কালিদাস রায়
কালিদাস রায় (২২ জুন ১৮৮৯ – ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তার রচিত কাব্যগুলির মধ্যে তার প্রথম কাব্য কুন্দ (১৯০৮), কিশলয় (১৯১১), পর্ণপুট (১৯১৪), ক্ষুদকুঁড়া (১৯২২) ও পূর্ণাহুতি (১৯৬৮) বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ, বৈষ্ণবপ্রাণতা ও সামান্য তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তার কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।
কালিদাস রায় | |
---|---|
জন্ম | কড়ুই, বর্ধমান, ব্রিটিশ ভারত। | ২২ জুন ১৮৮৯
মৃত্যু | 'সন্ধ্যার কুলায়', টালিগঞ্জ, কলকাতা। | ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫
পেশা | কবি,শিক্ষকতা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ![]() |
ধরন | কাব্য-কবিতা , শিশু সাহিত্য ও প্রবন্ধ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | পর্ণপূট |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | জগত্তারিনী স্বর্ণপদক, সরোজিনী স্বর্ণপদক, রবীন্দ্র পুরস্কার(১৯৬৮), আনন্দ পুরস্কার,দেশিকোত্তম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
১৮৮৯ সালের ৯ জুলাই বর্ধমান জেলার কড়ুই গ্রামে কালিদাস রায়ের জন্ম। তিনি ছিলেন চৈতন্যদেবের জীবনীকার লোচনদাসের বংশধর। কালিদাসের শৈশব কেটেছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে। সেখান থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করেন[1]। কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে টালিগঞ্জে 'সন্ধ্যার কুলায়' নামক নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কালিদাস রায়।
কর্মজীবন
১৯১৩ সালে রংপুরের উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী হাইস্কুলের সহশিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সাত বছর। তারপরে (১৯২০-৩১) দক্ষিণ চবিবশ পরগনার বড়িশা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার ১১ বছর পর রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের সহায়তায় তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখায় সহকারী প্রধান শিক্ষকরূপে যোগদান করেন এবং ১৯৫২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[2]
সাহিত্যকর্ম
তিনি রবীন্দ্র-ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। এরপরে কবিতা, ছোটগল্প, রম্য সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেন। 'বেতালভট্ট' ছদ্মনামে লিখিত বহু রসরচনা পাঠক সমাজে সমাদৃত ।
কাব্য
- কুন্দ(১৯০৮),
- পর্ণপূট (১৯১৪ প্রথম খন্ড,১৯২১ দ্বিতীয় খন্ড),
- ব্রজবেণু(১৯১৫),
- বল্লরী(১৯১৫),
- ক্ষুদকুঁড়া(১৯২২),
- লাজাঞ্জলি(১৯২৪),
- রসকদম্ব(১৯২৫),
- হৈমন্তী(১৯৩৬),
- বৈকালী(১৯৪০),
- গাথাঞ্জলি(১৯৫৭),
- সন্ধ্যামণি(১৯৫৮),
- পূর্ণাহুতি(১৯৬৮),
- দিন ফুরানোরর গান(১৯৮৪),
- তথাগত (১৯৯৪)।
প্রবন্ধ
- পদাবলী সাহিত্য,
- বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়,
- সাহিত্য প্রসাদ,
- প্ররাচীন সাহিত্য,
- শরৎ সাহিত্য।
শিশু সাহিত্য
- গাথাঞ্জলি(১৯৬১),
- গাথাকাহিনী(১৯৬৪),
- তৃণদল(১৯৭০),
- গাথামঞ্জরী(১৯৭৪),
- মণীষী বন্দনা(১৯৭৬),
- গাথাবলী(১৯৭৮)।
খেতাব
সাহিত্যকর্মের অবদানের জন্য কালিদাস অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদ ‘কবিশেখর’ উপাধি (১৯২০), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (১৯৫৩) ও ‘সরোজিনী স্বর্ণপদক’, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৬৩) এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি (১৯৭১) প্রদান করেন।
মৃত্যু
তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।
তথ্যসূত্র
- Some Alumni of Scottish Church College in 175th Year Commemoration Volume. Scottish Church College, April 2008, p. 589
- সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১২১-২২।
3. কলকাতার সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত সংসদ চরিতাভিধান ১ম খন্ড তৃৃতীয় মুুুদ্রণ -২০১৬ ISBN 978-81-7955-135-6
বহিঃসংযোগ
- সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৩