১৫৪২ - ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস গঠন

১৫৩৫ সন থেকে ১৫৪২ সন পর্যন্ত ইংলিশ পার্লামেন্ট ল'স ইন ওয়েলস এ্যাক্টস ১৫৩৫-১৫৪২ পাশের মধ্যদিয়ে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে একিভূত করে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস গঠন করে। এই ব্যবস্থায় ওয়েলসের আর কোন আইন ব্যবস্থা থাকলো না এবং তারা ইংলিশ আইনের আওতাভুক্ত হয়। সেই থেকে অনেক কিছুতেই ওয়েলস ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে অংশ নেয় এবং ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড-ও এরই একটা উদাহরন।

১৭০৭ - কিংডম অব গ্রেট বৃটেন গঠন

রানী প্রথম এলিজাবেথ-এর মৃত্ত্বুর পর ইংল্যান্ডের রাজবংশের কোন উত্তরাধিকারী ছিল না কেননা রানী এলিজাবেথ কুমারী ছিলেন। ফলে ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড রাজ্য আক্ষরিক অর্থেই এক সংকটে পতিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৫০৩ সনে স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরীর কন্যা মারগারেটকে বিয়ে করেছিলেন। কাকতালীয় ভাবে ঠিক একশ বছর পর এই সম্পর্কের সূত্র ধরে ১৬০৩ সনে স্কটল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জেমস ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজত্বভার গ্রহণ করেন এবং সমগ্র গ্রেট ব্রিটেনের রাজা হন। ঐতিহাসিক ভাবে এ ঘটনাকে ইউনিয়ন অব ক্রাউন বলা হয়। যদিও তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড দুটো আলাদা রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল। তাৎপর্যপূর্ন বিষয় হলো কিংডম আব ইংল্যান্ড, কিংডম অব স্কটল্যান্ড এবং কিংডম অব আয়ারল্যান্ড স্বাধীন তিনটি রাজ্য হওয়া সত্বেও তাদের শাসক ছিলেন একই ব্যক্তি।

১৭০৭ সনে আলাদা ভাবে ইংল্যান্ডের এবং স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব ইউনিয়ন ১৭০৭ পাশ করা হয় যার মাধ্যমে কিংডম অব ইংল্যান্ড এবং কিংডম অব স্কটল্যান্ডকে বিলুপ্ত করে কিংডম অব গ্রেট বৃটেন গঠন করা হয়। ১ মে ১৭০৭ রানী এ্যান প্রথম কুইন অব গ্রেট বৃটেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সেদিন থেকেই ইতিহাসে কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। একই সাথে সেদিন থেকেই কিং অব ইংল্যান্ড এবং কিং অব স্কটল্যান্ড শব্দদুটিও ইতিহাসের পাতা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

১৭০৭ - কিংডম অব গ্রেট বৃটেন গঠন

তখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিচালিত হলেও শাসিত হতো গ্রেট বৃটেনের রাজার দ্বারাই। ফলে ধীরেধীরে আরেকটি ইউনিয়নের সম্ভাবনা বেশ জোরালো হয়ে ওঠে। ১৮০০ সনে রাজা তৃতীয় জর্জ-এর সময় গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ার‌ল্যান্ডের পার্লামেন্টে এ্যাক্ট অব ইউনিয়ন ১৮০০ পাশ করা হয় এবং পরের বছরই অর্থাৎ ১৮০১ সনে দুটো রাজ্যকে এক করে একটি অভিন্ন রাজ্য গঠন করা হয় যার নাম ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট বৃটেন এন্ড আয়ারল্যান্ড। ১ জানুয়ারী ১৮০১-এ ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইউনাইটেড কিংডম শব্দটি ওঠে এবং রাজা তৃতীয় জর্জ এই রাজ্যের প্রথম রাজা হন।

পরবর্তিতে আরো ১২২ বছর এই রাজ্য পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা শাসন করে ১৯২২ সনে নিজের ঘরে ভাঙ্গনের মুখে পতিত হয় এবং জন্ম হয় রিপাবলিক অব আয়রল্যান্ড নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।

রাজনীতি

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

আয়ারল্যান্ড একটি ছোট্ট দেশ আয়তন মাত্র ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চার পাশে পানি উথাল-পাথাল করে। রয়েছে অসংখ্য পাহড়-পর্বত, বেশ কয়েকটি নদী এবং অনেক হ্রদ। এ দেশের লোক সারা বছরে একনাগাড়ে সাত দিন সূর্য দেখার সুযোগ পায় না।[1]

অর্থনীতি

জনসংখ্যা

আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখের কাছাকাছি। ১৮৪১ সালে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৮২ লাখ। দুর্ভিক্ষে মৃত্যু ও দেশান্তরের কারণে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত এ দেশের জনসংখ্যা কেবলই কমছিল। এ সময়ে জনসংখ্যা নেমে আসে ২৮ লাখে। এর পর থেকে আবার বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ লাখে পৌঁছেছে।[1]

ধর্ম ও সংস্কৃতি

আইরিশরা প্রধানত ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্যাথলিক ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। ধর্মীয় কারণে এখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিষিদ্ধ। এখানে প্রকাশ্যে বৈধভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিক্রি হয় না। আইরিশরা পরিবারকে প্রাধান্য দেয়। প্রতিটি পরিবারে শিশুদের উপস্থিতি লক্ষণীয়।[1]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Qposter - মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব। "ভ্রমণ কাহিনী - আয়ারল্যান্ড"www.qposter.com। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.