শহীদ মিনার, কলকাতা
শহীদ মিনার হল কলকাতায় অবস্থিত একটি স্মৃতিসৌধ। এই সৌধটির আগে নাম ছিল অক্টারলোনি মনুমেন্ট (ইংরেজি: Ochterlony Monument)। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কম্যান্ডার মেজর-জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টারলোনির স্মৃতিতে এই সৌধটি নির্মিত হয়। ১৮০৪ সালে দিল্লিতে মারাঠাদের বিরুদ্ধে তার সফল আত্মরক্ষা এবং ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধে গোর্খাদের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে কোম্পানির বাহিনীর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই সৌধটি নির্মিত হয়েছিল। সৌধটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন জে. পি. পার্কার। সরকারি কোষাগারের অর্থসাহায্যে এই সৌধটি নির্মিত হয়।[1] সৌধটির নির্মাণকালীন ব্যয় ছিল ৩৫ হাজার টাকা।[2]
শহীদ মিনার | |
---|---|
শহীদ মিনার ও শহীদ মিনার ময়দান | |
প্রাক্তন নাম | অক্টারলোনি মনুমেন্ট |
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থা | স্মৃতিসৌধ |
ধরন | স্মৃতিসৌধ |
স্থাপত্য রীতি | নিম্নাংশ: মিশরীয়, স্তম্ভ অংশ: সিরীয়, শীর্ষ অংশ: তুর্কি |
অবস্থান | ময়দান, কলকাতা |
ঠিকানা | ১১, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ |
শহর | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
নির্মাণ শুরু হয়েছে | ১৮২৫ |
সম্পূর্ণ | ১৮৪৮ |
সংস্কারণ করা হয়েছে | ২০১১-বর্তমান |
স্বত্বাধিকারী | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
উচ্চতা | ৪৮ মিটার (১৫৭ ফুট) |
নকশা এবং নির্মান | |
অন্যান্য নকশাকারী | জে. পি. পার্কার |
১৯৬৯ সালের অগস্ট মাসে তদনীন্তন যুক্তফ্রন্ট সরকার এই স্মৃতিসৌধটিকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিহত শহিদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে। সেই সময় এই সৌধের নতুন নামকরণ করা হয় "শহীদ মিনার"। বর্তমানে সরকার এই সৌধটিকে রাতে আলোকিত করার এবং দর্শকদের এর উপরিভাগে ওঠার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সৌধের শীর্ষভাগে সর্বশেষ উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ও তার পরিবার।[1][3][4]
বৈশিষ্ট্য
শহীদ মিনারকে সাধারণত "মনুমেন্ট" নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এটি মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। স্তম্ভটি ৪৮ মিটার (১৫৭ ফুট) উঁচু। এর নিম্নাংশটি মিশরীয় স্থাপত্যের আদলে নির্মিত।[5] স্তম্ভ অংশটি ক্ল্যাসিকাল ফ্লুটেড ধাঁচের। এর উপরিভাগটি সিরীয় ধাঁচের এবং গম্বুজটি তুর্কি শৈলীর।[5] উপরে দুটি বারান্দা আছে। মিনারের উপরের তলায় যেতে ২২৩টি ধাপের একটি কুণ্ডলী-আকারের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।[1][4][5][5][6]
বার্ন অ্যান্ড কোম্পানি এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছিল।[7]
শহীদ মিনার ময়দান
শহীদ মিনারের দক্ষিণ দিকে একটি বড়ো মাঠ রয়েছে। এই মাঠটির নাম শহীদ মিনার ময়দান। এই মাঠে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ও মেলা আয়োজিত হয়।[5] ১৯৩১ সালে প্রথম এই মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশ হয়েছিল। হিজলি জেলে তরুণ বন্দীদের হত্যার প্রতিবাদে এই সভার পৌরোহিত্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।[4][5] শহীদ মিনার ময়দানের পূর্ব দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসটি অবস্থিত।[1]
ব্যবহার
১৯৯৭ সালে একজন পর্যটক শহীদ মিনারের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।[5] তারপর থেকে শহীর মিনারের উপরে উঠতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়।[5] লালবাজার পুলিশ সদর দফতরে ঠিকানা ও ফটো আইডির অনুলিপি জমা দিতে হয়। বহিরাগত পর্যটকদের হোটেলের নথি জমা রাখতে হয় এবং বিদেশিদের পাসপোর্টের অনুলিপি জমা রাখতে হয়।[5]
লন্ডন আই-এর মতো শহীদ মিনারের উপর থেকেও কলকাতার দৃশ্য দেখা যায়।[5] তাই সরকার সংস্কার শেষ হলে শহীদ মিনারকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ২০১১ সালে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল। এটি দুটি ভাগে শেষ হবে। প্রথম ভাগের সংস্কার শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১২ সালের ১৫ জুন। এই সংস্কারের খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।[5] শহীদ মিনার ভিতর ও বাইরে থেকে আলোকিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিনারটি রংও করা হয়েছে। সংস্কারের দ্বিতীয় পর্যায়ে মিনারের পাদদেশে একটি অস্থায়ী মঞ্চের ব্যবস্থা করা হবে।[5] এর ফলে রাজনৈতিক সমাবেশের সময় ডোরিনা ক্রসিং-এ যানজটের সমস্যা কমবে।
সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে গেলে পর্যটক ও সাধারণ মানুষেরা শহীদ মিনারের উপরে ওঠার সুযোগ পাবেন। শহীদ মিনারের সামনে স্মারক দ্রব্যের দোকানও রাখা হবে। মিনার পর্যন্ত যাওয়ার পথটি পরিষ্কার করে ফুল গাছ দিয়ে সাজানো হবে।[5]
চিত্রকক্ষ
- শহীদ মিনার ময়দান
- শহীদ মিনারের শীর্ষভাগ (সংস্কারের আগে)
- শহীদ মিনারের গায়ে গ্রথিত ফলক। ১৯৬৯ সালের ৯ অগস্ট শহীদ মিনারকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। সেই সময় এই ফলক লাগানো হয়।
- ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস উপলক্ষে অক্টারলোনি মনুমেন্টের তলায় মুসলিম লিগের সমাবেশ।
- অক্টারলোনি মনুমেন্ট, ১৯০৫
- অক্টারলোনি মনুমেন্ট থেকে এসপ্ল্যানেডের দৃশ্য। চিত্রকর মেজর টি. জে. রিভস, দি ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ, ১৮৫৯।
আরও দেখুন
উইকিমিডিয়া কমন্সে শহীদ মিনার, কলকাতা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- গোর্খা যুদ্ধ
- ডেভিড অক্টারলোনি
- পলাশী মনুমেন্ট
পাদটীকা
- kolkatainformation.com [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] Heritage Tour: Shaheed Minar (জুন ১৫, ২০১১ তারিখে আর্কাইভকৃত)
- কলকাতা: এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস, অতুল সুর, জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৮১, পৃ. 289
- "Renovation of the minar proposed on 5 September 2011 by INTACH, who took it from the Indian Express"। ১৭ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৩।
- kolkata.org.uk [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] Kolkata.org: Shaheed Minar (জুন ১৫, ২০১১ তারিখে আর্কাইভকৃত)
- "The London Eye of Calcutta"।
- The Shahid Minar in Kolkata
- "Martin Burn Ltd"। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৩।