কৃপাময়ী কালীমন্দির, বরানগর

কৃপাময়ী কালীমন্দির উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বরানগর শহরের একটি প্রাচীন কালীমন্দির। মন্দিরটি জয় মিত্র কালীবাড়ি নামেই সমধিক পরিচিত। প্রসিদ্ধ জমিদার জয়রাম মিত্র ১৮৪৮ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দক্ষিণাকালী। মূল মন্দিরের পাশে দ্বাদশ শিবমন্দিরও রয়েছে। এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হল, মন্দিরটি সুবিশাল হলেও মন্দিরের পূজারীতি বাহুল্যবর্জিত ও নিষ্ঠাযুক্ত।[1] রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরে একাধিকবার এসেছিলেন।[2]

কৃপাময়ী কালী মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাউত্তর চব্বিশ পরগনা
অবস্থান
অবস্থানবরানগর
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
স্থাপত্য
ধরনবঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলী (নবরত্ন মন্দির)
সৃষ্টিকারীজয়রাম মিত্র

বর্ণনা

কৃপাময়ী কালীমন্দিরটি নবরত্ন শৈলীতে নির্মিত একটি মন্দির। হুগলি নদীতে মিত্রদের ঘাটের দক্ষিণে মন্দিরের সিংহদরজা। সিংহদরজার দুপাশে ছয়টি করে মোট বারোটি শিবমন্দির। এগুলি দ্বাদশ শিবমন্দির নামে পরিচিত।[2] এই শিবমন্দিরগুলি বাংলার আটচালা স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত।[2] "শিবমন্দিরগুলির অবস্থান ও নির্মাণশৈলী লক্ষণীয়। প্রথমেই পাশাপাশি দুটি মন্দির তারপর সারি দিয়ে চারটি করে দেউল শ্রেণীবদ্ধ। প্রতিটি শিবলিঙ্গের বিভিন্ন নাম। মন্দিরের দেওয়ালে পাখি দেওয়া জানলা-দরজার কাজ। তাতে মনে হয় বুঝি সত্যই ওগুলি জানালা ও দরজা।"[1] শিবমন্দিরের পরেই সারি সারি তুলসীমঞ্চ রয়েছে।

তুলসীমঞ্চের দক্ষিণে সুবিশাল নবরত্ন শৈলীর মূল মন্দিরটি অবস্থিত। সামনে নাটমন্দির। মূল মন্দিরের গঠনশৈলী মূলাজোড়ের ব্রহ্মময়ী মন্দিরের অনুরূপ। রত্নগুলি সমতল ছাদের উপর অবস্থিত।[1] মন্দিরের অভ্যন্তর পরিপাটি করে সাজানো। দেওয়ালে মিনার কারুকার্য আর পাখি দেওয়া সুন্দর জানলার ছবি। মন্দিরের মেঝে শ্বেতপাথরের। প্রস্তরময়ী কালীর বিগ্রহটিও পাথরের বেদীর উপর স্থাপিত। এটির উচ্চতা দুই-আড়াই ফুট।[1] জয়রাম মিত্রের আরাধ্যা এই দেবীর নাম কৃপাময়ী। এঁর নামেই মন্দিরের নামকরণ।

নাটমন্দিরটি বেশ প্রশস্ত। এখন নাটমন্দিরের থামগুলি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। থামগুলি "কলা গেছ্যা"।[1]

মন্দিরের পাশে জয়রাম মিত্রের পুরনো জমিদার বাড়িটি রয়েছে। এর একাংশ জরাজীর্ণ। একাংশে ভাড়াটেরা বাস করে এবং অপর অংশে জয়রাম মিত্রের বংশধরেদের বাস।[1]

পূজারীতি

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, মন্দিরের কালীমূর্তিটি হুগলি নদীতে ভেসে আসা শিলাখণ্ডে নির্মিত।[2]

কৃপাময়ী কালীমন্দিরের পাহারার ব্যবস্থা নেই।[1] এখানে পূজার কোনো বাহুল্য নেই। তবে পূজায় নিষ্ঠা ও শুদ্ধাচারের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠাতা জয়রাম মিত্রের পূজাপাঠ ও দানধ্যানের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। নিষ্ঠা সহকারের পূজার প্রথাও তার সময় থেকেই চলে আসছে। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মহাধুমধামে কালীপূজা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে চত্বরের মন্দিরগুলি সংস্কারও করা হয়ে থাকে।

ভক্তগণ এই দেবীকে "জাগ্রত" মনে করেন। জনশ্রুতি, মন্দির চত্বরে মাঝে মাঝে রাতে নূপুরের ধ্বনি শোনা যায়।[1]

কৃপাময়ী মন্দিরে পূর্বে বলিদান প্রথা প্রচলিত ছিল। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এখানে একবার শিশুবলিও হয়েছিল। যদিও এই ঘটনার কোনো প্রামাণ্য দলিল নেই।[1] সম্ভবত ১৩০৭ বঙ্গাব্দ নাগাদ মিত্র পরিবারের কুলগুরুর আজ্ঞায় মন্দিরে বলি বন্ধ হয়ে যায়।[1][2]

আরো দেখুন

পাদটীকা

  1. পশ্চিমবঙ্গের কালী ও কালীক্ষেত্র, দীপ্তিময় রায়, মণ্ডল বুক হাউস, কলকাতা, ১৪০৮ ব., পৃ. ৬৪-৬৫
  2. "কয়েকটি অল্প পরিচিত জাগ্রত কালীমন্দিরের কথা", গৌতম বিশ্বাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ২ নভেম্বর, ২০১৩ সংখ্যা, পৃ. ১৪-২২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.