ঘাটাইল উপজেলা

ঘাটাইল উপজেলা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি ঢাকা বিভাগের অধীন টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে অবস্থিত। ঘাটাইল উপজেলার উত্তরে গোপালপুরমধুপুর উপজেলা, দক্ষিণে কালিহাতিসখিপুর উপজেলা, পূর্বে ফুলবাড়িয়াভালুকা উপজেলা, পশ্চিমে ভুঞাপুরগোপালপুর উপজেলা। ঘাটাইলের উপর দিয়ে বংশী, ঝিনাইলৌহজং নদী নামে তিনটি নদী প্রবাহিত হয়েছে।

ঘাটাইল
উপজেলা
ঘাটাইল
বাংলাদেশে ঘাটাইল উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°২৮′ উত্তর ৮৯°৫৮′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাটাঙ্গাইল জেলা
আয়তন
  মোট৪৬৯.০০ কিমি (১৮১.০৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৪,৩৪,৩০০
  জনঘনত্ব৯৩০/কিমি (২৪০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৪৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৯৩ ২৮
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

এ উপজেলার অবস্থান টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে বিস্তৃত। উপজেলার অবস্থান ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৩´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং আয়তন: ৪৫১.৭১ বর্গকিলোমিটার। মধুপুর কর্দম নামক অতিমাত্রায় বিচূর্ণিত ও জারিত লালচে বাদামি অবক্ষেপ দ্বারা গঠিত ঘাটাইল অঞ্চলটি ০.৯৭ থেকে ০.৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়েছে। এটি একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। বর্তমানে এখানে গার্মেন্টস কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী ঘাটাইল উপজেলার গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৪৪ ভাগ (পুরুষ ৪৭.৬%, মহিলা-৪০.৬%)। টাঙ্গাইল জেলার দুটি সেনানিবাসের মধ্যে শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস এ উপজেলায় অবস্থিত।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৭২ সালে ঘাটাইলে গোপালপুর থানার অধীন একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে ঘাটাইল থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঘাটাইল শহরের ১১.০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘাটাইলের সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৩। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।

পটভূমি

সাগরদিঘী ঘাটাইলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
আরও দেখুন: টাঙ্গাইল জেলা

ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি আসামের কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মধ্যযুগে ১৪শ শতাব্দীর শেষভাবে অঞ্চলটি খেন্ রাজবংশের অন্তর্গত ছিল।[2] পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কামতা রাজ্য জয় করার পর অঞ্চলটি মুসলমানদের দখলে চলে আসে। হোসেকামতা রাজ্যন শাহর পুত্র নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ পরবর্তীতে এ অঞ্চলটি শাসন করেন এবং সে সময় এটি নাসিরাবাদের (বর্তমান ময়মনসিংহ) অন্তর্ভূক্ত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে নাসিরাবাদের নাম পরিবর্তন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ রাখা হয়। ১৮৬৯ সালের ১লা ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলেকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়[3] এবং ঘাটাইলকে টাঙ্গাইল জেলায় অন্তর্ভূক্ত হয়।

প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলটি রাজা ও জমিদাররা শসন করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি প্রথমে সরাসরি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীন, এরপর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অধীন থাকলেও মূলত স্থানীয় জমিদারগণ শাসন করতেন। ১৮৭২ সালে ঘাটাইলে গোপালপুর থানার অধীন একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়।[4] তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকার ১৯০৬ সালের ১৬ জুন ঘাটাইলকে একটি পূর্ণঙ্গ থানা ঘোষণা করে গেজট প্রকাশ করে।[4] ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। এ আইন অনুসারে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর ঘাটাইল স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ হয়। টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ঘাটাইল আয়তনে সবচেয়ে বড় (৪৫০.৭১ বর্গ কিলোমিটার) যা জেলার মোট আয়তনের ১৩.৩৫% এলাকা জুড়ে অবস্থিত।[5]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলাকাটি দখল করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সেসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে আবদুল কাদের সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীখন্দকার আবদুল বাতেন নেতৃত্বাধীন বাতেন বাহিনী। যুদ্ধকালীন সময়ে ঘাটাইলে মোট ৯টি বড় সংঘর্ষ ও ৩১টি ছোট ছোট সংঘর্ষ হয়।[6] এসব যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ৪৪ জন সদস্য নিহত হন। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, কাদেরিয়া বাহিনীর অধীন হাবিবুর রহমানের নেতৃত্ব উপজেলার মাটিকান্দি নামক স্থানে পাকিস্তান নৌবাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদ বোঝাই একটি জাহাজ আটক করে। এই যুদ্ধে ৩০জন পাকসেনা নিহত হন।[5] ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ঘাটাইলকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে ঘাটাইল থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।[4]

