চুয়াডাঙ্গা জেলা

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্বে এটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত ছিল। দেশ বিভাগের পূর্বে এটি পশ্চিম বঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম কমান্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। মুক্তিযুদ্ধের আট নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল চুয়াডাঙ্গা সদরের ৪নং ইপিআর এর হেডকোয়ার্টার। ৪নং ইপিআর প্রধান মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং ডাঃ আসহাব-উল-হক জোয়ার্দ্দার একই দিন সকাল ৯:৩০ এ চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে সর্বপ্রথম দখলদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ রেডক্রস বর্তমানে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের ডাক বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এই চুয়াডাঙ্গায় প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ই এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার চুয়াডাঙ্গা কে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করেন। এবং ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত তা কার্যকর ছিলো। পরবর্তীতে নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজধানী মেহেরপুরের বৌদ্দনাথ তলায়‌‌ বর্তমানে মুজিবনগর এ সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রিটিশরা ভারতের(অধুনা বাংলাদেশের) প্রথম রেল পথ চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জগতী পর্যন্ত চালু করেন। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন হল বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন।

চুয়াডাঙ্গা
জেলা
বাংলাদেশে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৬′ উত্তর ৮৮°৪২′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
আয়তন
  মোট১১৭৪.১০ কিমি (৪৫৩.৩২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2019)
  মোট১৯,৩৯,০১৫
  জনঘনত্ব১৭০০/কিমি (৪৩০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট100%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭২০০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ১৮
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

চুয়াডাঙ্গা জেলার আয়তন ১১৭০.৮৭ বর্গ কিলোমিটার। চুয়াডাঙ্গা জেলার উত্তর-পূর্বদিকে কুষ্টিয়া জেলা, উত্তর-পশ্চিমে মেহেরপুর জেলা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে, ঝিনাইদহ জেলা, দক্ষিণে যশোর জেলা, এবং পশ্চিমে ভারতের নদিয়া জেলা অবস্থিত। জেলার মূল শহর চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।

ভৌগোলিক উপাত্ত

বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১,৪৬৭ মিলিমিটার। গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলা গাঙ্গেয় অববাহিকায় অবস্থিত; যার ওপর দিয়ে মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, কুমার, চিত্রা, এবং নবগঙ্গা নদীসমূহ প্রবাহিত হয়েছে।

ইতিহাস

গ্রীক ঐতিহাসিকদের মতে এ এলাকাতেই বিখ্যাত গঙ্গারিডাই রাজ্য অবস্থিত ছিল। গাঙ্গেয় নামক একটি শহরও এ চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত ছিল বলে শোনা যায়। চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামে এ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি- মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এখানে এসে প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উল্লেখ রয়েছে। ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা নামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।। ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি বেশ কিছু আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল; যেমন: ওয়াহাবী আন্দোলন (১৮৩১), ফরায়েজি আন্দোলন (১৮৩৮-৪৭), সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭), নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০), খেলাফত আন্দোলন (১৯২০), স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৬), অসহযোগ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ আন্দোলন (১৯২০-৪০), ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) ইত্যাদি। ব্রিটিশ শাসনাধীনে চুয়াডাঙ্গা নদিয়া জেলার একটি উপজেলা ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় কৃষ্ণনগর থানা (বর্তমানে নদিয়া জেলার অন্তর্গত) বাদে বাকি অংশ কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।[1]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে

মুক্তিযুদ্ধের সময় চুয়াডাঙ্গা পাকিস্তান বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত বেশ কিছু প্রাথমিক যুদ্ধের সাক্ষী। এখানে শতাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম কমান্ড, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল এ জেলায়, মুক্তিযুদ্ধের আট নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল চুয়াডাঙ্গা সদরের ৪নং ইপিআর হেডকোয়ার্টার। ৪নং ইপিআর প্রধান মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং ডাঃ আসহাব-উল-হক জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে। একই দিন সকাল ০৯:৩০ এ বড়বাজার মোড়ে ডাঃ আসহাব-উল-হক জোয়ার্দ্দার সর্বপ্রথম দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটিও এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়, এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাক বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এই জেলাতেই প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ই এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার চুয়াডাঙ্গাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করেন। ১৪ই এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাতে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা ছিলো, কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা জানতে পেরে চুয়াডাঙ্গায় যুদ্ধ বিমান থেকে প্রচুর গোলা বর্ষণ করে। পরে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৌদ্দনাথ তলায়‌‌‌ বর্তমানে মুজিবনগর এই শপথ অনুষ্ঠান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় একশরও বেশি সম্মুখ যুদ্ধের কথা নথিভুক্ত আছে। নথি অনুসারে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখে, অর্থাৎ হানাদার বাহিনী কর্তৃক মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের ৯ দিন আগে, পাকিনস্তানীদের হাত থেকে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত হয়।

