বাংলা উপন্যাস

বাংলা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস হল ফুল মণি করুণার বিবরণ (১৮৫২), যদিও ১৮৬৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দুর্গেশনন্দিনী -এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে বাংলা উপন্যাসের বিস্তার লাভ করে বলে ধারনা করা হয়। আনন্দ সংকর এবং লিলা রায় উল্লেখ করেছেন যে, '১৯শতকের মাঝামাঝি সময় যখন প্রথম উপন্যাস লেখা হয়, এটি আমাদের জন্য নতুন ছিল, এটি লেখার ধরন আমাদের জন্য নতুন ছিল, এটি ভাষার ব্যবহার এবং যে সমাজ ও তার সদস্যদের জন্য লেখা হয়েছিল তারাও নতুন ছিল' (পৃষ্ঠা ১৬৮)। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মত শক্তিমান লেখকদের অবদানের ফলে বাংলা সাহিত্যের এই নতুন সৃষ্ট ধারাটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই 'নতুন' থেকে 'পরিপক্কতা' অর্জন করে।

বাংলা সাহিত্য




বাংলা সাহিত্য
(বিষয়শ্রেণী তালিকা)
বাংলা ভাষা
সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা
কালানুক্রমিক তালিকা - বর্ণানুক্রমিক তালিকা
বাঙালি সাহিত্যিক
লেখক - ঔপন্যাসিক - কবি
সাহিত্যধারা
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয়
চর্যাপদ - মঙ্গলকাব্য - বৈষ্ণব পদাবলিসাহিত্য - নাথসাহিত্য - অনুবাদ সাহিত্য -ইসলামি সাহিত্য - শাক্তপদাবলি - বাউল গান
আধুনিক সাহিত্য
উপন্যাস - কবিতা - নাটক - ছোটোগল্প - প্রবন্ধ - শিশুসাহিত্য - কল্পবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার
ভাষা শিক্ষায়ন
সাহিত্য পুরস্কার
সম্পর্কিত প্রবেশদ্বার
সাহিত্য প্রবেশদ্বার
বঙ্গ প্রবেশদ্বার

বাংলা উপন্যাসের সূত্রপাত

বাংলা উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের নতুনতম অঙ্গ। এর সূত্রপাত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর আখ্যানভাগে এবং রচনাশৈলীতে উপন্যাসের মেজাজ পরিলক্ষিত হয়। বাংলা উপন্যাসের একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে দীর্ঘ কাল বাঙলা উপন্যাসে ইয়োরোপীয় উপন্যাসের ধাঁচ ছায়া ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা সাহিত্যের সকল শাখাকে ঋদ্ধ করেছেন তার হাতেও উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করেছে যদিও সমালোচকরা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসকে রসোত্তীর্ণ মনে করেন না। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর আরেকজন প্রভাবশালী ঔপন্যাসিক। তবে এরা সবাই মানুষের ওপর তলের ওপর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

বাঙলা উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্তকমলকুমার মজুমদারের হাতে। এদের হাতে উপন্যাস বড় মাপের পরিবর্তে মানবিক অস্তিত্বের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করে বিকশিত হয়। বস্তুতঃ রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় সম্ভবত সবচেয়ে কুশলী উপন্যাস শিল্পী। তারই পদরেখায় আমরা দেখতে পাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরা উপন্যাসকে মানবিক অস্তিতেব্র মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক জটিলতার ওপর নিবিড় আলোপাত করেছেন, লেখনীশৈলীর জোরে উপন্যাসকে সাধারণ পাঠকের কাছকাছি নিয়ে গেছেন এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের শেল্পশৈলীতে এনছেন দৃঢ় গদ্যের সক্ষমতা।

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাঙলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ নতুন করণকৌশল নিয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাঙলা উপন্যাসকে নুতন খাতে প্রবাহিত করলেন। বাঙলা উপন্যাস দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের হাতে পরিপুষ্ট হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ একাই শত বর্ষের খামতি পূরণ করে দিলেন। তার উপন্যাসের অবয়ব হলো সবজান্তা লেখকের বর্ণনার পরিবর্তে পাত্র-পাত্রীদের মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি ছোট এবং স্বল্প পরিসরে অনেক কথা বলার পদ্ধতি প্রবর্তন করলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ দেখালেন যে ইয়োরোপীয় আদলের বাইরেও সফল, রসময় এবং শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস লেখা সম্ভব।

