বাউড়ি
বাউড়ি একপ্রকার হিন্দু তফসিলি জাতিবিশেষ। ভারতীয় বর্ণব্যবস্থায় এরা নিম্নবর্গীয়। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের বাঁকুড়া, বীরভূম ও অন্যান্য জেলায় বাউড়িরা প্রচুর সংখ্যায় বাস করেন।[1][2]
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাউড়িদের সংখ্যা ১,০৯১,০২২। এঁরা পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি জনসংখ্যার মোট ৫.৯ শতাংশ। বাউড়িদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৫ শতাংশ সাক্ষর – এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৫১.৮ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ২২.৭ শতাংশ। মাত্র ৪.৭ শতাংশ বাউড়ি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে অথবা বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করেছে।[3]
উপবর্ণ
বাউড়িরা নিম্নলিখিত উপবর্ণগুলিতে বিভক্ত: মল্লভূমিয়া, শিখরিয়া বা গোবারিয়া, পঞ্চকোটী, মোলা বা মুলো, ঢালিয়া বা ঢুলো, মালুয়া, ঝাটিয়া বা ঝেটিয়া ও পাথুরিয়া। বাউড়িদের কয়েকটি উপবর্ণ নির্দিষ্ট অঞ্চলের সীমার মধ্যে বসবাস করতেন। মল্লভূমিয়া, মালুয়া ও সম্ভবত মোলারা মল্লভূমের (প্রাচীন মধ্য ও দক্ষিণ বাঁকুড়া) বাসিন্দা ছিলেন। শিখরিয়ারা সম্ভবত বাস করতেন শিখরভূম অর্থাৎ কাঁসাই ও বরাকর নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। ঢুলিয়ারা বাস করতেন ঢলভূম অর্থাৎ বর্তমান খাতড়া মহকুমা অঞ্চলে। পঞ্চকোটীরা ছিলেন পুরুলিয়া জেলার পঞ্চকোট এস্টেটের বাসিন্দা। গোবরিয়াদের পেশা ছিল খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ও গোবর পরিষ্কার করা। ঝাটিয়ারা খাদ্যের উচ্ছিষ্ট না ধুয়ে কেবলমাত্র ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করত।[1]
লাল-পৃষ্ঠবিশিষ্ট সারস ও কুকুর আজও বাউড়িদের টোটেম। সারস এই জাতির প্রতীক রূপে ব্যবহৃত। বাউড়িরা কুকুর পবিত্র মনে করে এবং কোনো অবস্থাতেই কুকুর হত্যা করে না।[1]
বাউড়িরা অত্যধিক মদ্যপান করে এবং শূকর, মুরগির মাংস এবং সকল প্রকার মাছ ও ইঁদুর খায়। যদিও তারা সাপ বা গিরগিটি খায় না।[1]
পাদটীকা
- O’Malley, L.S.S., Bengal District Gazaeteers, Bankura, pp. 65-67, 1995 edition, Government of West Bengal
- O’Malley, L.S.S., Bengal District Gazeteers, Birbhum, p.41, 1996 edition, Government of West Bengal
- "West Bengal, Census of India 2001, Data Highlights – The Scheduled Castes" (PDF)। Office of the Registrar General, India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৮।