ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি

ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি (১৯৭৮) লিমিটেড, (সচরাচর ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি বা সিটিসি নামে পরিচিত) পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিগৃহীত একটি সংস্থা। এই সংস্থা কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ট্রাম ও বাস পরিবহনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ১৮৮০ সালে এই সংস্থাটি স্থাপিত ও নিবন্ধিকৃত হয় এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সংস্থায় পরিণত হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই সংস্থা ট্রামের পাশাপাশি বাস পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে এই সংস্থা কলকাতা শহরে দৈনিক ১৭০টি ট্রাম চালিয়ে থাকে। কলকাতায় ক্রমবর্ধমান ফ্লাইওভার ও রাস্তা উন্নয়নের কারণে কয়েকটি ট্রামরুট এখন বন্ধ করে দেওয়া হলেও, অবশিষ্ট রুটগুলিকে দ্রুতগতির ট্রাম পরিবহনের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। এছাড়া ট্রামকে ঘিরে কলকাতায় একটি বিশেষ পর্যটন আকর্ষণও গড়ে তোলা হয়েছে, যেটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু হলেও, বর্তমানে শুধুমাত্র কলকাতাতেই এই ব্যবস্থা চালু আছে।

ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির সরকারি লোগো
বিধাননগর সিটি সেন্টারে ঊনবিংশ শতকের ঘোড়ায় টানা ট্রামের লাইফসাইজ মডেল

ইতিহাস

ব্রিটিশ আমল

১৯৪৫ সালের কলকাতায় ট্রাম
ব্রিটিশ যুগের ট্রাম

১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ ও আর্মেনিয়ান ঘাটের মধ্যে ২.৪ কিলোমিটার পথে কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলে। যদিও সঠিক পরিচালনার অভাবে সেই বছরেরই ২০ নভেম্বর এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৮৮০ সালে লন্ডনে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড গঠিত ও নিবন্ধিকৃত হয়। বউবাজার স্ট্রীট, ডালহৌসি স্কোয়ার (অধুনা বি.বা.দী.বাগ) ও স্ট্র্যান্ড রোড (অধুনা রাজীব গান্ধী সরণি) হয়ে শিয়ালদহ ও আর্মেনিয়ান ঘাটের মধ্যে ঘোড়ায় টানা ট্রামের মিটারগেজ ট্র্যাক বসানো হয়। এই পরিবেষা চালু হয় ওই বছরের ১ নভেম্বর তারিখে। ১৮৮২ সালে পরীক্ষামূলক স্টিম ইঞ্জিন চালু করা হয়। শতাব্দীর শেষাশেষি কোম্পানি ১৬৬টি ট্রামগাড়ি, ১০০০ ঘোড়া, সাতটি স্টিম ইঞ্জিন ও ১৯ মাইল ট্রামলাইনের অধিকারী ছিল। ১৯০০ ট্রামলাইনের বৈদ্যুতিনকরণ ও তারই সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড গেজ (৪’৮ ১/২”)-এ ট্রামট্র্যাকের পরিবর্তন শুরু হয়। ১৯০৫ সালের জুন মাসে হাওড়া স্টেশন থেকে বাঁধাঘাট পর্যন্ত ট্রামরুটটি চালু হয়। এই বছরেই বৈদুতিনকরণের কাজ শেষ হয়। ১৯০৮ সালে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে হাওড়ার শিবপুর পর্যন্ত ট্রামলাইন পাতার কাজ শেষ হয়। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নবনির্মিত হাওড়া ব্রিজের (বর্তমানে রবীন্দ্র সেতু) মাধ্যমে কলকাতার ট্রাম পরিষেবা হাওড়ার ট্রাম পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হয়।

ব্রিটিশ আমলের ট্রাম কোম্পানির একটি রসজ্ঞ চিত্র পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩২৪ বঙ্গাব্দে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম প্রবন্ধেঃ

১৯২০ সালের পর থেকে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনগুলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই বছরই এই সংস্থার প্রথম শ্রমিক সংগঠন ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন গঠিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ ও স্বামী বিবেকানন্দের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এবং ফনীন্দ্রকুমার সান্যাল ছিলেন এর সম্পাদক। ১৯২৭ সালে এই সংগঠন ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে পুনর্সংগঠিত হয়। সোমনাথ লাহিড়ী, বঙ্কিম মুখার্জি, ডা. অমর নাগ ও মহম্মদ ইসমাইলের মতো কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের নাম এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ১৯৩৯, ১৯৪৩১৯৪৭ সালে বাম-প্রভাবিত এই শ্রমিক ইউনিয়ন ইংরেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জঙ্গী আন্দোলন চালিয়েছিল। আবার ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধলে এই সংস্থার কর্মচারীবৃন্দ হিন্দু-মুসলমান ঐক্য রক্ষায় গৌরবজনক ভূমিকা গ্রহণ করেন। কলকাতার সমস্ত ট্রাম শ্রমিকেরা একত্রিতভাবে রাজাবাজার ট্রাম ডিপোতে এসে উল্টোদিকের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের ছাত্রীদের রক্ষা করেন সশস্ত্র দাংগাবাজদের হাত হতে।[1]

