নলডাঙ্গা উপজেলা

নলডাঙ্গা বাংলাদেশের নাটোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

ইতিহাস

১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে নলডাঙ্গার হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই হাটকে ঘিরেই নলডাঙ্গার উন্নয়নের গড়াপত্তন শুরু। সেসময় নলডাঙ্গা পাশ্ববর্তী হালতিবিল ধান ও মাছের জন্য প্রাচুর্য্য ছিল। সেখানকার ধান, মাছ এবং বারনই নদীর মাছ ও নদীপথ এই হাটের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়ায়। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। নলডাঙ্গার হাটকে ঘিরে ১৯৬১ সালে ব্রক্ষপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ এবং ১৯৬২ সালের ১ আগষ্ট নলডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনগড়ে উঠে। বারনই নদীর ধারে হাট হওয়ায় এখানে একটি নৌ-বন্দরও গড়ে উঠে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মহাজনরা মালামাল পরিবহনে নৌপথ ব্যবহার করেছেন। হাটকে ঘিরে ১৯৬৭ সালে নলডাঙ্গা হাইস্কুল, ১৯৭২ সালে শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজ, ১৯৭৬ সালে রুপালী ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি নাটোর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুর, মাধনগর, খাজুরা, পিপরুল, বিপ্রেবেলঘরিয়া নামের ৫টি ইউনিয়নকে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ পূর্বক নলডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি থানায় (পুলিশ স্টেশন) রুপান্তর করা হয়। পরে একই বছরের ২১ জুন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নলডাঙ্গা থানাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন। স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, বীমা সব কিছুই এখন হাতের মুঠোয়। নলডাঙ্গাবাসীর আধুনিক জীবন যাত্রার ব্যবস্থা করতে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় নলডাঙ্গা পৌরসভা। বর্তমানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাচ্ছে নলডাঙ্গা পৌরসভা। গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নে ২০০৩ সালে ৩ জানুয়ারি স্থাপন করা হয়েছে দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্র ( মিল্কভিটা)। তথ্য যোগাযোগের জন্য ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর টেলিফোন এক্র্চেঞ্জ এবং একই বছরে ডাকবাংলো নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে বারনই নদীর ওপর বিশালাকৃতির ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তা উদ্বোধন করা হয়। কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর বাসুদেবপুর এলাকায় গড়ে তোলা হয় কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র। ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক, ভুমি অফিস, পোষ্ট অফিসসহ বিভিন্ন এনজিওর অফিস স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৭ মেদুপুরে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও বাস্তবায়ন কমিটির ( নিকার) সভায় নলডাঙ্গাকে উপজেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। [1]

প্রশাসনিক এলাকা

নলডাঙ্গা উপজেলার আয়তন প্রায় ১৭৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়ন ৫টি এবং গ্রামের সংখ্যা ৯৯ টি। এছাড়াও এখানে ১ টি পৌরসভা এবং ৭ টি পোষ্ট অফিস রয়েছে। নলডাঙ্গা উপজেলা নাটোর জেলার উত্তরে অবস্থিত। নলডাঙ্গা উপজেলার পূর্বে সিংড়াগুরুদাসপুর উপজেলা, দক্ষিণে নাটোর সদর উপজেলা , বড়াইগ্রামবাগাতিপাড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে পুঠিয়া ।

ইউনিয়নের সমূহ

নম্বরইউনিয়নগ্রামের সংখ্যা
ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন১৭টি
মাধনগর ইউনিয়ন৮টি
খাজুরা ইউনিয়ন২৩টি
পিপরুল ইউনিয়ন
বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন২৬টি

[2]

জনসংখ্যা

নলডাঙ্গা উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,২৯,৩০৪ জন। মোট ভোটার ৯২,৭৭৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৪,৩২০ জন এবং নারী ভোটার ৪৬,৪২৫ জন।

শিক্ষা

নলডাঙ্গা উপজেলায় শিক্ষার হার ৪১.৭১%। এখানে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তালিকা টেবিলে দেয়া হলো। [3]

নম্বরপ্রতিষ্ঠানসংখ্যা
কলেজ৬টি
উচ্চ বিদ্যালয়৩০টি
মাদ্রাসা১৩টি
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়৪১টি
রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়২৯টি
কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র১টি

অর্থনীতি

১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে নলডাঙ্গা হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই হাটকে ঘিরেই নলডাঙ্গার উন্নয়নের গড়াপত্তন শুরু। সেসময় নলডাঙ্গার পাশ্ববর্তী হালতিবিল ধান ও মাছের জন্য প্রাচুর্য্য ছিল। সেখানকার ধান, মাছ এবং বারনই নদীর মাছ ও নদীপথ এই হাটের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। নলডাঙ্গার হাট কে ঘিরেই নলডাঙ্গার অর্থনীতি উন্নয়নের গোড়াপত্তন শুরু। প্রধান উৎপাদিত ফসল হলো ধান । এছাড়াও এখানে গম , ভুট্টা , আখ , পান ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। বিলুপ্তপ্রায় ফসল নীল, বোনা আমনআউশ ধান। এখানে বেশ কয়েকটি ভারি শিল্প রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাণ কোম্পানীর বেশীরভাগ কাঁচামাল ( আম , লিচু , বাদাম , মুগ ডাল, পোলাওর চাউল ইত্যাদি) নলডাঙ্গা থেকে সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি এখানে আপেল কুল, বাউ কুল, থাই কুল-এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

দর্শনীয় স্থান

[বিলহালতী] বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল। এটির বৃহত্তম অংশ নলডাঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত। এ বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। বর্ষাকালে এখানে পানকৌড়ি, বক, মাছরাঙা সহ ছোটবড় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সমাগম ঘটে। বর্তমান সময়ে দর্শনীয় স্থান হিসাবে পাটুল খুব সুনাম অর্জন করেছে। এটাকে এখন দ্বিতীয় কক্সবাজার ও বলা হয়। বর্ষাকালে যখন পাটুল-খাজুরা রাস্তাটি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়, তখন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসে হালতীর বিলের এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে।

তথ্যসূত্র

  1. http://naldanga.natore.gov.bd/node/1139733%5B%5D
  2. http://naldanga.natore.gov.bd/node/1121723%5B%5D
  3. http://naldanga.natore.gov.bd/node/1134972%5B%5D
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.