ভূগোল

ঘাটাইলের পাহাড়ি অঞ্চল।

ঘাটাইল উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান অবস্থান ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৩´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এটি টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মহাসড়কের দুপাশে এবং টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ৪৫১.৭১ বর্গ কিলোমিটার। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। পুরো উপজেলাটি বনাঞ্চল বেষ্টিত পাহাড়ি জনপদ নিয়ে গঠিত। ভৌগোলিকভাবে ঘাটাইলের মাটি লাল। ঘাটাইল উপজেলার কেন্দ্র থেকে দক্ষিণে টাঙ্গাইল, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ এবং উত্তরে ময়মনসিংহ জেলা সদর অবস্থিত। টাঙ্গাইল জেলা সদর ঘাটাইলের দূরুত্ব ৩০ কিলোমিটার।। এর উত্তরে গোপালপুরমধুপুর উপজেলা, দক্ষিণে কালিহাতিসখিপুর উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়াভালুকা উপজেলা, পশ্চিমে ভুঞাপুরগোপালপুর উপজেলা অবস্থিত।[6]

কেদারনাথ মজুমদার লিখিত ময়মনসিংহের বিবরণ গ্রন্থ অনুসারে মধুপুর গড়ের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন লৌহ, কয়লাতেল মজুদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। ১৮৭৭ সালে দীননাথ সেন মধুপুর গড়ের মাটি পরীক্ষা করে তিনিও লৌহ খনি থাকার কথা বলেন। পরবর্তীতে সরকারিভাবে মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলার এ বনাঞ্চলে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়।

ঘাটাইলের উপর দিয়ে বংশী, ঝিনাইলৌহজং নদী নামে তিনটি নদী প্রবাহিত হয়েছে।[6] বংশী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বানারঝিনাই নদীর শাখার সাথে মিলিত হয়েছে। পরবর্তীতে সেটি কালিয়াকৈরে দুই ভাগ হয়ে একটি শাখা তুরাগ নামে মিরপুর দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। অন্য শাখা সাভার হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়েছে।[7] টাঙ্গাইল জেলার মাঝারি নদীসমূহের মধ্যে বংশী সবচেয়ে বড়। উৎপত্তিস্থল হতে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্যে ১০০ মাইল।[8]

ভূ-প্রকৃতি

আরও দেখুন: মধুপুর কর্দম

ভূতাত্ত্বিকভাবে ঘাটাইল উপজেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলের ভূমি মধুপুর কর্দম নামক অতিমাত্রায় বিচূর্ণিত ও জারিত লালচে বাদামি অবক্ষেপ বা আদিম প্রস্তর দ্বারা গঠিত।[9] এই অবক্ষেপটি নতুন প্লাইসটোসিন যুগে জলবায়ুগত কারণে সৃষ্ট ও এটি বিভক্ত কয়েকটি প্লাইসটোসিন সোপানের সমন্বয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লাইসটোসিন চত্বর। একই কর্দমের মধ্যে মধুপুর গড় অঞ্চলসহ লালমাই পাহাড়বরেন্দ্র ভূমি সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতী সভ্যতাও এই অবক্ষেপের স্তরসমষ্টি বেষ্টিত অঞ্চলের অন্তর্গত।[9] এ অঞ্চলের ভূমি সঞ্চয়ন সংলগ্ন প্লাবনভূমি থেকে সামান্য উঁচু যা হ্যালোইসাইট ও ইলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট। এগুলো মিলে উত্তর-দক্ষিণে এটি প্রলম্বিত ভূভাগ গঠন করেছে যা স্মারক প্রত্নমৃত্তিকার অন্তর্গত। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, ০.৯৭ থেকে ০.৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এটি গঠিত হয়েছে।[9] হাওর সৃষ্টির সাথে মধুপুর কর্দমের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়।[10] উত্তর-প্লাইসটোসিন যুগে এ অঞ্চলটিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বিভিন্নভাবে ক্ষয়ের কারণে বেশকিছু প্লাইসটোসিন সোপান আলাদা হয়ে গিয়েছে। পরে, এই সোপানগুলোই একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে ও খোলা স্থানে উর্বর পলিমাটিতে পূর্ণ হয়ে প্লাবনভূমির তৈরি হয়েছে।[11]

