খুলনা

খুলনা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। খুলনা জেলা এবং খুলনা বিভাগের সদর দপ্তর এই খুলনা শহরে অবস্থিত। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা এবং ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনাকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়। খুলনা শহর থেকে ৪৮ কি.মি. দূরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা সমুদ্র বন্দর অবস্থিত। পৃথিবী বিখ্যাত উপকূলীয় বন সুন্দরবন খুলনা জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত। খুলনাকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয়।[4][5] রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনা শহরের দূরত্ব সড়কপথে ৩৩৩কি.মি.। রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংগে স্থলপথ, আকাশপথ, জলপথ ব্যবহার করা যায়। ১৯১২ সালে থেকে অত্র অঞ্চলে নদীপথে স্টিমার (স্টিমবোট) চলাচল করে।

খুলনা
মহানগরী
ডাকনাম: শিল্পনগরী, সাদা সোনার শহর, বাংলার কুয়েত সিটি, সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার
খুলনার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৯′০″ উত্তর ৮৯°৩৩′০″ পূর্ব
দেশবাংলাদেশ
প্রশাসনিক জেলাখুলনা জেলা
পৌর পদমর্যাদা অর্জন১৯৮৪
সিটি কর্পোরেশন অর্জন১৯৯০
সরকার
  মেয়রতালুকদার আব্দুল খালেক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন[1]
  মহানগরী৩৬.২১ কিমি (১৩.৯৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০০৮ প্রতিষ্ঠা)[2]
  মহানগরী১০,০০,০০০
  জনঘনত্ব১৪৩৬৪/কিমি (৩৭২০০/বর্গমাইল)
  মহানগর১৫,০০,০০০
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
জাতীয় কলিং কোড+৮৮০
কলিং কোড০৪১
শিক্ষার হার৫৯.১%[3]
পুলিশখুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ
বিমানবন্দরখান জাহান আলী বিমানবন্দর
ভাষা(সমূহ)বাংলা(দাফতরিক)
ওয়েবসাইটhttp://www.khulnacity.org

নামকরণ

খুলনা সদরের নামে খুলনা বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে। প্রচলিত মতানুসারে খুলনা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ভৈরব নদীর তীরে খুল্লেনেশ্বরী দেবীর মন্দির ছিলো এবং এই দেবীর নামানুসারে খুলনা অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে।

মেট্রোপলিটন থানা

জিরো পয়েন্ট, খুলনা
  1. দৌলতপুর থানা
  2. খালিশপুর থানা
  3. খান জাহান আলী থানা
  4. সোনাডাঙ্গা থানা
  5. খুলনা সদর
  6. লবণচরা থানা
  7. আড়ংঘাটা থানা
  8. হরিণটানা থানা

আবহাওয়া ও জলবায়ু

গ্রীষ্মকালে খুলনার আবহাওয়া কিছুটা আর্দ্র এবং শীতকালে মনোরম। খুলনার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.৩ °সে (৭৯.৩ °ফা) এবং মাসের তাপমাত্রা জানুয়ারীতে ১২.৪ °সে (৫৪.৩ °ফা) এবং মে মাসে ৩৪.৩ °সে (৯৩.৭ °ফা) এর মাঝে থাকে। খুলনায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১,৮০৯.৪ মিলিমিটার (৭১.২৪ ইঞ্চি) । বছরের মোট বৃষ্টিপাতে ৮৭ ভাগ সংঘটিত হয় মে এবং অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