স্বাধীনোত্তর কাল

কলকাতার আধুনিক ট্রাম

১৯৫১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির বলে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ অ্যাক্ট, ১৯৫১ পাস হয়। এই আইনবলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রামওয়েজের সকল স্বত্তাধিকার ১ জুন ১৯৭২ বা তার দুই বছরের নোটিশে অধিগ্রহণ করার অধিকারী হয়। ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্য ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি (টেকিং ওভার অব ম্যানেজমেন্ট) অ্যাক্ট, ১৯৬৭ সালে পাস হয় এবং ১৯ জুলাই ১৯৬৭ তারিখে ট্রামওয়েজ কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট অধিগ্রহণ করে নেয় সরকার। ৮ নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ (অ্যাকুইজিশন অব আন্ডারটেকিং) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬ বলে কোম্পানি ও তার সকল সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়।

১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে হাওড়া বিভাগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মে মাসের ১৯৭৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় নিমতলা রুটটি। হাওড়া স্টেশন টার্মিনাসটি নতুন করে গড়ে তোলা হয় ও সামগ্রিক পথের পরিমাণ ৬২ কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সালে কলকাতা মেট্রো নির্মাণকার্য শুরু হলে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রোডের ট্রাম ট্যাকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়; কিন্তু নির্মানকাজ শেষ হবার পরেও ট্রাকটি চালু হয়নি। ১৯৯৪ সাল অবধি সেই ট্রাকের ওভারহেড তার বেন্টিঙ্ক স্ট্রীটে বর্তমান ছিল। জওহরলাল নেহেরু রোডের ট্রাকটি থেকে যায় এবং বিড়লা তারামন্ডল টার্মিনাস নির্মিত হয়। কিন্তু এই রুটটিও ১৯৯১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে এই রাস্তায় একটি উড়ালপুল নির্মিত হয়।

সেকালের ট্রাম

১৯৮২ সালে শিয়ালদহ স্টেশন টার্মিনাস ও বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট বরাবর প্রসারিত শিয়ালদহ স্টেশন-লেবুতলা শাখাটি উড়ালপুল (বর্তমানে বিদ্যাপতি সেতু) নির্মাণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই টার্মিনাসে বর্তমানে শিয়ালদহ কোর্ট ও একটি বাস টার্মিনাস দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৮৫ সালের ১৭ এপ্রিল ৩.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মানিকতলা মেন রোড ধরে মানিকতলা-উল্টোডাঙা সম্প্রসারণ সমাপ্ত হয়। ১৯৪৭ সালের পর এটিই কলকাতার প্রথম ট্রামরাস্তা সম্প্রসারণ। ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে বেহালা-জোকা সম্প্রসারণের কাজও সমাপ্ত হয়।

১৯৯৪ সালে কোম্পানি নিজস্ব বাস পরিষেবা চালু করে। ৪ নভেম্বর তারিখে প্রথমেই ৪০টি বাস চালু করা হয়। রবীন্দ্র সেতু আর ট্রাম পরিবহনের উপযুক্ত না থাকায় ১৯৯৩ সালে হাওড়া স্টেশন টার্মিনাসটি বন্ধ হয়ে যায় ও সেতু থেকে ট্রামরাস্তা তুলে নেওয়া হয়। কলকাতার দিকের ট্রামরাস্তাটি বড়বাজার (রবীন্দ্র সেতু) টার্মিনাস (পূর্বতন বড়বাজার জংশন) অবধি করা হয়। ১৯৯৫ সালে হাইকোর্ট টার্মিনাসটি রাজীব গান্ধী সরণির সংস্কারের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই রাস্তার এবং হেয়ার স্ট্রিট ও শহিদ ক্ষুদিরাম বসু রোডের যাবতীয় তার ও রেল তুলে নেওয়া হয়। হাইকোর্ট টার্মিনাসের জায়গায় বর্তমানে হাইকোর্টের নতুন ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৪ সালে গড়িয়াহাট ডিপো থেকে লীলা রায় সরণিস্থ গড়িয়াহাট জংশন লিঙ্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয় একটি উড়ালপুল (বর্তমানে গড়িয়াহাট উড়ালপুল) নির্মাণের জন্য। ২০০৬ সালে তারাতলা ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় মোমিনপুর-বেহালা শাখাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও বেহালা-জোকা রুট ও বেহালা টার্মিনাসটি এখনও চালু আছে। ২০০৭ সালে গালিফ স্ট্রিটের টার্মিনাসটি সম্পূর্ণত একটি সিটিসি বাস টার্মিনাসে পরিণত হয়। গালিফ স্ট্রিট ও বিধান সরণির একাংশ থেকে সমস্ত তার ও রেল তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে কলকাতার ট্রামরাস্তাগুলি দ্রুতগামী ট্রামের উপযোগী করে তোলার জন্য কংক্রিটনির্মিত করা হচ্ছে।

