পশ্চিম বর্ধমান জেলা

পশ্চিম বর্ধমান জেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার সদর হল আসানসোল। এটি মূলত কয়লা ও শিল্প প্রধান জেলা। আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমা নিয়ে এই নতুন জেলা তৈরির প্রস্তাব দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ৭ এপ্রিল ২০১৭ সালে এই জেলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয়।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা
পশ্চিমবঙ্গের জেলা
পশ্চিমবঙ্গে পশ্চিম বর্ধমানের অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
প্রশাসনিক বিভাগবর্ধমান
সদরদপ্তরআসানসোল
সরকার
  লোকসভা কেন্দ্রআসানসোল, বর্ধমান-দুর্গাপুর
  বিধানসভা আসনপাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, জামুরিয়া, আসানসোল উত্তর, আসানসোল দক্ষিণ, কুলটি, মন্তেশ্বর, ভাতার, গলসি (তফসিলি জাতি), দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, রায়না|রায়না (তফসিলি জাতি), জামালপুর (তফসিলি জাতি)
আয়তন
  মোট১৬০৩ কিমি (৬১৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট২৮,৮২,০৩১
  জনঘনত্ব১৮০০/কিমি (৪৭০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
  সাক্ষরতা৭৭.১৫%[1]
  লিঙ্গানুপাত৯২৪
প্রধান মহাসড়ক২ জাতীয় সড়ক, গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড, ৬০ নং জাতীয় সড়ক

ইতিহাস

দুর্গাপুরের কাছে বীরবানপুরের মাইক্রোলিথগুলি প্রায় ৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্যালিওলিথিক/মেসোলিথিক যুগে অজয় উপত্যকার বসতির নির্দেশ করে।[2] [3]

প্রাথমিক ঐতিহাসিক সময়ে বর্ধমানভুক্তি রাঢ় অঞ্চলের একটি অংশ, যা ধারাবাহিকভাবে মগধ, মৌর্য, কুষাণ এবং গুপ্ত দ্বারা শাসিত হয়। সপ্তম শতাব্দীতে যখন শশাঙ্ক রাজা ছিলেন, তখন এলাকাটি গৌড় রাজ্যের অংশ ছিল। ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি দ্বারা এটি দখল না হওয়া পর্যন্ত পাল এবং সেনগণ দ্বারা শাসিত হয়েছিল।[4]

প্রাথমিক মুসলিম শাসকগণ গৌড় বা লখনৌতি থেকে বাংলার প্রধান অংশ শাসন করেছিলেন। আইন-ই-আকবরীতে বর্ধমানকে সরকার শরিফাবাদের একটি মহল বা পরগনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দামোদর নদঅজয় নদের মাঝখানের এলাকাকে গোপপুম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে সাদগোপ রাজারা শাসন করেছিলেন। কাঁকসা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মধ্যে শ্যামারপুর গড় এবং ইছাই ঘোষের দেউল তখনকার সময়কালের ধ্বংসাবশেষ।[4]

ভৌগোলিক উপাত্ত

পশ্চিম বর্ধমান জেলার অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩.৬৮° উত্তর ৮৬.৯৮° পূর্ব / 23.68; 86.98[5] সমূদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৯৭ মিটার (৩১৮ ফুট)।

জনসংখ্যার উপাত্ত

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পশ্চিম বর্ধমান জেলা বর্ধমান জেলা থেকে বিভক্ত হওয়ার পর জনসংখ্যা ছিল ২৮,৮২,০৩১ জন। যার মধ্যে ১৪,৯৭,৪৭৯ (৫২%) জন পুরুষ এবং ১৩,৮৪,৪৫২ (৪৮%) জন নারী ছিল। ৬ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যা ৩,২২,২৬৮ জন ছিল।[6]

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ২০১৭ সালের বর্ধমান জেলার বিভক্তকরণের পর পশ্চিম বর্ধমান জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২০,১৫,০৫৬ জন সাক্ষর (6 বছরের বেশি জনসংখ্যার 78.75%), যার মধ্যে পুরুষ সংখ্যা ১১,৩৬,৯৯০ জন (পুরুষের জনসংখ্যার ৮৫.৪৪% ৬ বছরের বেশি বয়ষ্ক) এবং মহিলার সংখ্যা ৮,০৬,০১০ জন (৬ বছরের বেশি বয়ষ্ক মহিলার জনসংখ্যার ৬৫.৫৫%)।[6]