ঘাটাইলের অধিকাংশ এলাকার মাটি লাল বর্ণের।

ঘাটাইলের উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত গেরুয়া বর্ণের টিলাভূমিটি প্রাগৈতিহাসিক যুগের স্বাক্ষ্য বহন করে। এই অংশটুকু ধলাপাড়া, রসুলপুর, সন্ধানপুর ও দেওপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। এর বিস্তিৃতি উত্তরে দেওজানা থেকে দক্ষিণে দেওপাড়া পর্যন্ত। পূর্বপ্রান্তে রাধাকৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িত গুপ্ত বৃন্দাবন এই টিলাভূমিতেই অবস্থিত। টিলাটি ক্রমশ নিচু হয়ে ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার পূবে ঝড়কা বাজারের কাছে এসে উত্তর দক্ষিণে পলল বিস্তৃত ভূমিতে মিশে গেছে। এই পলল ভূমি তুলনামূলকভাবে নবীন।

এ অঞ্চলের মাটি অ্যালুমিনা (১৯.৯৫% থেকে ২১.০৭%) ও লৌহ অক্সাইডে (৮.১২% থেকে ৯.৮২%) সমৃদ্ধ।[12] এছাড়াও এতে যৌগ পদার্থ, দ্রবণীয় লবণ ও উদ্ভিজ্জ পদার্থ রয়েছে।[12] এর প্রসারণ ক্ষমতা হলোসিন যুগের মাটির চেয়ে সামান্য বেশি।[12] ঘাটাইলে মূলত তিন ধরনের মৃত্তিকা বেশি দেখা যায়: গাঢ়-লাল বাদামি রঙের সোপান-মৃত্তিকা, অম্লীয় অববাহিকা এঁটেল মাটি ও অগভীর লাল-বাদামি সোপান-মৃত্তিকা।[13]

প্রশাসন

শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জ, ঝরকা।

ঘাটাইল উপজেলা মোট ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা, ৪২৭টি গ্রাম ও ৩০৬টি মৌজায় বিভিক্ত। ইউনিয়নগুলো হলো, দেউলাবাড়ী, ঘাটাইল, জামুরিয়া, দিগড়, দিঘলকান্দি, আনেহলা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, সন্ধানপুর, লোকেরপাড়া, রসুলপুর, সংগ্রামপুর, সাগরদিঘি এবং লক্ষিন্দর[14] ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৬১ সালে এখানে থানা বা পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১০৮৩ সালে ঘাটাইলকে উপজেলা করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের আবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ধলাপাড়া, রসুলপুর ও সন্ধানপুর ইউনিয়নকে ভেঙে সংগ্রামপুর, সাগরদিঘি ও লক্ষিন্দর নামে আরো তিনটি নতুন ইউনিয়ন তৈরির গেজেট প্রকাশ করে।[15] ১৯৯৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঘাটাইল শহরের ১১.০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করে।[16] পৌরসভাটি ১১টি গ্রাম ও ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। পৌরসভাটির বর্তমান মেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শহিদুজ্জামান খান।[17]

