সাভার উপজেলা

সাভার বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি রাজধানী শহর ঢাকা হতে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তরে (গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে সড়ক পথের দূরত্ব) অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় শহর এবং ঢাকা মেগাসিটির অন্তর্ভুক্ত এলাকা।[2][3] সাভার বাংলাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ন উপজেলাগুলোর মধ্যে একটি। জনসংখ্যা অত্যাধিক বেশি হওয়ায় দিন দিন এই অঞ্চল ক্রমাগত দুষিত ও বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সাভারে জনসংখ্যা ১৫ লক্ষাধিক। এছাড়া প্রচুর গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান থাকায় পরিবেশও দুষিত হচ্ছে দ্রুত।

সাভার
উপজেলা
জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভার এর নবীনগরে অবস্থিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এবং সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্মিত হয়েছে।
সাভার
বাংলাদেশে সাভার উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫১′৩০″ উত্তর ৯০°১৬′০″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাঢাকা জেলা
আয়তন
  মোট২৮০.১২ কিমি (১০৮.১৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট১৪,৪২,৮৮৫
  জনঘনত্ব৫২০০/কিমি (১৩০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড১৩৪০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ২৬ ৭২
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ইতিহাস

রাজা হরিশ্চন্দ্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ

”বংশাবতীর পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরী
বৈসে রাজা হরিশ্চন্দ্র জিনি সুরপুরী।”
ছড়াটিতে বংশাবতী বলতে আজকের বংশী ও সেকালের বংশাবতী নদীকেই বুঝাচ্ছে। যার পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরী। এই নগরীর রাজা হরিশ্চন্দ্র। এ সময় তাঁর রাজ্য ছিল সুখ শান্তিতে ভরপুর। এই সুখময় রাজ্য সর্বেশ্বর নগরীর অপভ্রংশই আজকের সাভার। আবার কারো কারো মতে ইতিহাস খ্যাত পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই সাভার নামের উৎপত্তি। সাভার অতি প্রাচীন স্থলভূমি। ঢাকার ইতিহাসে দেখা যায় ধলেশ্বরী এবং বংশী নদীর সঙ্গম স্থলে বংশী নদীর পূর্বতটে ঢাকা থেকে ১৩ মাইল বায়ু কোনে অবস্থিত সাভার। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত এই স্থান সম্ভাগ বা সম্ভাস প্রদেশের রাজধানি ছিল। ঢাকার ধামরাইয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে সম্ভাগ নামে যে ক্ষুদ্র পল্লী আছে তা আজো সম্ভাগ প্রদেশের অতীত স্মৃতি বহন করে। বৌদ্ধ নৃপতিগণের শাসনাধীনে প্রাচীন সম্ভাগ তার বিপুল বৈভব ও প্রতাপে পরিপূর্ণ ছিল। সাভার বা সম্ভার নামের পূর্ব কথন বলে অনেক ঐতিহাসিক এই মতের সমর্থন করেন।

যেহেতু বৌদ্ধ আমলের অসংখ্য বৌদ্ধ ধ্বংসস্তুপ ও বৌদ্ধ মূর্তি সাভার এলাকার মাটির নিচে আবিস্কৃত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে বৌদ্ধ শাসনামলে এই শহর গড়ে উঠেছিল। গৌতমবুদ্ধ অথবা মৌয্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আশোকের সময়ও যদি এই রাজ্যের পত্তন হয়ে থাকে তবুও আজকের সাভারের বয়স দুই হাজার দুইশত বছরের অধিক। হরিশচন্দ্র পালই রাজা হরিশচন্দ্র নামে সাভারের সিংহাসনে আরোহন করেন। রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ী সাভারের পূর্বপাশে রাজাশন গ্রামের অবহেলিত এক কোনে মাটির নিচে চাপা পরে আছে। রাজাশনের আশপাশে লুপ্তপ্রায় বহু দীঘি, বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন রাজোদ্যান, খাল, পরিখা আজও কালের সাক্ষী হয়ে বিরাজমান। রাজার সেনানিবাস কোঠাবাড়ী সাভারের উত্তর পাশে অবস্থিত। রাজা হরিশ্চন্দ্রের এক রানী কর্ণবতীর নামে কর্ণপাড়া এবং অপর মহিষী ফুলেশ্বরীর নামে রাজফুলবাড়ীয়া সাভারের দক্ষিণে এক মাইল অন্তর অবস্থিত।

দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজয় সেন পাল বংশকে সমূলে ধ্বংস করে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার অত্যাচারে বৌদ্ধরা হয় মৃত্যবরণ করেন নতুবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। কথিত মতে প্রাচীন সম্ভার রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এ সময় এ স্থান স্বর্বেশ্বর নগরী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং ধর্মান্তরিত অবস্থায় পাল বংশীয় লোকেরাই সাভার শাসন করতে থাকে।

ময়নামতির তান্ত্রিক মহারানীর পুত্র গোপীনাথের সঙ্গে হরিশচন্দ্র রাজার জেষ্ঠা কন্যা অনুদার বিয়ে এবং কনিষ্ঠ কন্যা পদুনাকে যৌতুক প্রদানের গল্প কাহিনী সাভারের অনেকের কাছেই শোনা যায়। হরিশচন্দ্রের দ্বাদশ পুরুষ শিবচন্দ্র রায় তার শেষ জীবন কাশী গয়ায় অতিবাহিত করে প্রয়াত হন। শিবচন্দ্রের একাদশ পুরুষ তরুরাজ খাং এর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র শুভরাজ ও যুবরাজ হুগলীতে চলে যান। তৃতীয় ও চতুর্থ পুত্র বুদ্ধিমন্ত ও ভাগ্যমন্ত পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাদের এক বংশধর সিদ্ধ পুরুষ খ্যাতি লাভ করেন এবং তার সমাধী কোন্ডা গ্রামে খন্দকারের দরগা নামে আজও বিদ্যমান।

আরব উপত্যকায় সমুদ্র উপকূলবর্তী সাবাহ রাজ্যের (অর্থাৎ আজকের ইয়েমেন) প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ব্যবসা বাণিজ্যে বিশ্বজোড়া নাম ছিল। গ্রীক ঐতিহাসিকদের বিবরণিতে জানা যায় সাবাহর ব্যবসায়ীরা চীন, জাপান এবং কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতো। সেই সময় আজকের সাভার ছিল সমুদ্র উপকূলবর্তী নগর। আসা যাওয়ার পথে সাবাহর ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যতরীর নোঙ্গর ফেলতো সাভারের উপকূলে। সে সময় সাভার 'সাবাহর' নামে পরিচিতি লাভ করে। 'সাবাহর' অর্থাৎ স্বয়ম্ভর নগরী যেখানে সবকিছু পাওয়া যায়। সম্ভার, সভর, সম্ভোগ, সাবাহ-উর সব কয়টি নামের অর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ স্বয়ম্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্ননির্ভরশীল। তাই ইতিহাস থেকে বলা যায় সাভার অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ এক অঞ্চল ছিল।

সাভারে সর্বপ্রথম শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন রাখালচন্দ্র সাহা। তিনি তাঁর পিতার নামে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাতার নামে ছেলেদের থাকার বোর্ডিং, কাকার নামে মহেশচন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাভারের দানবীর নামে পরিচিত।[3]

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানার জিরাবো এলাকার ঘোষবাগ-গঙ্গাবাগে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন একদল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেকে নিহত হয়। আত্মরক্ষার্থে অন্যরা পালিয়ে যায়। শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় সাভারকে। ওই যুদ্ধে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু নামের এক অকুতোভয় কিশোর শহীদ হন। সাভার ডেইরি ফার্ম গেটের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। বাংলাদেশ আর্মি তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।[4][5]

স্বাধীনতা যুদ্ধের চিহ্ন

জাতীয় স্মৃতি সৌধ জাতীয় স্মৃতি সৌধের সম্মুখে অবস্থিত গণ-সমাধি, সাভার ডেইরি ফার্ম এর ফটকে শহীদ স্মৃতি সৌধ, সংশপ্তক এবং অমর একুশে ভাস্কর্য (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস)।