পাশ্চিম বর্ধমান জেলায় ধর্ম
হিন্দু
 
৮৪.৭৫%
ইসলাম
 
১৩.৩২%
খ্রিস্টান
 
০.৪৪%
অন্যরা
 
১.৪৯%

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে পাশ্চিম বর্ধমান জেলায় হিন্দুদের সংখ্যা ২৪,৪২,৪১৪ জন যা মোট জনসংখ্যার ৮৪.৭৫%। মুসলমানদের সংখ্যা ৩,৮৪,০২৭ জন, যা মোট জনসংখ্যার ১৩.৩২%। খ্রিস্টান সংখ্যা ১২,৬৩৬, যা মোট জনসংখ্যার ০.৪৪% গঠন। অন্যান্যদের সংখ্যা ৪২,৯৫৪ জন, যা মোট জনসংখ্যা ১.৪৯%।[7]

ভাষা

পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রধান ভাষা হল বাংলা ভাষা। বাংলা এই জেলার সরকারি বা দাপ্তরিক ভাষা। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। বাংলা ভাষা ছাড়াও সাঁওতালি এখানকার স্থানীয় ভাষা। জেলাটিতে বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি ভাষায় কথা বলা জনগণ দেখা যায়। এরা মূলত কাজের সূত্রে ভিনরাজ্য থেকে (বিহার, ঝাড়খন্ড) থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেছেন। জেলাটিতে জনসংখ্যার হিসাবে বাংলার পড়েই হিন্দির স্থান।

মহকুমা

আসানসোল মহকুমা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার একটি মহকুমা। এই মহকুমা আসানসোল পৌরসংস্থা ও চারটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক (বরাবনি, জামুড়িয়া, রাণীগঞ্জ ও সালানপুর) নিয়ে গঠিত। উক্ত চারটি ব্লকের অধীনে ৩৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ১৮টি সেন্সাস টাউন রয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই মহকুমার অন্তর্গত চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

দুর্গাপুর মহকুমা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার একটি মহকুমা। এই মহকুমা দুর্গাপুর পৌরসংস্থা ও চারটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক (অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, ফরিদপুর-দুর্গাপুর ও কাঁকসা) নিয়ে গঠিত।

এলাকা

আসানসোল মেট্রোপলিটান এরিয়া : বরাকর, মাইথন থেকে পানাগড় পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মেট্রো নগরী

আসানসোল মহকুমায় আসানসোল শহর পশ্চিম বঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও আসানসোল পৌরসংস্থা (বিস্তৃতি পূর্বে রানীগঞ্জ শহর থেকে পশ্চিমে বরাকর শহর পর্যন্ত, যা আয়তনে পশ্চিম বঙ্গের বৃহত্তম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন)। এছাড়া আসানসোল মহকুমার বরাবনি, জামুড়িয়া, রাণীগঞ্জ ও সালানপুর ব্লক চারটির অধীনে ৩৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ১৮টি সেন্সাস টাউন রয়েছে।[8] এই ১৮টি সেন্সাস টাউন হল পানগাছিয়া (খ), ভানোয়ারা, পরাশিয়া, কেন্দা, কুনুস্তোরিয়া, বাঁশড়া, চেলাদ, রতিবাটী, চাপুই, জেমারি (জে. কে. নগর টাউনশিপ), আমকুলা, মুরগাথুল, রঘুনাথচক, বল্লভপুর, বেলেবাথান, চিত্তরঞ্জন, হিন্দুস্তান কেবলস টাউনজেমারি[9] ও দুর্গাপুর মহকুমায় দুর্গাপুর শহরাঞ্চলের ভৌগোলিক আয়তন ১২৭.১ বর্গ কিঃমিঃ। পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর (পূর্বে পানাগড় থেকে পশ্চিমে অন্ডাল পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ৪০ কিঃমিঃ। উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর (উত্তরে শিবপুর-অজয়ঘাট থেকে দক্ষিণে ন'ডিহা পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ২২ কিঃমিঃ। ভৌগলিক বিস্তৃতি ও আয়তনের বিচারে দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ও পূর্বোত্তর ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল। এই অঞ্চলে একমাত্র বিমানবন্দর কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর অন্ডাল এ অবস্থিত।

