সোনারগাঁও উপজেলা

সোনারগাঁও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

সোনারগাঁও
উপজেলা
সোনারগাঁও
বাংলাদেশে সোনারগাঁও উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৯′২০″ উত্তর ৯০°৩৬′৩৯″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলানারায়ণগঞ্জ জেলা
আয়তন
  মোট১৭১.০২ কিমি (৬৬.০৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৩,৬৭,৭৬৪
  জনঘনত্ব২২০০/কিমি (৫৬০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৮০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৬৭ ০৪
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

এর অবস্থান ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ২৩.৬৫৮৩° উত্তর ৯০.৬০৮৩° পূর্ব / 23.6583; 90.6083। এই উপজেলার পশ্চিমে- শীতলক্ষা নদী, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও বন্দর উপজেলা, উত্তরে- রূপগঞ্জ উপজেলাআড়াইহাজার উপজেলা অবস্থিত এবং দক্ষিণে-পূর্বে- মেঘনা নদী।

প্রশাসনিক এলাকা

  • নির্বাচনী এলাকাঃ ২০৬ নারায়ণগঞ্জ-৩ ;
  • উপজেলার পৌরসভার সংখ্যাঃ ১টি, সোনারগাঁও পৌরসভা ;
  • ইউনিয়ন সংখ্যাঃ ১০টি (১) বৈদ্যের বাজার (২) বারদী (৩) নোয়াগাঁও (৪) জামপুর (৫) সাদিপুর (৬) কাঁচপুর (৭) সনমান্দি (৮) মোগরাপাড়া (৯) পিরোজপুর (১০) শম্ভুপুরা ।
  • মৌজাঃ ৩৫২টি

ইতিহাস

সোনারগাঁয়ে অবস্থিত লোকজ জাদুঘর

সোনারগাঁওয়ের প্রাচীন ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। সোনারগাঁও বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে পূর্ববঙ্গের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। মধ্যযুগীয় নগরটির যথার্থ অবস্থান নির্দেশ করা কঠিন। বিক্ষিপ্ত নিদর্শনাদি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি পূর্বে মেঘনা নদী , পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী, দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী ও উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল।

সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর পানাম নগর - এই এলাকাটি ১৯শ শতকে সোনারগাঁওয়ের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিলো। এখানে কাপড় ব্যবসায়ীরা বাস করতেন। ইতিহাস প্রসিদ্ধ সোনারগাঁও বা সুবর্ণগ্রাম আজ পানাম নগরীর ধ্বংসাবশেষ এবং সর্দার বাড়ীর পুরানো একটি অট্টালিকায় আবদ্ধ হয়ে ঐতিহাসিক স্মৃতি ধারণ করছে। এখানকার সুদৃশ্য বাড়িগুলো এখন ধ্বংসের মুখে।

ঐতিহাসিক সোনারগাঁও শুধু দেড়শ বছরের পুরানো স্মৃতি বিজড়িত ধ্বংসাবশেষ নগরীই নয়, এর সাথে জড়িত আছে একটি স্বাধীন জাতির আত্ম পরিচয়ের অনুভূতি। ইতিহাসের আবহমান ধারায় অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এ অনভূতি আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সোনারগাঁও আজ এমন একটি নামে পরিণত হয়েছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতি একযোগে প্রকাশ পাচ্ছে।

শুর, পাল, সেন ও দেব রাজাদের আমলে গোড়াপত্তন হলেও সোনারগাঁওয়ের সমৃদ্ধ এবং গৌরব উজ্জ্বল যুগের শুরু হয় ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমল থেকে। ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সোনারগাঁও স্বাধীন বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়। পরে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্, শের শাহ, ঈশা খাঁ পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁওয়ে রাজত্ব করেন।

সোনারগাঁও এককালে ব্যবসায়, শিক্ষা দীক্ষায়, কৃষি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও কারুকার্যে ছিল বিশ্বেরসেরা। সোনারগাঁওয়ের মসলিন কাপড় ছিল সারা বিশ্বে সমাদৃত। কথিত যে, বাংলার প্রথম মসজিদ সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদী গ্রামে নির্মিত হয়, যা ইতিহাসে মুসলিম উম্মার স্বাক্ষও বহন করছে। সোনারগাঁও হতে পাঞ্জাব পর্যন্ত পৃথিবীর দীর্ঘতম সড়ক, গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড শের শাহের আমলে নির্মিত হয়। এখানে রয়েছে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্ এর মাজার, রয়েছে পাঁচ পীরের দরগাহ্ সহ অসংখ্য গুনীজনের স্মৃতি।

সোনারগাঁওয়ের নামকরণ

সোনারগাঁও নামকরণের ইতিহাস রহস্যাবৃত। ডঃ আর. সি. মজুমদার ও স্যার যদুনাথ সরকার যে সুবর্ণ ভূমির কথা বলেছেন তা এ সোনারগাঁও ভূমিকেই বুঝায়। যার মাটির বর্ণ সুবর্ণ বা রক্ত বর্ণ ছিল এবং যাকে সুবর্ণ ভুক্তি কিংবা সুবর্ণ বিষয় ও বলা হত। কালিকা পুরানে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র তীরের অনেক স্থানের ভূমি রক্তবর্ণ বলে উল্লেখ আছে। কথিত আছে যে, দেবা সুরের যুদ্ধকালে রক্তপাত হেতু মৃত্তিকা লোহিত বর্ণ ধারণ করেছিল। স্বর্ণ ভূমি থেকে সোনারগাঁও বা সুবর্ণ গ্রামের নাম করণ হতে পারে।