১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন আহসমদের সবল উপস্থিতি অনুভব করার আগে বাংলা উপন্যাস মূলত পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিকদের হাতে গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের অবদান ছিল তুলনামূলক ভাবে কম, গুণগত মানও প্রশ্নাতীত ছিল না। এ সময়কার কয়েকজন প্রধান লেখক হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের উত্তরাধিকার বহন করে। এ সময় কিছু কিছু নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসের স্বাক্ষর রেখেছেনি কতিপয় লেখক। উত্তরআধুনক ধ্যানধানা অবলম্বন করেও লিখেছেন কেউ কেউ। তবে নতুন কোন ধারা প্রবল বেগে ধাবিত করার মতো নতুন কারো আবির্ভাব এখনো হয় নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু ইসহাক, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, তসলিমা নাসরিন, আনিসুল হক, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহমদ ছফা(ওংকার), নাসরিন জাহান, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, জহির রায়হান, শহিদুল জহির প্রমুখ শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের সবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও অনকে নতুন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব লক্ষ করা গেছে যদিও প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার শক্তিশালী হাতের দেখা পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশী উপন্যাস

বাংলাদেশী উপন্যাস বলতে পূর্ববঙ্গের উপন্যাসকে বোঝানো হয়; আরো সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় যে ভারত বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের উপন্যাসকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ পূর্ববঙ্গের সাহিত্যে একটি বিভাজন রেখা যদিও এর মানে এই নয় যে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা পরবর্তী উপন্যাসকে গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করেছে৤ বরং ১৯৭১ এই জন্যে একটি বিভেদক রেখা যে স্বাধীন জাতিসত্ত্বা পূর্ববঙ্গের লেখকদের মনস্তত্বকে প্রভাবান্বিত করেছে, দিয়েছে আত্মবিশ্বাস এবং প্রাদেশিকতার পরিবর্তে স্থলাভিষিক্তি হয়েছে বৈশ্বিকতা। এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার বিস্তার, প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ এবং হুমাযূন আহমেদের মতো যুগস্রষ্টা কথাশিল্পীর আবির্ভাব।

বাংলায় উপন্যাস রচনা শুরু হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর থেকে বাংলাদেশে উপন্যাস লেখা হয় (প্রথম বাংলা উপন্যাস 'আলালের ঘরে দুলাল', প্রকাশকাল ১৮৫৮ আর 'আনোয়ারা' প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে)। গত এই ১০০ বছরের সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশে অনেক মানসম্মত ঔপন্যাসিক এসেছেন।

বাংলাদেশী উপন্যাসের ধরন

বাংলাদেশী উপন্যাসের ইতিহাস

পাকিস্তান পূর্ববর্তী কাল

পূর্ব পাকিস্তান সময় কাল

বাংলাদেশ সময়কাল

পশ্চিমবঙ্গের উপন্যাস

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

    আরো পড়ুন

    • Bangla Academy Charitabhidhan, Bangla Academy, Dhaka, Second Enlarged Edition, 1997
    • বাংলাদেশের উপন্যাস:বিষয় ও শিল্পরূপ, রফিকুল্লাহ খান, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৭
    • বাংলাদেশের উপন্যাস: চেতনাপ্রবাহ ও শিল্পজিজ্ঞাসা প্রসঙ্গ বাংলা কথা সাহিত্য, সৈয়দ আকরাম হোসেন, মাওলা ব্রাদার্স, ১৯৯৭
    • বাংলা সাহিত্য, অনিন্দ সংকর এবং লিলা রায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাদেমী, কোলকাতা, ২০০০
    • বাংলাদেশের উপন্যাস, বিশ্বজিৎ ঘোষ, খন্ড ২৮, সংখ্যা ১, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়, ঢাকা ১৯৮৪
    • বাংলাদেশের উপন্যাসের চার দশক, কল্যাণ মিরবর, কোলকাতা, ১৯৯২
    • বাংলাদেশের কয়েকজন ঔপন্যাসিক, সুব্রত কুমার দাস, ঢাকা, ২০০৫
    • অন্য দানের বেলা, অরুনা প্রকাশনী, কোলকাতা, ২০০২
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.