ব্লক

বরাবনি ব্লক

বরাবনি ব্লকের গ্রামীণ এলাকা আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল বরাবনি, ইটাপড়া, নুনি, পানুড়িয়া, দোমোহানি, জামগ্রাম, পাঁচগাছিয়া ও পুঁচড়া।[8] এই ব্লকের শহরাঞ্চল পাঁচগাছিয়া (খ)ভানোরা সেন্সাস টাউন দুটি নিয়ে গঠিত।[9] ব্লকটি বরাবনি ও আসানসোল (উত্তর) থানার অধীনস্থ।[10] ব্লকের সদর দোমোহানি বাজার।[11]

জামুড়িয়া ব্লক

জামুড়িয়া ব্লকের গ্রামীণ এলাকা ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল জামশোল, পুরাতন জামশোল, চকতুলুসী, বাহাদুরপুর, চাকদলা, ডোবরানা, মদনতোড়, সত্তোর, তালতোড়, বিজয়নগর, ধসল, তপসী, চিনচুরিয়া, হিজলগড়া, পাথরচুড়, লালবাজার, দরবারডাঙা, বারুল, শাঁখিড়-কুমারডিহা, বীরকুলটি, পরাশিয়া, চুরুলিয়া, কেন্দা ও শ্যামলাকেন্দা।[8] এই ব্লকের শহরাঞ্চল পরাশিয়া, কেন্দাকুনুস্তোরিয়া, সেন্সাস টাউন তিনটি নিয়ে গঠিত।[9] ব্লকটি জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বর থানার অধীনস্থ।[10] ব্লকের সদর বাহাদুরপুর।[11] । বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয় এ ব্লকের একটি নামকরা বিদ্যালয়। এখানে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও আছে।

রাণীগঞ্জ ব্লক

রাণীগঞ্জ ব্লকের গ্রামীণ এলাকা ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল আমড়াসোতা, এগারা, রতিবাটী, বল্লভপুর, জেমারি ও তিরাট।[8] এই ব্লকের শহরাঞ্চল বাঁশড়া, চেলোদ, রতিবাটী, চাপুই, জেমারি (জে. কে. নগর টাউনশিপ), আমকুলা, মুরগাথুল, রঘুনাথচক, বল্লভপুরবেলেবাথান সেন্সাস টাউন দশটি নিয়ে গঠিত।[9] ব্লকটি রাণীগঞ্জ থানার অধীনস্থ।[10] ব্লকের সদর সিয়ারশোল রাজবাড়ি।[11]

সালানপুর ব্লক

সালানপুর ব্লকের গ্রামীণ এলাকা ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত। এগুলি হল আছড়া, দেন্দুয়া, ফুলবেরিয়া, লালগঞ্জ, পর্বতপুর, সামডি বোলকুণ্ডা, আল্লাদি, এথোরা, রূপনারায়ণপুর, বাসুদেবপুর জেমারি, জিতপুর-উত্তররামপুর, সালানপুর ও কাল্লা।[8] এই ব্লকের শহরাঞ্চল চিত্তরঞ্জন, হিন্দুস্তান কেবলস টাউনজেমারি সেন্সাস টাউন তিনটি নিয়ে গঠিত।[9] ব্লকটি চিত্তরঞ্জন ও সালানপুর থানার অধীনস্থ।[10] ব্লকের সদর রূপনারায়ণপুর বাজার।[11]

অন্ডাল ব্লক

পান্ডবেশ্বর ব্লক

ফরিদপুর-দুর্গাপুর ব্লক

কাঁকসা ব্লক

বিধানসভা কেন্দ্র

সীমানা নির্ধারণ কমিশনের সুপারিশ ক্রমে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তিত বিধানসভা কেন্দ্র বিন্যাসে:[12]

  • আসানসোল পৌরসংস্থা এলাকা দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত। এই পৌরসংস্থার ১-৮, ১০-১৭, ১৯, ২৩-৩৩ ওয়ার্ডগুলি নিয়ে আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।
  • আসানসোল পৌরসংস্থার ৯, ১৮, ২০, ৩৪-৫০ নং ওয়ার্ডগুলি এবং রানিগঞ্জ ব্লকের আমড়াসোতা, এগারা, বল্লভপুর, জেমারি ও তিরাট গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।
  • রানিগঞ্জ ব্লকের অবশিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি, জামুরিয়া পুরসভা এলাকা ও জামুরিয়া ব্লক নিয়ে জামুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।
  • রানিগঞ্জ পুরসভা এলাকা নিয়ে রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।
  • কুলটি পুরসভা এলাকা নিয়ে কুলটি বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।
  • বারাবনি ও সালানপুর ব্লকদুটি নিয়ে বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত।

