চিত্রল
চিত্রল (উর্দু: چترال) পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের একটি শহর। চিত্রল নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত শহরটি পুর্বে চিত্রল রাজ্যের রাজধানী ছিল। স্থানটি ৩৫°৫১' উত্তর অক্ষাংশে এবং ৭১°৫০' পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থান করছে। এর উত্তর ও পশ্চিমে আফগানিস্থান এবং পূর্বে কাশ্মীরের গিলগিট এজেন্সি অবস্থিত। এখানে তিরিচ নদী প্রায় ৯৬ কিলোমিটার অতিক্রম করে তুরিখো নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এদের মিলিত প্রবাহ আরও ৬৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে মাসটুজ শহরের কাছে খো নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। চিত্রল শহরটি চিত্রল জেলার অন্তর্গত যার আয়তন ১৪৮৫০ বর্গ কিমি; এর মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ বনভূমি ও গোচরভূমি, ৭৬ ভাগ হিমবাহ আর পার্বত্য অঞ্চল এবং মাত্র ৪ ভাগ আবাদি ও ফল চাষের জমি।[1] চিত্রল শহরটি চিত্রল জেলার রাজধানী ও প্রধান শহর। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ শহর অপরিমিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ হওয়ায় পাকিস্তানের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে। হিন্দুকুশ পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গ তিরিচমিরের পাদদেশে চিত্রলের অবস্থান।
ইতিহাস
১৮৯৫ সাল পর্যন্ত সমগ্র চিত্রল শহরটিতে স্বাধীন রাজতন্ত্র বিরাজ করতো। কিন্তু ইংরেজ বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলকমিত্রতা নীতি দ্বারা কালক্রমে চিত্রল ইংরেজের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক চিত্রল অধিকার করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে এখানে চীনা আক্রমণ ঘটে। সামরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে উত্তর-পশ্চিমের গিরিপথগুলি আয়ত্তে রাখতে ও নিরাপত্তার কারণে এখানে ব্রিটিশ গিলগিট এজেন্সি গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর চিত্রল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। চিত্রলের দাস-ব্যবসা ইতিহাস প্রসিদ্ধ। এরাজ্যে বা তার নিকটবর্তী অঞ্চলে খ্রিস্টীয় নবম শতকে বৌদ্ধ ধর্মের বহুল প্রভাব ছিলো ; মাসটুজ শহরের কাছে প্রাপ্ত শিলালিপি হতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
শিলাময় মৃত্রিকা

চিত্রলের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কালে গঠিত বহুবিশিষ্ট শিলাময় ভূমি দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে প্রাচীন কোয়ার্টজাইট, লোহিত বেলেপাথর ও কংগ্লোমারেট স্তরের উপর অবস্থিত চুনাপাথরের গভীর স্তর লক্ষ্য করা যায়। চিত্রলের নিকট পার্বত্য অঞ্চলে একটি বিশাল চ্যুতির সৃষ্টি হওয়ায় এখানে শিলাস্তরে নানা রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। চিত্রল নদীর সমভূমি অঞ্চলে স্থানে স্থানে প্রবালও দেখতে পাওয়া যায়।[2]
উৎপাদিত দ্রব্য
এখানকার প্রধান কৃষিজ দ্রব্যগুলির মধ্যে গম, যব, ভুট্টা আর ধান বিখ্যাত। কার্পাস তুলা থেকে প্রস্তুত এখানকার কার্পেট সুবিখ্যাত। খনিজদ্রব্যের মধ্যে লোহা ও তামা প্রধান। অধিবাসীগণের অধিকাংশই খনির কাজে যুক্ত। চিত্রলে প্রস্তুত তরবারির বাঁট বিখ্যাত এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এর চাহিদাও প্রচুর।[2]
তথ্যসূত্র
- "Geography of Chitral". Chitralnews.com. Retrieved 2015-11-06
- The Imperial Gazetteer of India, vol. x. Oxford, 1908; O. H. K. Spate, India and Pakistan, London, 1961.