টাঙ্গাইল জেলায় শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসযমুনা সেনানিবাস নামে দুটি সেনানিবাস রয়েছে যার মধ্যে শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস ঘাটাইল উপজেলার ঝরকা নামক স্থানে অবস্থিত। এ সেনানিবাসে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর অবস্থিত। এর অধীনে রয়েছে ময়মনসিংহ সেনানিবাসের ৭৭ পদাতিক ব্রিগেড ও যমুনা সেনানিবাসের ৯৮ মিশ্র ব্রিগেড। এছাড়া ১৯ গোলন্দাজ ব্রিগেড, ৩০৯ পদাতিক ব্রিগেড ও ৭ হর্স সাজোয়া রেজিমেন্ট ঘাটাইল এরিয়া কমান্ডের আওতাভূক্ত।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘাটাইলের সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৩। এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই ঘাটাইলের সংসদীয় আসনটি তৈরি করা হয়। প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান খান শাহজাহান। শামসুর রহমান ১৯৭১ সালে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত) ২ নং আঞ্চলিক প্রশাসন (টাঙ্গাইলময়মনসিংহ আঞ্চলিক প্রশাসন) পরিচালনার দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে জয়ী হয়ে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[18]

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শওকত আলী ভূঁইয়া, ১৯৮৬ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান খান শাহজাহান১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সাইদুর রহমান খান নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, জুন ১৯৯৬২০০১ সালের নির্বাচনে টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) লুৎফর রহমান খান আজাদ[19] আজাদ খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায় প্রথমে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[20]

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মতিউর রহমান এ আসন থেকে নির্বাচিত হন কিন্তু ২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর এখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমানুর রহমান খান রানা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুরের পিতা আতাউর রহমান খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[19]

জনসংখ্যা উপাত্ত

ঘাটাইলের ধর্ম বিশ্বাস (২০১১)

  মুসলিম (৯৫.৪%)
  হিন্দু (৩.৪%)
  অন্যান্য (১.২%)

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪,৩৪,৩০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,১৩,৫২৬ জন এবং মহিলা ২,২০,৮০৪ জন। মোট জনসংখ্যার ৯৫.৪% মুসলিম, ৩.৪% হিন্দু এবং ১.২% অন্যান্য ধর্মালম্বী। উপজেলায় মোট ভোটার ২,৮৬,২০৭ জন। পুরুষ ভোটার ১,৪১,৬২৪ এবং মহিলা ভোটার ১,৪৪,৫৮৩ জন। উপজেলায় মোট ১,০৪,০৩০ টি পরিবার রয়েছে।

অর্থনীতি

নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ শিকার করছে।

ঘাটাইল মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ অঞ্চলের ৬৪.৭৫% জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি।[21] প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, আখ, সরিষা, ডাল, আদা, হলুদ, বাদাম, শাকসবজি। পূর্বে এ অঞ্চলে রসুন, তিল, তিসি ও গমের আবাদ করা হত। এছাড়াও এখানে কলা, কাঁঠাল, আনারস, আম, তরমুজ, পেঁপে এবং জাম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। ২০০১ সালের ভূমিজরিপ অনুসারে উপজেলার ৬৮.৩৪% পরিবার কৃষিজমির মালিক।[21] উপজেলায় মোট ৩১৫০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে।[22]

কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাইরে মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, আসবাবপত্রের কারখানা, কুটিরশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প ও ইটভাটাসহ প্রভৃতি এ উপজেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। আনারস, পাট, তরমুজ, কলা, ধান ও তেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্র অর্জন করে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে ঘাটাইলে মাছ, কাঠ, রেশম, মোম, মধু সংগ্রহ করা হয়।[21] ঘাটাইলের পাকুটিয়া বাজার থেকে পশুর চামড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়।[23]