ট্রামরুট

কলকাতার ট্রামরুটের মানচিত্র
রুট নং বিবরণ দৈর্ঘ্য (কিলোমিটারে) সংযুক্ত রাস্তা
বেলগাছিয়া থেকে এসপ্ল্যানেড৭.২৯আর. জি. কর রোড – বিধান সরণি – কলেজ স্ট্রিট – নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট – লেনিন সরণি
বেলগাছিয়া থেকে বি.বা.দী.বাগ৬.৮১আর. জি. কর রোড – বিধান সরণি – কলেজ স্ট্রিট– বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট
বেলগাছিয়া থেকে বি.বা.দী.বাগ৬.৯২আর. জি. কর রোড – বিধান সরণি – অরবিন্দ সরণি – রবীন্দ্র সরণি
শ্যামবাজার থেকে এসপ্ল্যানেড৫.১৩বিধান সরণি – কলেজ স্ট্রিট – নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট – লেনিন সরণি
শ্যামবাজার থেকে বি.বা.দী.বাগ৫.১৩বিধান সরণি – কলেজ স্ট্রিট– বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট
বাগবাজার থেকে বি.বা.দী.বাগ৫.১৩বিধান সরণি – রবীন্দ্র সরণি
১০শ্যামবাজার থেকে বি.বা.দী.বাগ৫.১৩বিধান সরণি – অরবিন্দ সরণি – রবীন্দ্র সরণি
১১বেলগাছিয়া থেকে রবীন্দ্র সেতু৬.৯২আর. জি. কর রোড – বিধান সরণি – অরবিন্দ সরণি – মহাত্মা গান্ধী রোড
১২রাজাবাজার থেকে এসপ্ল্যানেড২.৯২আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড– লেনিন সরণি
১৪রাজাবাজার থেকে বি.বা.দী.বাগ৪.৮১আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – সূর্য সেন স্ট্রিট – রাজা রামমোহন রায় সরণি – বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট
১৫/১২রাজাবাজার থেকে রবীন্দ্র সেতু৪.৮১আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – সূর্য সেন স্ট্রিট – মহাত্মা গান্ধী রোড
১৬বিধাননগর থেকে বি.বা.দী.বাগ৮.১৪কাজী নজরুল ইসলাম সরণি – মানিকতলা মেন রোড – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – সূর্য সেন স্ট্রিট – রাজা রামমোহন রায় সরণি – বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট
১৭বিধাননগর থেকে এসপ্ল্যানেড৮.১৪কাজী নজরুল ইসলাম সরণি – মানিকতলা মেন রোড – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড– লেনিন সরণি
২০পার্কসার্কাস থেকে রবীন্দ্র সেতু৭.৮৫সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – মহাত্মা গান্ধী রোড
২১পার্কসার্কাস থেকে রবীন্দ্র সেতু৭.৮৫সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – মহাত্মা গান্ধী রোড
২২পার্কসার্কাস থেকে বি.বা.দী.বাগ৭.৮৫সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড – লেনিন সরণি - এসপ্ল্যানেড
২০/১৭পার্কসার্কাস থেকে বিধাননগর৮.২৫সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড – মানিকতলা মেন রোড – কাজী নজরুল ইসলাম সরণি
২৪বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে বি.বা.দী.বাগ১২.৬৮রাসবিহারী অ্যাভিনিউ – শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড –হাজরা রোড – আলিপুর রোড – ডায়মন্ড হারবার রোড – কলকাতা ময়দান - এসপ্ল্যানেড
২৫গড়িয়াহাট থেকে বি.বা.দী.বাগ৭.২৫গড়িয়াহাট রোড – সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – এলিয়ট রোড – রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড – লেনিন সরণি - এসপ্ল্যানেড
২৬গড়িয়াহাট থেকে রবীন্দ্র সেতু৯.০৮গড়িয়াহাট রোড – সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউ – নিউ পার্ক স্ট্রিট – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – মহাত্মা গান্ধী রোড
২৯টালিগঞ্জ থেকে বি.বা.দী.বাগ১২.৫৫দেশপ্রাণ শাসমল রোড – শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড –হাজরা রোড – আলিপুর রোড – ডায়মন্ড হারবার রোড – কলকাতা ময়দান - এসপ্ল্যানেড
৩০কালীঘাট থেকে রবীন্দ্র সেতু১১.৮৬শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড –হাজরা রোড – আলিপুর রোড – ডায়মন্ড হারবার রোড – কলকাতা ময়দান - এসপ্ল্যানেড – বি.বা.দী.বাগ – রবীন্দ্র সরণি – মহাত্মা গান্ধী রোড
২৪/২৯টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ স্টেশন৫.৪৫দেশপ্রাণ শাসমল রোড – শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড – রাসবিহারী অ্যাভিনিউ
৩৬খিদিরপুর থেকে এসপ্ল্যানেড৪.৯৯কার্ল মার্কস সরণি– ময়দান
২০/১২পার্কসার্কাস থেকে গালিফ স্ট্রিট৭.৮৫পার্ক স্ট্রিট - আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