কারো কারো মতে, উপমহাদেশের একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সোনারগাঁও) থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষানবিস সেকালে স্বর্ণের টুকরো হিসাবে আখ্যায়িত হতেন এবং তাদের স্মরণে নামকরণ হয়েছিল সোনারগাঁও বা সুবর্ন গ্রাম। ডঃ নীহার রঞ্জন রায় তার বাঙ্গালার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, প্রাচীন নিম্নবঙ্গে বা আশে পাশে কোন সোনার খনি ছিল। অথবা বুড়িগঙ্গার বা সুবর্ন গ্রামের পাশ্ববর্তী নদীগুলোতে সোনার গুঁড়ো ভেসে আসতো। এ স্বর্ণ প্রাপ্তির ফলে সুবর্ন গ্রাম বা সোনারগাঁও নামকরণ হতে পারে। কিংবদন্তী আছে যে, এখানে কোন এক সময় স্বর্ণের বৃষ্টি হয়েছিল এবং এর পর থেকে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে সুবর্ন বা সোনারগাঁও। কথিত আছে, বাংলার বাঁর ভূইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সোনাবিবি। এই সোনাবিবি থেকেই সোনারগাঁও এর নাম করণ হয়েছে। সোনারগাঁও নামকরণের পেছনে উপরে উল্লিখিত তথ্যাবলির কোনটি সত্য তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

সোনারগাঁও থানা নামকরণ

সোনারগাঁও থানার পূর্বনাম ছিল বৈদ্যের বাজার থানা। বৈদ্যের বাজার থানা মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১৯৮৩ সালে ১৩ মার্চ বৈদ্যের বাজার থানার নাম পরিবর্তন করে সোনারগাঁও থানা করা হয় যা পরবর্তীতে সোনারগাঁও উপজেলা।

জনসংখ্যার উপাত্ত

৩,৬৭,৭৬৪ জন পুরুষ- ১,৯২,২৫৫ জন, মহিলা- ১,৭৫,৫০৯ জন।

শিক্ষা

  • এলাহি নগর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়।
  • ভট্টপুর মডেল প্রাইমারী গভঃ স্কুল উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন
  • সোনারগাঁ জি আর ইনিস্টিটিউশন পানাম নগর
  • ফজলুল হক উইম্যন্স কলেজ থানা রোড চিলারবাগ
  • সোনারগাঁও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মোগড়াপাড়া

অর্থনীতি

প্রাচীন কাল থেকে মৎস্য, কল-কারখানা, কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্যে এই এলাকা ছিল অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল।

ঐতিহাসিক স্থান

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

বিবিধ

  • সরকারী হাসপাতালঃ ০১টি ;
  • স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ ক্লিনিক- ০৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক- ১১টি
  • পোষ্ট অফিসঃ ১৯টি ;
  • ব্যাংকঃ সোনালী-২,কৃষি-৩,জনতা-৩,অগ্রনী-১,উত্তরা-১, সোস্যাল-১, মিউচুয়াল-১,প্রিমিয়ার-১,আল আরাফা-১এবং ইসলামী-১টি
  • আকর্ষনীয় পর্যটন অঞ্চল পানাম সিটি, সোনারগাঁ জাদুঘর সরদারবাড়ি,নোয়াইল গ্রামে পোদ্দারবাড়ি,পানাম পুল এবং সংলগ্ন ঈসা খাঁর বাড়ি, ১৯০০ইং সনে শ্রী গঙ্গারাম ও রামচন্দ্র পোদ্দার প্রতিষ্ঠিত এই অঞ্চলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একমাত্র বহুমূখী হাই স্কুল সোনারগাঁ জি আর ইনিষ্টিটিউশন,মসলিন কাপড় প্রক্রিয়াক্ষেত্র খাসনগর দীঘি, সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহর মাজার ভাগলপু্‌র পাঁচপীর দরগাহ মাধবপুর,মোগড়াপাড়া শাহসাব বাড়ী,গোয়ালদী মসজিদ,লালপুরী দরবার শরীফ কমপ্লেক্স নুনেরটেক, প্রেসিডেন্ট এরশাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গুচ্ছগ্রাম মায়াদ্বীপ খ্যাত নুনেরটেক,শ্রী লোকনাথ মন্দির ও আশ্রম বারদী, বৈদ্যেরবাজার মাছঘাট,মহজমপুরের টাকশাল এবং হজরত শাহ আলমের দরগাহ,কাঁচপুর সেতু কইকেরহাট সেতু, মেঘনা শিল্প এলাকা। মদনপুর তাজমহল

বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদা লাভ

প্রাচীন বাংলার রাজধানী ও মসলিনের শহর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলাকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেটরস কাউন্সিল (ডব্লিউসিসি) বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদা প্রদান করে। ফলে বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো স্থান বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদা পেল। এতে ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁয়ের কারুশিল্পের সৌন্দর্য, সুনাম ও কৃতিত্ব বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হলো। এই স্বীকৃতির ফলে ভারতের মহাবলিপুরম (পাথর খোদাই) ও জয়পুর (গহনা), চীনের ফুশিন (অ্যাগেট), থাইল্যান্ডের সাখন নাখন (ইন্ডিগোডাই), ডেনমার্কের বর্নহোম (সিরামিক), ইরানের কারপোরগান (মৃৎশিল্প) ও ইসফাহানসহ বিশ্বের অন্যান্য কারুশিল্প শহরের সঙ্গে সহযোগিতা, অংশীদারত্ব ও বিনিময়ের সুযোগ পাবে সোনারগাঁ।[2][3]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে সোনারগাঁ উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫
  2. জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ১৩ অক্টোবর ২০১৯
  3. কালের কণ্ঠ, ১২ অক্টোবর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.