সাহিত্য ও সংস্কৃতি

আদিকাল থেকেই এ অঞ্চলে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। ঘাটাইল উপজেলার প্রধান ভাষা বাংলা। ঐতিহাসিক কেদারনাথ মজুমদার উল্লেখ করেন, দার্শনিক ও চৈতন্য ভক্ত মধ্বাচার্য এ উপজেলার গুপ্ত বৃন্দাবনে কিছুদিন অবস্থান করে বৈষ্ণবকাব্য চণ্ডীমঙ্গল রচনা করেন।[24] তবে, ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্য বিশারদ সুকুমার সেন এই মতের বিরোধীতা করেছেন। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য মনসামঙ্গলের ৬২ জন রচয়িতার মধ্যে কানাহরি দত্ত, নারায়ণদেব, দ্বিজবংশী দাসসহ বেশ কয়েকজন কবি এ অঞ্চলের বেহুলা ও লক্ষীন্দর গ্রামের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন মনসামঙ্গলে তুলে ধরেছেন বলে স্থানীয়রা মনে করে থাকেন।[24] সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, মনে করা হয় পদ্মপুরাণের বাংলা একটি সংস্করণের কবি ছিলেন পূর্নচন্দ্র মিত্র যিনি ঘাটাইলের গলগন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[24]

এছাড়াও ধর্মমঙ্গল কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে বয়ড়া গ্রামের রম্নপরাম নামে একজন কবি ছিলেন বলে জানা যায়।[24] ঘাটাইল থেকে বেশ কিছু প্রাচীন পুঁথি উদ্ধার করা হয় যার মধ্যে বীরসিংহ গ্রামের বরকত সরকারের ‘ইমাম সাগরের পুঁথি’ ও জহির উদ্দিনের কিছু পুঁথি উল্লেখযোগ্য।[24] বাংলাদেশের অন্য অনেক অঞ্চলের মত বিয়ের অনুষ্ঠানে ডুলি এবং পালকির প্রচলন ছিল।

ঘাটাইলের আধুনিক কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রফিক আজাদ[24] তিনি সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। নাট্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত মামুনুর রশীদ ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শহীদুজ্জামান সেলিম[24] এছাড়া, সাংবাদিকতা, সঙ্গীত, নৃত্য ও ক্রীড়ায় ঘাটাইলের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে সৎসঙ্গ সংবাদ, মাসিক ঘাটাইল, রকমারী, অন্তরঙ্গ, গতি, গাংচিল, ঝিনুক, ঘাটাইল পরিক্রমা, সময়চিত্র, সাপ্তাহিক ঘাটাইল, সোনার কাঠি, টোক, প্রদীপন ও উপত্যকা প্রভৃতি উলেস্নখ্যযোগ্য।[25] সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘাটাইলে ৩টি গ্রন্থাগার, ৬টি সিনেমা হল, ১টি অডিটরিয়াম, মহিলা সঙ্গীত একাডেমি, ১টি নাট্যদলসহ ১২টি খেলার মাঠ রয়েছে।[25]

শিক্ষা

আরও দেখুন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা

২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী ঘাটাইল উপজেলার গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৪৪ ভাগ (পুরুষ ৪৭.৬%, মহিলা-৪০.৬%)।[26] উপজেলায় ১টি মহিলা কলেজসহ মোট ৭টি কলেজ, ৩৬টি বালক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৭টি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি উচ্চ মাধ্যমিক সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফাজিল পর্যায়ে ৫টি সিনিয়র মাদ্রাসা, ২৭টি দাখিল মাদ্রাসা, ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৭টি স্বল্পব্যয়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ঘাটাইলের পাকুটিয়াতে ১৯১৫ সালের ২ জানুয়ারি পাকুটিয়া এম.ই স্কুল নামে একটি পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে পাকুটিয়া গণ উচ্চ বিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সনের ১ জানুয়ারি এটি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে।[27] বর্তমানে এটি পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ নামে পরিচিত। এ উপজেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, ঘাটাইল গন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯), জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৬৯), ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৯১),[28] ব্রাহ্মণশাসন মহিলা কলেজ ও গালা গণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪)।[29]

