নাটোর জেলা

নাটোর জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। জেলার উত্তরে নওগাঁ জেলাবগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলাকুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা জেলাসিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। জেলাটি ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন।এই জেলাটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমের আটটি জেলার মধ্য একটি জেলা।আয়তনের দিক দিয়ে নাটোর বাংলাদেশের ৩৬ তম জেলা।নাটোর জেলা দূর্যোগপ্রবন এলাকা না হলেও সিংড়া ও লালপুর উপজেলায় আত্রাই এবং পদ্মা নদীতে মাঝে মাঝে বন্যা দেখা দেয়।সদর ও নাটোরের সকল উপজেলার আবহাওয়া একই হলেও লালপুরে গড় তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশী।পুরোনো নিদর্শনের মধ্য এই জেলার এক অতীত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে।

নাটোর
জেলা
নাটোর
জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ
বাংলাদেশে নাটোর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°২৪′৩৬″ উত্তর ৮৮°৫৫′৪৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
প্রতিষ্ঠা১৯৮৪
সংসদীয়সংসদীয়৫৯ নাটোর-২
সরকার
আয়তন
  মোট১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার কিমি ( বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১৯)[1]
  মোট১৮,২১,৩৩৬
সাক্ষরতার হার
  মোট৭০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৬৪০০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ৬৯
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

জেলার পটভূমি

নাটোর মুঘল শাসনামলের শেষ সময় থেকে বাংলার ক্ষমতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। বিশেষ করে নবাবী আমলে নাটোরের ব্যাপক ব্যাপ্তি ঘটে। বাংলার সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের (১৭০১-১৭২৭ শাসনকাল) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বরেন্দ্রী ব্রাহ্মণ রঘুনন্দন তার ছোটভাই রামজীবনের নামে এতদ অঞ্চলে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা রামজীবন রায় নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। কথিত আছে লস্কর খাঁতার সৈন্য-সামন্তদের জন্য যে স্থান হতে রসদ সংগ্রহ করতেন, কালক্রমে তার নাম হয় লস্করপুর পরগনা। এই পরগনার একটি নীচু চলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা বিল। ১৭১০ সনে রাজা রামজীবন রায় এই স্থানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। কালক্রমে মন্দির, প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নাটোর রাজবাড়ী প্রস্তুত হয়। পরে আস্তে আস্তে পাশের এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একসময় নগরী পরিণত হয়। সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের সুপারিশে মুঘল সম্রাট আলমগীরের নিকট হতে রামজীবন ২২ খানা খেলাত এবং রাজা বাহাদুর উপাধি লাভ করেন। নাটোর রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌছে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের স্ত্রী রাণী ভবানীর রাজত্বকালে । ১৭৮২ সালে ক্যাপ্টেন রেনেল এর ম্যাপ অনুযায়ী রাণী ভবানীর জমিদারীর পরিমাণ ছিল ১২৯৯৯ বর্গমাইল । শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য সুবেদার মুর্শিদ কুলী খান বাংলাকে ১৩ টি চাকলায় বিভক্ত করেন। এর মধ্যে রাণী ভবানীর জমিদারী ছিল ৮ চাকলা বিস্তৃত। এই বিশাল জমিদারীর বাৎসরিক আয় ছিল দেড় কোটি টাকার অধিক। বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদবীরভূম জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিল তার রাজত্ব। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার পুখুরিয়া পরগণা এবং ঢাকা জেলার রাণীবাড়ী অঞ্চলটিও তার জমিদারীর অন্তর্গত ছিল। এ বিশাল জমিদারীর অধিশ্বরী হওয়ার জন্যই তাকে মহারাণী উপাধী দেয়া হয় এবং তাকে অর্ধ-বঙ্গেশ্বরী হিসাবে অভিহিত করা হতো। একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামন্তরাজ এবং এক মহিয়ষী নারীর রাজ্যশাসন ও জনকল্যাণ ব্যবস্থা।

