ধনবাড়ী উপজেলা

ধনবাড়ী উপজেলা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।[1][2]

ধনবাড়ী
উপজেলা
ধনবাড়ী
বাংলাদেশে ধনবাড়ী উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৭′০″ উত্তর ৯০°১′৩০″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাটাঙ্গাইল জেলা
আয়তন
  মোট১৩০.৫০ কিমি (৫০.৩৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট২,০৩,২৮৪
  জনঘনত্ব১৬০০/কিমি (৪০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৯৩ ২৫
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

এই উপজেলার উত্তরে জামালপুর জেলা, পূর্বে মধুপুর উপজেলা, দক্ষিণে গোপালপুর উপজেলা, পশ্চিমে সরিষাবাড়ি উপজেলা। ধনবাড়ী উপজেলার আয়তন ১৩০.৫০ বর্গ কিঃমিঃ [3] ব্রিটিশ এককে এর আয়তন ৫০.৩৯ বর্গমাইল৷

পটভূমি

আরও দেখুন: টাঙ্গাইল জেলা

ধনবাড়ী উপজেলা টাঙ্গাইল জেলার ১২তম ও সৃষ্ট সর্বশেষ উপজেলা। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি আসামের কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মধ্যযুগে ১৪শ শতাব্দীর শেষভাবে অঞ্চলটি খেন্ রাজবংশের অন্তর্গত ছিল।[4] পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কামতা রাজ্য জয় করার পর অঞ্চলটি মুসলমানদের দখলে চলে আসে। হোসেকামতা রাজ্যন শাহর পুত্র নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ পরবর্তীতে এ অঞ্চলটি শাসন করেন এবং সে সময় এটি নাসিরাবাদের (বর্তমান ময়মনসিংহ) অন্তর্ভূক্ত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে নাসিরাবাদের নাম পরিবর্তন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ রাখা হয়। ১৮৬৯ সালের ১লা ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলেকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়[5] এবং ধনবাড়ীকে মধুপুর উপজেলার অধীন টাঙ্গাইল জেলায় অন্তর্ভূক্ত হয়। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলটি রাজা ও জমিদাররা শসন করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি প্রথমে সরাসরি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীন, এরপর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অধীন থাকলেও মূলত ধনবাড়ি জমিদারগণ শাসন করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। এ আইন অনুসারে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর ধনবাড়ী স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ হয়।

ব্রিটিশদের অধীন প্রথমে মধুপুরে ১৮৯৮ সালে থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় ধনবাড়ী মধুপুর থানার অধীনে ছিল। ১৯৯৬ সালে প্রথমে ধনবাড়ীতে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালে থানা গঠিত হয়।[6] পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৬ জুন প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় মধুপুর উপজেলাকে বিভক্ত করে ধনবাড়ীতে নতুন উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[7] একই বছরের ১১ জুলাই মধুপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ধনবাড়ী পৌরসভা নিয়ে নতুন ধনবাড়ী উপজেলা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর সেপ্টেম্বরে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।[7]

জনশ্রুতি অনুসারে, সুলতানী আমলের স্থানীয় ধনপতি সিংহের নাম অনুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে।[8] আবার কারো কারো মতে, ভূয়াপুর উপজেলার ফলদা নামক স্থানের রাজা যশোধরের মৃত্যুর পর তার সেনাপতি ধনুয়ার খাঁ ধনবাড়ীতে একটি স্বাধীন জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন।[8] তার নাম অনুসারেই পরবর্তীতে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। অনেকে মনে করেন, সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ধনপতি ঠাকুর (ধনাই সাধু) নামক একজন ব্রাক্ষণ পুখুরিয়া পরগণায় জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তার নাম অনুসারে এই উপজেলাকে ধনবাড়ী নামে নামকরণ করা হয়।[8]

প্রশাসন

২০০৬ সাল পর্যন্ত ধনবাড়ী উপজেলা, মধুপুর উপজেলার অধীন ছিল। ১৮৯৮ সালে মধুপুর উপজেলায় থানা স্থাপনের পর ১৯৮৩ সালে মধুপুরকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মধুপুর উপজেলাকে বিভক্ত করে মধুপুর ও ধনবাড়ী নামে দুটি পৃথক উপজেলার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট মধুপুর উপজেলার দ্বিতীয় পৌরসভা হিসেবে ধনবাড়ীতে তৃতীয় শ্রেণীর (গ-শ্রেণী) পৌরসভায় গঠন করে। ২০১১ সালের ২৬ মে সরকার ধনবাড়ী পৌররসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর (খ-শ্রেণী) পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[9] পৌরসভার মোট আয়তন ২৪.৮৯ বর্গকিলোমিটার এবং এটি ৯টি ওয়ার্ড, ১১টি মৌজা ও ৩৫টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত। সব ইউনিয়ন মিলিয়ে উপজেলাটি মোট ১১২টি মৌজা ও ১৬৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হলেন খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন এবং মোঃ হারুনার রশিদ ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১টি পৌরসভা ছাড়াও ধনবাড়ী উপজেলা মোট ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো, বীরতারা, বানিয়াজান, পাইস্কা, ধোপাখালী, যদুনাথপুর, মুশুদ্দিবলিভদ্র

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধনবাড়ীর সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-১। মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই মধুপুরের সংসদীয় আসনটি তৈরি করা হয়। প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আব্দুস সাত্তার১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের নিজামুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে সতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার আনোয়ারুল হক বিজীন হন।

১৯৯১ ও জুন ১৯৯৬ তারিখের দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী সংসদ সদস্য হন। তিনি শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রীসভায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯১ সালে গঠিত সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তারিখে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির মহাসচিব ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। রাজ্জাম আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রীসভায় তাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

জনসংখ্যার উপাত্ত

মোট লোক সংখ্যা ২,০৩,২৮৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১,০১,৯১২ জন এবং মহিলা ১,০১৩৭২ জন।[3]

শিক্ষা

ধনবাড়ী উপজেলার ৮টি কলেজ, ২৭টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৬ টি মাদ্রাসা, ৪৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য স্থান/স্থাপনা

ধনবাড়ি নওয়াব আলী হাসান আলী রয়েল রিসোর্ট, ধনবাড়ি নওয়াব মসজিদ এবং ধনবাড়ি নওয়াব ইনষ্টিটিউশন (মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত - ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ)। ২০১৮ সালে ধনবাড়ি নওয়াব ইনস্টিটিউশন সরকারিকরণ করা হয় ৷

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. ইউনিয়নের তালিকা
  2. ধনবাড়ী উপজেলা
  3. এক নজরে ধনবাড়ী
  4. (Sarkar 1992:44)
  5. D. Shamsul Haque Mia (মার্চ ১৯৯৯)। Education in Tangail। Tangail Forum। পৃষ্ঠা 26–27।
  6. "ধনবাড়ী উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  7. "ধনবাড়ী উপজেলার পটভূমি"ধনবাড়ী উপজেলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯
  8. বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : টাঙ্গাইলবাংলা একাডেমি। ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৭। আইএসবিএন 9840753347।
  9. "নাগরিকদের উন্নত সুবিধা দিতে কাজ করছি: ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.