লাহোর

লাহোর (পাঞ্জাবী: لہور, উর্দু: لاہور) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী ও প্রধান শহর। এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয়-সর্বাধিক জনবহুল এবং সবচেয়ে সম্পদশালী শহর। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী এর আনুমানিক জিডিপি ছিল $৫৮.১৪ বিলিয়ন (পিপিপি)। লাহোর হল পাঞ্জাব অঞ্চলের বৃহত্তম শহর এবং ঐতিহাসিক ভাবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং পাকিস্তানের অন্যতম সামাজিকভাবে উদার, প্রগতিশীল ও বিশ্বজনীন শহর।

লাহোর
لہور
لاہور
মেগাসিটি / মেট্রোপলিটন শহর
Clockwise from top: Kim's Gun, Badshahi Mosque, Samadhi of Ranjit Singh, Lahore Museum, Shalimar Gardens, Lahore Fort and Minar-e-Pakistan

Emblem
ডাকনাম: প্রাচ্যের প্যারিস, পাকিস্তানের হৃদয়[1], পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী[2], মুঘলদের উদ্যান ও দাতা আলি হুজভিরির শহর (দাতা কি নগরি)[3].
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মধ্যে লাহোর (লাল রঙে) এবং (ইনসেটে) পাঞ্জাবের মধ্যে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩১°৩২′৫৯″ উত্তর ৭৪°২০′৩৭″ পূর্ব
দেশ পাকিস্তান
প্রদেশপাঞ্জাব
সিটি জেলা সরকার১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮
সিটি কাউন্সিললাহোর
শহর
সরকার
  ধরনসিটি জেলা
  জেলা প্রশাসকক্যাপ্টেন (আর) মুহাম্মদ উসমান ইউনিস
  জেলা সমন্বয় অফিসারক্যাপ্টেন (আর) মুহাম্মদ উসমান ইউনিস
  রাজধানী শহর পুলিশ প্রধানক্যাপ্টেন (আর) আমিন ভেনাস
আয়তন[4]
  মোট১৭২ কিমি (৬৮৪ বর্গমাইল)
উচ্চতা২১৭ মিটার (৭১২ ফুট)
জনসংখ্যা (২০০৯)
  মোট১,০০,০০,০০০
 লাহোর শহর এবং লাহোর সেনানিবাসের জনসংখ্যা সংযুক্ত
এলাকা কোড0423
ওয়েবসাইটhttp://www.lahore.gov.pk
লাহোর সেনানিবাস আইননুযায়ী মিলিটারি-শাসিত পত্তনি থেকে আলাদা

লাহোরের বুৎপত্তি অতিপ্রাচীনকাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। শহরটি হিন্দু শাহী, গজনভী, ঘুরি এবং মধ্যযুগে দিল্লি সুলতানি শাসন সহ ইতিহাসের পুরো ইতিহাস জুড়ে অসংখ্য সাম্রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। লাহোর ১৬শ শতাব্দী থেকে ১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে এর জাঁকজমকের উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল এবং বেশ কয়েক বছর ধরে এর রাজধানী শহর হিসেবে কাজ করেছে।

লাহোর পাকিস্তানের উপর একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলেছে। লাহোর পাকিস্তানের প্রকাশনা শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র এবং পাকিস্তানের সাহিত্যের চর্চার সর্বাধিক কেন্দ্র রয়েছে। লাহোর পাকিস্তানের শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র, এ শহরে পাকিস্তানের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ও স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় অবিস্থিত। পাকিস্তানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ললিউড লাহোরে অবস্থিত এবং এটি কাওয়ালি সংগীতের একটি প্রধান কেন্দ্র। ওলীদ সিটি, বিখ্যাত বাদশাহী ও উজির খান মসজিদ এবং শিখ মন্দির সহ পাকিস্তানের পর্যটন শিল্পের বড় ও বেশিরভাগ আকর্ষণগুলো এই শহরে রয়েছে।[5] এছাড়াও লাহোর দুর্গ এবং শালিমার বাগান উদ্যান উভয় ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থানের অংশ।[5]

ইতিহাস

লাহোর শহরটি দক্ষিণ এশিয়ামধ্য এশিয়াকে সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত। ফলে দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে বহু রাজ্য ও রাজবংশের রাজধানী হিসেবে শহরটি ব্যবহৃত হয়েছে। হিন্দু পুরাণমতে, রামের সন্তান লাভা বা লোহ এই শহরের পত্তন করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে চীনা পুরোহিত চুয়ান জাং ভারতে তীর্থযাত্রায় যাওয়ার পথে লাহোর দিয়ে যান এবং তিনি এখানকার বিবরণ দিয়ে গেছেন। ১১শ শতকে মুসলিম গজনভিরা ব্রাহ্মণদের হাত থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেন। তাঁরা ১১৫২ সালে এখানে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে উত্তরের ঘোরি সুলতানরা শহরটি দখল করেন[6] এবং ত্রয়োদশ শতকের শুরুতেই শহরটিতে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম শাসকের অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। এরপর পরে কয়েক শতাব্দী যাবৎ মঙ্গোল হানাদারেরা লাহোরের উপর উপর্যুপরি আক্রমণ চালায়, কিন্তু লাহোর তা সত্ত্বেও টিকে থাকে এবং ১৫২৪ সালে এটিকে ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী বানানো হয়। মুঘলদের পতনের পর ১৭৬৭ সালে লাহোর একটি শিখ রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। শিখরা পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হলে ১৮৪৯ সাল থেকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ভারতের একটি শহর ছিল।