ঘাটাইল উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য সব শহরের মতই। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত পাঁচটি ধাপ রয়েছে: প্রাথমিক (১ থেকে ৫), নিম্ন মাধ্যমিক (৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (৯ থেকে ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়, ৩ বছর মেয়াদী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়।

মূলত বাংলা ভাষায় পাঠদান করা হয় তবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে পাঠদান ও ব্যবহৃত হয়। অনেক মুসলমান পরিবার তাদের সন্তানদের বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাতে প্রেরণ করেন। মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একই ধরনের ধাপ উত্তীর্ণ হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। ঘাটাইলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য শুধুমাত্র জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএ ও এমএ ডিগ্রি প্রদান করে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ঘাটাইল বাজারের অটো রিক্সা রাখার স্থান।

বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক এন৪ (জয়দেবপুর (এন৩, আর৩১০) - কাড্ডা (এন১০৫) - টাঙ্গাইল (এন৪০৪) - এলেঙ্গা (এন৪০৫) - মধুপুর (এন৪০১) - জামালপুর) ঘটাইল শহরকে জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে জামালপুরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এন৪ সড়কটি মধুপুর উপজেলায় গিয়ে এন৪০১ নাম্বার সড়কে মিলিত হয়েছে যেটি ময়মনসিংহকে (এন৩) ঘাটাইলের সাথে সংযুক্ত করেছে। অর্থাৎ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের কালিহাতী উপজেলার পর এবং মধুপুর উপজেলার পূর্বে ঘটাইলের অবস্থান।

ঘাটাইল থেকে ঢাকাগামী অধিকাংশ বাস মহাখালী বাস টার্মিনালে এসে থামে। ঘাটাইল জিরো পয়েন্ট থেকে টাঙ্গাইল জেলা সদরের দূরুত্ব ৩০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহের দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার, রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ১১৭ কিলোমিটার। এ উপজেলায় ১৯১ কিলোমিটার পাকারাস্তা ও ৯৫০ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা।[30] ঘাটাইল বাস স্ট্যান্ড থেকেই মূলত বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যায়। এ উপজেলায় কোন রেললাইন বা ট্রেন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই।

স্বাস্থ্য

আরও দেখুন: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হার তুলনামূলক কম হলেও এটি মূলত দারিদ্র্যতার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, এর উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘাটাইল অঞ্চলে অপুষ্টি, পরিবেশগত স্যানিটেশন সমস্যা, ডায়াবেটিস, সংক্রামক রোগ প্রভৃতি বেশি দেখা যায়। উপজেলায় একটি সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে ৬টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১১টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।[31]

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮৯.৮৭% মানুষ নলকূপ থেকে, ০.২২% পুকুরের, ১.২১% ট্যাপ থেকে ও ৮.৭০% অন্যান্য উৎস থেকে পানি পান করেন।[32] ৫১.২৬% পরিবারে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থার মধ্যে গ্রামে ৪৯.২১% ও শহরে ৮৫.৬৮% এবং ২৩.৮৯% পরিবারের স্যানিটেশন ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর।[32] এছাড়া, ২৪.৮৫% পরিবারের কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।[32]

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

ঘাটাইলের ৯৫.৪% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এছাড়া ৩.৪% হিন্দু এবং ১.২% অন্যান্য ধর্মালম্বী মানুষ বসবাস করে। এ উপজেলায় ৩৬২টি মসজিদ, ৩০টি মন্দির ও ১টি গির্জা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, সাত গম্বুজ বিশিষ্ট ধলাপাড়া জামে মসজিদ যা ১৯১৭ সালে স্থানীয় জমিদার ছমির উদ্দিন চৌধুরী উপজেলার ধলাপাড়া গ্রামে নির্মাণ করেন। গুপ্ত বৃন্দাবন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তীর প্রতিষ্ঠিত সৎসঙ্গ আন্দোলনের বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি দল রয়েছে যাদের মধ্যে একটি হল পাবনার ‘হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম’ ও ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় অবস্থিত ‘সৎসঙ্গ বাংলাদেশ’ আশ্রম। অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী পাবনায় সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৬ সালে ভারত গমন করেন ও সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভারত বিভাজনের পর পূর্ব পাকিস্তান সরকার পাবনার সৎসঙ্গের স্থানটি অধিগ্রহণ করার পর এর প্রধান কার্যালয় পাকুটিয়াতে স্থানান্তরিত হয়।[33]