Khulna-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ °সে (°ফা) গড় ২৫٫৬
(৭৮)
২৮٫৫
(৮৩)
৩৩٫১
(৯২)
৩৪٫৬
(৯৪)
৩৪٫৩
(৯৪)
৩২٫৯
(৯১)
৩১٫৮
(৮৯)
৩১٫৮
(৮৯)
৩২
(৯০)
৩২
(৯০)
২৯٫৯
(৮৬)
২৬٫৫
(৮০)
৩১٫১
(৮৮)
সর্বনিম্ন °সে (°ফা) গড় ১২٫৪
(৫৪)
১৫٫৪
(৬০)
২০٫৫
(৬৯)
২৩٫৯
(৭৫)
২৫٫২
(৭৭)
২৬٫১
(৭৯)
২৬
(৭৯)
২৬٫২
(৭৯)
২৫٫৮
(৭৮)
২৪٫১
(৭৫)
১৯٫৬
(৬৭)
১৩٫৬
(৫৬)
২১٫৬
(৭১)
গড় অধঃক্ষেপণ মিমি (ইঞ্চি) ১৩٫৩
(০٫৫২)
৪৪٫৪
(১٫৭৫)
৫২٫১
(২٫০৫)
৮৭٫৫
(৩٫৪৪)
২০০
(৭٫৮৭)
৩৩৫٫৬
(১৩٫২১)
৩২৯٫৮
(১২٫৯৮)
৩২৩٫৫
(১২٫৭৪)
২৫৪٫৭
(১০٫০৩)
১২৯٫৮
(৫٫১১)
৩২٫১
(১٫২৬)
৬٫৬
(০٫২৬)
১,৮০৯٫৪
(৭১٫২৪)
বৃষ্টিবহুল দিনের গড় (≥ ০.১ mm) ১১ ১৪ ১৭ ১৬ ১৩ ৯৫
উৎস: Weather Base

শিক্ষা

খুলনা শহরে ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারী বি. এল কলেজ এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার চাহিদা মিটিয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে খুলনাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়খুলনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। ২০০৩ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যা পূর্বে বাংলাদেশ ইনিষ্টিটিউট অব টেকনোলজি, খুলনা নামে পরিচিত ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১২ সালে সর্বপ্রথম নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। এছাড়া দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ, আজম খান কমার্স কলেজ, মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, সুন্দরবন কলেজ, শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ, খুলনা পাবলিক কলেজ, পল্লিমঙ্গল বয়েজ ও গার্লস স্কুল, খুলনা জিলা স্কুল, করনেশন গার্লস স্কুল, পাইওনিয়ার কলেজ, আফিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইওনিয়ার স্কুল, মন্নুজান স্কুল, রটারি স্কুল, সেন্ট জোসেফ স্কুল, সেন্ট জেভিয়ারস স্কুল, খুলনা কলেজিয়েট স্কুল, ইকবাল নগর গারলস স্কুল, এছাড়া মাদ্রাসার মধ্যে দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা-খুলনা, খুলনা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা খুলনার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। মাধ্যমিক শিক্ষার পর কারিগরি শিক্ষার জন্য খুলনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসিটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আছে।খুলনা পাবলিক কলেজ এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাউথ-ইস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,খুলনা অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিল্প

রূপসা নদী

একসময় খুলনা শিল্পশহর হিসাবে বিখ্যাত হলেও বর্তমানে এখানকার বেশিরভাগ শিল্পই রুগ্ন। পূর্বে খুলনাতে দেশের একমাত্র নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিল ছিল যা এখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনার বেশির ভাগ পাটকলগুলোও একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।তবে সাগর জুট স্পিনিং মিলস (সেনহাটি ) ৫ দশ তার উৎপাদন ,রপ্তানি ও বাজারজাতকরণ ধরে রেখেছে সুনামের সাথে । বর্তমানে খুলনার উল্লেখযোগ্য শিল্প হল বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা রপ্তানীযোগ্য মাছ শিল্প। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তারশিল্প কারখানা বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড খুলনায় অবস্থিত।

খুলনাকে এক সময় বলা হত রুপালি শহর। এর কারণ এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ী উৎপাদন করা হত। এখনও হয়, যদিও কিছুটা কমে গেছে। আপনি খুলনার দৌলতপুরের মহসিন মোড় থেকে যতই পথ অতিক্রম করতে থাকবেন ততই দেখতে থাকবেন রাস্তার দূ ধার দিয়ে শুধু বিল আর মাছের ঘের। এসব ঘেরে সাদা মাছের সাথে চাষ হয় প্রচুর চিংড়ী। এবং খুলনার পাইকগাছা , দাকোপ , কয়রা উপজেলাতে লোনা পানি ঘের দেখা যায় সেখানে প্রচুর পরিমানে বাগদা চিংড়ি হয়। খুলনা অঞ্চলের ডুমুরিয়ার কিছু গ্রামে মৃৎশিল্পের অস্থিত্ব বিদ্যমান।এখানে মাটির টব কলসি হাড়ি পতিল তৈরি করে কুমোরেরা

