পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, যেটি বাংলা একাডেমী নামে জনপ্রিয়, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত বাংলা ভাষার সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ও ঐতিহ্যরক্ষার লক্ষ্যে ফ্রান্সের আকাদেমি ফ্রঁসেজ-এর আদলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের একটি অঙ্গ হিসাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে এটি একটি স্বশাসিত সংস্থার মর্যাদা পায়। যদিও বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রচলিত ভাষাসংক্রান্ত সংস্কারগুলি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, তবু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সংস্কারগুলির প্রচারে সচেষ্ট থাকেন। ত্রিপুরা সরকারও সম্প্রতি এই সংস্কারগুলি বিদ্যালয়স্তরে চালু করেছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে বাংলা প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির নিয়মাবলি মেনে চলেন।

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাদেমি
বাংলা আকাদেমির লোগো
বাংলা একাডেমির প্রধান ভবন
সংক্ষেপেবাংলা আকাদেমি
গঠিত২০ মে ১৯৮৬ (1986-05-20)
ধরণভাষা-নিয়ন্ত্রক সংস্থা
আইনি অবস্থাসরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান
উদ্দেশ্যবাংলা ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণ
সদরদপ্তরকলকাতা
অবস্থান
যে অঞ্চলে কাজ করে
পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা
সভাপতি
শাঁওলি মিত্র[1]
প্রধান প্রতিষ্ঠান
তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

আকাদেমি দুটি পৃথক ভবন নিয়ে গঠিত, একটি দক্ষিণ কলকাতার নন্দন-রবীন্দ্র সদন কমপ্লেক্সে (এছাড়াও বাংলা একাডেমী-রবীন্দ্র সদন বা নন্দন-বাংলা একাডেমী কমপ্লেক্স হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এবং অন্যটি বিধানানগরের (সল্ট লেক) রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন। অন্নদাশঙ্কর রায় আকাদেমি প্রথম সভাপতি এবং সনৎ কুমার চট্টোপাধ্যায় আকাদেমি প্রথম সম্পাদক ছিলেন।

বাংলা আকাদেমি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং এমনকি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তার কার্যক্রম এবং কর্মসূচী প্রসারিত করতে সফল হয়েছে। কলকাতায় বাংলা আকাদেমি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, সাহিত্য অকাদেমি, প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদের গিল্ড, পূর্ব জোনাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সহযোগিতায় বিভিন্ন কর্মসূচী আয়োজন করে।

নামকরণ

কাজ

বাংলা আকাদেমির গবেষকেরা বাংলা বানান, ব্যাকরণ, ব্যুৎপত্তি ও বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। মৌলিক বাংলা পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা একটি বড়ো গ্রন্থাগার নির্মাণ করেছেন। বিগত শতকেই বাংলা আকাদেমি থেকে 'আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান' এবং 'আকাদেমি বানান অভিধান' প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্যের বাংলা ভাষার গবেষক, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের 'বাংলা বানান উপসমিতি' গঠন করে তাঁদের সাহায্যেই বাংলা বানানের ব্যাপক সংস্কারসাধন করে এইসব অভিধান লেখা এবং সংকলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একশো শতাংশ পাঠ্য বই প্রকাশক এবং প্রায় নিরানব্বই শতাংশ সংবাদপত্র প্রকাশকের কার্যালয়ে 'বাংলা আকাদেমি বানান অভিধান' মেনে কাজ করা হয়। অতীতে প্রকাশিত যেকোনো বাংলা অভিধানের বানানের সঙ্গে 'আকাদেমি বানান অভিধান' সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ কয়েক দশকের গবেষণালব্ধ নতুন বানানবিধি প্রণয়ন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির এক অসাধ্য সাধন বিষয় ছিল। কেননা, সত্যি কথাটা হল, বাংলা বানানের মধ্যে একটা ছন্নছাড়া ভাবকে কাটিয়ে একসূত্রে বাঁধার জায়গা তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। এখনো পাঠ্য বইয়ের শিরোনাম পৃষ্ঠায় প্রকাশকদর লিখতে হয়, 'পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানানবিধি অনুসৃত'।

জাপান সরকার ৫০,০০,০০০ (৫ মিলিয়ন) টাকা দান করেছে আকাদেমির গবেষণার জন্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কিছু পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছে। আকাদেমি বিধাননগরে ইন্দো-জাপান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উপর টাকা খরচ করে। আকাদেমি এছাড়াও বাংলা লিপিতে তাদের দ্বারা করা পরিবর্তনগুলি অনুযায়ী বাংলা ফন্ট তৈরি করেছে। এই ফন্টের লিঙ্ক এখানে পাওয়া যায়।

এছাড়াও বাংলা আকাদেমি কর্তৃক সংস্কারপ্রাপ্ত বাংলা লিপি অনুসারে এই সংস্থা ইউনিকোড বাংলা ফন্ট তৈরি করে। যে ইউনিকোড রাজ্যের বাংলা সংবাদপত্রগুলোও ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

পাদটীকা

  1. "Mamata unveils Bengal's new cultural squad"। ২৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.