চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে সিভাসু) বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের একমাত্র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা বিভাগের ওপর ডিগ্রি প্রদান করা হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের ওপর শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়
নীতিবাক্যজ্ঞান সেবা সমৃদ্ধি
ধরনসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপিত১৯৯৬ (চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ)
২০০৬ (বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর)
আচার্যরাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
উপাচার্যঅধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ
ডিনঅধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হালিম (ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ)
অধ্যাপক ড. জাহানারা খাতুন (খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ)[1]
অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল আবছার খান (মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ)
শিক্ষায়তনিক কর্মকর্তা
৯০
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
১২৬
শিক্ষার্থী৮০০
ঠিকানা
জাকির হোসেন রোড, খুলশী, চট্টগ্রাম
, ,
সংক্ষিপ্ত নামসিভাসু
অধিভুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন
ওয়েবসাইটwww.cvasu.ac.bd

সিভাসু বাংলাদেশের সর্বপ্রথম প্রাণী ব্লাড ব্যাংক তৈরি করে।[2]

অবস্থান

চট্টগ্রামের খুলশী থানার অন্তর্গত এবং নগরীর "জাকির হোসেন রোড" এ অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়।[3]

ইতিহাস

দক্ষ ও যুগোপযোগী ভেটেরিনারিয়ান তৈরি করার নিমিত্তে ১৯৯৫-৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ । প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর "বিজ্ঞান অনুষদ" এর অধীনে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ কে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া "২রা ফেব্রুয়ারী,২০০৬" তারিখে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এর উদ্ভোধন করেন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে "২০০৬ সালের ৭ই আগস্ট" চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তার যাত্রা শুরু করে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধুমাত্র "ভেটেরিনারি মেডিসিন" অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে "খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি" ও "মাৎস্যবিজ্ঞান" নামে আরো দুটি অনুষদ সহ মোট তিনটি অনুষদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার একাডেমিক কার্যক্রম চালনা করছে।[4]

গবেষণা

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়মিত গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে ডিএনএ সেক্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে শৌখিন পাখির লিঙ্গ নির্ধারণে সাফল্য পায় সিভাসুর একদল গবেষক। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তিতে এই প্রথম সাফল্য অর্জিত হয়। আগে লিঙ্গ নির্ধারণে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করে পাখির নমুনা বিদেশে পাঠাতে হতো।[5] ৩.৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে সিভাসু গবেষণা তরী কাপ্তাই হ্রদে নামানো হয়। এই গবেষণা তরীতে ১২ জন গবেষক একসাথে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া এখানে থাকার সু-ব্যবস্থাও আছে। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছ কেন কমে যাচ্ছে, এই সংস্ক্রান্ত কারণ উদ্ঘাটনে গবেষণা প্রকল্পটি শুরু করা হয়।[6]

ক্যাম্পাস

মূল ক্যাম্পাস

সিভাসু শহীদ মিনার

বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাসেই এর সবরকম প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালিত হয়। মূল ক্যম্পাসে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য পৃথক দুটি হল রয়েছে। একটি হল বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান হল এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী হল। এছাড়াও প্রশাসনিক ভবন, ইউসুফ চৌধুরী ভবন, শহীদ মিনারসহ আরো কিছু ভবন রয়েছে। এনাটমি মিউজিয়াম, ফিশারিজ মিউজিয়ামসহ বিভিন্নরকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

কক্সবাজার আউটরিচ ক্যম্পাস

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই ক্যম্পাস তৈরির কাজ শুরু হয়। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন দরিয়ানগর এলাকায় এই ক্যাম্পাস অবস্থিত। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।[7] এটিই বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আউটরিচ ক্যাম্পাস। ছাত্রদের জন্য পৃথক দুটি ছাত্রাবাস এবং শিক্ষকদের জন্য আবাসনের কাজ চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসটি তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় এবং পাহাড়ে ঘেরা ৫ একর জমি দেয়া হয়। ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাম্পাসটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[8]