যুদ্ধকালীন গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছ- চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পেছনের স্থানে, নাটুদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে তিনটি গণকবর, জীবননগরে সীমান্তবর্তী ধোপাখালি গ্রামে, এবং আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের কাছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ ক্যানালের তীরবর্তী স্থানে। যুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে দু'টি স্মৃতি স্তম্ভ।

১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া থেকে পৃথক করে চুয়াডাঙ্গাকে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা দেয়া হয়।[1]

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

উপজেলাসমূহ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ৪টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ আলমডাঙ্গা আলমডাঙ্গা পৌরসভা (১টি): আলমডাঙ্গা
ইউনিয়ন (১৫টি): ভাংবাড়িয়া, হারদী, কুমারী, বাড়াদী, গাংনী, খাদিমপুর, জেহালা, বেলগাছি, ডাউকী, জামজামী, নাগদাহ, খাসকররা, কালিদাসপুর, চিৎলা এবং আইলহাঁস
০২ চুয়াডাঙ্গা সদর চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভা (১টি): চুয়াডাঙ্গা
ইউনিয়ন (৫টি): আলুকদিয়া, মোমিনপুর, কুতুবপুর, শংকরচন্দ্র এবং পদ্মবিলা
দর্শনা ইউনিয়ন (৪টি): বেগমপুর, তিতুদহ, নেহালপুর এবং গড়াইটুপি
০৩ জীবননগর জীবননগর পৌরসভা (১টি): জীবননগর
ইউনিয়ন (৮টি): উথলী, আন্দুলবাড়িয়া, সীমান্ত, বাঁকা, হাসাদাহ, রায়পুর, মনোহর এবং কেডিকে
০৪ দামুড়হুদা দামুড়হুদা ইউনিয়ন (৬টি): জুড়ানপুর, ননিপোতা, কার্পাসডাঙ্গা, হাউলী, দামুড়হুদা এবং নাটুদহ
দর্শনা পৌরসভা (১টি): দর্শনা
ইউনিয়ন (২টি): কুড়ালগাছী এবং পারকৃষ্ণপুর মদনা

চুয়াডাঙ্গা শহর চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রানকেন্দ্র এবং একটি মধ্যম মানের শহর। চুয়াডাঙ্গা শহরটি মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এ শহরে ৯ টি ওয়ার্ড এবং ২১১ টি মহল্লা আছে। এটি একটি 'এ গ্রেড'এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়তনের পৌরসভা। পৌরসভা ১৯৭২ সালে ২০শে জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয়। শহরের আয়তন ৩৮ বর্গ কিলোমিটার। এর জনসংখ্যা ৪,১১,৯৭৭; যার মধ্যে পুরুষ ৪৯.৯৯% এবং মহিলা ৫০.০১%। শহরের জনসংখ্যার ১০০% ই শিক্ষিত।

জনসংখ্যা উপাত্ত

২০১৮ সালের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন মতে চুয়াডাঙ্গা জেলার বর্তমান জনসংখ্যা ২৫ লক্ষ প্রায়।

স্বাস্থ্য সেবা

চুয়াডাঙ্গাতে বেশ কিছু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-

  • ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট "আধুনিক সদর মডেল হাসপাতাল" চুয়াডাঙ্গা,(১৯৭০)
  • ৫০ শয্যা বিশিষ্ট "বাংলাদেশ বিজিবি হাসপাতাল", চুয়াডাঙ্গা,
  • ৫১ শয্যা বিশিষ্ট "জীবননগর উপজেলা হাসপাতাল",
  • ৫০ শয্যা বিশিষ্ট "উপজেলা হাসপাতাল, চিৎলা, দামুড়হুদা",
  • ৫০ শয্যা বিশিষ্ট " উপজেলা হাসপাতাল, হারদী, আলমডাঙ্গা",
  • মা ও শিশু হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা,
  • শিশু হাসপাতাল, দর্শনা,
  • রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা,
  • সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, চুয়াডাঙ্গা, (১৯৭০)
  • ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা,
  • ইসলামী হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা,
  • আদ-দ্বীন হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা,
  • পশু হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা।
  • মা হাসপাতাল,দামুড়হুদা বাসস্টপ,