নাটোরের রাজারা এই বিশাল জমিদারী পরিচালনা করতো নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় । নবাবী আমলে তাদের নিজস্ব দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচারের ক্ষমতা ছিল। শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব পুলিশবাহিনী এবং জেলখানা ছিল। ১৮৭৩ সালে ইংরেজ সরকারের এক ঘোষণাবলে রাণী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর হাত থেকে কোম্পানী পুলিশ ও জেলখানা নিজ হাতে তুলে নেয়। কোম্পানী নিজহাতে জেলখানার দায়িত্ব নিয়ে প্রতি জেলায় জেলখানা স্থাপন করে। ইংরেজদের কর্তৃক পরিচালিত প্রথম জেলখানা নাটোরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাণী ভবানীর শাসনামল পর্যন্ত নাটোর শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো স্রোতস্বিনী নারদ নদ । পরবর্তীকালে নদের গতিমুখ বন্ধ হয়ে গেলে সমগ্র শহর এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে নিপতিত হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বদ্ধজল এবং পয়ঃনিষ্কাশনের একমাত্র সংযোগস্থল ছিল নারদ নদ। সেই নদ অচল হয়ে পড়ায় শহরের পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হয়ে পড়ে। ইংরেজ শাসকরা সেজন্য জেলাসদর নাটোর হতে অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মি. প্রিংগল ১৮২২ সালে ২৩ শে এপ্রিল জেলাসদর হিসাবে পদ্মানদীর তীরবর্তী রামপুর-বোয়ালিয়ার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাবনা পেশ করেন। ১৮২৫ সালে নাটোর থেকে জেলা সদর রামপুর-বোয়ালিয়াতে স্থানান্তরিত হয়। জেলা সদর স্থানান্তরের পর ইংরেজ সরকার মহকুমা প্রশাসনের পরিকাঠামো তৈরি করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মহকুমা হিসাবে নাটোরের পদাবনতি ঘটে। তারপর দীর্ঘ ১৬৫ বছর অর্থাৎ ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চৌদ্দ বছরের প্রশাসনিক ইতিহাসে নাটোর মহকুমা সদর হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৯৮৪ সালে নাটোর পুনরায় জেলাসদরের মর্যাদা লাভ করে।

দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়ী (বর্তমানে উত্তরা গণভবন)

রাজা রামজীবন রায় ১৭৩০ সালে মৃত্যু বণর করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রাজা রাম কান্তরায়কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারাম রায়কে তার অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ রাজকার্যাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। তার দক্ষতার কারণে নাটোর রাজবংশের উত্তোরত্তর সমবৃদ্ধি ঘটে। ১৭৪৮ সালে রামকান্ত পরলোক গমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাণী ভবানীকে নবাব আলীবর্দী খাঁ বিস্তৃত জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন। নাটোরের ইতিহাসে জনহিতৈষী রাণী ভবানী হিসেবে অভিহিত এবং আজো তার স্মৃতি অম্লান। বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার সাথে রাণী ভবানীর আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল।  পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী নবাবের পক্ষ অবলম্বন করেন।

পরবর্তীতে রাণী ভবানীর নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি দিঘাপতিয়া পরগনা তাকে উপহার দেন। দিঘাপতিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান উত্তরা গণভবনটি দয়ারামের পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমদানাথের সময় গ্রীক স্থাপত্য কলার অনুসরনে রূপকথার রাজ প্রাসাদে উন্নীত হয়। কালক্রমে এই রাজপ্রাসাদটি প্রথমতঃ গভর্নর হাউস, পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যূদয়ের পরে উত্তরা গণভবনে পরিণত হয়।[2]

