জাহাঙ্গীর
নুরুদ্দীন মহম্মদ সেলিম[1] বা জাহাঙ্গীর (আগস্ট ৩০, ১৫৬৯ – অক্টোবর ২৮, ১৬২৭) ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট। তিনি ১৬০৫ সাল থেকে তার মৃত্যু অবধি ১৬২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
নুরুদ্দীন মুহাম্মদ সেলিম (জাহাঙ্গীর) | |||||
---|---|---|---|---|---|
![]() | |||||
![]() | |||||
রাজত্ব | ১৫ অক্টোবর – ৬ নভেম্বর ১৬২৯ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ২৪ অক্টোবর ১৬০৫ | ||||
পূর্বসূরি | আকবর | ||||
উত্তরসূরি | শাহ জাহান | ||||
জন্ম | নুরুদ্দীন মহম্মদ সেলিম] ৩০ আগস্ট ১৫৬৯ ফাতেহপুর সিকরি | ||||
মৃত্যু | অক্টোবর ২৮ ১৬২৭ কাশ্মীর | ||||
সমাধি | লাহোর | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | নুর জাহান | ||||
স্ত্রী | শাহিব - ই - জামাল তাজ বিবি মিলকিস মাকানি অন্যান্য ১৭ স্ত্রী | ||||
বংশধর | খসরু পারভেজ শাহ জাহান অন্যান্য | ||||
| |||||
রাজবংশ | তীমুরিয় | ||||
রাজবংশ | মুঘল | ||||
পিতা | আকবর | ||||
মাতা | জোধাবাই | ||||
ধর্ম | ইসলাম সুন্নি |
জাহাঙ্গীর এর পরিচয়
জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবর-এর পুত্র। শুরুতেই তিনি তার পিতা আকবর এর মতাদর্শী ছিলেন । সেই সময় আকবর দক্ষিণ ভারত-এ ব্যস্ত ছিলেন। তিনি হেরে গেলেও পরবর্তী কালে তার সৎমা রুকাইয়া সুলতান বেগম ও সেলিমা সুলতান বেগম এর সমর্থনে ১৬০৫ সালে রাজা হতে সমর্থ হন। প্রথম বছরেই তাকে তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে হয় ও তিনি তাতে সফল হন। তিনি খসরু সমর্থিত ২০০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেন ও খসরুকে অন্ধ করে দেন।
বাবার মত চমৎকার প্রশাসন ছাড়াও জাহাঙ্গীর-এর শাষনামলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক সাফল্য বিদ্যমান ছিল। এছাড়া সার্বভৌম সীমানা অগ্রসরও অব্যাহত ছিল - বঙ্গ, মেওয়ার, আহমেদনগর ও দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য বৃদ্ধির একমাত্র বাধা আসে যখন পারস্য অঞ্চলের সাফারীদ রাজবংশের শাহেনশাহ আব্বাস কান্দাহার আক্রমণ করেন। তা ঘটে যখন ভারতে তিনি খসরুর বিদ্রহ দমন করছিলেন। তিনি রাজপুতানা রাজাদের সাথে সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনায় বসেন ও তারা সকলেই মুঘল আধিপত্য মেনে নেন ও তার বদলে তাদের মুঘল সাম্রাজ্যে উঁচু পদ দেওয়া হয়।
জাহাঙ্গীর শিল্প, বিজ্ঞান এবং, স্থাপত্য সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে তরুণ বয়স থেকেই চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক দেখিয়েছেন এবং তার নিজের একটি কর্মশালায় ছিল। মুঘল চিত্রকলা শিল্প, জাহাঙ্গীর এর রাজত্বের অধীনে মহান উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তার সময় উস্তাদ মনসুর জন্তু ও পাখির ছবি একে বিখ্যাত হন। জাহাঙ্গীর এর ছিল একটি বিশাল পক্ষিশালা ও পশুশালা ছিল। জাহাঙ্গীর ইউরোপীয় এবং ফার্সি শিল্পকলাকেও ভালবাসতেন। তিনি ফার্সি রানী নুর জাহান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার সাম্রাজ্য জুড়ে ফার্সি সংস্কৃতি প্রচার করেন। তার সময়েই শালিমার গার্ডেন তৈরি হয়।
জাহাঙ্গীর তার বাবার মত একজন কঠোর সুন্নি মুসলমান ছিলেন না। তিনি সার্বজনীন বিতর্কে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের অংশগ্রহণ করতে দিতেন। জাহাঙ্গীর তার লোকদের কাউকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বারণ করতেন। তিনি সকল প্রকার ধর্মের লোকেদের থেকে সমান খাজনা নিতেন। থমাস রো, এডওয়ার্ড টেরি-সহ অনেকেই তার এইপ্রকার আচরণের প্রশংসা করেন।