অর্থনীতি

কয়লা খনি

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র

ভারতে কয়লা উত্তলন প্রথম রানীগঞ্জ কয়লাখানিতে শুরু হয়। ১৭৭৪ সালে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন সুমনার এবং সুটিনিউস গ্রান্ট হেইলি বর্তমানে ইথোরা নিকটবর্তী কয়লা পেয়েছিলেন, বর্তমানে এটি সালানপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত।[13]

১৯৭৩ সালে, ভারত সরকার দেশের সকল নন-কোকিং কয়লা খনি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ১৯৭৫ সালে কোকিং ও নন-কোকিং কয়লা খনি পরিচালনার জন্য কোল ইন্ডিয়া গঠন করা হয়।[14]

ইস্টার্ন কোয়ালিফিল্ডগুলি তার খোলা মুখ খনি থেকে প্রতি বছর ৩০ মিলিয়ন টন কয়লা উত্পাদন করছে, এটি ভূগর্ভস্থ খনি থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন টন কয়লা উত্পাদনের জন্য ভূগর্ভস্থ খনিগুলি আধুনিকায়ন করছে।[15][16]

রেল

আসানসোল একটি বৈদ্যুতিক রেল শেড এবং একটি ইএমইউ শেড আছে। অন্ডালে একটি ডিজেলের লোহা শেড রয়েছে, যার মধ্যে অন্ডালে সীতারামপুর ও বরাকরের পাশাপাশি একটি বড় মালপত্র পরিবহনের স্টেশন বা ইয়ার্ড রয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের আসানসোল বিভাগ প্রতিদিন ১,৩০০ ওয়াগন কয়লা পরিচালনা করে। [2 9]

চিত্তরঞ্জনে উৎপাদিত ডব্লিউএপি৫ লোকোমোটিভ

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছে চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা বা চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ভারতের একটি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নির্মাণ কারখানা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম লোকোমোটিভ উত্পাদক কারখানাগুলির অন্যতম। [17][18][19] ১৯৪৭ সালে স্থাপিত এই কারখানাটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তরঞ্জন দাশের নামাঙ্কিত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই কারখানাটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মিহিজাম রেলস্টেশনের নিকটবর্তী। ফ্যাক্টরিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ১৮.৩৪ বর্গকিলোমিটারের চিত্তরঞ্জন টাউনশিপে ১৯১ কিলোমিটার রাস্তা, ৪৩টি স্কুল, ৯,১৩১টি কর্মচারী আবাসন, আটটি ক্লিনিক (একটি ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল সহ) ও সাতটি বাজার রয়েছে।

যোগাযোগ

সড়কপথ

দুর্গাপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, কনিষ্ক রোড

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জাতীয় সড়ক ১৯ ও জাতীয় সড়ক ১৪ পশ্চিম বর্ধমান জেলাকে অতিক্রম করেছে। জাতীয় সড়ক ১৯ পূর্ব দিকে কলকাতা এবং উত্তর-পশ্চিমে দিকে, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লিকে যুক্ত করেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সঙ্গে। জাতীয় সড়ক ১৪ জেলাটিকে দক্ষিণে বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাওড়িশা রাজ্যের সঙ্গে এবং উত্তরে ফারাক্কা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া সড়কপথে জেলাটি ধানবাদ, বাঁকুড়া, পাটনা, হলদিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

রেলপথ

আসানসোল জংশন রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান প্রবেশ পথ

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহর রেল পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দু। আসানসোল রেলওয়ে বিভাগ বর্তমানে পূর্ব রেল জোনের একটি অংশ। এই শহরটি আসানসোল রেল বিভাগের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৪৯৩ কিলোমিটার (৩০৬ মাইল) রেলপথ রয়েছে এই রেল বিভাগে। আসানসোল রেল বিভাগের স্টেশনগুলি হল অণ্ডাল, রাণীগঞ্জ এবং দুর্গাপুর। [৮]

কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রধান রেললাইনটি শহরের মধ্য দিয়ে হাওড়া থেকে নতুন দিল্লির দিকে যায় এবং সীতারামপুর রেল জংশনে গ্রান্ড কর্ড লাইন যুক্ত রয়েছে, আসানসোল জংশনের সামান্য কিছু পশ্চিমে। বর্ধমান-আসানসোল রেল পথ হাওড়া-দিল্লি প্রধান লাইনের একটি অংশ। অন্ডালের সঙ্গে আসানসোল এবং পরে জামশেদপুর, পুরুলিয়া ও খড়্গপুর থেকে বাঁকুড়া পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাকের আরেকটি রেলপথ রয়েছে। একটি শাখা লাইন সাহেবগঞ্জ লুপের উপর সাঁথিয়া দিয়ে অন্ডালকে সংযুক্ত করেছে।