ভূগোল

লাহোর ৩১°১৫′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৩১°৪৫′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৪°০১′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৭৪°৩৯′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। লাহোর উত্তর ও পশ্চিমে শায়খুপুর জেলা, পূর্বে ওয়াগাহ এবং দক্ষিণে কাসুর জেলা দ্বারা বেষ্টিত। রাভি নদী লাহোরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লাহোর শহর মোট আয়তন ৪০৪ বর্গকিলোমিটার (১৫৬ বর্গ মাইল)।

জনসংখ্যা

২০১৭ সালের আদমশুমারীর ফলাফল অনুযায়ী লাহোরের মোট জনসংখ্যা ১১,১২৬,২৮৫ জন, যা ১৯৯৯ সালের পর থেকে বার্ষিক ৪.০৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। লিঙ্গ অনুপাত অনুসারে শহরের মোট জনসংখ্যার ৫২.৩৫% পুরুষ, এবং ৪৭.৬৪% মহিলা এবং হিজড়া জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার মাত্র ০.০১%। লাহোর একটি যুবক শহরে পরিণত হয়েছে, যার ৪০% এর বেশি বাসিন্দার বয়স ১৫ বছরের কম। শহরের গড় আয়ু ৬০ বছরেরও কম।[7]

লাহোর মুসলিম সংখ্যাগুরু শহর এখানকার জনসংখ্যার ৯৭% মুসলামান এবং সংখ্যালঘু জনসংখ্যার মধ্যে ২% খ্রিস্টান এবং শিখ ও হিন্দু মিলিত জনসংখ্যা ১% ।[8] এখানে একটি ছোট কিন্তু দীর্ঘকালীন জরাস্ট্রুবাদ সম্প্রদায়ও রয়েছে। অধিকন্তু, লাহোরে শিখ ধর্মের কয়েকটি পবিত্র স্থান রয়েছে এবং এটি একটি প্রধান শিখ তীর্থস্থান।[9][10]

১৯৯৮ সালের আদম শুমারি অনুসারে লাহোরের ৯৯% জনসংখ্যা ছিল মুসলমান, যা ১৯৪১ সালের ৬০% এর চেয়ে একটু বেশি ছিল। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে খ্রিস্টান (মোট জনসংখ্যার ৫.৮০%, যদিও তারা পল্লী জনসংখ্যার প্রায় ৯.০%) এবং কিছু সংখ্যক আহমদিয়া, বাহ, হিন্দু, পার্সী এবং শিখ ছিল। লাহোরের প্রথম গির্জাটি ১৬শ শতাব্দীর শেষদিকে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল, যা ১৬৩২ সালে শাহ জাহান সমান করে দিয়েছিল।[11]

শিল্প

লাহোর শহরে তেমন কলকারখানা না থাকলেও এটি চারপাশে অবস্থিত ঘন শিল্প-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির একটি বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে থাকে। এখানে টেক্সটাইল, ধাতব দ্রব্য, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, কাঁচের দ্রব্য এবং চামড়া ও রাবারের দ্রব্যের শিল্পকারখানা আছে।

ঐতিহাসিক পার্ক এবং বাগান

  1. শালিমার উদ্যান, লাহোর
  2. বাগ-ই-জিন্নাহ
  3. ইকবাল পার্ক (পূর্বে মিন্টো পার্ক)
  4. জিলানি পার্ক (পূর্বে হিসাবে রেসকোর্স পার্ক পরিচিত)
  5. গুলশান-ই-ইকবাল পার্ক

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

লাহোর শহর পাকিস্তানের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র। এখানে ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। শহরে একটি পারমাণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে।

ঐতিহ্য

লাহোরের একটি খোলা আকাশের নিচে খাবারের দোকান

লাহোরে স্থাপত্যকলার দিক থেকে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ভবন আছে। এগুলির অনেকগুলি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল;ঐ আমলে শহরটির ব্যাপক প্রসিদ্ধি ঘটে। এদের মধ্যে আছে সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ ও সমাধি, লাহোর দুর্গ, এবং ওয়াজির খান মসজিদ, যেখানে অন্তর্লিখিত মৃতশিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবন ও সৌধের মধ্যে আছে শালিমার বাগান, লাহোর জাদুঘর, এবং সোনালী ও মুক্তার মসজিদসমূহ।

স্থিরচিত্র

তথ্যসূত্র

  1. "About Lahore - The Heart of Pakistan"। ২ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০
  2. Pakistan's Cultural Capital
  3. http://www.dawn.com/weekly/dmag/archive/030330/dmag13.htm
  4. "Punjab Portal"। Government of Punjab। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১১
  5. Planet, Lonely। "Lahore, Pakistan – Lonely Planet"Lonely Planet। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৬
  6. "History of Lahore City"। ১৪ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০০৯
  7. "Lahore Population 2018"। ১৮ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৮
  8. "Largest Christian Community of Pakistan resides in Lahore District"। christiansinpakistan.com। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  9. "Sikh pilgrims from India arrive in Lahore"Dawn। Pakistan। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  10. "Lahore – SikhiWikhi, free Sikh encyclopedia"। sikhiwikhi.org। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  11. Chaudhry, Nazir Ahmad (২০০০)। Lahore। Sang-e-Meel Publications। আইএসবিএন 969351047X।
  1. "Pakistan: Largest cities and towns and statistics of their population"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০২-১০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.