দক্ষিণাকালী

দক্ষিণা কালী হিন্দু দেবী কালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ এবং জন্ম, স্থিতি, শক্তির দেবী ও প্রসিদ্ধ মূর্তি। তাকে শিবের সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দক্ষিণা কালীর রুপ মহাকালী ( মৃত্যু এবং সময়ের দেবী ) এবং শ্মশানকালীর ( ​​শ্মশানে পূজ্য দেবী ) থেকে কিছু ভিন্ন। তাকে এক মহান মাতৃকা হিসাবে ভারতে পূজা করা হয়।

দক্ষিণা কালী
সৃষ্টি, পরিবর্তন, স্থিতি ও শক্তির দেবী
দক্ষিণা কালী
দেবনাগরীदक्षिणा काली
অন্তর্ভুক্তিহিন্দু দেবী , মাতৃকা, মহাশক্তি
আবাসমন্দির ও গৃহ
অস্ত্রখড়্গ
বাহনশৃগাল (‘শিবা’)

নাম-ব্যুৎপত্তি

দক্ষিণা কালীর ডান পা শিবের বক্ষস্থলে। সেই কারণে কালীর এই রূপের নাম দক্ষিণাকালী। তাত্ত্বিকের তার নামের যে ব্যাখ্যা দেন তা নিম্নরূপ: দক্ষিণদিকের অধিপতি যম যে কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তার নাম দক্ষিণাকালী।[1]

দক্ষিণা কালী পূজার সূত্রপাত

রামপ্রসাদ সেনের গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নে আদেশ পান কালীর প্রসন্ন ভাবমূর্তি রচনা করার। স্বপ্নে দেবী তাকে জানান পরবর্তী ভোরে যে নারীকে তিনি সর্বপ্রথম দেখবেন তার রূপ অনুযায়ী কালীর এক প্রসন্ন প্রতিমূর্তি তৈরী করতে। পরবর্তী ভোরে যে নারীকে প্রথম সে দেখেন তিনি কৃষ্ণবর্ণা, তার ডান পা সামনে, উন্মুক্ত কালো কেশ এবং বাম হাত উত্তোলনের দ্বারা দেয়ালে গোবর স্থাপন করছেন। আকস্মিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে সামনে দেখে সেই মহিলা খুব লজ্জা পেলেন এবং তার জিহ্বা বার করে দাঁত দিয়ে চাপলেন। সেই নারীর রূপ অনুসরণ করে আগমবাগীশ মহাশয় কালীর মূর্তিতত্ত্ব অনুযায়ী দক্ষিণা কালীর মূর্তি রচনা করেছিলেন। এর আগে কালী যন্ত্রে কালীপূজা হতো।[2][3]

মূর্তিতত্ত্ব

দক্ষিণা কালীর ডান পা শিবের বুকে। তিনি কালীর অন্যান্য রূপ থেকে ভিন্ন এবং তাকে ঘর এবং মন্দিরে পূজা করা হয়। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তার বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ; দক্ষিণকরযুগলে বর ও অভয় মুদ্রা। তার গাত্রবর্ণ গভীর নীল, আকাশ এবং নীল সমুদ্রের ন্যায়; তিনি দিগম্বরী। তার গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই শবরূপী কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। তার দন্ত উজ্জ্বল শ্বেতবর্ণ; তার স্তনযুগল উন্নত; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারিনী। তার, দীর্ঘ এবং কালো চুল সভ্যতা থেকে প্রকৃতির স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। দক্ষিণা কালীর তৃতীয় চক্ষুর নিচে সূর্য, চন্দ্র এবং অগ্নির প্রতীক দেখা যায় এবং এটি প্রকৃতির চালিকা শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।[4]

তার জিহ্বা আসক্তির ও লোলুপতার প্রতীক এবং সাদা দাঁত সত্যতার প্রতীক। তার জিহ্বা দাঁত দ্বারা দমিত। এটি সত্য দ্বারা লোভ নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। উপাসকমণ্ডলী অনুযায়ী তিনি দিব্য মাতৃকা শক্তি বা পরম ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর এবং চূড়ান্ত সত্য। তার গলায় মুণ্ডমালার হার প্রজ্ঞার মাল্য এবং হয় ৫১ বা ১০৮ মানুষের মাথা আছে। সংস্কৃত ভাষায় ৫১ বর্ণমালা ও ১০৮ একটি সুপ্রসন্ন সংখ্যা।

তার উপরের বাম হাতে খড়্গ শক্তির প্রতীক এবং নিচের বাম হাতে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড অহংএর প্রতীক। তার খড়্গে একটি চোখ দেখা যায়। এটি প্রজ্ঞার প্রতীক। কালীর শক্তি খড়্গ জ্ঞান দ্বারা মানুষের অহং ছিন্ন করেন। দক্ষিণা কালী দক্ষিণকরযুগলে বর ও অভয় দান করছেন। এই দুই হাতের মানে হল, একটি সত্য হৃদয় দিয়ে যে কেউ তার পূজা করতে পারেন।

দক্ষিণা কালী তার কোমরের উপর ছিন্ন হাতের একটি ঘের পরেন যার মানে তিনি মানুষের কর্ম থেকে স্বাধীন এবং উচ্চতর।

ভগিনী নিবেদিতা তার মাতৃরূপা কালী বইতে নিবেদিতা দেবী দক্ষিণেশ্বরের কালীর কথা আলোচনা করেছেন। দক্ষিণেশ্বরের কালী দক্ষিণা কালী। তার পূজা করলে ত্রিবর্ণা তো বটেই সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ ফলও দক্ষিণাস্বরূপ পাওয়া যায়।

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. কোন কালী কেমন, কার পুজোয় কী ফল; সঞ্জয় ভুঁইয়া; বর্তমান রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০০৯
  2. "কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, স্বপ্নে আদেশ ও দক্ষিণা কালীর মূর্তি রচনা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০১
  3. নবদ্বীপের হেরিটেজ (PDF)
  4. দক্ষিণাকালীর ধ্যান, স্তবকবচমালা ও ধ্যানমালা, পণ্ডিত বামদেব ভট্টাচার্য সম্পাদিত, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৮৮

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.