কৈবর্ত
জালিয়া কৈবর্ত হচ্ছে একটি আদিবাসী উপজাতি যা পরবর্তীতে সংস্কৃতায়নের মাধ্যমে হিন্দু বর্ণ বা সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এদের প্রধান পেশা মাছ ধরা এবং মূলত আসাম, উত্তর পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও পূর্ব বিহার এবং এর সাথে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেই এদের উৎপত্তি এবং বসবাস।

শাব্দিক অর্থ
কৈবর্ত অর্থ ধীবর বা জেলে। নিষাদের ঔরসে অয়োগবীজাত জাতি বিশেষ।
নাম রহস্য
কিম্বর্ত দেশীয় রাজন্য বা কৃষিকার জাতিকে কৈবর্ত বলে।
প্রকারভেদ
কৈবর্ত দুই প্রকার। (১) ক্ষত্রবীর্যেণ বৈশ্যায়াং কৈবর্তঃ পরিকীর্তিতঃ। (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ১০ অধ্যায়) অর্থাৎ, ক্ষত্রিয়ের পরিণীতা বৈশ্যা পত্নীর সন্তানের নাম কৈবর্ত বলে পরিগণিত হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের এই কৈবর্তগণই যাজ্ঞবল্ক্যাদি সংহিতায় মাহিষ্য নামে উল্লেখ করা আছে। মাতা-পিতা-বৃত্তি-সমতায় মাহিষ্য ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ক্ষত্রবৈশ্যাজাত কৈবর্ত একই জাতি।
(২) নিষাদো মার্গবং সূতে দাশং নৌকর্মজীবিনম্। কৈবর্তমিতি যং প্রাহুরার্যাবর্ত-নিবাসিনঃ।। (মনু, ১০ অধ্যায়) নিষাদজাতীয় পুরুষ অয়োগবীজাতীয়া স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে যে সন্তান উৎপাদন করে তাদেরকে মার্গব বা দাশ বলে। আর্যাবর্তবাসিগণ এ জাতিকে কৈবর্ত নামেও অভিহিত করে থাকে। তারা নৌ-কর্মজীবি অর্থাৎ নৌকাকে অবলম্বন করে মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তারা সমাজে জেলে কৈবর্ত নামে অভিহিত হন। যারা কৃষিকাজের সাথে যুক্ত তাদের হালিক বা হেলে কৈবর্ত বলা হয়।
প্রথমদিকে কৈবর্তদের একক সম্প্রদায় হিসেবে গণনা করা হলেও পরবর্তীতে দুইভাগ হয়ে যায়। বাংলাতে যাদেরকে জালিয়া এবং হালিয়া বলা হয়। জালিয়াদেরকে নির্ধারিত সম্প্রদায়ের অংশ মনে করা হলেও হালিয়াদের মনে করা হয়।[1][2] আসামে তারা কেয়ত নানে পরিচিত। আসামে কেয়ত রা জাল কেয়ত নামে একক সম্প্রদায়ভুক্ত।
বর্তমানকালে কৈবর্ত সমাজ
“মাছে-ভাতে বাঙালী” - এ চিরন্তন সত্যটি এখন আর নেই। নদীপথে পলিমাটি, অবৈধ দখল, পানি দূষণ, জনসংখ্যার আধিক্য ইত্যাদির ফলে নদীতে মাছের প্রাচুর্য্যতা আশঙ্কাজনকহারে কমে যাওয়ায় কৈবর্ত সমাজের জেলেরা অন্য পেশায় নেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা স্বর্ণকার, দর্জি ইত্যাদি পেশায় নিযুক্ত থেকে দিনযাপন করছেন। একান্তই বাধ্য হয়ে যারা পৈত্রৃক পেশা হিসেবে মাছ ধরায় নিয়োজিত আছেন, তারা কোন রকমে টিকে আছেন। জাল তৈরীতে সূতার দাম বৃদ্ধি, নৌকা তৈরীর মূল উপাদান কাঠসহ অন্যান্য সহায়ক উপকরণের দাম বৃদ্ধিও মাছ শিকারে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে।
জীববৈচিত্র ধ্বংসে ভূমিকা
কৈবর্ত সমাজে স্বাক্ষরতার হার অন্যান্যদের তুলনায় খুবই কম। অধিকাংশ জেলেই অশিক্ষিত বিধায় মাছ শিকার করতে গিয়ে কারেন্ট জাল ব্যবহার করছে। ফলে ঝাটকা, পোনা মাছ শিকারসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে।
তথ্যসূত্র
- Atal, Yogesh (১৯৮১)। Building A Nation (Essays on India)। Diamond Pocket Books (P) Ltd.। পৃষ্ঠা 118। আইএসবিএন 978-8-12880-664-3।
- Venkatesh Salagrama; Food and Agriculture Organization of the United Nations (৩০ ডিসেম্বর ২০০৬)। Trends in Poverty and Livelihoods in Coastal Fishing Communities of Orissa State, India। Food & Agriculture Org.। পৃষ্ঠা 80। আইএসবিএন 978-92-5-105566-3। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২।