কিশোরগঞ্জ জেলা

কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল এবং ঢাকা বিভাগের সর্বশেষ জেলা। কিশোরগঞ্জ জেলার ব্র‍্যান্ড নাম হলো “উজান-ভাটির মিলিত ধারা,হাওর বাওর মাছে ভরা”।কিশোরগঞ্জ ঢাকা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহৎ জেলা

কিশোরগঞ্জ
জেলা
বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জ জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°২৬′০″ উত্তর ৯০°৪৭′০″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
আয়তন
  মোট২৫৬৬ কিমি (৯৯১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৩০,২৮,৭০৬
  জনঘনত্ব১২০০/কিমি (৩১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৫.৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৪৮
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ভৌগোলিক সীমানা

কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৮ বর্গ কিলোমিটার। এই আয়তনে ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এই জেলার উত্তরে নেত্রকোনা জেলাময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নরসিংদী জেলাব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলাহবিগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলাগাজীপুর জেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

কিশোরগঞ্জে উপজেলার সংখ্যা ১৩টি। যথা:

ইউনিয়নের সংখ্যা :১০৬টি

ইতিহাস

বঙ্গদেশের প্রাদেশিক মানচিত্রটি ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত থাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহ জিলা (টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জের সাথে বর্তমান বিভাগ) প্রদর্শন করছে

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী আছে এবং এখনোও তা বিরাজ করছে। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা 'কিশোরগঞ্জ'-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির কোচ শাসক ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন।

অর্থনীতি

কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির চালিকা শক্তি অনেকটা হাওরের উপর নির্ভর। যেমন: হাওরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা দেশের চাহিদার লভ্যাংশ পূরণ করতে সক্ষম। তাছাড়া কিশোরগঞ্জে পাট, ধান এবং অন্যান্য অনেক সবজি হয়ে থাকে যা দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়। এখানে প্রচুর মৎস এবং পোল্ট্রি খামার রয়েছে। বেশ কিছু ছোট বড় কলকারখানা রয়েছে যা জেলার অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে, এছাড়া ভৈরব এর জুতা শিল্প দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য। এই জেলার অনেক জনগন বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে,যা এই জেলার অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে।

চিত্তাকর্ষক স্থান

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ

জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ছিল বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। দুর্গের ভিতরে ঈসা খাঁ কয়েকটি স্থাপনা গড়ে তোলেন। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে দুর্গের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এগারসিন্দুর দূর্গ

এগারসিন্দুর দুর্গ পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। ইতিহাসবেত্তা আবুল ফজল রচিত আকবরনামা গ্রন্থে এই গ্রামের নাম উল্লেখ রয়েছে। এটি ছিল অহম শাসকদের রাজধানী। ১৫৩৮ সালে মুঘলরা অহমদের পরাজিত করে এ অঞ্চল দখল করে। এখানেই ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৬.৬১ একর জমিতে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।[2][3][4] ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় 'সোয়া লাখি' । পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়।[3] আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া_ সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।[5]

চন্দ্রাবতী মন্দির

চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত প্রথম বাঙালি মহিলা কবি স্মৃতিবিজরিত শিবমন্দির। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত।

দিল্লীর আখড়া

দিল্লীর আখড়া মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে নির্মিত। এটি মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত।

মানব বাবুর বাড়ি

মানব বাবুর বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯০৪ সালে জমিদারির পত্তন হলে ব্রিটিশ জেপি ওয়াইজের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নেন গাঙ্গাটিয়ার ভূপতিনাথ চক্রবর্তী। সেখানেই তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।

★নিকলীর বেড়িবাঁধ- যা বর্তমানে বাংলাদেশের একটি ট্যুরিস্টস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নদ-নদী

  • পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
  • মেঘনা
  • কালনী
  • ধনু
  • নরসুন্দা
  • বাউরি

যোগাযোগ ব্যবস্থা

কিশোরগঞ্জের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের। রাজধানী ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়।স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও পৌরসভা সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে।ঢাকা হতে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে বাসযোগে ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।

বাস যোগাযোগ ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সাথে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগও অত্যন্ত ভাল। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিনি সকাল ৮:০০ টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্ত:নগর ট্রেন বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া নিয়মিত চলাচল করে। ট্রেনটি দুপুর ১২:৩০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে পোঁছার পর পুণরায় ১২:৪৫ মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এবং ঢাকায় পোঁছার পর সন্ধ্যা ৬:২০ মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ ট্রেনটি রাত এগারটায় কিশোরগঞ্জ পোঁছার পর পরদিন সকাল ৬:৪৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন শুক্রবার ব্যতীত সকাল ১০.২০ এ ঢাকা থেকে ছেড়ে ২.২০ এ কিশোরগঞ্জ পৌছায় এবং ২.৪০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।

বাস সার্ভিস সমূহঃ

১. অনন্যা ক্লাসিক ( মহাখালী - কিশোরগঞ্জ)

২. অনন্যা পরিবহন ( মহাখালী - কিশোরগঞ্জ)

৩. অনন্যা সুপার (সায়েদাবাদ - কিশোরগঞ্জ)

৪. যাতায়াত প্রাঃ লিঃ ( সায়েদাবাদ - কিশোরগঞ্জ)

৫. যাতায়াত এসি প্রাঃ লিঃ ( সায়েদাবাদ - কিশোরগঞ্জ)

৬. শামীম এন্টারপ্রাইজ এসি/নন এসি ( কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ- যশোর- বেনাপোল-সাতক্ষীরা-সিলেট-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার)

৭. বিআরটিসি এসি/ননএসি (কিশোরগঞ্জ-খুলনা) (কিশোরগঞ্জ- রংপুর)

৮. অনন্যা ( কিশোরগঞ্জ - রাজশাহী)

৯. অপরূপা ( কিশোরগঞ্জ - নওগা-বগুড়া)

১০. শাপলা (কিশোরগঞ্জ - টাঙ্গাইল)

এছাড়াও দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে যাবার জন্য শক্তিশালী বাস যোগাযোগ রয়েছে

সংবাদপত্র

দৈনিক

  • দৈনিক আজকের দেশ
  • দৈনিক আমার বাংলাদেশ
  • গৃহকোণ
  • ভাটির দর্পণ
  • প্রাত্যহিক চিত্র

সাপ্তাহিক

  • আর্যগৌরব (১৯০৪)
  • কিশোরগঞ্জ বার্তাবাহ (১৯২৪)
  • আখতার (উর্দু, ১৯২৬)
  • কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৪৬)
  • প্রতিভা (১৯৫২)
  • নতুন পত্র (১৯৬২)

পাক্ষিক

  • নরসুন্দা (১৯৮১)
  • গ্রামবাংলা (১৯৮৫)
  • সৃষ্টি (১৯৮৬)
  • সকাল (১৯৮৮)
  • সূচনা (১৯৯০)
  • কিশোরগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯১)
  • মনিহার (১৯৯১)
  • কিশোরগঞ্জ প্রবাহ (১৯৯৩)
  • বিবরণী (কুলিয়ারচর, ১৯৯৩)

মাসিক

  • জীবনপত্র (২০১৮)

কৃতী ব্যক্তিত্ব

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কিশোরগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪
  2. দৈনিক আজকের খবর
  3. "সরকারি ওয়েবসাইট"। ১০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬
  4. ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম, লেখকঃ মোঃ আবদুল করিম, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠাঃ ১২৫-১২৮
  5. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.