হাটহাজারী রিসার্চ এন্ড ফার্ম বেইজড ক্যাম্পাস

প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় এই ক্যাম্পাস অবস্থিত। এই ক্যাম্পাসের পাশেই সরকারি ডেইরি ফার্ম অবস্থিত। এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা হাতে কলমে কাজ করতে পারবেন। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করা হয়।[9]

টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার

এটি বাংলাদেশের প্রথম পেট হাসপাতাল। পাশাপাশি পশুপাখির গবেষণা এবং ইন্টার্নি ডাক্তারেরা এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ঢাকার পূর্বাচলে ২২ কাঠা জমির ওপর এই হাসপাতাল অবস্থিত।[10]

অনুষদ ও বিভাগসমূহ

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩টি অনুষদে ১৮টি বিভাগ রয়েছে।[11] চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং অন্তর্গত বিভাগসমূহ হলো:

ভেটেরিনারী মেডিসিন অনুষদ

  • রোগবিদ্যা ও পরজীবীবিদ্যা বিভাগ
  • অ্যানাটমি ও কলাস্থান বিভাগ
  • শারীরবিদ্যার, প্রাণরসায়ন ও ঔষধবিদ্যা বিভাগ
  • প্রাণী বিজ্ঞান ও পুষ্টি বিভাগ
  • অনুজীবিদ্যা ও ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ বিভাগ
  • জেনেটিক্স ও পশু প্রজনন বিভাগ
  • ডেইরি ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ
  • কৃষি অর্থনীতি ও সামাজিক বিভাগ
  • মেডিসিন ও সার্জারী বিভাগ

খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ

  • দৈহিক ও গাণিতিক বিজ্ঞান বিভাগ
  • ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগ
  • ফলিত খাদ্য বিজ্ঞান ও পুষ্টি বিভাগ
  • খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকৌশল বিভাগ

মৎস্য অনুষদ

  • মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
  • ফিসিং ও পোস্ট হার্ভেস্ট প্রযুক্তি বিভাগ
  • সামুদ্রিক জৈব-গবেষণা বিভাগ
  • কৃষি বিভাগ
  • মাছের জীববিদ্যা এবং জৈব প্রযুক্তি বিভাগ

গবেষণা কেন্দ্রসমূহ

  • পোল্ট্রি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র[12]
  • ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট[13]
  • ইন্সটিটিউট অব কোস্টাল-বায়োডাইভারসিটি, মেরিন ফিসারিজ এবং ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন[14]

ছাত্রাবাস

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হল
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান হল
  • এমএ হান্নান ছাত্রাবাস[15]
  • বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাস[16]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "অনুষদ প্রধান"সিভাসু। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  2. "চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম এনিম্যাল ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা"। ৮ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৯
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৫
  5. "দেশেই হবে শৌখিন পাখির লিঙ্গ নির্ধারণ"। প্রথম আলো। ১৫ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯
  6. "রাঙ্গামাটিতে গবেষণা তরী নামার জন্য প্রস্তুত"। দ্যা ডেইলি স্টার। ৫ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৯
  7. "কক্সবাজারে আউটরিচ ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর আজ"। ২২ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  8. "আরও একটি ক্যাম্পাস হবে কক্সবাজারে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  9. "গবেষণা ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আজ"। ২ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  10. "দেশের প্রথম পেট হসপিটালের যাত্রা শুরু আজ"কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  11. "List of Faculties"www.cvasu.ac.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৫
  12. "Poultry Research and Training Centre (PRTC)"www.cvasu.ac.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৫
  13. "one health institute" (ইংরেজি ভাষায়)।
  14. "Institute of Coastal Bio-Diversity, Marine Fisheries & Wildlife Conservation" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  15. "M A Hannan Hall"cvasu.ac.bd। ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮
  16. "Bangamata Fazilatunnessa Hall"cvasu.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.