সিটিসি ট্রাম পরিষেবা

ব্রিটিশ আমলে কলকাতার ট্রামগুলি লন্ডনে তৈরি হত। ১৯৫২ সালের পর থেকে এই গাড়িগুলি ভারতেই তৈরি হতে শুরু করে। বর্তমানে সিটিসির মোট ৩১৯টি ট্রামের মধ্যে ২৩৯টি ব্যবহারযোগ্য। যদিও দৈনিক ১৭০টি ট্রামই কলকাতার পথে চালানো হয়ে থাকে। এক একটি গাড়ির বহনক্ষমতা ২০০ যাত্রী (মোট আসনসংখ্যা ৬০)। গাড়িগুলির দৈর্ঘ্য ১৭.৫ মিটার ও প্রস্থ ২.১ মিটার। খালি অবস্থায় এগুলির ওজন ২০-২২ টন। গতিবেগ সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা, গড়ে ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ট্রাক গেজ ১৪৩৫ মিলিমিটার । বর্তমানে এক বগির ট্রামগাড়ি অপেক্ষাকৃত বেশি জোরে চলে বলে দাবি করা হয় ।

সিটিসি বাস পরিষেবা

ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির দাবি অনুসারে ১৯২৬ সালে প্রথম সিটিসি সাধারণ বাস পরিষেবা চালু করেছিল। কিন্তু এই প্রকল্পটি পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এখন কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী যেসব অঞ্চলে ট্রাম পরিষেবা সুলভ নয়, সেই সব অঞ্চলের জন্য ১৯৯২ সাল থেকে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি বাস চালিয়ে আসছে। সংস্থার আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রেও এই পরিষেবার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথম দিকে রাজাবাজার থেকে ৪০টি বাস চালু করা হয়েছিল। এরপর ১৯৯৩ সালে খিদিরপুর ডিপো থেকে বাস পরিষেবা চালু হয়। ১৯৯৪১৯৯৫ সালে যথাক্রমে টালিগঞ্জ ডিপো ও বেলগাছিয়া ডিপো থেকে সিটিসির বাস পরিষেবা শুরু হয়। ২০০৫ সালে চালু হয় হাওড়ার ঘোষবাগান ডিপো।

বর্তমানে চালু সিটিসি বাসরুটগুলি টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, খিদিরপুর ও রাজাবাজার – এই চারটি ডিপো থেকেই পরিচালিত হয়ে থাকে।

টালিগঞ্জ ডিপোর বাসরুটগুলি হলঃ এসপ্ল্যানেড-বিশালাক্ষীতলা (এক্সপ্রেস), নুরপুর-এসপ্ল্যানেড (এক্সপ্রেস), এসপ্ল্যানেড-গাদিয়ারা (সুপার এক্সপ্রেস), টালিগঞ্জ-করুণাময়ী (সি-২), গড়িয়া-বিরাটি (সি-৩), জোকা-পাটুলি (সি-৪), গড়িয়া স্টেশন-হাওড়া স্টেশন (সি-৫), মুকুন্দপুর-হাওড়া স্টেশন (সি-৫/১), টালিগঞ্জ-নিক্কো পার্ক (সি-৮), বিজয়গড়-হাওড়া স্টেশন (সি-১৩), টালিগঞ্জ-মধ্যমগ্রাম (সি-১৪/১), টালিগঞ্জ-বারাসাত (সি-১৮), বারুইপুর-হাওড়া স্টেশন (এক্সপ্রেস), নৈনান-এসপ্ল্যানেড (এক্সপ্রেস)।

