সুকুমার সেন
সুকুমার সেন (১৬ জানুয়ারি ১৯০১ - ৩ মার্চ ১৯৯২) ছিলেন একজন ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ। বৈদিক ও ধ্রুপদী সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, বাংলা, আবেস্তা ও প্রাচীন পারসিক ভাষায় তার বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণতত্ত্ব আলোচনাতেও তিনি তার বৈদগ্ধের পরিচয় রেখেছিলেন।
জন্ম | গোয়াবাগান, কলকাতা, ভারত | ১৬ জানুয়ারি ১৯০১
---|---|
মৃত্যু | ৩ মার্চ ১৯৯২ ৯১) | (বয়স
জীবনী
১৯০১ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার গোয়াবাগানের মাতুলালয়ে সুকুমার সেনের জন্ম হয়। পিতা হরেন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন বর্ধমান কোর্টের আইনজীবী এবং মা নলিনী দেবী। বর্ধমান জেলার গোতান গ্রামে ছিল তাদের পৈতৃক নিবাস। এখানেই সুকুমার সেনের পড়াশোনার শুরু। ১৯১৭ সালে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ১৯১৯ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে বাংলা, সংস্কৃত, লজিক ও অঙ্কে লেটার সহ প্রথম বিভাগে আই.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২১ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃতে সাম্মানিক সহ প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৫ সালে "সিনট্যাক্স অফ বৈদিক প্রোজ" নামে একটি থিসিস লিখে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তার প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ "নোটস অফ দি ইউজ অফ কেসেস ইন দ্য কথক সংহিতা" প্রকাশিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে। এরপর মধ্য ও আধুনিক (বাংলা) আর্যভাষার ঐতিহাসিক পদবিচারের উপর গবেষণা করে তিনি পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[1]
গ্রন্থসমূহ
সুকুমার সেন মিথ-আশ্রিত ভাষাতত্ত্ব বা পুরাণচর্চার পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি অবলম্বন করতেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, এশিয়াটিক সোসাইটি ও বর্ধমান সাহিত্য সভার প্রায় বারো হাজার পুঁথি পরীক্ষা করেছেন। জয়দেবের গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রাচীন পুঁথিটি তার আবিষ্কার। সেকশুভোদয়া পুঁথিটিও তিনি সম্পাদনা করেছেন। ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণ ছাড়া রবীন্দ্রসাহিত্যেও সুকুমার সেনের বিশেষ প্রজ্ঞা ছিল। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ব্যাখ্যাতা ও রসজ্ঞ। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল :
- ভাষার ইতিবৃত্ত (বাংলা ভাষাতত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা)
- Women's Dialect in Bengali (বাংলা মেয়েলি ভাষা নিয়ে গবেষণামূলক রচনা)
- বাংলা স্থাননাম (বাংলা স্থাননাম নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ)
- রামকথার প্রাক-ইতিহাস (রামায়ণ-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা)
- ভারত-কথার গ্রন্থিমোচন (মহাভারত-সংক্রান্ত তুলনামূলক পুরাণতাত্ত্বিক আলোচনা)
- A History of Brajabuli Literature (ব্রজবুলি সাহিত্যের ইতিহাস)
- বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (৫টি খণ্ডে, সুকুমার সেনের সবচেয়ে বিখ্যাত বই, বাংলা সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ইতিহাস) [2]
- বঙ্গভূমিকা (বাংলার আদি-ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ)
- ইসলামি বাংলা সাহিত্য
- কলিকাতার কাহিনী
- ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি
- বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা [3]
- বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য [4]
- দিনের পরে দিন যে গেল ( আত্মজীবনীমূলক রচনা )
সম্মাননা
১৯৬৪ সালে ভারতীয় আর্য সাহিত্যের ইতিহাস বইটির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার পান। এশিয়াটিক সোসাইটি তাকে 'যদুনাথ সরকার পদক' প্রদান করে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র থেকে পান 'রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য' উপাধি। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালের ৩ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
- এখন নৈঋত পত্রিকা, "শতবর্ষের আলোয় সবিশেষ সংখ্যা", ১৪১৫ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৩-২৫।
- বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস। ১৯৫৫। ২৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮।
- বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা। ১৯৩৯। ২৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮।
- বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য। ১৯৩৯। ২৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮।