বাঙালি রন্ধনশৈলী
বাঙালি রন্ধনশৈলী হচ্ছে রান্নার একটা শৈলী যা ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে বঙ্গে উৎপত্তি লাভ করে। প্রাচীন বঙ্গ অঞ্চল বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক ভ্যালীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে প্রধান খাবার ভাত এবং মাছের সাথে মাংস, সব্জি, ডাল দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এর খাদ্য সম্ভার।
বাঙালি |
---|
Part of a series on |
![]() |
বাঙালির ইতিহাস |
বাঙালি স্বদেশ
|
|
বাঙালি সংস্কৃতি
|
বাংলার প্রতীক
|
রাজনীতি
|
বঙ্গের সংস্কৃতি |
---|
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক |
![]() |
ইতিহাস |
ভাষাতত্ত্ব
বর্ণমালা
|
ঐতিহ্য বাঙালি বিবাহ
|
শিল্প
|
ইতিহাস
ধরণ প্রতিষ্ঠান
পুরস্কার
|
|
ইতিহাস


প্রাচীন বাংলার রান্না
প্রাচীন বাংলার আহারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ভাত, মাছ, মধু, দুধ এবং সবজি । বঙ্গ অঞ্চলটি প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজত্বের সময় দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক অঞ্চল ছিল; এবং পরবর্তীতে মুসলিম শাসন আমলেও । বাঙালি খাবারের বিভিন্নতা এবং বিচিত্র্তা ব্যাপক ও বিশাল । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত ও প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন ধরনের খাবার ছাড়াও নিজের পরিবার অথবা আত্মীয়স্বজনদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পানীয়, আচার, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে ।

নবাবদের শাসন আমল
বিভিন্ন সময়ে বঙ্গদেশ মুসলিম নবাব ও সুলতানদের অধীনে শাসিত হয়েছে । ১৭১৭ সালে মোগল শাসন আমলে এ অঞ্চলের শাসনভার নবাব মুর্শিদ কুলী জাফর খান এর হাতে ন্যস্ত করা হয় । মোগলদের শাসন আমলে স্বাভাবিকভাবেই মোগল সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের পাশাপাশি রন্ধণপ্রণালী এবং খাদ্যাভাসের প্রভাব এ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের উপর পড়ে । বর্তমান সময়েও বিভিন্ন মোগলাই খাবার যেমন: বাকরখানি, মোগলাই পরোটা, কাবাব, হালুয়া, বিরিয়ানী ইত্যাদি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানেই ব্যাপক জনপ্রিয় ।
ক্রিশ্চিয়ান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রভাব
চা এবং বিভিন্ন ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, যা এখন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় খাবার, সেগুলো মূলত ক্রিশ্চিয়ান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় কালচার তথা খাদ্যাভাসের সুস্পষ্ট প্রভাব । কলকাতায় ইহুদীদের বৃহৎ বেকারী যদিও আগের মত চলে না,[1] তথাপি এর প্রভাব সারা বঙ্গদেশেই পরিলক্ষিত হয় ।
বিধবা মহিলা রীতির প্রভাব
বঙ্গ অঞ্চলে বিধবা মহিলাদের উপর সবসময়ই কঠোর নীতি চালু ছিলো । যদিও ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা রোধ ও ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন এর মাধ্যমে এর অনেকটাই রোধ করা গেছে, তবুও কিছু কিছু সামাজিক আচার এখনও চালু রয়েছে [2]। বাল্য বিবাহ [3] এবং কম গড় আয়ুর ফলসরূপ অনেক মহিলাই বিধবাতে পরিণত হয়- প্রায় ২৫ শতাংশ পরিবারে একজন বিধবা মহিলা রয়েছে, যারা বাড়ির ভিতরেই আবদ্ধ থাকে এবং রান্নাবান্নার কাজেই অধিক সময় ব্যয় করে থাকে ।[4] যদিও অধিকাংশ বাঙালি সম্প্রদায়ই মাছ মাংস খেতে পারত, বিধবা মহিলাদের জন্য এটা ছিল নিষিদ্ধ ।[৬] এ কারনেই বিধবা মহিলাদের শুধুমাত্র নিরামিষ আহারের উপর নির্ভর করে নিরামিষ খাবার রান্নার এক বৃহৎ খাদ্য রেসিপি গড়ে উঠেছে । এ সম্পর্কে একজন বাঙালি লেখিকা চিত্রিতা ব্যানার্জী তার বইতে উল্লেখ করেন ।[5]
রন্ধনপদ্ধতি এবং ব্যবহৃত দ্রব্যাদি
বাঙালি খাবার রান্নার ক্ষেত্রে প্রধানত সরিষার তেল এবং সয়াবিন তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে । রান্নার ক্ষেত্রে প্রচলিত দ্রব্যাদি ও মশলা হচ্ছে হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেয়াজ, জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি ।
আহারপদ্ধতি
দৈনন্দিন আহারের ক্ষেত্রে সাধারনত প্রতিবেলার খাবার পৃথকভাবে কিছু ভাত অথবা রুটিসহ প্রস্তুতকৃত তরকারির সাথে ভোজন করা হয়ে থাকে ।
খাবারের প্রধান প্রধান পদসমূহ

দৈনন্দিন আহারের ক্ষেত্রে ভাত, ডাল, ভর্তা, ভাজা, মাছ ভাজা, মাছের তরকারি, সবজি, মাংস, ভূনা খিচুরি, পোলাও, রুটি, পরোটা, সেমাই, পায়েস ইত্যাদি প্রধান পদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । বাঙালির প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। অর্থাৎ চাল থেকে প্রস্তুতকৃত ভাত ও ভাতজাতীয় খাদ্য বাঙালির খাদ্যতালিকায় মৌলিক চাহিদার স্থান দখল করেছে বলা যায়। চালকে সিদ্ধ করে তৈরি করা ভাত বাঙালি দৈনিক দুই কি তিনবেলা খেয়ে থাকে।
সাধারণ খাদ্য
শুঁটকি
চ্যাপা
চ্যাপা হলো পুটিঁ মাছের শুটকি। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে যেসকল মাছের শুটকি করা হয় তার মধ্যে পুঁটি মাছ অন্যতম। পুঁটি মাছ ধরার পর ভুঁড়ি ফেলে দিয়ে মাছের তেল দিয়ে মাছ মেখে একটু রোদে শুকিয়ে মটকায় ভরে বায়ুরোধী করে মাটিতে পুঁতে রেখে ৪/৫ মাস পর মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে ঢাকনা খুলে স্তরে স্তরে সাজানো পুটিমাছ বের করে বাজারে বিক্রি করা হয়। ঝাল কাঁচা মরিচ বেশি দিয়ে রসুন-পেঁয়াজসহ ভালোভাবে হাত দিয়ে মিহি করে সাবধানে মেখে গরম ও নরম আঠালো ভাত দিয়ে খাওয়া হয়। চ্যাপা শুটকির রান্না তীব্র গন্ধপ্রদ। এই শুঁটকি বিভিন্ন অঞ্চলে চাপা শুঁটকি নামেও পরিচিত।
খাদ্য অনুষঙ্গ
চটকদার খাদ্য
বাঙালি সমাজে এমন অনেক খাদ্য প্রচলিত আছে, যেগুলো পুষ্টিগুণ বিবেচনায় ঠিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার নয়, কিন্তু তবুও খাদ্য হিসেবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ আদৃত। এসকল খাদ্যকে একত্রে চটকদার খাদ্যের তালিকায় একত্রিত করা যায়:
চানাচুর

চানাচুর একপ্রকার ভাজা ঝাল খাবার। মুলত এটি ছোলার বা অড়হড় ডালের মিহি গুড়া থেকে তৈরি হয়। কখনও কখনও চানাচুর ঘি দিয়েও ভাজা হয়ে থাকে। এর সাথে যোগ করা হয় বিভিন্ন প্রকারের মশলা। দক্ষিণ এশীয়দের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় একটি নাস্তা। যেকোনো আড্ডা চানাচুর ছাড়া যেন চিন্তাও করা যায় না। চানাচুর বাঙালি সমাজে এতোটাই আদৃত যে, অধুনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাণিজ্যিকভাবে চানাচুর উৎপাদন ও বিক্রয় করে থাকে এমনকি বহির্বিশ্বের বাঙালি সমাজে চানাচুর রপ্তানিও করা হয়।
মুড়ির মোয়া
মুড়ি এবং গুড়কে একসাথে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে মোয়া নামক এজাতীয় মিষ্টি তৈরি করা হয়। তবে কখনও কখনও খই বা মুড়কি দিয়েও মোয়া তৈরি হয়। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরের মোয়া খুবই বিখ্যাত।
ঘুঘনী
ঘুঘনী একটি বিশেষ ধরনের ছোলা ভুনা। তবে এতে একটু বেশি গরম মশলা এবং সুগন্ধী চাল মেশানো হয়।
নাড়ু
নাড়ু সাধারণত নারকেল এবং গুড় একত্রে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন তিলের নাড়ু। চিনি সহযোগে গোল পাকিয়েও নাড়ু তৈরি করা হয়। তবে নারকেল ও চিনি জ্বাল দিয়ে তাকে ক্ষীর দিয়ে পাকিয়ে যে নাড়ু তৈরি করা হয় তাকে বাঙালিরা রসকরা বলে। এটি নারকেলের নাড়ুর থেকে তুলনামূলক ভাবে নরম হয়। প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতেই নাড়ু তৈরি হয়। বিশেষত বিজয়া দশমীর পর বাড়িতে আগত আত্মীয়-পরিজনকে নাড়ু, মোয়া, মিষ্টান্ন পরিবেশন করে বাঙালিরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
আঞ্চলিক খাদ্য

অঞ্চলভেদে স্থানভিত্তিক কিছু কিছু খাদ্য বাঙালির কাছে পরিচিত এবং তা ঐ অঞ্চলের ঐতিহ্যেরও একটা অংশ। এরকম কিছু খাদ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
সিদল ভর্তা
সিদল বা বাংগালি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের, বিশেষ করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর অঞ্চলে বিশেষ পছন্দনীয় খাবার। বর্ষা মৌসুমে টাকিমাছ ও কচু ঢেঁকি বা সামগাইন দ্বারা একত্রে মিশিয়ে মুঠা বা চাকার মতো করে তৈরি করা হয় বাংগালি, তারপর তা শুকিয়ে তাওয়ায় ভেজে তেল, মরিচ, আদা, রসুন, এবং পেঁয়াজ একত্রে পিষে খাওয়া হয়।[6]
মিষ্টান্ন

বাঙালিদের তৈরিকৃত মিষ্টান্ন গর্ববোধ করার মত । ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি এবং উদ্ভাবনে বাঙালিরাই অগ্রদূত ।[7] রসগোল্লা, পানতোয়া,[8] কালোজাম, সন্দেশ, নাড়ু, চমচম, গজা, ক্ষীর, পায়েস, সেমাই, দই ইত্যাদি বাঙালিদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত এবং জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ।
এছাড়াও বাঙালি খাবারের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পানীয় যেমন সরবত, আখের রস, মালাই, লাচ্ছি, ফালুদা, বোরহানী, ঘোল, বেলের সরবত, চা, কফি ইত্যাদি ।
বাংলা ভাষায় রন্ধন সাহিত্য
বাঙ্গালির ভোজন-পটুতা ও খাদ্য-রসিকতার পরিচয় প্রাচীন বাংলা সাহিত্যগুলোতে পাওয়া যায়। দ্বাদশ শতকের নৈষধ চরিত, চতুর্দশ শতকের প্রাকৃত পৈঙ্গল এবং বৌদ্ধ সহজীয়া গান চর্যাপদ বাঙ্গালির রন্ধন শৈলীর কিছু কিছু বিবরণ রয়েছে।
মনসামঙ্গলে বরিশালের বিজয়গুপ্ত লিখেছে—
“ | রান্ধি নিরামিষ ব্যঞ্জন হলো হরষিত।
মেস্যর ব্যঞ্জন রান্ধে হয়ে সচকিত মৎস্য মাংস কুটিয়া থুইল ভাগ ভাগ। রোহিত মৎস্য দিয়া রান্ধে কলকাতার আগ মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে গিমা গাচ গাচ ঝাঁঝ কটু তৈলে রান্ধে খরসুল মাছ ভিতরে মরিচ-গুঁড়া বাহিরে জড়ায় সূত। তৈলে পাক করি রান্ধে চিঙড়ির মাথা ভাজিল রোহিত আর চিতলের কোল। কৈ মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল ডুম ডুম করিয়া ছেঁচিয়া দিল টই। ছাইল খসাইয়া রান্ধে বাইন মেস্যর কৈ... বারমাসি বেগুনেতে শৌল-মেস্যর মাথা।... |
” |
ময়মনসিংহের দ্বিজ বংশীদাস তার মনসামঙ্গল-এ লিখেছেন,
“ | নিরামিষ রান্ধে সব ঘৃতে সম্ভারিয়া।
মেস্যর ব্যঞ্জন রান্ধে তৈল পাক দিয়া বড় বড় কই মৎস্য, ঘন ঘন আঞ্জি জিরা লঙ্গ মাখিয়া তুলিল তৈলে ভাজি। কাতলের কোল ভাজে, মাগুরের চাকি। চিতলের কোল ভাজে রসবাস মাখি ইলিশ তলিত করে, বাচা ও ভাঙ্গনা। শউলের খণ্ড ভাজে আর শউল পোনা বড় বড় ইচা মৎস্য করিল তলিত। রিঠা পুঠা ভাজিলেক তৈলের সহিত বেত আগ পলিয়া চুঁচরা মৎস্য দিয়া। শক্ত ব্যঞ্জন রান্ধে আদা বাটিয়া পাবদা মৎস্য দিয়া রান্ধে নালিতার ঝোল। পুরান কুমড়া দিয়া রোহিতের কোল... |
” |
ভারতচন্দ্র তার অন্নদামঙ্গল-এ ভবানন্দ মজুমদারের স্ত্রী পদ্মমুখীর ব্রাহ্মণ ভোজনের নিমিত্তে রান্নার বিবরণ দিয়েছেন এইভাবে—
“ | নিরামিষ তেইশ রাঁধিলা অনায়াসে
আরম্ভিলা বিবিধ রন্ধন মৎস্য মাসে। কাতলা ভেটুক কই কাল ভাজা কে শিক-পোড়া ঝুরি কাঁঠালের বীজে ঝোল। ঝাল ঝোল ভাজা রান্ধে চিতল ফলুই কই মাগুরের ঝোল ভিন্ন ভাজে কই। ময়া সোনা খড়কীর ঝোল ভাজা সার চিঙ্গড়ির ঝোল ভাজা অমৃতের তার। কণ্ঠা দিয়া রান্ধে কই কাতলার মুড়া তিত দিয়া পচা মাছ রান্ধিলেক গুড়া। আম দিয়া ষোল মাসে ঝোল চড়চড়ি আড়ি রান্ধে আদারসে দিয়া ফুলবড়ি। রুই কাতলার তৈলে রান্ধে তৈল শাক মাছের ডিমের বড়া মৃতে দেয় ডাক। বাচার করিল ঝোল খয়রার ভাজা অমৃত অধিক বলে অমৃতের রাজা সুমাছ বাছের বাছ আর মাস যত ঝাল ঝোল চড়চড়ি ভাজা কৈল কত। বড়া কিছু সিদ্ধ কিছু কাছিমের ডিম গঙ্গাফল তার নাম অমৃত অসীম। |
” |
চৈতন্যচরিতামৃতের লেখক কৃষ্ণদাস কবিরাজ শ্রীক্ষেত্রে সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে চৈতন্যদেবের নিরামিষ আহারের বিবরণ যে দিয়েছেন—
“ | বর্তিসা কলার এক আঙ্গেটিয়া পাত,
ঊণ্ডারিত তিন মান তণ্ডুলের ভাত। পীত সুগন্ধি ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল, চারিদিকে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল। কেয়া পাতের খোলা ডোঙ্গা সারি সারি, চারিদিকে ধরিয়াছে নানা ব্যঞ্জন ভরি। দশবিধ শাক নিম্ব তিক্ত শুক্তার ঝোল, মরিচের ঝালে ছেড়াবড়ি বড়া ঘোল। দুগ্ধতুম্বী, দুগ্ধ কুষ্মাণ্ড, বেশারী নাফরা, মোচা ঘণ্ট, মোচা ভাজা, বিবিধ শাকেরা। ফুল বড়ি ফল মূলে বিবিধ প্রকার, বৃদ্ধ কুষ্মাণ্ড বড়ির ব্যঞ্জন অপার। নব নিম্ব পত্র সহ ভ্রষ্ট বার্তকি, ফুল বড়ি, পটোল ভাজা কুষ্মাণ্ড মানচাকী। |
” |
রন্ধন বিষয়ক বাংলা বই
“ | ধনিয়া সলুপা বাটি দারচিনি যত
মৃগমাংস ঘৃত দিয়া ভাজিলেক কত |
” |
—দ্বিজবংশী দাস |
“ | কচি ছাগ মৃগ মাংসে ঝালঝোল রসা
কালিয়া দোলমা বাগা সেকচী সামসা |
” |
—ভারতচন্দ্র |
খাদ্য ও রন্ধন সংস্কৃতি নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। আবার যে কয়েকটি রচিত হয়েছে সেগুলোও সচেতন পাঠকদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় রচিত রান্না সংক্রান্ত বইগুলোর অধিকাংশই রেসিপি জাতীয়।
- প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর আমিষ ও নিরামিষ আহার (১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ) বইটি বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ রান্না বিষয়ক বই। এছাড়াও তার আরও নিরামিষ, জারক ও রন্ধা-বঢ়া (অহমীয়া ভাষায়) বইগুলোও স্মরণীয়।[9][10]
- বিশ্বেশ্বর তর্কালঙ্কার ভট্টাচার্যের পাক রাজেশ্বর (১৮৩১) বইটিকে বলা হয় বাংলা ভাষায় আদি রেসিপির বই।[11]
- এর পর ১৮৫৮ সালে আসে গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশের ব্যঞ্জন রত্নাকর বইটি।[12]
- সামরান হুদার পুবালি পিঞ্জিরা এবং অতঃপর অন্তঃপুরে[13]
- পাক-প্রণালী (বিপ্রদাস মুখােপাধ্যায়)
- নুনেতে ভাতেতে (রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল ও অনার্য তাপস কর্তৃক সম্পাদিত, প্রথম প্রকাশ ২০১৬)[14][15]
- থোড় বড়ি খাড়া (কল্যাণী দত্ত)
- বাঙালির খাদ্যকোষ (মিলন দত্ত,২০১৫)[16][17]
- (বাংলাদেশী পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীরের রান্না খাদ্য পুষ্টি ও খাবার দাবারের কড়চা[18][19]
- মহাভোজ রাজভোজ (প্রতাপকুমার রায়)[20]
- খাই কিন্তু জানি কি (দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, ২০১৭)[21][22]
- বাংলার খাবার (প্রণব রায়, ১৯৮৭)
- নতুন আঙ্গিকে রোজকার রান্না (সায়কা আমীন, ২০১৮)[23]
- আলপনা’জ কুকিং (আলপনা হাবিব, ২০১৮)[24][25]
- মীনাক্ষী দাশগুপ্তের Calcutta Cookbook: A Treasury of Recipes From Pavement to Place[26] এবং নিয়াজ জামানের Bosha Bhat to Biryani: The Legacy of Bangladeshi Cuisine[27]
জনপ্রিয় মাধ্যমে উপস্থাপনা
বাঙালির খাদ্যপ্রীতির উপস্থিতি রয়েছে বাঙালির গণমাধ্যমগুলোতেও। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলার খাদ্য বিষয়ে আলাদা অনুষ্ঠান না হলেও রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোর প্রায় সিংহভাগ জুড়ে থাকে বাংলার বিভিন্ন খাদ্য। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্টার প্লাস-এ শুরু হওয়া মাস্টার শেফ ইন্ডিয়া অনুষ্ঠানেও বাংলার বিভিন্ন খাদ্য তৈরিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও ডিসকভারি নেটওয়ার্ক-এর স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ট্র্যাভেল এ্যান্ড লিভিং-এর ভারতীয় চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বাংলার বিভিন্ন খাদ্যকে।
বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী
- সিদ্দিকা কবীর
- টনি খান[28]
- টমি মিয়া
- কেকা ফেরদৌসী
- আহমেদ হোসাইন [29]
- ফারজানা লিপি
তথ্যসূত্র
- "Among the last Jews of Kolkata"। khabar.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- Mahapatra, Dhananjay (১ মে ২০১০)। "Status of widows worst in West Bengal: NCW"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- "Every second girl is a child bride in West Bengal"। The Hindu। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১। ১ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- Nair, Rukmini। "Are we what we eat?"। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- Banerji, Chitrita (1997)। Bengali Cooking: Seasons and Festivals। Serif। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 978-1-897959-50-3। সংগ্রহের তারিখ "5 October 2016"। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "চ্যাপা কথন", আবুল বাশার লিটন, ৩০ অক্টোবর ২০১৮
- "The Origin of Rossogolla"। Rossogolla। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- "History Of Rasgulla"। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৬।
- পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
- "ঠাকুর বাড়ির মেয়ে, তায় বাংলার প্রথম রন্ধন গবেষক" মহুল মৃণালিনী রাই
- শাক থেকে শজারু, সবই কব্জি ডুবিয়ে খেত বাঙালি ঊর্মি নাথ, ১৫ এপ্রিল ২০১৯
- বাঙালীর খাদ্যাভ্যাস প্রসঙ্গে দু’ চার কথা, শাক্য মুনি, ১ আগস্ট ২০১৯
- [http://www.galpopath.com/2016/03/blog-post_31.html?m=1 "সামরান হুদা'র বই নিয়ে আলাপ: অন্তঃপুর নামের পিঞ্জিরা"], স্বাতী রায়, ২৭ মার্চ ২০১৬
- কলকাতা কড়চা, ২৫শে জুলাই ২০১৬, আনন্দবাজার প্রত্রিকা
- নুনেতে ভাতেতে ২: হারিেয় যাওয়া খাবারের গল্প, অঙ্কন চট্টোপাধ্যায়, ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৮
- "বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে কত না ঘাটের জল", বিশ্বজিৎ রায়, ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ]
- দত্ত, মিলন (অক্টোবর ২০১৫)। বাঙালির খাদ্যকোষ (প্রথম সংস্করণ)। কলকাতা: দে'জ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ১৭৩–১৭৪। আইএসবিএন 9788129524164।
- প্রিয়জন সিদ্দিকা কবীর, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯
- অনুষ্ঠানের পথিকৃৎ, ২৯ জানুয়ারি ২০১৪
- মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস (জানুয়ারি ২০১৭)। খাই কিন্তু জানি কি (প্রথম সংস্করণ)। কলকাতা: পত্রলেখা। পৃষ্ঠা ৩৮। আইএসবিএন 978-9381858547।
- "খাদ্যাভ্যাসের স্বাদু ইতিহাস", শর্মিলা বসুঠাকুর, ৩ মে ৩০১৮
- আমীন, সায়কা (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। নতুন আঙ্গিকে রোজকার রান্না। ঢাকা: The University Press Limited (UPL)। পৃষ্ঠা ২৩৪। আইএসবিএন 978-9845061971।
- "Alpana's Cooking: the book that will conquer shelves and hearts", Sanumkia Siddiqui, May 22 2018
- রান্নার অস্কার আনলেন আলপনা সম্প্রতি আলপনা হাবিবের এ বইটি বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো অস্কার অব গ্যাস্ট্রোনমি খ্যাত ২৪তম "গোরমন্ড ওয়ার্ল্ড কুকবুক অ্যাওয়ার্ড" (‘লেখকের প্রথম বই’ শাখায়) জিতেছে। এর সম্পাদনা ও Alpana's Cooking নামে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেছেন আশফাক স্বপন।
- দাশগুপ্ত, মীনাক্ষী (২০০০)। Calcutta Cookbook: A Treasury of Recipes From Pavement to Place (ইংরাজি ভাষায়) (পুনর্মুদ্রণ সংস্করণ)। পেঙ্গুইন যুক্তরাজ্য। আইএসবিএন 9789351181491। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৮।
- জামান, নিয়াজ (নভেম্বর ২০১৩)। Bosha Bhat to Biryani: The Legacy of Bangladeshi Cuisine। ঢাকা: The University Press Limited (UPL)। পৃষ্ঠা ২১৭। আইএসবিএন 978-9845060332।
- https://www.thedailystar.net/news-detail-31666
- https://thetoptenchefs.com/worlds-recognized-top-10-chefs-in-bangladesh/
- http://www.nhtti.org/
- http://rhtibd.com/
- http://tonykhan-institute.com/