দৈনিক ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাক বাংলাদেশের বাংলা ভাষার একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র। এটি বাংলা ভাষার প্রিন্ট সংস্করণ ছাড়াও ইংরেজি অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক হিসেবে পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে এবং ২৫ ডিসেম্বর দৈনিকের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।[2] এরপূর্বে ১৯৪৯ সালের ১৫ আগস্ট সাপ্তাহিক হিসেবে ইত্তেফাক যাত্রা শুরু করে যার সম্পাদক ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও প্রকাশক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান[2] বর্তমানে পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তাসমিমা হোসেন

দৈনিক ইত্তেফাক
ধরনদৈনিক
ফরম্যাটসংবাদ পত্রিকা ও অনলাইন সংস্করণ
মালিকইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স লিমিটেড
প্রতিষ্ঠাতামাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং ইয়ার মোহাম্মদ খান
প্রকাশকতারিন হোসেন
সম্পাদকতাসমিমা হোসেন[1]
প্রতিষ্ঠাকাল২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩ (1953-12-24)
ভাষাবাংলা, ইংরেজি (শুধুমাত্র অনলাইন)
সদরদপ্তর৪০, কারওয়ান বাজার,
ঢাকা ১২০৫
বাংলাদেশ
দাপ্তরিক ওয়েবসাইটittefaq.com.bd
ঢাকায় মানবজমিন ও দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যালয়।

ইতিহাস

সাপ্তাহিক ইত্তেফাক (১৯৪৯ - ১৯৫৩)

হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সামসুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলটি তাদের মুখপত্র হিসেবে একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।[2] একই বছরের আগস্টে আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মোহাম্মদ খানকে প্রকাশক এবং তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে সম্পাদক করে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫ আগস্ট সাপ্তাহিকে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিকটি ঢাকার ৯, হাটখোলা রোডে অবস্থিত প্যারামাউন্ট প্রেস থেকে মুদ্রিত এবং ৯৪, নবাবপুর থেকে প্রকাশিত হত।[2] সোহ্‌রাওয়ার্দী নিজ অর্থায়নে পত্রিকার জন্য জমি ও প্রেস ক্রয় করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলিবর্ষণ ও হত্যার সংবাদ ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করে যা দ্রুতই দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোড়ন তৈরি করে।[2]

দৈনিক ইত্তেফাক (১৯৫৩ - বর্তমান)

১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২৫ ডিসেম্বর দৈনিকের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এসময় পত্রিকাটিতে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর বিভিন্ন নির্যাতন ও বৈষম্যের সংবাদ নিয়মিত প্রকাশ করা হত যা ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখে। আইয়ুব খান হতে ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত সকল সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর সম্পাদক মানিক মিয়া সামরিক শাসনের সমালোচনা করে বিভিন্ন কলাম লেখা শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৫৯ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর মানিক মিয়া মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানে দাঙ্গা শুরু হলে ১৬ জানুয়ারি মানিক মিয়া পত্রিকা অফিসে সভা করে 'পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও' শীর্ষক প্রচারণা শুরু করেন এবং ইত্তেফাকের মাধ্যমে হিন্দুদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান।

১৯৬৬ সালে ইত্তেফাক ছয় দফা দাবীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুখপত্র হিসেবে কাজ করে। ১৫ জুন মানিক মিয়াকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং ১৬ জুন সরকার ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় ও নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। ১৯৬৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের অনুমতি পায়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ও দৈনিক ইত্তেফাক বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে। একই বছরের ১ জুন মানিক মিয়া মৃত্যুবরণ করার পর তার দুই ছেলে মইনুল হোসেনআনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হাতে নেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইত্তেফাকের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। ২১ মে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে পত্রিকাটি প্রকাশের অনুমতি লাভ করে।[3] বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৫ সনের ১৭ জুন ইত্তেফাককে জাতীয়করণ করা হয়, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী প্রধান সম্পাদক হন এবং ঢাকার ১ রামকৃষ্ণ মিশনস্থ নিউ নেশন প্রেস হতে প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সনের ২৪ অগাস্ট মইনুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মালিকানা ফেরত পান।

পত্রিকাটি বর্তমানে ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স লিঃ-এর পক্ষে তারিন হোসেন কর্তৃক ৪০, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ থেকে প্রকাশিত ও মুহিবুল আহসান কর্তৃক নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস, কাজলারপাড়, ডেমরা রোড, ঢাকা-১২৩২ থেকে মুদ্রিত হচ্ছে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারিন হোসেন হলেন আনোয়ার ও তাসমিমা দম্পতির কন্যা।[4]

নিয়মিত আয়োজন

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইত্তেফাক সাধু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে এটি চলিত ভাষায় প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, প্রথম পাতা, শেষ পাতা, অন্যান্য খবর, সম্পাদকীয়, দৃষ্টিকোণ, চিঠিপত্র, বিশ্ব সংবাদ, রাজধানীর আশেপাশে, অনুশীলন (শিক্ষাবিষয়ক পাতা), খেলার খবর, ইত্তেফাক সাময়িকী (সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক), আইটি কর্ণার, তথ্যপ্রযুক্তি, শেয়ার বাজার, রাশিফল, অর্থনীতি, বন্দর নগরী, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, তরুণকন্ঠ, মহিলা অঙ্গন, ক্যাম্পাস, কচি-কাঁচার আসর, ধর্মচিন্তা, কড়চা, আনন্দ বিনোদন ও এই ঢাকা।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "ইত্তেফাকের প্রথম নারী সম্পাদক তাসমিমা হোসেন"। দৈনিক যুগান্তর। ৫ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৯
  2. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাক (০১ জুন ২০১৪)। "মানিক মিয়া : অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস" এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. দৈনিক ইনকিলাব"দৈনিক ইত্তেফাক"
  4. "রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে রেখেছেন ভাগ্যে বিশ্বাসী তারিন"চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.