বেলগাছিয়া ডিপোর বাসরুটগুলি হলঃ বোটানিক্যাল গার্ডেন-গালিফ স্ট্রিট (সি-৬), গালিফ স্ট্রিট-গড়িয়া স্টেশন (সি-১৬), সিঁথির মোড়-দানেশ শেখ লেন (সি-১০), ডোমজুড়-টালা পার্ক (সি-১১), টালা ট্যাঙ্ক-গড়িয়া স্টেশন (সি-১২), টিকিয়াপাড়া/টালা পার্ক-বিবাদীবাগ (টি-৮), মধ্যমগ্রাম-বোটানিক্যাল গার্ডেন (টি-৯), মুন্সিরহাট-হাওড়া স্টেশন (সি-১১/১), লাউহাটি-এসপ্ল্যানেড (টি-১১)।

খিদিরপুর ডিপোর বাসরুটগুলি হলঃ মন্দিরতলা-বিবাদীবাগ (টি-২), মন্দিরতলা-করুণাময়ী (টি-৪), দানেশ শেখ লেন-পাটুলি (সি-১), হরিমোহন ঘোষ কলেজ-হাওড়া স্টেশন (সি-৭), আমতলা-হাওড়া স্টেশন (এক্সপ্রেস), রায়চক-এসপ্ল্যানেড (এক্সপ্রেস)।

রাজাবাজার ডিপোর বাসরুটগুলি হলঃ রাজাবাজার-আলমপুর (টি-১), রাজাবাজার-ঘটকপুকুর (টি-৩), রাজাবাজার-ভাঙ্গড় (টি-৫), রাজাবাজার-হাওড়া স্টেশন (টি-৬), ট্যাংরা-হাওড়া স্টেশন (টি-৭), এসপ্ল্যানেড-আমতা (এক্সপ্রেস), এসপ্ল্যানেড-জাঙ্গিপাড়া (সুপার এক্সপ্রেস), রাজাবাজার-মালঞ্চ (টি-১০), এসপ্ল্যানেড-পাঁচলা (এক্সপ্রেস)।

সুবিধা ও অসুবিধা

জীর্ণ ট্রামরাস্তাগুলি কলকাতার ট্রাম পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম সমস্যা ছিল, বর্তমানে এই রাস্তাগুলির কংক্রিটকরণ চলছে

কলকাতার ট্রাম পরিবহন পরিষেবা একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহবাহী পরিষেবা। তবে কোনও কোনও ব্যক্তি একবিংশ শতাব্দীতেও এই ব্যবস্থা প্রচলিত রাখার বিপক্ষে মত প্রকাশ করে থাকেন। বিভিন্ন মহল থেকে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়ে থাকে এই পরিষেবা তুলে দেওয়ার জন্য। বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী নিজেও কয়েকবার এই পরিষেবার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। যেসব মহল থেকে এই পরিষেবা তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়ে থাকে, তাদের প্রধান যুক্তি ট্রাম পরিবহনের শ্লথ গতি। এত ধীর গতির যান আধুনিক কলকাতা শহরের পক্ষে অনুপযুক্ত ও অনাবশ্যক। এর কারণে কলকাতার পথে অকারণ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

কিন্তু ট্রাম পরিবহন বহাল রাখার ক্ষেত্রেও অনেকগুলি যুক্তি কার্যকর। এগুলির হল,

  • একটি বাস যখন সর্বাধিক ৬০ জন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম তখন একটি ট্রামের সর্বাধিক যাত্রী গ্রহণযোগ্যতা ৩০০।
  • মহিলা, শিশু ও বয়স্ক নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিচু প্লাটফর্মযুক্ত ট্রাম অন্যন্ত আরামদায়ক।
  • নির্দিষ্ট ট্র্যাকে চলার কারণে ট্রাম খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণ যান।
  • ট্রামযাত্রা সহজ ও স্বাস্থ্যকর।
  • ভাড়া কম বলে ট্রাম সাধারণ নিম্নবিত্তদের যাতায়াতের অত্যন্ত উপযোগী।
  • সর্বোপরি, বিদ্যুৎশক্তিতে চলা ট্রাম দুষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব। কলকাতার মতো দুষিত পরিবেশের মহানগরে তাই ট্রামব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।

আরও দেখুন

  • ভারতে ট্রাম পরিবহন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  1. সাধন ব্যানার্জী (২০০২ সেপ্টেম্বর)। দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা। কলকাতা: উজানে, ত্রৈমাসিক। পৃষ্ঠা ১১৭–১২০। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.