হুগলী জেলা
হুগলী জেলা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা। হুগলী নদীর নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। জেলাটির সদর চুঁচুড়া-তে অবস্থিত। জেলাটির চারটি মহকুমা রয়েছে: চুঁচুড়া সদর, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, ও আরামবাগ।

হুগলি জেলা হুগলী | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
![]() পশ্চিমবঙ্গে হুগলির অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | বর্ধমান |
সদরদপ্তর | চুঁচুড়া |
সরকার | |
• লোকসভা কেন্দ্র | আরামবাগ (১টি বিধানসভা কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুরে ), হুগলি, শ্রীরামপুর (২টি বিধানসভা কেন্দ্র হাওড়ায়) |
• বিধানসভা আসন | হরিপাল, তারকেশ্বর, পুরশুড়া, আরামবাগ (ত.জা.), গোঘাট(ত.জা.), খানাকুল, সিঙ্গুর, চন্দননগর, চুচুঁড়া, বলাগড় (ত.জা.), পাণ্ডুয়া, সপ্তগ্রাম, ধনেখালি(ত.জা.), উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, চণ্ডীতলা, জঙ্গীপাড়া |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৫০,৪১,৯৭৬ |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৭৫.৫৯ শতাংশ |
• লিঙ্গানুপাত | পুরুষ ৫১.৩৫ শতাংশ, মহিলা ৪৮.৬৫ শতাংশ |
প্রধান মহাসড়ক | NH 2, NH 6, Grand Trunk Road |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১,৫০০ মিমি |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
বর্ধমানের দক্ষিণাংশকে বিচ্ছিন্ন করে ১৭৯৫ সালে ইংরেজরা প্রশাসনিক কারণে হুগলি জেলা তৈরি করে ছিল। হাওড়া তখনও হুগলী জেলার অংশ ছিল। জেলা বলতে কতগুলি থানার সমষ্টি। মহকুমার ধারণা তখনও জন্ম নেয়নি। এই জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে হাওড়া স্বতন্ত্র জেলা হিসাবে দেখা দিয়েছিল ১৮৪৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী। ১৮৭২ সালের ১৭ই জুন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা থানা মেদিনীপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।

প্রাচীনকালে সুহ্ম বা দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল হুগলি জেলা। নদী, খাল, বিল অধ্যুষিত এই অঞ্চল ছিল কৈবর্ত ও বাগদিদের আবাসস্থল। এদের উল্লেখ রয়েছে রামায়ন, মহাভারত, মনুসংহিতা এবং পঞ্চম অশোকস্তম্ভ লিপিতে। মৎস্য শিকারই ছিল এদের প্রধান জীবিকা।
১৪৯৫ সালে বিপ্রদাস পিল্লাই রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে হুগলী নামের উল্লেখ দেখা যায়। এর থেকে বোঝা যায় জেলার নামকরণ বিদেশীকৃত নয়। কারণ এই রচনা কালের ২২ বছর পর পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করেছিল। ১৫৯৮ সালে রচিত আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও হুগলি নামের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ত্রিবেনীতে অবস্থিত জাফর খাঁর মসজিদ ও তার মাদ্রাসায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠা তারিখ থেকে অনুমান করা যায় ১২৯৮ সালে জেলার উত্তারংশ মুসলমান শাসনভুক্ত হয়েছিল। ত্রিবেনী ও সাতগাঁ(সংস্কৃতে সপ্তগ্রাম)পরে ছিল স্থানীয় মুসলমান শাসকদের সদর কার্যালয়। সাতগাঁয়ে এই সময় কার একটা টাঁকশাল ছিল। ১৫১৭ সালে পর্তুগিজরা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বঙ্গদেশে প্রবেশ করে। ১৫৩৬ সালে সুলতান মাহমুদ শাহের দেওয়া সনদের বলে পর্তুগিজরা ব্যবসা শুরু করে সপ্তগ্রামে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে পলি জমে সরস্বতী নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে ভাগীরথীর খাতে এই প্রবাহ পরিবর্তিত হলে পর্তুগিজরা