এছাড়াও অসংখ্য ছোট বড় প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।

শিক্ষা

দেশের নিরক্ষরমুক্ত জেলা হিসেবে পরিচিত। সমগ্র জেলার শিক্ষার হার ৫০% এবং শহরের জনসংখ্যার ১০০% শিক্ষিত।{{দামুড়হুদা উপজেলা দামুড়হুদা উপজেলা বেশ কয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছ।তার মধ্যে ১ দর্শনা সরকারি কলেজ ২ আব্দুল ওদুদশা ডিগ্রি কলেজ দামুড়হুদা ৩ কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ ৪ বলদিয়া স্কুল এন্ড কলেজ, ৫ দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ }}

কৃষি

চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশের মধ্যে ভুট্টা,পান,শাকসবজি, খেজুরের গুড় উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন কারী জেলা । এ ছাড়া বাণিজ্যিক ফুল এবং আম উৎপাদনে বাংলাদেশের জেলাসমূহের মধ্যে দ্বিতীয়। এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত। শ্রমশক্তির ৫৮% কৃষিকাজে, এবং মাত্র ২২% ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৯৪.২০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ৯৯% কোন না কোন প্রকার সেচ ব্যবস্থার আওতাধীন।

ব্যবহৃত ভূমির মধ্যে আবাদী জমি ৮৯৪.২ বর্গকিলোমিটার; অনাবাদী জমি ২.৫৪ বর্গকিলোমিটার; দুই নফসলী জমি ১৪.৮৫%; তিন ফসলী জমি ৭৩.৮৫%; চার ফসলী জমি ১১.৮০%; সেচের আওতাভুক্ত আবাদী জমি ৯৯%। ভূমিস্বত্বের ভিত্তিতে ৩৭% ভূমিহীন, ৪৩% নিম্ন বর্গীয়, ১৮% মধ্যম এবং ২% ধনী; মাথাপিছু আবাদী জমির পরিমাণ ১,১০০ বর্গমিটার। প্রতি ১০০ বর্গমিটার মানসম্মত জমির বাজারমূল্য আনুমানিক ১,০০,০০০ টাকা।

প্রধান শস্য ধান, ভুট্টা, পান,পাট,গম, আলু, আখ, তামাক,বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল,বাঁধা কপি,পাতা কপি,মুলা,গাজর,ধনে পাতা,ঢেরশ,বরবটি, শিম, কুমরা, বিভিন্ন ধরনের ফুল এবং বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি । বিলুপ্ত বা প্রায়-বিলুপ্ত শস্যের মধ্যে আছে তিল, তিসি, সরিষা, ছোলা, আউশ ধান এবং নীল।

প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপেঁ, পেয়ারা, কুল,পান, নারিকেল এবং কলা।

জেলায় রয়েছে অসংখ্য মুরগির খামার, মাছের খামার, গরুর খামার ও বড় বড় মুরগি,হাঁস ও মাছের হ্যাচারি। জীবননগরে অবস্থিত দত্তনগর ফার্মটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম কৃষিখামার হিসেবে পরিচিত।

অর্থনীতি

জেলার পেশার মধ্যে রয়েছে কৃষি ৩০.৩৩%, কৃষিশ্রমিক ১৮.০৮%, দিন মজুর ২.৬৯%,ব্যবসা ২২.৯৭% চাকরি ১৩.০৮%, পরিবহন খাত ৪.৯১% এবং অন্যান্য ৮.২২%।

উৎপাদনশীল কলকারখানার মধ্যে রয়েছ তুলার কল, চিনি কল, বিস্কুট কারখানা, স্পিনিং মিল, টেক্সটাইল মিল, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, ওষুধ তৈরির কারখানা, চালকল, চিরার কল, তেল কল, আটা কল, বরফ কল, করাত কল এবং ওয়েল্ডিং কারখানা। কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে বয়নশিল্প, বাঁশের কাজ, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুম্ভকার, ছূতার, তন্তুবায়, দরজি ইত্যাদি।

