রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র

রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গ অঙ্গরাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল এবং দুর্গাপুর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত একটি কয়লাখনি অঞ্চল। এর বিস্তৃতি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি তথা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদ জেলা পর্যন্ত।

রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র
অবস্থান
রানিগঞ্জ
পশ্চিমবঙ্গে কয়লাক্ষেত্রটির অবস্থান
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
স্থানাঙ্ক২৩°৩৭′৪৪″ উত্তর ৮৭°০৬′৫৪″ পূর্ব
ইতিহাস
চালু১৭৭৪
মালিক
কোম্পানিইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড
ওয়েবসাইটhttp://www.easterncoal.gov.in/
অধিগ্রহণের বছর১৯৭৫

ইতিহাস

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র

ভারতে কয়লাখনির কাজ শুরু হয় রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রে।ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন সুমনার এবং সুয়েটিনিয়াস গ্র্যান্ট হিটলি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইথোরা অঞ্চলে, বর্তমান সালানপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে কয়লা দেখতে পান। শুরুর দিকে পরীক্ষানিরীক্ষা এবং খনন কাজকর্ম একটা অসংলগ্ন পদ্ধতিতে চালু হয়ছিল।[1]

নিয়মিত খনন কাজ শুরু হয় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি এজেন্সি হাউজের নেতৃত্বে।১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর কোলিয়ারির জায়গা কেনেন এবং কার অ্যান্ড টেগোর কোম্পানি ঐ ক্ষেত্রটি অধিগ্রহণ করে। পুরো উনিশ শতক এবং বিশ শতকের অধিকাংশ সময়কাল জুড়ে রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রই দেশের প্রধান কয়লা উৎপাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।[1]

উইলিয়াম প্রিন্সেপের আদেশানুসারে কার অ্যান্ড টেগোর কোম্পানি গিলমোর হমব্রে অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে হাত মেলায়, এবং ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল কোল কোম্পানি গঠন করে, যারা কয়লা খনির কাজকর্ম শুরু করে। সাঁকতোড়িয়ায় এদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল। অন্যান্য খনন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল বীরভূম কোল কোম্পানি, ইকুইটেবল কোল কোম্পানি, মধু রায় অ্যান্ড প্রসন্ন দত্ত কোম্পানি, বার্ড অ্যান্ড কোম্পানি, সাউথ বরাকর কোল কোম্পানি, অ্যান্ড্রু ইউল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এবং বামার লরি[1][2]

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ডবলু ডবলু হান্টার লিখেছেন, "রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র  ৫০০ বর্গমাইল অঞ্চলজুড়ে ধরা হয়েছিল। 'ভারতের এই কালো দেশে'র মধ্যে, যেটা লম্বা চিমনি দিয়ে রেখাঙ্কিত ছিল, অনেক দেশীয় সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানিও এখানে কাজ করত। সবচেয়ে প্রথম খোলমেলাভাবে কয়লা তোলা হোত, কিন্তু এখন নিয়মিত খাদানের ব্যবস্থায় কাজ হয়, যে পদ্ধতিকে বলা হয় 'পিলার অ্যান্ড স্টল'.... খনিকর্মীদের সকলেই আদিম গোষ্ঠীর মানুষের থেকে আসত, প্রধানত সাঁওতাল এবং বাউরি, যাদের সহনশীলত এবং বশ্যতা স্বীকারের সুনাম আছে।"[3]

বর্তমান অবস্থা

সমস্ত কাঁচা কয়লার খনি কোল মাইন্স অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অধীনে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়করণ করা হয়েছে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর সহায়ক, ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড গঠিত হয়। এই সংস্থা রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের প্রথম দিককার সমস্ত বেসরকারি কোলিয়ারিগুলো অধিগ্রহণ করে।[2]

রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র ৪৪৩.৫০ বর্গকিলোমিটার (১৭১.২৪ বর্গমাইল) অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এবং মোট ৪৯১৭ কোটি টন কয়লা সঞ্চিত আছে,যা একে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ কয়লাক্ষেত্র (সঞ্চয়ের হিসেবে) তৈরি করেছে। মোট কয়লা সঞ্চয়ের ৩০.৬১ কোটি টন পশ্চিমবঙ্গে এবং ১৮.৫৬ কোটি টন ঝাড়খণ্ডে আছে।

কয়লা স্তরসমূহ

রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রে কয়লা স্তরগুলোকে দুটো খণ্ডে ভাগ করা যায়—রানিগঞ্জ পরিমাপন এবং বরাকর পরিমাপন। নিচের ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের জায়গাগুলো রানিগঞ্জ পরিমাপনে পড়ে: পাণ্ডবেশ্বর, কাজোরা, ঝাঁঝরা, বাঁকোলা, কেন্দা, সোনপুর, কুনুসতোড়িয়া, সাতগ্রাম, শ্রীপুর, সোদপুর এবং আংশিকভাবে সালানপুর। বরাকর পরিমাপনের অঞ্চলগুলো হল ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের সালানপুর এবং মুগমা।[2]   

অয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কমিশনের  কয়লা-স্তর মিথেন গ্যাস সম্পর্কে নির্ণয় হল দামোদর উপত্যকা কয়লাক্ষেত্রের চার খনি--ঝরিয়া, বোকারো, উত্তর করণপুরা এবং রানিগঞ্জ—এগুলো খুবই সম্ভাবনাপূর্ণ।[5]

লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ

রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র সারা ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ গুণমানের কাঁচা কয়লা উৎপাদন করে, যাতে গড় ২০ শতাংশেরও কম ছাই থাকে। এই কয়লার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এই কয়লা উচ্চ বায়বীয় পদার্থ, লম্বা শিখা, দ্রুত জ্বলনাঙ্ক এবং উচ্চ তাপমূল্যযুক্ত। নিচে ২০১২-১৩ সালের লক্ষণীয় রাজস্বসংক্রান্ত বিষয়গুলি দেওয়া হল:

  • কয়লা উৎপাদন = ৩৩৯ কোটি মেট্রিক টন
  • বার্ষিক আয় = ১২,০৭৬.১৭ কোটি টাকা (US$ ১০৮ কোটি)
  • কর বহির্ভূত লাভ = ১,৮৯৭.১৮ কোটি (US$ ২৯ কোটি)
  • মানবশক্তি = ৭২,৯৭৩
  • কার্যকর খনির সংখ্যা = ৯৮ টি
  • ভূগর্ভস্থ খনির সংখ্যা = ৭৭ টি
  • খোলামুখ খনির সংখ্যা = ২১ টি

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.