রাস্তাঘাট

সাবেক রয়েলের মোড়,
রাত্রিবেলা আলোকসজ্জায় রয়েলের মোড়

খুলনার রাস্তাঘাট মোটামুটি ভাল এবং অনেক প্রশস্ত। এই শহরটি যানজট এর হাতে এখনও পড়েনি। তবে খুলনা থেকে যশোর যেতে আপনাকে একটু সমস্যা পোহাতে হতে পারে। এদিকের রাস্তাঘাট অনেক বেশিই খারাপ। শিল্প কল কারখানা গুলো ফুলতলায় গড়ে ওঠায় এই রাস্তাটি বেশ ভাঙাচোরা।

মিডিয়া

সংবাদপত্র

দৈনিক পূর্বাঞ্চল,দৈনিক খুলনাঞ্চল, সময়ের খবর, দৈনিক জন্মভূমি, দৈনিক প্রবাহ, দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন, দৈনিক প্রবর্তন, দৈনিক তথ্য, দৈনিক অনির্বাণ, খুলনা টাইমস, দ্য ডেইলি ট্রিবিউন (ইংরেজী)।

বেতার
  • বাংলাদেশ বেতার খুলনা ১০৬.৫ এফএম,
  • রেডিও সুন্দরবন ৯৮.৮ এফএম
  • রেডিও খুলনা ৮৮.৮ এফএম।
  • রেডিও ফূর্তি ৮৮.০ এফএম
  • রেডিও টুডে ৮৯.৬ এফএম
  • খুলনা টিভি

খেলাধুলা

বর্তমানে খুলনা শহরের তরুনদের মাঝে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট ,ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন। খুলনা বিভাগের খুলনা বিভাগীয় ক্রিকেট দল একটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট দলটুয়েন্টি২০ ক্রিকেট, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এ খুলনার প্রতিনিধিত্ব করে খুলনা টাইটানস। খুলনা আবাহনী ক্লাব খুলনার অন্যতম ফুটবল দল। অধুনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম (প্রাক্তন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম) খুলনার একমাত্র আন্তঃর্জাতিক ক্রীড়া ভেন্যু। এই মাঠকে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর দেশের সপ্তম টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[6] এই মাঠে টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটের আয়োজন করা হয়। খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামে অন্যান্য খেলার আয়োজন করা হয়।

খুলনার দর্শনীয় স্থান সমূহ

উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিবর্গ

আরো পড়ুন

তথ্য উৎস

  1. "Area, Population and Literacy Rate by Paurashava –2001" (PDF)। Bangladesh Bureau of Statistics। ২০০১। ২০০৮-১২-১৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৯
  2. (pdf-file) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে 2007 Population Estimate. Retrieved on 19 August 2009.
  3. "Khulna"Banglapedia। ৩০ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 05-01-2010 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. Marshall Cavendish Corporation (২০০৭)। World and Its Peoples: Eastern and Southern Asia। Marshall Cavendish। পৃষ্ঠা 491। আইএসবিএন 9780761476313।
  5. Girard, Luigi Fusco (২০০৩)। The Human Sustainable City: Challenges and Perspectives from the Habitat Agenda। Ashgate Publishing, Ltd। পৃষ্ঠা 298। আইএসবিএন 9780754609452।
  6. "BPL 2013 to kick off on January 17"Cricinfo। ২০১২-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-৩১ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  7. "কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট, সেনহাটি, দিঘলিয়া, খুলনা"জাতীয় ই তথ্যকোষ। ২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

বহিঃসংযোগ

  1. খুলনা সিটি কর্পোরেশন
  2. বাংলাপিডিয়ায় খুলনা
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.