ফারুক

আকবর হোসেন পাঠান দুলু (জন্ম: ১৮ আগস্ট, ১৯৪৮)[1] যিনি ফারুক নামে অধিক পরিচিত একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ।[2] ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে, মিয়া ভাই-সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৮ সালে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।

ফারুক
২০১৮ সালে ফারুক
ঢাকা-১৭ আসনেরের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৬ জানুয়ারি ২০০৯  চলমান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআকবর হোসেন পাঠান দুলু
(1948-08-18) ১৮ আগস্ট ১৯৪৮
ঢাকা, পূর্ব বঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
দাম্পত্য সঙ্গীফারজানা পাঠান
পেশাঅভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২ বার)

তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রারম্ভিক জীবন

ফারুক ১৮ আগস্ট ১৯৪৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[3] তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। বর্তমানে বসবাস করছেন উত্তরাতে নিজ বাড়িতে। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।[4]

কর্মজীবন

অভিনয় ও প্রযোজনা

ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন করেন। তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে কবরী অভিনয় করেন। এর পরে তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত সুজন সখীলাঠিয়াল দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সে বছর লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[5] এরপরে ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত তিনটি ছায়াছবি সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়ানয়নমনি। চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত সারেং বৌআমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৭৯ সালে তার অভিনীত নাগরদোলা, দিন যায় কথা থাকে, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়। ১৯৮০ সালে সখী তুমি কার ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[6]

ব্যবসায়িক জীবন

চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে গাজীপুরে অবস্থিত নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।[7]

রাজনীতি

ফারুক স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[8] ফারুক ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন[9] এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[10]

ব্যক্তিগত জীবন

ফারুক ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন।

অসুস্থতা

ফারুক দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৩ সালের ৩০শে আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান ও সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে ভর্তি হন।[11] চিকিৎসা শেষে ২০১৪ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।[12]