চলন বিলের একাংশ

গৌরবময় নাটোর

ভারতবর্ষের ইতিহাসে নাটোর একটি বিশিষ্ট স্থানের নাম। এই নাম তার শাসকশ্রেণী এবং তার অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম আর সংস্কৃতির কারণেই ইতিহাস বিখ্যাত । পাঠান-মোঘল-ইংরেজ এমনকি পাকিস্তানি দুঃশাসনের ইতিহাসে যুগে যুগে শোষণ বঞ্চণা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। কলকাতার সাথে ১৮৮৬ সালের পর রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে তৎকালীন সময়ে নাটোর জাঁকজমক ও আলোকিত জনপদ হয়ে উঠে ।একসময় নাটোর বৃহত্তর রাজশাহী জেলার সদর ছিল।নারদ নদের নাব্য সংকটের কারনে সদর দপ্তর পদ্মা নদী নিকটবর্তী স্থানান্তর হয়। যখন কলকাতা বলে কোন জায়গা ছিল না,রাজশাহী নামও তখনো অজ্ঞাত,নাটোর ছিল তখন নামকরা জনপদ।জেলা সদর স্থানান্তরের কারনে নাটোর তার জৌলুশ হারিয়েছিল একসময়। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফার সমর্থনে আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নাটোরবাসির অবদান দেশের অপরাপর জেলাগুলোর চেয়ে কম নয় । সে কারণে নাটোর ঐতিহাসিকভাবে শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসেই নয়, সভ্য দুনিয়ার সকল দেশে তার স্বতন্ত্র্য পরিচিতি আছে ।নাটোর ১৯৮৪ সালে জেলায় পরিণত হয়ে আবার তার জৌলুশ ফিরে আসে।বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলার মধ্য নাটোর একটি জেলা।

জনসংখ্যা

(২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী) নাটোরের নিম্নলিখিত জনসংখ্যা।

বিবরণমোট সংখ্যা
জনসংখ্যা১৭০৬৬৭৩ জন
পুরুষ৮৫৪১৮৩ জন
মহিলা৮৫২৪৯০ জন
মুসলিম১৫৯০৯১৯ জন
হিন্দু১০৩৭৪৭ জন
খ্রিস্টান৮০৫৮ জন
বৌদ্ধ৭ জন
অন্যান্য৩৯৪৬ জন

প্রশাসন

  • ডিসিঃ মোহাম্মদ শাহরিয়াজ
  • পুলিশ সুপারঃ শ্যামল কুমার মুখার্জি
  • মেয়রঃ উমা চৌধুরী জলি

ভৌগোলিক সীমানা

মানচিত্রে নাটোর জেলা

এই জেলার উত্তরে নওগাঁ জেলাবগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলাকুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা জেলাসিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। আয়তন ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার। নাটোরসহ এর পার্শ্ববর্তী বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে অবস্থিত চলন বিল হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কমবৃষ্টিপাত হয় নাটোরের লালপুর উপজেলায়

প্রধান নদী

উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

নাটোর জেলা ৭ টি উপজেলা,৭টি থানা এবং ৮টি পৌরসভা রয়েছে।নাটোরে সংসদীয় আসন ৪টি। নাটোর জেলার উপজেলাগুলো হলঃ

  1. নাটোর সদর উপজেলা
  2. বাগাতিপাড়া উপজেলা
  3. বড়াইগ্রাম উপজেলা
  4. গুরুদাসপুর উপজেলা
  5. লালপুর উপজেলা
  6. সিংড়া উপজেলা
  7. নলডাঙ্গা উপজেলা

নাটোর জেলার পৌরসভা হলোঃ

  1. নাটোর (ক শ্রেনী)
  2. সিংড়া (ক শ্রেনী)
  3. গুরদাসপুর (ক শ্রেনী)
  4. বড়াইগ্রাম (খ শ্রেনী)
  5. লালপুর (খ শ্রেনী)
  6. বাগাতিপাড়া (গ শ্রেনী)
  7. বনপাড়া (গ শ্রেনী)
  8. নলডাঙ্গা (গ শ্রেনী)

সংসদীয় আসনঃ

  1. নাটোর-১ লালপুর,বাগাতিপাড়া
  2. নাটোর-২ সদর,নলডাঙ্গা
  3. নাটোর-৩ সিংড়া
  4. নাটোর-৪ গুরদাসপুর,বড়াইগ্রাম

