কায়স্থ
'কায়স্থ বা কায়েত হল সনাতন ধর্মালম্বী (হিন্দু) দের একটি সবর্ণ জাতিবর্গ বা সমুদয়। প্রাচীনকালে এরা প্রশাসনিক কার্যভার বহন করত।[1]
![]() "কলিকাতার কায়স্থ", ১৯ শতকে প্রকাশিত একটি বই থেকে | |
ভাষা | |
---|---|
বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, ওড়িয়া, অসমীয়া, মৈথিলি ও উর্দু | |
ধর্ম | |
![]() |
হিন্দুশাস্ত্র (বিশেষতঃ পুরাণ) অনুসারে, কায়স্থরাধর্মরাজ চিত্রগুপ্ত দেবের বংশধর।[2] চিত্রগুপ্তদেব কে সৃষ্টির কর্তা ব্রহ্মা মৃত্যুর দেবতা যমরাজের সাহায্য ও মানুষের দৈনন্দিন পাপ ও পুণ্যের হিসেব লিখে রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।[3] চিত্রগুপ্ত দেব সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কায়া এবং অস্থি থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন তাহার জন্য তার বংশধর জন কে কায়স্থ বলে সম্বোধন করা হয়। কায়স্থ রা দ্বিজাতি(ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ,বৈশ্য) মধ্যে গণ্য করা হয়। ইহারা নিজের কর্ম হিসেবে ত্রয়বর্ণে(দ্বিজাতি) অধিকার প্রাপ্ত।
ইতিহাস
পদ্ম পুরান মতে কায়স্থদের আদিপুরুষ ও ইষ্ট দেবতা চিত্রগুপ্ত দেবর দুই বিবাহ হয়েছিল তাহার প্রথম পত্নী সূর্যদক্ষিণা(যাকে নন্দিনী ও বলা হয়) তাহা থেকে ৪ সন্তান উৎপন হয়েছিল-ভানু, বিভানু ,বিশ্বভানু,বীর্য়ভানু। এবং ইহার দ্বিতীয় পত্নী ইরাবতী (যাকে শোভাবতী ও বলা হয়) থেকে ৮ সন্তান উৎপন্ন হয়েছিল-চারু, চিতচারু, মতিভান, সুচারু, চারুণ হেমবান, চিত্র এবং অতিন্দ্রিয়। চিত্রগুপ্তের ১২ সন্তান বিবাহ বাসুকি নাগ এর ১২ কন্যার সঙ্গে হয়েছিল সূর্যদক্ষিণা চার পুত্র কাশ্মীর বা তার আশেপাশে প্রান্তে এবং ইরাবতীর আট সন্তান বঙ্গ প্রান্তের আশেপাশে নিবাস করিতে লাগিল।
কায়স্থ সনাতন ধর্ম(হিন্দু) এর একটি উপবর্ণ বিশেষ। নব থেকে একাদশ শতকে কায়স্থরা বঙ্গদেশে একটি বৃহৎ উপবর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রাচীন লিপিতে বঙ্গদেশে কায়স্থ নামে পরিচিত এক শ্রেণির রাজকর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে তারা করণ, কায়স্থ, লেখক কিংবা হিসাবরক্ষক বলে উল্লিখিত হয়েছে। একাদশ শতকের কোষকার বৈজয়ন্তী তাদের লেখক, করণ ও কায়স্থ বলে উল্লেখ করেছেন। করণ শব্দটি কোথাও লেখক, কোথাও হিসাবরক্ষক আবার কোথাও ভিন্ন অর্থেও ব্যবহূত হয়েছে। বৃহদ্ধর্মপুরাণে করণ ও কায়স্থ একই।
কায়স্থরা ধর্মরাজ চিত্রগুপ্তকে তাদের আদিপুরুষ ও মনে করে। হিন্দু সমাজে কায়স্থদের স্থান ব্রাহ্মণদের পরেই। বাংলার রাজা, জমিদার দের মধ্যে বেশিরভাগই কায়স্থ ছিল ! একদিক থেকে তাদেরকে ক্ষত্রিয় ও বলা যায় !পাল, সেন, মুসলিম ও ইংরেজ আমলে কায়স্থরা শিক্ষার সুবাদে উচ্চপদে আসীন থেকে শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক আচার-আচরণ সাধারণ হিন্দুদের মতোই।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
আধ্যাত্মিক
লেখক, কবি ও সাহিত্যিক
বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক
- জগদীশচন্দ্র বসু
- সত্যেন্দ্রনাথ বসু
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
রাজনীতিবিদ, সংগ্রামী ও বিপ্লবী
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্য
খেলয়ার
পাদটীকা
- Surinder Mohan Bhardwaj (১৯৮৩)। Hindu Places of Pilgrimage in India: A Study in Cultural Geography। University of California Press। পৃষ্ঠা 231–। আইএসবিএন 9780520049512। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১১।
- Sir Herbert Hope Risley (১৮৯২)। The Tribes and Castes of Bengal: Ethnographic Glossary। Bengal Secretariat Press/British Library। পৃষ্ঠা 438। আইএসবিএন 978-1240907106। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১১।
- D.C. Baillie, India Census Commissioner (১৮৯৪)। Census of India, 1891, Volume 16, Part 1। North-Western Provinces and Oudh Government Press। পৃষ্ঠা 219। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১১।