চলচ্চিত্রের তালিকা

বছর চলচ্চিত্র চরিত্র পরিচালক সহশিল্পী নোট
১৯৭১ জলছবি এইচ আকবর কবরী প্রথম চলচ্চিত্র
১৯৭৩ আবার তোরা মানুষ হ খান আতাউর রহমান ববিতা
১৯৭৪ আলোর মিছিল নারায়ণ ঘোষ মিতা ববিতা
১৯৭৫সুজন সখী সুজন প্রমোদ কর কবরী
লাঠিয়াল দুখু মিয়া নারায়ণ ঘোষ মিতা ববিতা, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ বিজয়ী: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার - সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা
১৯৭৬ সূর্যগ্রহণ আব্দুস সামাদ ববিতা, রোজী সামাদ, জাফর ইকবাল
নয়নমনি নয়ন আমজাদ হোসেন ববিতা
মাটির মায়া তাহের চৌধুরী আলমগীর, সুচরিতা, রোজিনা
১৯৭৮ সারেং বৌ কদম সারেং আবদুল্লাহ আল মামুন কবরী
গোলাপী এখন ট্রেনে মিলন আমজাদ হোসেন ববিতা, আনোয়ার হোসেন, আনোয়ারা
১৯৭৯ নাগরদোলা বেলাল আহমেদ সুচরিতা
সূর্য সংগ্রাম আব্দুস সামাদ ববিতা
দিন যায় কথা থাকে প্রমোদ কার কবরী
কথা দিলাম কাজী জহির সূচন্দা
সাহেব নারায়ণ ঘোষ মিতা রোজিনা
মাটির পুতুল
ছোট মা তমিজ উদ্দিন রিজভী অঞ্জনা
ঘরজামাই
এতিম শেখ নিয়ামত আলী
তৃষ্ণা নারায়ণ ঘোষ মিতা কবরী
শক্তিশালী স্বপন সাহা অঞ্জু ঘোষ
সিকান্দার নূর হোসেন বলাই রোজিনা
শেষ পরিচয় অঞ্জন রোজিনা
কালা খুন দারাশিকো
যাদু মহল স্বপন সাহা অনজু
দুরন্ত দুর্বার
চেনা মুখ জহিরুল হক ফারুক প্রযোজিত
আশা শেখ নজরুল ইসলাম কবরী
জীবন মানে যুদ্ধ
চোখের মনি
যৌতুক
মাসুম শেখ নিয়ামত আলী অঞ্জনা
শহর থেকে দূরে
মেহমান আজিজুর রহমান শাবানা
প্রিয় বান্ধবী ববিতা
দোস্তী আজমল হুদা মিঠু জুলিয়া
জীবন মৃত্যু
প্রতিজ্ঞা
পুনর্মিলন
অন্ধ বধূ
১৯৮০ সখি তুমি কার আবদুল্লাহ আল মামুন শাবানা
ছক্কা পাঞ্জা নূর হোসেন বলাই সুচরিতা
১৯৮১ জনতা এক্সপ্রেস আজিজুর রহমান
১৯৮২ লাল কাজল মতিন রহমান শাবানা, প্রবীর মিত্র
১৯৮৩ যন্তর মন্তর আজিজুর রহমান রোজিনা
আরশিনগর রতন খান আতাউর রহমান কবরী
১৯৮৪ হাসু আমার হাসু এইচ আকবর রোজিনা [13]
মায়ের আঁচল
জীবন নিয়ে যুদ্ধ
মান অভিমান নারায়ণ ঘোষ মিতা রোজিনা
১৯৮৫ ঝিনুক মালা আব্দুস সামাদ খোকন নিপা মোনালিসা
শিমুল পারুল শিমুল দেলোয়ার জাহান ঝন্টু সুনেত্রা
১৯৮৭ মিয়া ভাই চাষী নজরুল ইসলাম ববিতা
১৯৮৮ ভুল বিচার অঞ্জন রোজিনা
১৯৯০ দাঙ্গা ফ্যাসাদ চাষী নজরুল ইসলাম রোজিনা
পালকি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু সুনেত্রা
লাখে একটা কাজী কামাল সুচরিতা
ভাই ভাই স্বপন সাহা শাবানা
১৯৯১ পদ্মা মেঘনা যমুনা হাসু চাষী নজরুল ইসলাম ববিতা
দুখিনী মা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু রোজিনা
১৯৯৬ জীবন সংসার জাকির হোসেন রাজু ববিতা, সালামান শাহ, শাবনুর
১৯৯৭ এখনো অনেক রাত জাহেদ খান আতাউর রহমান ববিতা, সুচরিতা
২০০৬ কোটি টাকার কাবিন তালুকদার সাহেব এফ আই মানিক সুচরিতা
দাদি মা এফ আই মানিক
২০০৮ ঘরের লক্ষ্মী আজাদী হাসানাত ফিরোজ সুচরিতা অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র

পুরস্কার ও সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বছর বিভাগ মনোনীত চলচ্চিত্র ফলাফল
১৯৭৫ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা লাঠিয়াল বিজয়ী
২০১৮ আজীবন সম্মাননা "সামগ্রিক অবদান" বিজয়ী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "প্রখ্যাত অভিনেতা ফারুকের জন্মদিন আজ"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৮ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬
  2. "চিত্রনায়ক ফারুক চলচ্চিত্রের সাহেব"দৈনিক আমাদের সময়। ২৬ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  3. "গ্রামীণ ছবির প্রবাদপুরুষ ফারুক"দৈনিক আমার দেশ। ১৬ জানুয়ারি ২০১১। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  4. "শুভ জন্মদিন চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক"। জাগো নিউজ। ১৮ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬
  5. "সুস্থ হয়ে উঠুন ফারুক ভাই"দৈনিক প্রথম আলো। ৭ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫
  6. শান্তা মারিয়া (১৮ আগস্ট ২০১৬)। "বাংলার দামাল ছেলে ফারুক"। বিডিনিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬
  7. "ব্যস্ততা আর অবসর সমানে সমান"দৈনিক কালের কন্ঠ। ১৭ এপ্রিল ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  8. "সেই স্বপ্নের কাছাকাছি আমরা যেতে পারিনি: ফারুক"দৈনিক প্রথম আলো। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  9. "ভোটার কালীগঞ্জের, লড়বেন গুলশানে"দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  10. "সিনেমা নয়, মানুষের কাছে থাকতে চান ফারুক"দৈনিক প্রথম আলো। ১৪ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৯
  11. "উন্নত চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন ফারুক"দৈনিক ইত্তেফাক। ৩০ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
  12. "সেরে উঠছেন ফারুক"দৈনিক প্রথম আলো। ১০ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৫
  13. "আসছে আবু সাঈদ খানের আসবোনা ফিরে"দৈনিক করতোয়া। ২৬ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.