উল্লেখযোগ্য স্থান

ঘাটাইলে বেশ কয়েকটি পর্যটন আকর্ষন ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,

  • গুপ্ত বৃন্দাবন: প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১২ তারিখ একটি তমাল গাছকে কেন্দ্র করে এখানে ‘বারুনি মেলা’ নামে একটি মেলা বসে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধা এই তমাল এখানে সময় কাটাতেন।[34]
  • ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ীধলাপাড়া জামে মসজিদ: ১২২৩ বঙ্গাব্দে এ জমিদার বাড়িটি ও ১৯১৭ সালে সালে সংলগ্ন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।[35]
  • সাগরদীঘি: ঘাটাইলের সাগরদিঘী ইউনিয়নে পাল বংশের সাগর নামে একজন রাজা ৩৬ একর আয়তনের একটি দিঘী খনন করেন। তার নামানুসারে পরবর্তীতে দিঘীটি সাগরদিঘী নামে পরিচিতি পায় এবং দিঘীর নামানুসারে এলাকাটিরও নামকরণ করা হয়।[25][36]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ঘাটাইল"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫
  2. (Sarkar 1992:44)
  3. D. Shamsul Haque Mia (মার্চ ১৯৯৯)। Education in Tangail। Tangail Forum। পৃষ্ঠা 26–27।
  4. "ঘাটাইল উপজেলার ইতিহাস"ঘাটাইল উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
  5. "টাঙ্গাইল জেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
  6. "ঘাটাইল উপজেলা"বাংলাপিডিয়া৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
  7. টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  8. কোম্পানী আমলে ঢাকা, জেমস টেলর, পৃঃ ৭
  9. "মধুপুর কর্দম"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯
  10. "হাওর"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  11. "প্লাইসটোসিন সোপান"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯
  12. "ইটের মাটি"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  13. "কৃষি প্রতিবেশ এলাকা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  14. ইউনিয়নসমূহ
  15. "ঘাটাইলে তিন ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে সংশয়"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  16. "মডেল পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি: যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ঘাটাইল পৌর মেয়র"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  17. "ঘাটাইল পৌর নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী বিজয়ী"বাংলানিউজ২৪.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  18. "রানার জায়গা দখলে আ'লীগের অর্ধডজন নেতা, স্বস্তিতে বিএনপি"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  19. "টাঙ্গাইল-৩"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  20. "এমপি রানার আসন দখলে নিতে আ.লীগের অর্ধডজন নেতা মাঠে"ভোরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  21. "ঘাটাইল উপজেলা"বাংলাপিডিয়া৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  22. "প্রাকৃতিক সম্পদ"ঘাটাইল উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  23. "ব্যবসা বাণিজ্য"ঘাটাইল উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  24. "ঘাটাইল উপজেলার সাহিত্য ও সাংবাদিকতা"ঘাটাইল উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  25. "ঘাটাইল উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  26. "Tangail Table C-06 : Distribution of Population aged 7 years and above by Literacy, Sex, Residence and Community" (PDF)bbs.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১১-১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২৫
  27. "পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ"পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  28. "ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ | Ghatail Cantonment Public School & College"ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  29. "ঘাটাইল উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  30. "যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভাগ"ঘাটাইল উপজেলা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৯
  31. "এক নজরে ঘাটাইল"ঘাটাইল উপজেলা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  32. "ঘাটাইল উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  33. "পাবনায় শিবগঙ্গা স্নান নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনা"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
  34. "টাঙ্গাইলের 'গুপ্ত বৃন্দাবন' হতে পারে ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র"চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  35. "ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ী ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ"টাঙ্গাইল জেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
  36. "কালের সাক্ষী পাল রাজবংশের ঘাটাইলের সাগরদিঘী"নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.