নির্বাচনী এলাকা

  1. (৫৮) নাটোর-১ (লালপুর উপজেলা-বাগাতিপাড়া উপজেলা)
  2. (৫৯) নাটোর-২ (নাটোর সদর উপজেলা - নলডাঙ্গা উপজেলা)
  3. (৬০) নাটোর-৩ (সিংড়া)
  4. (৬১) নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর উপজেলা-বড়াইগ্রাম উপজেলা)

ইতিহাস

উত্তরা গণভবনের প্রবেশদ্বার

অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন । এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে । ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান । ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয় । রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন । রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ , বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

নাটোরে নীল বিদ্রোহ ১৮৫৯-১৮৬০ তে সংঘটিত হয়। [3] ১৮৯৭ সালের জুনে নাটোরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশন হয় । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাপতি, মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ অভ্যর্থনা নমিতির সভাপতি ও প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের চেষ্টায় সেবারই প্রথম রাজনৈতিক সভায় বাংলা ভাষার প্রচলন করা হয়। ১৯০১ সালে মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ কলকাতা কংগ্রেসের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হন। ১৮৪৫ সালে রাজশাহী জেলার অধীনে নাটোর মহকুমার সৃষ্টি। আর অন্যান্য মহকুমার মতো জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে।

১৯৭১ সালের ৫ মে গোপালপুরের চিনিকলের এম.ডি. মো. আজিম সহ প্রায় ২০০ মানুষকে নৃশংসভাবে পাকবাহিনী হত্যা করে। এই বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার এবং রেলস্টেশনের নামকরণ হয়েছে আজিমনগর।[4]

শিক্ষা

নাটোর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট

নাটোর জেলায় সাক্ষরতার হার ৭০%।মধ্যমমানের স্কুল কলেজ ও বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও নাটোরে কোন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই যার ফলে উচ্চ শিক্ষা ও সাশ্রয়ী শিক্ষার জন্য জেলার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ সময় পার্শবর্তী জেলার মুখাপেক্ষী হতে হয় ও জেলার বাহিরে গমন করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই শিক্ষাগ্রহণ শেষে উচ্চ শিক্ষিতরা আর জেলায় ফিরে না। এ কারণে অনেক দিক থেকে জেলার উন্নয়নে পিছিয়ে আছে।

জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

  1. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BAUET)
  2. নাটোর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট
  3. নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ
  4. আব্দুলপুর সরকারি কলেজ
  5. বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজ
  6. রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজ
  7. দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজ
  8. নাটোর সিটি কলেজ
  9. মহিলা কলেজ
  10. সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়
  11. সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  12. নাটোর সুগারমিল উচ্চ বিদ্যালয়
  13. গ্রীন একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়
  14. মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়
  15. নব বিধান গালস স্কুল
  16. শের ই বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়
  17. পারভীন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়
  18. তেবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  19. বড়গাছা উচ্চ বিদ্যালয়
  20. কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
  21. করিমপুর ‍সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আব্দুলপুর
  22. নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল
  23. মহারাজা জে.এন উচ্চ বিদ্যালয়
  24. গুরুদাসপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,Katua Bari High School।
  25. বাগাতিপাড়া পাইলট স্কুল।
  26. কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, দয়ারামপুর, নাটোর।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান

জেলা শিল্পকলা একাডেমী, মনোবীণা সংঘ, সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, নাটোর সংগীত বিদ্যালয়, উষা খেলাঘর আসর, ভোলামন বাউল সংগঠন, ইছলাবাড়ী বাউল সংগঠন, নৃত্যাঙ্গন, ডিং ডং ড্যান্স ক্লাব, দিব্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সারেগামা, সুরের ছোঁয়া, ঝংকার নৃত্য গোষ্ঠি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, ইংগিত থিয়েটার ইত্যাদি।