জেলার প্রধান রেল স্টেশন গুলি হল:

আকাশপথ

কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল।

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দুটি বিমানবন্দর রয়েছে। এই দুটি বিমানবন্দর হল দুর্গাপুর শহরের কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বার্ণপুর শহরে দাদোদর নদের তীরে অবস্থিত একটি ব্যক্তিগত বার্ণপুর বিমানবন্দর। বার্ণপুর বিমানবন্দরের মালিকানা রয়েছে ইস্কো ইস্পাত (বার্নপুর ইস্পাত কারখানা) কারখানার কাছে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়। বর্তমানে বিমানবন্দরের রানওয়ে ১,২২০ মিটার (৪,০০০ ফু) দীর্ঘ ও ২৩ মিটার চওড়া।বিমানবন্দরটিতে কোনো টার্মিনাল বা প্রান্তিক নেই। নেই কোনো এটিসি নিয়ন্ত্রণ ভবন।

কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শহরে অবস্থিত একটি বেসরকারি বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর দুর্গাপুর বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। এই বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত দুর্গাপুর বিমাননগরী (দুর্গাপুর এয়াট্রোপোলিশ) হল ভারতের প্রথম বিমাননগরী। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে এয়ারপোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ২০১৭-২০১৮ সালের যাত্রী পরিবহনের হিসাবে দুর্গাপুর বিমানবন্দর হল পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় ও ভারতের ৮৩ তম ব্যস্ত বিমানবন্দর।[20][21][22] বর্তমানে এই বিমানবন্দর থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে উড়ান পরিচালনা করছে এয়ার ইন্ডিয়া

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "District-specific Literates and Literacy Rates, 2001" (ইংরেজি ভাষায়)। Registrar General, India, Ministry of Home Affairs। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১০
  2. "List of Paleolithic sites in India"। Important India। ১৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৭
  3. "Bardhaman district"History and Background। Bardhaman district authorities। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৭
  4. "Asansol"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫ অজানা প্যারামিটার |accessyear= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. "2011 Census - Primary Census Abstract Data Tables"West Bengal – District-wise। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭
  6. "C1 Population by Religious Community"West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৭
  7. "Directory of District, Sub division, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal, March 2008"West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। National Informatics Centre, India। ২০০৮-০৩-১৯। ২০০৯-০২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৭
  8. "District Wise List of Statutory Towns( Municipal Corporation,Municipality,Notified Area and Cantonment Board) , Census Towns and Outgrowths, West Bengal, 2001" (ইংরেজি ভাষায়)। Census of India, Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৭
  9. "List of Districts/C.D.Blocks/ Police Stations with Code No., Number of G.Ps and Number of Mouzas" (ইংরেজি ভাষায়)। Census of India, Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৭
  10. "Contact details of Block Development Officers"Bardhaman district (ইংরেজি ভাষায়)। Panchayats and Rural Development Department, Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২৫
  11. "Press Note, Delimitation Commission" (PDF)Assembly Constituencies in West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Delimitation Commission। পৃষ্ঠা 21–22,25। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৪
  12. Akkori Chattopadhyay, Bardhaman Jelar Itihas O Lok Sanskriti , Vol I, pp. 46-51, (Bengali), Radical, 2001, আইএসবিএন ৮১-৮৫৪৫৯-৩৬-৩
  13. "Coal India Limited"History। CIL। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৭
  14. "Eastern Coalfields aim higher output from underground mining"। The Hundu Business Line, 12 October 2014। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৭
  15. "Eastern Coalfields"Planning। ECL। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৭
  16. http://www.indiacatalog.com/profiles/tourism/chittaranjan_locomotive_works.html
  17. http://pib.nic.in/feature/feyr98/fe1198/f1311982.html
  18. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  19. "Traffic News for the month of March 2018: Annexure-III" (PDF)Airports Authority of India। ১ মে ২০১৮। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৮
  20. "Traffic News for the month of March 2018: Annexure-II" (PDF)Airports Authority of India। ১ মে ২০১৮। পৃষ্ঠা 3। ১ মে ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৮
  21. "Traffic News for the month of March 2018: Annexure-IV" (PDF)Airports Authority of India। ১ মে ২০১৮। পৃষ্ঠা 3। ১ মে ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.