মুঘল চিত্রশিল্প

মুঘল চিত্রশিল্প দক্ষিণ এশিয়ার এক ধরনের চিত্রকর্ম, যা মূলত ক্ষুদ্র চিত্রশিল্প এবং যাকে বই হিসাবে অথবা ব্যক্তিগত অ্যালবাম হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে৷ চিত্রশিল্পটিতে পারস্যের চিত্রশিল্পের প্রভাব রয়েছে এবং বৃহত্তর অর্থে এ উভয় চিত্রশিল্পই (চীনা চিত্রশিল্প) দ্বারা প্রভাবিত৷ এর সাথে যোগ হয়েছে হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চিত্রশিল্পের মিশ্রণ৷ তবে এ চিত্রশিল্পটি ১৬ শতক হতে ১৮ শতকে ভারত শাসনকারী মুঘলদের শাসন আমলে চর্চাকৃত চিত্রশিল্পকেই বুঝায়৷ মুঘল চিত্রশিল্প হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করে৷ শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যেও এ চিত্রশিল্পের চর্চা লক্ষ্য করা যায়৷

উৎপত্তি

মুঘল চিত্রশিল্প পারস্য এবং ভারতের চিত্রশিল্পের এক ধরনের মিশ্রণ৷ পূর্ব হতেই দিল্লির তুর্কী-আফগান সুলতানাত এর মুসলিমদের মধ্যে ক্ষুদ্র চিত্রশিল্পের চর্চা ছিলো, যা মুঘল সম্প্রদায়ের মাধ্যমে অধিগৃহিত হয়৷ মুঘলদের মতোই মধ্য এশিয়ার অন্যান্য বিজয়ী শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে বাইরের সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন৷ যদিও প্রথমদিককার মুঘল শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে প্রথমটি পাওয়া গেছে ভারতের মানডু শহরে৷ এর পূর্বের চিত্রশিল্পগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই হারিয়ে গেছে৷ অবশ্য মুঘলদের দ্বারা ভারত অধিকৃত হওয়ার পর পারস্যের চিত্রশিল্পের ধারার কিছু পরিবর্তন করা হয়৷ যেমন পারস্যের চিত্রশিল্পগুলোতে প্রাণী এবং বৃক্ষের ছবিগুলো যেভাবে দূর অবস্থানে ফুটিয়ে তোলা হত, মুঘল চিত্রশিল্পে এক্ষেত্রে প্রাণী ও গাছপালার ছবিগুলো আরও স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের সময়কার কোনও চিত্রকর্ম অবশ্য পরবর্তীতে পাওয়া সম্ভব হয়নি৷ তার লেখা বাবরনামা হতেও এ সম্পর্কে জানা যায় না৷ সম্রাট আকবরের সময়ে অবশ্য বেশ কিছু চিত্রকর্ম প্রস্তুত করা হয়৷ কিছু কিছু শিল্পকর্মের উপর তার সীলও পাওয়া যায়৷ মুঘলরা যেহেতু সুদূর তিমুর হতে ভারতে এসেছিলো, তাই তাদের উপর স্পষ্টতই পারস্যের সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়৷ আর এ কারণেই এ সকল বিজেতারা পারসিক সাহিত্য এবং শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন৷

মুঘল শাসন আমলে রাজ্যের শিল্পশালাগুলোতে চিত্রকর্ম তৈরি করা হত৷ ভালো ভালো আর্টিস্ট বা চিত্রশিল্পীদের রাজ দরবারে সমাদর করা হত৷ অনেকসময় একটি চিত্রকর্মের জন্য অনেক শিল্পীরা একত্রিতভাবে কাজ করতেন৷[1]

হুমায়ুনের সময়(১৫৩০-৪০ এবং ১৫৫৫-৫৬)

মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ুন পারসিক শিল্পের অনুরাগী ছিলেন এবং তিনি তাব্রিজ হতে দুজন পারসিক আর্টিস্ট আবদ আল সামাদ এবং মীর সাঈদ আলীকে নিয়ে আসেন৷ তার ভাই কামরান মির্জা কাবুলে একটি কর্মশালা পরিচালনা করছিলেন৷ ধারণা করা হয় যে সম্রাট হুমায়ুন কর্মশালাটিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ এ সময়কার উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম হলো খামসা অব নিজামি৷ কাজটিতে বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর চিত্রনৈপূন্যের অবদার স্পষ্ট প্রতীয়মান৷

আকবরের সময়(১৫৫৬-১৬০৫)

মুঘল চিত্রশিল্পের চর্চা ও সর্বোচ্চ বিকাশ সম্ভবত সম্রাট হুমায়নের উত্তরাধিকারী সম্রাট আকবরের সময়কালে ঘটে৷ এ মহান সম্রাট শিল্প ও সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন৷ জানা যায় যে তরুণ বয়সে তিনি চিত্রশিল্পের উপর পড়াশোনাও করেন৷ এ সময়কার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হল- তোতানামা, হামজানামা, গুলিস্তান, দারাবনামা ইত্যাদি৷[৮] ১৫৭০ সাল হতে ১৫৮৫ সাল অবধি সম্রাট আকবর একশরও অধিক চিত্রকরকে মুঘল চিত্রশিল্পের কাজে নিযুক্ত করেন৷

জাহাঙ্গীরের সময়(১৬০৫-২৫)

সম্রাট জাহাঙ্গীর শিল্প ও সংস্কৃতির অনুরাগী এবং পৃষ্টপোষক ছিলেন এবং তার সময়ে মুঘল চিত্রশিল্পের উৎকর্ষ সাধিত হয়৷ তিনি ইউরোপীয় চিত্রকর্মের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং তার শাসনামলে মুঘল চিত্রশিল্প একটি নতুন মাত্রা লাভ করে৷ তার সময়ে রচিত জাহাঙ্গীরনামায় অনেক চিত্রকর্ম পরিলক্ষিত হয়৷

শাহজাহানের সময়(১৬২৮-৫৯)

সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে মুঘল চিত্রশিল্প যদিও কিছুটা অগ্রগতি লাভ করে, তথাপি এ সময়ে মুঘল চিত্রশিল্প ধীরে ধীরে কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছিলো৷

বর্তমান সময়ের মুঘল চিত্রশিল্প

মুঘল চিত্রশিল্পের চর্চা বর্তমান সময়েও পরিলক্ষিত হয়৷ বর্তমান সময়ের অনেক প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী দ্বারা মুঘল চিত্রশিল্পের বেশ কিছু অনন্য চিত্রকর্ম প্রস্তুত হয়েছে৷

উল্লেখ

  1. Sarafan, Greg (6 November 2011)। "Artistic Stylistic Transmission in the Royal Mughal Atelier"। Sensible Reason। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.