ভাগীরথীর তীরে হুগলি বন্দর গড়ে তোলে। ১৮২৫ সালে ওলন্দাজ ও ১৬৩৮ ইংরেজ এই বন্দরে ব্যবসা শুরু করেছিল। ওলন্দাজরা পরে চুচুঁড়ার দখল পায় নবাবদের আনুকূল্যে। ১৮২৫ সালের ৭ই মে চুচুঁড়া ইংরেজদের দখলে আসে। চুচুঁড়ার নিকটবর্তী চন্দননগর ছিল ফরাসীদের দখলে। ১৮১৬ সালের পর থেকে চন্দননগর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ফরাসীদের হাতে ছিল। ১৯৫০ সালের ২রা মে এই শহর ভারত সরকারের কর্তৃত্বাধীন আসে। আর শ্রীরামপুর নগরী ছিল ১৭৫৫ থেকে ১৮৪৫ পর্যন্ত দিনেমারদের দখলে।
অর্থনীতি ও শিল্পে উন্নত হলেও জেলার ৫০ % মানুষ কৃষির উপর নিরভারশীল। সমগ্র আরামবাগ মহকুমা ও জাঙ্গীপারা, পাণ্ডুয়া, ধনিয়াখালি এগুলি কৃষি ভিত্তিক। এছাড়াও সপ্তগ্রাম বর্তমানে আদিসপ্তগ্রাম, ব্যান্ডেল ও হুগলী ছিল পোর্তুগিজদের উপনিবেশ।
ভাষা
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
- হাজি মুহাম্মদ মহসিন, জন্ম ১৭৩২ মৃত্যু ১৮১২ । বাংলার একজন জনহিতৈষী, দানবীর ও একজন শিক্ষানুরাগি ব্যক্তি ।
- মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকি, বিশিষ্ট ইসলামি পীর (সুফি বা সাধক) ও সমাজ সংস্কারক, দাদাহুজুর নামেই তিনি বেশি পরিচিত । জাঙ্গিপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত ফুরফুরা গ্রামে তাঁর মাজার বা সমাথি রয়েছে ।
- রাজা রামমোহন রায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রখ্যাত বাংলা সাহত্যিক
- প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক
- শশধর দত্ত, বাংলা সাহিত্যিক
- অজয় মুখোপাধ্যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
- অতুল্য ঘোষ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা, লোকসভার প্রাক্তন সদস্য।
- অনিল চট্টোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য।
- দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদ
- অনুপকুমার, চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা।
- অশোক মিত্র, জনগণনাতত্ত্ববিদ, প্রশাসক, সমাজবিজ্ঞানী, গবেষক, প্রাবন্ধিক, শিল্প ঐতিহাসিক ও শিল্প সমালোচক।
প্রশিদ্ধ স্থান
- ফুরফুরা শরীফ : জাঙ্গিপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত ফুরফুরা গ্রামে বিখ্যাত পির (সুফি বা সাধক) আবুবকর সিদ্দিক বা দাদাহুজুরের জন্ম । তিনি একজন সমাজসংস্কারক বা মোজাদ্দেদ ছিলেন । বর্তমানে ফুরফুরা হুগলী, হাওড়া, ঊঃ ও দঃ চব্বিশ পরগনা প্রভৃতি জেলার মানুষের কাছে পবিত্র স্থান বলে পরিচিত।বছরে একবার তিনদিনব্যাপী মহফিল বা পীরমেলা হয় ।
- হুগলী ইমামবাড়া :
- ব্যান্ডল চার্চ :
- কামারপুকুর
- তারকেশ্বর
শিক্ষা ও স্বাস্থব্যবস্থা
শিক্ষা
প্রশিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :
- সীতাপুর এন্ডাওমেন্ট সিনিয়র মাদ্রাসা হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া থানার অনর্গত সীতাপুর গ্রামে অবস্থিত । ১৭৫১ সালে স্থাপিত হয় । প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি ।[3]
- হগলী মাদ্রাসা : হাজি মুহাম্মদ মহসিন ১৮১৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
- ফুরফুরা মাদ্রাসা : ফুরফুরা ফাতেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, স্থাপিত : ১৯০২ । আরবী ও থিওলজী বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয় ।
- মহসিন কলেজ'
- শ্রীরামপুর কলেজ
তথ্যসূত্র
- http://www.censusindia.gov.in/2011census/C-16.html
- "DISTRIBUTION OF THE 22 SCHEDULED LANGUAGES-INDIA/STATES/UNION TERRITORIES - 2011 CENSUS" (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬।
- সীতাপুর এন্ডাওমেন্ট,TwoCircles.net ।