অর্থনীতি

হালতি বিলে পাট ক্ষেত

জেলার প্রধান উৎপাদিত ফসল হলো ধান । এছাড়াও এখানে রসুন, ইক্ষু, গম, ভুট্টা, আখ, পান ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। এখানকার বিলুপ্তপ্রায় ফসল নীল, বোনা আমন ও আউশ ধান। এখানে বেশ কয়েকটি ভারি শিল্প রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুইটি চিনিকল, ডিস্টিলারি,প্রান জুসের কারখানা,দত্তপাড়া বিসিক এলাকা,রাজলংকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র,চামড়া সংরক্ষণ ও পক্রিয়াকরন এলাকা (চামড়াপ্পট্টি), জুট মিল (প্রস্তাবিত),পদ্মা অয়েল সংরক্ষণ এলাকা রয়েছে,যা নাটোর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশে।এইখানে ওয়ানগনবাহী ট্রেন থেকে তেল উত্তলোন করা হয়। দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে ২টি এই জেলায় অবস্থিত। এছাড়াও মূলতঃ এই জেলায় উৎপাদিত আখের উপর নির্ভর করে পার্শ্ববর্তী রাজশাহীপাবনা জেলায় গড়ে উঠেছে আরও দুইটি চিনিকল।

এছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাণ কোম্পানীর বেশীরভাগ কাঁচামাল ( আম , লিচু , বাদাম , মুগ ডাল, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি) নাটোর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে।সম্প্রতি এখানে আপেল কুল, বাউ কুল,থাই কুলের ব্যাপক চাষ হচ্ছে ।

হালতির বিল

নাটোর জেলায় ভারী শিল্প তেমন নেই।মূলত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এ জেলায় তেমন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো:-
#বিসিক শিল্প এলাকা
#রাজলংকা বিদ্যুৎ উউৎপাদন কেন্দ্র
#প্রান এগ্রো লিমিটেড
#কিশোয়ান     
#নাটোর সুগার মিল লিমিটেড
#নর্থ  বেঙ্গল সুগারমিল লালপুর
#ডিস্টিলারি শিল্প
#চামড়া শিল্প
#পদ্মা অয়েল 

এছাড়া অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে।

চিত্তাকর্ষক স্থান

নাটোর রাজবাড়ি

সংস্কৃতি

মাদার গান

মাদার গান বাংলার লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য সৃষ্টি। মাদার গানের মূল উপজীব্য হল শাহ মাদার নামক পীরের গুণগান। মাদার অনুসারীদের ধারনা, মাদার পীর একজন মারেফতি পীর। কথিত আছে, বেহেস্ত থেকে হারুত-মারুত নামক দুজন ফেরেস্তা পৃথিবীতে এসে এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পতিত হন ও তাদের প্রেমের ফলেই জন্ম হয় মাদার পীরের; তবে বাস্তবে এ কাহিনীর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।[5] গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা রোগ-শোক ও সকল প্রকার অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাবার জন্য মাদার পীরের কাছে মাণ্যত করার জন্য যে অনুষ্ঠানের প্রচলন করে তা মাদার গান নামে পরিচিত হয়।[6]

অন্যদিকে গবেষকরা মাদার পীরকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেন। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, মাদার পীরের প্রকৃত নাম বদিউদ্দিন শাহ মাদার। তার অনুসারীদের মাদারিয়া বলা হয়। অঞ্চলভেদে মাদার পীর ‘শাহ মাদার’ বা ‘দম মাদার’ নামে অবিহিত হন।[7]

মাদার গানের জারিতে মাদার পীরের প্রতীক হিসেবে একটি বাঁশ ব্যবহার করা হয়। প্রধান বয়াতি গান গাইতে গাইতে বাঁশঝাড়ে গিয়ে একটি ধারালো ছুড়ি দিয়ে এক কোপে একটি বাঁশ কাটেন। এরপর বাঁশটিকে নদীতে স্নান করিয়ে লাল কাঁপড় দিয়ে বেঁধে গৃহস্থ বাড়ীর নির্দিষ্ট আসনে উচু স্থানে স্থাপন করেন। বাঁশটিকে ভূমি স্পর্শ করতে দেয়া হয়না। লোকজন তাদের মনবাসনা পূরনের জন্য আসনে বসে প্রার্থনা করতে থাকেন। প্রার্থনা শেষে একটি খোলা স্থানে পাটি বিছিয়ে মাদার পীরের বন্দনা করে পালাগান শুরু করেন বয়াতি। গানের প্রধান চরিত্র মাদার পীর ও তার শিষ্য জুমল শাহ। এছাড়া থাকেন কয়েকজন দোহার-বায়েন। সবাই গোল হয়ে একটি পাটিতে বসেন যাদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে মাদার পীর ও জুমল শাহ গান গাইতে থাকেন।[8]