কৃষির পাশাপাশি জেলাটিতে বর্তমানে শিল্পেরও বিকাশ ঘটছে। প্রধান শিল্প কারখানা গুলো হল "জামান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ:- হ্যাচারী,ফিড মিল,ব্যাভারেজ লিমিটেড,প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি,ফ্রিজ ফ্যাক্টরী,এসি ফ্যাক্টরী, টিভি ফ্যাক্টরী,সিলিং ফ্যান ফ্যাক্টরী, স্টীল ফ্যাক্টরী," স্যার ফ্যাক্টরী, ইলেকট্রনিক্স ফ্যাক্টরী, তামাক ফ্যাক্টরী, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, বঙ্গজ ব্রেড এন্ড বিস্কুট, তাল্লু স্পিনিং মিল্স লিমিটেড, কেরু এন্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড ইত্যাদি। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় অবস্থিত কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (১৯৩৩) বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনি কল। কেরু এন্ড কোম্পানির সাথে যে ডিস্টালারিটি আছে তা বাংলাদেশের একমাত্র মদ্য প্রস্তুতকারী কারখানা। কেরু এন্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (Bangladesh Sugar and Food Industries; BSFIC) অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান; যা বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।

প্রধান রপ্তানী পণ্যগুলো হল পান, ভুট্টা, শাক-সবজি, ধান,চাল পাট, বিস্কুট, চিনি, তামাক, আখ, খেজুরের গুড়, সুপাড়ি, আম, কুমড়া, কাঁঠাল, কলা, ফিড,এস.এস.আসবাবপত্র,হাঁস-মুরগীর বাচ্চা, ঔষধ এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ইত্যাদি।

নদ-নদী

চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে নবগঙ্গা নদী, চিত্রা নদী, ভৈরব নদ, কুমার নদ, মাথাভাঙ্গা নদী[2][3]

কৃতি ব্যক্তিত্ব

  • সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন-

সমাজ সেবক,মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগ,সাবেক হুইপ ও সাংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

দর্শনীয় স্থান ও স্থপনা

  • পুলিশ পার্ক - পুলিশ সুপার-এর কার্যালয় সংলগ্ন.
  • শিশু স্বর্গ - ফেরি ঘাট রোড.
  • নাটুদহের আট কবর - মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর.
  • কেরু এন্ড কোম্পানি এন্ড ডিস্টিলারি - দর্শনা.
  • তিন গম্বুজবিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদ.
  • ঘোলদাড়ি জামে মসজিদ (১০০৬ খ্রিষ্টাব্দ) - আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ি গ্রামে.
  • তিয়রবিলা বাদশাহী মসজিদ - আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের তিয়রবিলা গ্রাম.
  • ঠাকুরপুর মসজিদ.
  • শিবনগর মসজিদ.
  • জামজামি মসজিদ.
  • আট কবর- দামুড়হুদা.
  • হাজারদুয়ারি স্কুল - দামুড়হুদা.
  • নীলকুঠি - কার্পাসডাঙ্গাঘোলদাড়ি.
  • আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন - ব্রিটিশ আমলে নীলকুঠি হিসেবে ব্যবহৃত হত.
  • খাজা মালিক উল গাউস -এর মাজার - তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপি গ্রাম ।
  • রাখাল শাহ এর মাজার।
  • কাশিপুর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়ি।
  • গণকবর ধোপাখালী ।মনোহরপুর ইউনিয়ন
  • কুমারী সাহা জমিদার বাড়ি
  • পাঁচ কবর- হৈবতপুর-মদনা(মুক্তিযুদ্ধে ৫ জন শহীদ হন)।

বিবিধ

  • হাটবাজারের সংখ্যা - ২৮০টি।
  • গড়াইটুপি অমরাবতী মেলাঃ সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপি গ্রামে প্রতিবছর ৭-১৪ আষাঢ় বসে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গড়াইটুপি অমরাবতী মেলা।
  • এনজিও - ৩৮টি।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মোঃ মাহতাব উদ্দিন (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "চুয়াডাঙ্গা নগরীর প্রাচীন ইতিহাস"http://www.dailysangram.com/। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪ |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
  3. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১৩। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.