অনেক ভাল গুন থাকা সত্ত্বেও, মদ্যপান ও নারী এই দুই আসক্তির জন্য জাহাঙ্গীর সমালোচিত হন। তিনি এক সময় তার স্ত্রী নুর জাহান কে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেন এবং নুর জাহান বিভিন্ন বিতর্কিত চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন।
শেষ দিকে মুসলিম মনীষি আহমদ সিরহিন্দি রহঃ এর ইসলামিক আন্দলনের ফলশ্রুতিতে তিনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হোন । ১৬২২ সালে তার পুত্র ক্ষুরাম প্রথম বিদ্রোহ করেন। কিন্তু ১৬২৬ সালে জাহাঙ্গীরের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে কোণঠাসা হয়ে তিনি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ১৬২৭ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষুরামই নিজেকে শাহ জাহান উপাধিতে ভূষিত করে সিংহাসন দখল করেন। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর বিভিন্ন গল্প , সিনেমা ও সাহিত্যে তার ও আনারকলির রহস্যে ভরা সম্পর্ক স্থান পায়।
বিদ্রোহ এবং উত্তরাধিকার নিয়ে বিবাদ

রাজকুমার সেলিম ৩৬ বছর বয়েসে তার বাবার মৃত্যুর ৮ দিন পর ৩০ নভেম্বর ১৬০৫ সালে ক্ষমতায় এসে নিজেকে নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী উপাধিতে ভূষিত করে। এখান থেকেই তার ২২ বছরের রাজত্বের শুরু।
তিনি প্রথমেই তার ছেলে খসরু মিরজার বিদ্রোহের মুখে পড়েন। খসরু কে তিনি অন্ধ করে দেন ও তাকে আর্থিক সাহায্য করায় পঞ্চম শিখ গুরু অর্জন দেব কে পাঁচ দিন ধরে অত্যাচার করা হয়। পরে তিনি নদীতে স্নান করার সময় উধাও হয়ে যান।
জাহাঙ্গীর তার ছোট ছেলে খুরাম (পরবর্তী কালে শাহ জাহানকে উত্তরাধিকার এর বিষয় সমর্থন করতেন।) উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে শাহ জাহান ১৬২২ সালে তার বড় ভাই খসরু কে খুন করেন।
মেয়ার এর রানা ও শাহ জাহান এর মধ্যে একটি সফল চুক্তি হয়। শাহ জাহান বঙ্গ ও বিহার ব্যস্ত থাকার সময়, জাহাঙ্গীর তার জেতা রাজ্য কে নিজের বলে দাবি করেন। নিজেদের মধ্যে বিবাদের সাহায্য নিয়ে ফার্সি ভাষা রা কান্দাহার জয় করেন। এর ফলে মুঘল রা আফগানিস্তান ও পারস্য এর মুল্যবান বাণিজ্যিক রুট গুলি নিজেদের অধীন থেকে হারিয়ে ফেলে।
শাসনকাল

তথ্যসূত্র
- The Oxford handbook of Sikh studies। Pashaura Singh., Fenech, Louis E.। Oxford। আইএসবিএন 0199699305। ওসিএলসি 874522334।
আরো পড়ুন
- Andrea, Alfred J. (২০০৫)। The Human Record: Sources of Global History. Vol. 2: Since 1500 (Fifth সংস্করণ)। Boston: Houghton Mifflin। আইএসবিএন 0-618-37041-2। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Alvi, Sajida S. (১৯৮৯)। "Religion and State during the Reign of Mughal Emperor Jahǎngǐr (1605–27): Nonjuristical Perspectives"। Studia Islamica। 69 (69): 95–119। doi:10.2307/1596069। জেস্টোর 1596069।
- Findly, Ellison B. (১৯৮৭)। "Jahāngīr's Vow of Non-Violence"। Journal of the American Oriental Society। Journal of the American Oriental Society, Vol. 107, No. 2। 107 (2): 245–256। doi:10.2307/602833। জেস্টোর 602833।
- Lefèvre, Corinne (২০০৭)। "Recovering a Missing Voice from Mughal India: The Imperial Discourse of Jahāngīr (R. 1605–1627) in his Memoirs"। Journal of the Economic and Social History of the Orient। 50 (4): 452–489। doi:10.1163/156852007783245034।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে জাহাঙ্গীর সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Jehangir and Shah Jehan
- The World Conqueror: Jahangir
- Tūzuk-i-Jahangīrī Or Memoirs of Jahāngīr
- Jains and the Mughals
পূর্বসূরী: সম্রাট আকবর |
মুঘল সম্রাট ১৬০৫–১৬২৬ |
উত্তরসূরী: সম্রাট শাহজাহান |