ছুকরিরা চোখ ঝলসানো সাজগোজ করে। চুমকী বসানো শাড়ী, জরির ওড়না, মুখে-হাতে রং মেখে এরা নাচে অংশ নেয়। মাদারের পোশাক থাকে দরবেশের মতো। মাথায় তাজ, পরনে লম্বা আলখাল্লা, গলায় তসবি, আর হাতে থাকে একটি লাঠি। পা থাকে পাদুকাহীন, কখনও বা বেড়ি পড়ানো। জুমল শাহ ও অন্যান্য দোহার-বায়েনরা সাধারন পোশাক ধুতিবস্ত্র পরিধান করে। হারমোনিয়াম, ঢোল, কাসর, মন্দিরা বাজিয়ে এরা গান ও অভিনয়ে অংশ নেয়।

মাদার গানের বেশ কয়েকটি পালাগান রয়েছে। এর মধ্যে মাদারের জন্ম খন্ড, কুলসুম বিবির পালা, মাদারের ওরসনামা, বড় পীরের পালা, জুমলের জন্মকাহিনী, হাশর-নাশর, খাকপত্তন পালা, মাদারের শেষ ফকিরি, বিবি গঞ্জরার পালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে মাদার পীরের বন্দনার পর দর্শকদের কিংবা বায়োজোষ্ঠ্যদের ইচ্চানুযায়ী যেকোন একটি পালা গাওয়া হয়, রাতভর চলতে থাকে অনুষ্ঠান।

বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে মাদার গানের বিশেষ অবস্থান রয়েছে। বাংলা নাটকের যে নিজস্ব ধারা, মাদার গানের মধ্যে তা লক্ষ্য করা যায়। বাংলা নাটকের আঙ্গিক ও পরিবেশন রীতির সকল বৈশিষ্ট্য মাদার গানের ভেতর রয়েছে। মৌলিক আচার, কাহিনী, পোশাক ও মঞ্চব্যবস্থাপনার এক বিশেষ নিদর্শন এই মাদার গান।

পদ্মপুরাণ বা মনসার গান ও ভাসান যাত্রা
বিয়ের গীত
বারোসা গান
মুর্শিদী গান

কৃতী ব্যক্তিত্ব

পত্র পত্রিকা

  • সাপ্তাহিক নাটোর বার্তা
  • দৈনিক প্রান্তজন
  • দৈনিক জনদেশ
  • দৈনিক উত্তর বঙ্গবার্ত

চিত্রশালা

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে নাটোর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "জেলার পটভূমি"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৫, ২০১৮
  3. নাটোর জেলার ওয়েবসাইটে "জেলার পটভূমি" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে শীর্ষক নিবন্ধ
  4. দৈনিক প্রথম আলো শহীদ সাগরের তীরে নিবন্ধ
  5. মাদার পীরের পাঁচালি
  6. নাটোরের লোকজ-সংস্কৃতি
  7. "মাদারের গান"। ২২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  8. মাদার পীরের গান
  9. দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নাটোরের শিল্পীরা, www.natore.gov.bd
  10. রংবেরং প্রতিবেদক। "মডেল হলেন আবু হেনা রনি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৫, ২০১৫
  11. "কেমন আছেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকারা? | বিনোদন"jugantor.com
  12. "কালের সাক্ষী রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর"। ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  13. বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
  14. নাটোর জেলার কৃতি সন্তান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ মে ২০১৩ তারিখে - শরৎকুমার রায়
  15. "শতবর্ষে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর"prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১০

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.