ভদ্রকালী
হিন্দুধর্মে ভদ্রকালী (সংস্কৃত: भद्रकाली) মহাশক্তির একটি বিশেষ রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী ও ভদ্রকালী অভিন্না।[1][2] মহাভারতে ভদ্রকালী দুর্গার অপর নাম।[3] কালিকাপুরাণ ও দেবীপুরাণ অনুসারেও, ভদ্রকালী দুর্গারই রূপান্তর। আবার সরস্বতীকেও ভদ্রকালী নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।[1]
ভদ্রকালী | |
---|---|
ধ্বংস | |
![]() ভদ্রকালী, ১৬৭৫ সালের চিত্রকলা, বাসোহলি, হিমাচল প্রদেশ, ভারত, বর্তমানে এলএসিএমএ জাদুঘরে রক্ষিত। | |
অন্তর্ভুক্তি | মহাশক্তি |
মূর্তিতত্ত্ব
ড.হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে,
“ | ভদ্রকালী নামে শক্তিদেবতার যে রূপ কল্পিত হয়েছে, তার মধ্যেও তিন প্রকার ভেদ সুস্পষ্ট। ভদ্রকালী কখনও মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা, কখনও দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী ও ভয়ংকরী চামুণ্ডারূপিণী।”[1] | ” |
কালিকাপুরাণ অনুযায়ী, ভদ্রকালীর মূর্তি উক্ত পুরাণে বর্ণিত দুর্গামূর্তির অনুরূপ।[1] এই মূর্তি ষোড়শভূজা, অতসীপুষ্পবর্ণা, মস্তকে জটাজুট ও চন্দ্রকলা শোভিতা, কণ্ঠদেশে নাগহার ও স্বর্ণহার পরিহিতা, দক্ষিণ হস্তসমূহে শূল, চক্র, খড়্গ, শঙ্খ, বাণ, শক্তি, বজ্র, দণ্ড এবং বাম হস্তসমূহে খেটক, ঢাল, ধনু, পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা, পরশু ও মুষল ধারিণী। সিংহপৃষ্ঠে দণ্ডায়মান অবস্থায় বামপদে মহিষাসুরকে আক্রমণ করে তিনি তাকে শূলের দ্বারা বিদ্ধ করেছেন।[4]
তন্ত্রসারে ভদ্রকালীর যে ধ্যানমন্ত্র উল্লিখিত হয়েছে, তদনুসারে ভদ্রকালী অত্যন্ত ভয়ংকরী: “মহামেঘতুল্যবর্ণা, কৃষ্ণবস্ত্রপরিহিতা, লোলজিহ্বা, ভয়ংকরদন্তপংক্তিবিশিষ্টা, কোটরগতচক্ষুবিশিষ্টা, হাস্যমুখী, গলায় সাপের হার, কপালে অর্ধচন্দ্র, গগনস্পর্শিজটাধারিণী, স্বয়ং শবলেহনে রতা, সর্পশয্যায় উপবিষ্টা, পঞ্চাশটি মুণ্ডবিশিষ্ট নরমুণ্ডমালাপরিহিতা, বিশাল উদরযুক্তা, মাথার উপরে সহস্রফণাযুক্ত অনন্তনাগ শোভিতা, চতুর্দিকে সাপের ফণায় বেষ্টিতা, গুহ্যকালিকা, সর্পরাজ তক্ষক যাঁর বামহস্তের ও নাগরাজ অনন্ত দক্ষিণ হস্তের কঙ্কণ, কটিদেশে তাঁর সর্পমেখলা, পায়ে রত্ননূপুর, বামে বালক শিব, দ্বিভূজা নাগযজ্ঞোপবীতধারিণী, কর্ণদ্বয়ে নরদেহের কুণ্ডলে ভূষিতা, প্রসন্ন বদনা, সৌম্যা, নবরত্নভূষিতা, নারদ প্রভৃতি মুনিগণের দ্বারা সেবিতা, শিবপত্নী, অট্টহাসকারিণী, মহাভয়ংকরী, সাধকের অভীষ্টদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।[1][5] তন্ত্রসারে ভদ্রকালীর আরও একটি মূর্তি রয়েছে। এই মূর্তিতে দেবী অতি ভীষণা, ক্ষুধায় শীর্ণা, কোটরগতচক্ষুবিশিষ্টা, মলিন মুখবিশিষ্টা, মুক্তকেশী, ক্রন্দনরতা, দুই হাতে জ্বলন্ত অগ্নিতুল্য পাশ, পাকা জামফলের মতো কৃষ্ণবর্ণদন্তবিশিষ্টা এবং “আমি জগতকে গ্রাস করবো” বলে চীৎকাররতা।[6]
সারদাতিলক গ্রন্থে ভদ্রকালী চতুর্ভূজা; টংক, নরকপাল, ডমরু ও ত্রিশূলধারিণী; জটামণ্ডিতা ও ভীষণ শুভ্রদন্তবিশিষ্টা।[1][7] প্রপঞ্চসার তন্ত্রে ভদ্রকালী ত্রিনয়না; ঘনমেঘবর্ণা; পরশু, নরকপাল, ডমরু ও ত্রিশূলধারিণী; জটামণ্ডিতা ও ভীষণ শুভ্রদন্তবিশিষ্টা।[1][8]
তথ্যসূত্র
- হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় পর্ব, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ২০৬-১০
- শ্রীশ্রীচণ্ডী, ৪।৩৯
- মহাভারত, ভীষ্ম পর্ব, ২৩।৬
- কালিকাপুরাণ, ৬০।৫৯-৬৫
- তন্ত্রসার, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, বঙ্গবাসী সংস্করণ, পৃ.৫০২-৩
- তন্ত্রসার, পৃ. ৫৬৩
- সারদাতিলক, ১০৫।২২
- প্রপঞ্চসার, ৩৪৯