পূর্ব বাংলা

পূর্ব বাংলা বা পূর্ববঙ্গ নামটি ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গ অঞ্চলের পূর্ব অংশকে বুঝিয়ে থাকে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পূর্ব প্রদেশ পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তান করা হয়। এই পূর্ব বাংলা বলতে সেই সময় যে এলাকাকে বুঝানো হত তার একটি অংশ বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত। তবে পূর্ব বাংলার সীমানা বর্তমান বাংলাদেশের থেকে বড় ছিল। মূলত অবিভক্ত বাংলার একটি নির্দিষ্ট অংশ এই নামে পরিচিত ছিল এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান শাসন আমলে এই সীমানা আরও পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

পূর্ব বাংলা
পূর্ববঙ্গ
সাবেক পাকিস্তানের প্রশাসনিক ইউনিট

১৯৪৭–১৯৫৫
পূর্ব বাংলার অবস্থান
রাজধানী ঢাকা
ভাষাসমূহ বাংলা (সরকারি)
বিহারি, উর্দু এবং ইংরেজি
ধর্ম ইসলাম (প্রধান)
হিন্দু ধর্ম
সরকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
গভর্নর
 -  ১৯৪৭-১৯৫০ স্যার ফ্র্যাডেরিক চালমার্স‌ বোর্ন‌
 - ১৯৫০-১৯৫৩ স্যার ফিরোজ খান নুন
 - ১৯৫৩-১৯৫৪ চৌধুরী খালিকুজ্জামান
 - ১৯৫৫ ইস্কান্দার মির্জা
প্রধানমন্ত্রী
 - ১৯৪৭-১৯৪৮ খাজা নাজিমুদ্দিন
 - ১৯৪৮-১৯৫৪ নুরুল আমিন
 - ১৯৫৪-১৯৫৫ এ কে ফজলুল হক
 - ১৯৫৫ আবু হোসেন সরকার
ঐতিহাসিক যুগ বঙ্গভঙ্গ
 - বঙ্গভঙ্গ ১৫আগস্ট ১৯৪৭
 - বাংলা ভাষা আন্দোলন ২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২
 - বিলুপ্ত ১৪ই অক্টোবর ১৯৫৫
আয়তন
 - ১৯৪৭ ১,৪৪,০০০ বর্গ কি.মি. (৫৫,৫৯৯ বর্গ মাইল)
জনসংখ্যা
   ১৯৪৭ আনুমানিক ১৬,২২,২১,০০০ 
     ঘনত্ব ১,১২৬.৫ /কিমি  (২,৯১৭.৭ /বর্গ মাইল)
মুদ্রা পাকিস্তানি রুপি
বর্তমানে অংশ  বাংলাদেশ
সতর্কীকরণ: "মহাদেশের" জন্য উল্লিখিত মান সম্মত নয়

প্রথম বিভক্তিকরণ ১৯০৫-১৯১২ (ব্রিটিশ ভারত)

ব্রিটিশ ভারতে সর্বপ্রথম বাংলাকে ভাগ করা হয়। পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পর ব্রিটিশরা বাংলার উপর আধিপত্য লাভ করে এবং বাংলা ভারতে ব্রিটিশ কর্মকাণ্ডের সদর দপ্তর হয়ে উঠে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের কাছে চলে যায়। ১৯০০ সাল নাগাদ বাংলা প্রদেশ ব্যাপক আয়তনের হয়ে উঠে।

লর্ড কার্জন ভাইসরয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিশাল প্রদেশের শাসনকাজকে দুরূহ হিসেবে বিবেচনা করে প্রদেশ বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নতুন প্রদেশ হিসেবে গঠনের কথা বলা হয়। এর ফলে মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়।

কার্জন এই পদক্ষেপকে শাসনতান্ত্রিক কারণে বলে দাবি করলেও কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলার হিন্দু বুদ্ধিজীবী ও নেতারা এর বিরোধিতা করেন। ১৯০৫ সালের জুন মাসে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়। এর ফলে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ১৯১২ সালে ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদ করে। তবে বাংলা থেকে আসাম, বিহারউড়িষ্যা পৃথক করা হয়। পাশাপাশি ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি স্থানান্তর করা হয়।

দ্বিতীয় বিভক্তিকরণ ১৯৪৭ (পাকিস্তান)

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় বাংলা পুনরায় বিভক্ত হয়। এর ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা প্রদেশ গঠিত হয়। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের এবং পশ্চিম বাংলা ভারতের প্রদেশ হয়। ১৯৫৫ সালের ১৪ অক্টোবর পূর্ব বাংলার নাম পাল্টে পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয়।[1] ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় ছিল। এরপর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হয়।

প্রাদেশিক সরকার

পাকিস্তান ক্ষমতা গ্রহণের পর পূর্ব পাকিস্তান (পূর্বের পূর্ব বাংলা) পরিচালনার ক্ষমতা ছিল আনুষ্ঠানিক গভর্নর এবং পরোক্ষভাবে-নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রীর কাছে। মে, ১৯৫৪ থেকে আগস্ট ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নির্বাহী ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী ছিলেন গভর্নর এবং সেই সময় কোনো প্রধান মন্ত্রী ছিল না।

সময়কালপূর্ব বাংলার গভর্নর[2]
১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ - ৩১শে মার্চ, ১৯৫০স্যার ফ্র্যাডেরিক চালমার্স‌ বোর্ন‌
৩১শে মার্চ, ১৯৫০ - ৩১শে মার্চ ১৯৫৩স্যার ফিরোজ খান নুন
৩১শে মার্চ, ১৯৫৩ - ২৯শে মে, ১৯৫৪চৌধুরী খালিকুজ্জামান
২৯শে মে, ১৯৫৪ - মে, ১৯৫৫ইস্কান্দার মির্জা
মে, ১৯৫৫ - জুন, ১৯৫৫মুহাম্মদ শাহাবউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত)
জুন, ১৯৫৫ - ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫আমিরুদ্দিন আহমদ
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫পূর্ব বাংলা প্রদেশ বিলুপ্ত
সময়কালপূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী[2]রাজনৈতিক দল
১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ - ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮খাজা নাজিমুদ্দিনমুসলিম লীগ
১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ - ৩রা এপ্রিল, ১৯৫৪নুরুল আমিনমুসলিম লীগ
৩রা এপ্রিল, ১৯৫৪ - ২৯শে মে, ১৯৫৪এ কে ফজলুল হকযুক্তফ্রন্ট
২৯শে মে, ১৯৫৪ - ২রা জুন, ১৯৫৫[3]গভর্নরের শাসন
৩রা জুন, ১৯৫৫[3] - ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫আবু হোসেন সরকারকৃষক শ্রমিক পার্টি
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৫পূর্ব বাংলা প্রদেশ বিলুপ্ত

প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক চিহ্ন

পূর্বের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান চারটি প্রাদেশিক চিহ্নগুলো হল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দোয়েল পাখি, বট গাছ এবং সাদা শাপলা ফুল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এগুলোকে জাতীয় চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. https://www.dawn.com/news/681434
  2. 'Statesmen of Bangladesh' Retrieved April 18, 2009.
  3. "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"সাদুল্লাপুর উপজেলা

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.