খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খুলনাতে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশর একমাত্র রাজনীতি মুক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর ৪টি পাঠ্য বিষয়ের ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে।[3] বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি স্কুল ও ২ টি ইন্সিটিউট এর অধীনে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার জন এবং প্রতিবছর ২৯ টি পাঠ্য বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এটি ছাত্র রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
ধরনসরকারি
স্থাপিত১৯৯১ (1991)
আচার্যরাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
উপাচার্যড. মোঃ ফায়েক উজ্জামান[1]
শিক্ষায়তনিক কর্মকর্তা
৪১০
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
৫২৯
শিক্ষার্থী৫,৬১৬ (২০১৬)[2]
স্নাতক৩,৯৬৩
স্নাতকোত্তর১,০১৫
৪৪
অন্যান্য শিক্ষার্থী
৩৮৭
অবস্থান,
২২.৮০২° উত্তর ৮৯.৫৩৩° পূর্ব / 22.802; 89.533
শিক্ষাঙ্গনশহুরে, আয়তন ১০৬ একর
সংক্ষিপ্ত নামখুবি
অধিভুক্তিACU
UGC
ওয়েবসাইটku.ac.bd

অবস্থান

খুলনা মহানগরী থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে গল্লামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।[4] এর আয়তন ১০৫.৭৫একর।

ইতিহাস

১৯৭৪ সালে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে খুলনা বিভাগে উচ্চ শিক্ষার্থে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন সরকারের ক্যাবিনেটে খুলনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অধ্যাদেশ ৫(১)জি ধারা মতে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ১৯৮৩ সালে সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি ৪ গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮৯ সালের ১ অগাস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রকল্প পরিচালক এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই তারিখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস হয় যা এই প্রতিষ্ঠানের কার্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করে।[5] অবশেষে, ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর একাডেমিক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ঐ বছর থেকে মোট চারটি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। [4]

স্কুল ও ডিসিপ্লিনসমূহ

বর্তমানে ৬ টি অনুষদের অধীনে ২৮ টি ডিসিপ্লিন এবং ১ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।

বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুল

  • স্থাপত্য ডিসিপ্লিন
  • কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডিসিপ্লিন
  • নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন
  • ইলেক্ট্রনিক্স ও যোগাযোগ প্রকৌশল ডিসিপ্লিন
  • গণিত ডিসিপ্লিন
  • পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • রসায়ন ডিসিপ্লিন
  • পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন

জীববিজ্ঞান স্কুল

  • ফিশারীজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • ফরেস্ট্রী ও উড টেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • বায়োটেকনোলজী ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন
  • মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিন
  • এগ্রোটেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • ফার্মেসি ডিসিপ্লিন

ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রসাশন স্কুল

  • ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন
  • হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট

১৯৯১ সালে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের পরিচয় হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪ বছরের ব্যবসায় প্রশাসন এ স্নাতক ডিগ্রী (ব্যবস্থাপনা) দেবার ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ বাংলাদেশের মাঝে এক অগ্রদূত (আরেকটি হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)। বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ব্যাবস্থাপনা ও পরিচালনা পদ্ধতিগুলির উন্নয়নের জন্য এই অনুষদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি তার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ফোরামে যেমন AMDIB (Association of Management Development Institutions of Bangladesh) and AMDISA (Association of Management Development Institutions in South Asia ) তে সক্রিয় অংশগ্রহণ মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌ কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থেকে এই প্রতিশ্রুতি আরো মূর্তমান হয়ে উঠে।

কলা ও মানবিক স্কুল

  • ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন
  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন
  • ইতিহাস ও সভ্যতা

সমাজবিজ্ঞান স্কুল

  • অর্থনীতি ডিসিপ্লিন
  • সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • উন্নয়ন অধ্যয়ন ডিসিপ্লিন
  • গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

আইন স্কুল

  • আইন ডিসিপ্লিন

চারুকলা স্কুল

  • ড্রয়িং ও পেইন্টিং
  • প্রিন্ট মেকিং
  • স্কাল্পচার (ভাস্কর্য)

শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল ডিসিপ্লিন

১৯৯১ সালে মাত্র ২০ জন স্নাতক ছাত্রদের নিয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল ডিসিপ্লিন (সিএসই) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স সংক্ষেপে(BSc in Engg.) বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত ২১টি ব্যাচ এর প্রায় ৮০০ স্নাতক ছাত্র এই ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক হন। সিএসই ডিসিপ্লিনে প্রতি বছর স্নাতক পর্যায়ে ৪০ জন ছাত্র ভর্তি করা হয়।