ভৌগলিক উপাত্ত

সাভার ২৩.৮৫৮৩° উত্তর এবং ৯০.২৬৬৭° পূর্বে অবস্থিত। এখানে প্রায় ৬৬,৯৫৬ টি পরিবার বসবাস করছে এবং এর সামগ্রিক আয়তন হচ্ছে ২৮০.১২ বর্গ কিলোমিটার। এটি উত্তরে কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলা; দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ উপজেলা; পূর্বে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী থানা এবং উত্তরা থানা এবং পশ্চিমে ধামরাই উপজেলা এবং সিঙ্গাইর উপজেলা দিয়ে বেষ্টিত। সাভারের ভূমি প্লেইস্টোসিন সময়সীমার পাললিক মাটি দ্বারা গঠিত। ভূমির উচ্চতা পূর্ব থেকে পশ্চিমে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাভারের দক্ষিণাংশ বংশাই এবং ধলেশ্বরী নদীর পলল দ্বারা গঠিত। এখানকার প্রধান নদীসমূহ হচ্ছে বংশী (বংশাই), তুরাগধলেশ্বরী। এছাড়াও বুড়িগঙ্গাগাজীখালী নামে আরো দুটি নদী রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও ট্যানারী শিল্পের বর্জ্যের কারনে নদীগুলো মারাত্বকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে এবং দখলের কারনে এসব নদীর অস্তিত্ব ক্রমাগত হুমকির সম্মুখীন।

এখানে ১০,৫৫১.১৮ হেক্টর পতিত জমি ছাড়াও মোট আবাদি জমির পরিমাণ হচ্ছে ১৬,৭৪৫.৭১ হেক্টর।

প্রশাসনিক এলাকা

সাভার থানা ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯৮১ সালে একটি উপজেলায় পরিণত হয়। বর্তমানে সাভার উপজেলা ২ টি থানায় বিভক্ত; যার একটি হচ্ছে সাভার মডেল থানা এবং অন্যটি আশুলিয়া থানা। এ উপজেলার একমাত্র পৌরসভা হল সাভার পৌরসভা এবং ইউনিয়নগুলো হল :

ইউনিয়নের নামআয়তনভোটার সংখ্যাঅফিস ঠিকানা / ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র
শিমুলিয়া৩৪.৬৬ (বর্গ কি:মি:)৫৩,১৬০ জনগোহাইল বাড়ী, শিমুলিয়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা
ধামসোনা৩২.৭৭ (বর্গ কি:মি:)১,৭১,৪৫৫ জনবলিভদ্র বাজার, ধামসোনা, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা
পাথালিয়া২৮.৭৪ (বর্গ কি:মি:)৫৩,৫৬৮ জনকুরগাঁও (নতুন পাড়া), সোসাইটি রোড, নবীনগর, সাভার, ঢাকা
ইয়ারপুর২৬.৩৫ (বর্গ কি:মি:)৭৮,২৪২ জননরসিংহপুর, জিরাবো, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা
আশুলিয়া২৬.১০ (বর্গ কি:মি:)৫৯,৫৮৮ জনআশুলিয়া (আশুলিয়া স্কুল এন্ড কলাজ সংলগ্ন), সাভার, ঢাকা
সাভার১০.২০ (বর্গ কি:মি:)২৬,১৫৪ জনদেওগাঁও, রাজাশন, সাভার, ঢাকা
বিরুলিয়া৩০.১৪ (বর্গ কি:মি:)২১,৫৯২ জনআকরান, বিরুলিয়া, সাভার, ঢাকা
বনগাঁও১৮.০৫ (বর্গ কি:মি:)১৯,৮৫০ জননগর কোন্ডা, সাভার, ঢাকা
তেঁতুলঝোড়া১৫.৫৫ (বর্গ কি:মি:)৪৯,৩৮০ জনতেঁতুলঝোড়া, রাজফুলবাড়ীয়া, সাভার, ঢাকা
ভাকুর্তা২১.০৬ (বর্গ কি:মি:)২৪,৯৯৬ জনহিন্দু ভাকুর্তা, ভাকুর্তা বাজার, সাভার, ঢাকা
আমিনবাজার১০.৯৪ (বর্গ কি:মি:)২০,৪২২ জনআমিনবাজার, সাভার, ঢাকা
কাউন্দিয়া১১.৪৭ (বর্গ কি:মি:)১৫,১৮৩ জননয়া বাজার, কাউন্দিয়া, সাভার, ঢাকা

