ইসলামি বর্ষপঞ্জি

ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি (আরবি: التقويم الهجري at-taqwīm al-hijrī; হিজরী বর্ষপঞ্জি হিসাবেও পরিচিত) একটি চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জি। বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, আর পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ অনুসরণ করেন ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপনের জন্য।[1]

ইতিহাস

ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদ(সাঃ) মক্কার ক্বুরায়েশদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মক্কা থেকে মদীনা চলে যান। তার এই জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটনাকে ইসলামে 'হিজরত' আখ্যা দেয়া হয়। রাসুল মুহাম্মদ (সা:)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই হিজরী সাল গণনার সূচনা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:)-এর শাসনামলে ১৭ই হিজরী অর্থাৎ রাসুল মুহাম্মদ (সা:)-এর মৃত্যুর সাত বছর পর চন্দ্র মাসের হিসাবে এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করা হয়। হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তারা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন। যার ফলে চন্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’।[2]

বিবরণ

প্রতিদিন সূর্যাস্তের মাধ্যমে দিন গণনার শুরু হয়। তবে মাস গণনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ডে খালি চোখে অথবা খালি চোখানুগ যন্ত্রপাতির (যেমন: দূরবীন, সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) সহায়তায় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। মাসগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনের হয়। যেমাসে ২৯ দিন শেষ হলে নতুন মাসের চাঁদ দেখা যায় না, সে মাসে ৩০ দিন পূর্ণ করে মাস শেষ করা হয়।

মাসের নাম

ইসলামি বর্ষপঞ্জির মাসসমূহ নিম্নরূপ:

নংমাসের নামআরবি নামঅর্থটীকা
মুহররমمحرّمনিষিদ্ধএই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ (হারাম) বিধায় এটি পবিত্র মাস বলে বিবেচিত। এ মাসে ১০ম দিনে আশুরা পালিত হয়।
সফরصفرরিক্ত, শূণ্যএ মাসে এরূপ নামকরণের কারণ সম্ভবত এটি যে, প্রাক-ইসলামিক যুগে আরবীয় ঘর-বাড়ি এই সময়ে শূণ্য থাকতো যখন গৃহস্থরা খাবার সংগ্রহ করতো। অন্যমতে, তারা তাদের শত্রুদের যুদ্ধে পরাজিত করে সবকিছু লুট করে নিয়ে যেত বলে এ মাসের নাম সফর।
রবিউল আউয়ালربيع الأوليপ্রথম বসন্তঅন্য অর্থ চারণ, কেননা এই সময়ে গবাদি পশু চারণ করা হতো। মাসটি মুসলমানদের জন্য পবিত্র একটি মাস বলে বিবেচিত কারণ হযরত মুহাম্মদ (স.) এই মাসে জন্মগ্রহণ করেন।
রবিউস সানিربيع الاخريদ্বিতীয় বসন্ত
জমাদিউল আউয়ালجمادى الأولیপ্রথম শুকনো ভূমিখণ্ডপ্রাক-ইসলামিক গ্রীষ্মকাল হিসেবে বিবেচিত।
জমাদিউস সানিجمادي الآخر يদ্বিতীয় শুকনো ভূমিখণ্ড
রজবرجبশ্রদ্ধা, সম্মানএটি আরবি বছরের দ্বিতীয় মাস যখন যুদ্ধ নিষিদ্ধ। 'রজব' শব্দের অন্য অর্থ 'সরিয়ে নেওয়া', কেননা প্রাক-ইসলামিক যুগে আরবরা এ মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য বর্শার মাথা সরিয়ে রাখতো।
শা'বানشعبانবিক্ষিপ্তএর নামকরণের সম্ভাব্য কারণ এ মাসের পানির অভাব। তৎকালীন আরবেরা এ মাসে পানির সন্ধানে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো। তাই এর নাম 'শাবান'। এর অন্য অর্থ দুইয়ের মাঝামাঝি, কেননা এটি রজব এবং রমজান মাসের মাঝখানে।
রমজানرمضانদহনদহন বলতে উপবাস বা রোজাকে বোঝানো হয়েছে, কেননা উপবাস বা রোজার মাধ্যমে ব্যক্তির পার্থিব লালসা দগ্ধ হয়। রমজান মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র মাস। মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী এ মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়। এ মাসে মুসলমানদেরকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাধ্যতামূলক রোজা রাখতে হয়।
১০শাওয়ালشوّالউত্থিতএ নামের কারণ এই সময়ে স্ত্রী-উট বাচ্চা প্রসব করে এবং লেজ উত্থিত করে।
১১জ্বিলকদذو القعدةসাময়িক যুদ্ধবিরতির মাসএ মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ, তবে আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা বৈধ।
১২জ্বিলহজ্জذو الحجةহজ্জের মাসএই মাসে মুসলমানরা মক্কায় কাবার উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে যায়। এ মাসের ৮, ৯ ও ১০ তারিখে হজ্জ হয়। ঈদুল আযহা এই মাসের ১০ তারিখে শুরু হয় এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্তের সাথে সাথে শেষ হয়। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, আবুল হাসান (ডিসেম্বর ২০১১)। "শুধু আরবদের নয়, হিজরী মুসলমানদের সন, ইসলামী সন"। মাসিক আলকাউসার। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪
  2. হোসাইন, মুহাম্মাদ ত্বহা (জানুয়ারি ২০১০)। "হিজরতের ইতিকথা"। মাসিক আলকাউসার। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪

বহিঃসংযোগ

  •  "Hegira"। এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা। ১৯২০।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.