মর্ডান ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার

  • ইংরেজি ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • জাপানি ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • ফরাসি ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • ফার্সি ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • স্প্যানিশ ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • কোরিয়ান ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স
  • জার্মান ভাষা সার্টিফিকেট কোর্স

সংগঠন

রাজনৈতিক

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর কর্তৃক জারীকৃত শিক্ষার্থী আচরণ বিষয়ক নীতিমালা অনুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে শিক্ষক ও কর্মচারী - কর্মকর্তাদের জন্য রাজনীতি বিষয়ক কোন প্রকার বাধ্য-বাধকতা নেই।

সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠনসমূহ

  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বি.এন.সি.সি.)
  • নৃ-নাট্য (নাটক)
  • থিয়েটার নিপুন(নাটক)
  • ব-পাঠ(পাঠক)
  • ছায়াবৃত্ত পাঠক ফোরাম(সেচ্ছাসেবী সংগঠন)
  • ৩৫ মিমি.(মুভি ক্লাব)
  • খুলনা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (ফটোগ্রাফি ক্লাব)
  • কৃষ্টি (সংগীত)
  • ওঙ্কার-শৃনুতা
  • ভৈরবী(সংগীত)
  • রোটারেক্ট ক্লাব (সেচ্চাসেবক)
  • বাধন (রক্তদান কর্মসূচি )
  • স্পার্ক (নাচের ক্লাব)
  • নয়েজ ফ্যাক্টরি (ব্যান্ড সংগীত)
  • অন্বেষ - খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংগঠন
  • নৈয়ায়িক (খুবি-বিতর্ক সংগঠন)
  • কুয়েস - খুলনা ইউনিভার্সিটি ইকনোমিক্স সোসাইটি
  • বায়স্কোপ (নাটক)

বিবিধ

স্থাপত্য নিদর্শনসমূহ

গ্রন্থাগার ভবনসমূহ
  • কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন
  • শার্লি ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন
একাডেমিক ভবনসমূহ
  • একাডেমিক ভবন ১
  • একাডেমিক ভবন ২
  • একাডেমিক ভবন ৩
ছাত্রাবাস
ছাত্র হল
  • খান জাহান আলী হল
  • খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল
  • জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
ছাত্রী হল
  • অপরাজিতা হল
  • বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল
অন্যান্য
  • রেজিস্টার ভবন
  • প্রশাসনিক ভবন
  • কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়া
  • মেডিকেল সেণ্টার
  • জিমনেশিয়াম
  • পোস্ট অফিস ভবন
  • টিচার্স কোয়ার্টারস ও ডরমিটরি
  • কেন্দীয় শহীদ মিনার
  • মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য
  • কটকা মন্যুমেনট

কৃতি ছাত্র-ছাত্রী

সাহিত্যিক আবিদ হাসান, জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক খান ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ অনিমেষ কুমার গাইন ৷

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। বর্তমানে অধ্যাপক ড. মো: ফায়েক উজ্জামান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের তালিকা

ক্রম নাম দায়িত্ব গ্রহণ দায়িত্ব হস্তান্তর
ড. গোলাম রহমান (প্রকল্প পরিচালক ও প্রথম উপাচার্য) আগস্ট ১, ১৯৮৯ আগস্ট ২২, ১৯৯৩
ড. মুহম্মদ গোলাম আলী ফকির আগস্ট ২৩, ১৯৯৩ আগস্ট ২২, ১৯৯৭
ড. এস. এম. নজরুল ইসলাম আগস্ট ২৩, ১৯৯৭ আগস্ট ২২ , ২০০১
ড. জাফর রেজা খান আগস্ট ২৯, ২০০১ নভেম্বর ১৮, ২০০১
ড. এম আবদুল কাদির ভূইয়া নভেম্বর ১৯, ২০০১ মার্চ ৩, ২০০৫
ড. মো: মাহবুবুর রহমান মার্চ ৩, ২০০৫ মার্চ ২ ২০০৮
ড. মো:সাইফু্দ্দীন শাহ মার্চ ৩, ২০০৮ নভেম্বর ১৬, ২০১২
ড. মো: ফায়েক উজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) নভেম্বর ১৭, ২০১২ ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১৩
ড. মো: ফায়েক উজ্জামান ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১৩ বর্তমান

তথ্যসূত্র

  1. "Senate"Khulna University। ১৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  2. "History and Khulna University at a Glance"Khulna University। ১৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  3. দৈনিক কালের কন্ঠ
  4. দৈনিক যায়যায় দিন, নভেম্বর ২৬, ২০০৭; পৃষ্ঠা- ৯
  5. <a href="www.bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=746"> খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯০ </a>

আরও দেখুন

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.