[3]

উপজেলার গেন্ডা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পূর্ব পাশে সাভার পৌরসভার কার্যালয় এবং পশ্চিম পাশে উপজেলা কার্যালয় রয়েছে যা সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

উপজেলা পরিষদ

নামপদবী ও ঠিকানা
আলহাজ্ব কফিল উদ্দিনউপজেলা চেয়ারম্যান, সাভার, ঢাকা
দেওয়ান মোঃ মঈন উদ্দিন বিপ্লবভাইস-চেয়ারম্যান (উপজেলা পরিষদের সদস্য), সাভার, ঢাকা
মিনি আক্তার উর্মিমহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (উপজেলা পরিষদের সদস্য), সাভার, ঢাকা

এই উপজেলায় নির্বাচনী এলাকা রয়েছে ০২ টি; (ক) ১৯২, ঢাকা-১৯, (উপজেলার মোট ০৯ টি ইউনিয়ন) এবং (খ) ১৭৫, ঢাকা-২, (এর সাথে উপজেলার ০৩ টি ইউনিয়ন)

সাভার বাস স্ট্যান্ড

গাবতলী থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে বাসস্ট্যান্ড এবং বাজার রয়েছে। এখানে মার্কেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাভার সিটি সেন্টার, সাভার নিউমার্কেট,মজিদ ম্যানসন, সাভার অন্ধ সংস্থা মার্কেট, ভরসা সুপার মার্কেট, চৌরঙ্গী সুপার মার্কেট, উৎসব প্লাজা, কোরাইশী সুপার মার্কেট, রাজ্জাক প্লাজা, মাহাতাব প্লাজা, ইউসুফ টাউয়ার, দিলখুশা সুপার মার্কেট প্রভৃতি। এর মধ্যে সাভার সিটি সেন্টার, সাভার নিউ মার্কেট এবং রাজ্জাক প্লাজা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

জনসংখ্যার উপাত্ত

ধর্ম
ধর্ম শতাংশ
মুসলিম
 
৯১.৩৮%
হিন্দু
 
৭.৭৪%
অন্যান্য
 
০.৮৮%

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১৪,৪২,৮৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭,৬৯,১১৭ জন এবং মহিলা ৬,৭৩,৬৬৮ জন। উপজেলার শিক্ষার হার ৬৮% । মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমান ৯১.৩৮%, হিন্দু ৭.৭৪% এবং অন্যান্য ০.৮৮% ।[3] এ উপজেলার প্রধান পেশাসমূহ হলঃ

সাভারের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে
পেশার নামশতকরা হার
কৃষি২৪.৩৪ %
কৃষি শ্রমিক১২.৪৮ %
অকৃষি৪.৪৪ %
গবাদি পশু প্রজনন, বনরক্ষণ বিদ্যা এবং মাছ ধরা১.৯০ %
শিল্প১.৩৭ %
বাণিজ্য১৭.৩৫ %
সেবা২০.৬৮ %
নির্মাণ১.৬৬ %
পরিবহন৩.৯৬ %
অন্যান্য১১.৪৬ %

ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মসজিদ ৮৮১ টি, মন্দির ৭৪ টি এবং গির্জা ৮ টি।[3] এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • সাভার ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা
  • আল জামিয়াতুল মাদানিয়া, রাজফুলবাড়িয়া, সাভার, ঢাকা।
  • আল মাদরাসাতু ইসলাহুল উম্মাহ, পূর্ব ধনিয়া, নয়ারহাট, আশুলিয়া, ঢাকা। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রিন্সিপাল: মাওলানা হাফিজুল ইসলাম সাহেব।
  • ব্যাংক টাউন জামে মসজিদ
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ
  • নিটার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
  • কাতলাপুর বায়তুস সালাম জামে মসজিদ
  • ভাগলপুর জামে মসজিদ
  • মাতৃবাগান জামে মসজিদ
  • Pandhua central Jame mosque
  • আল-জামিয়া ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম (ব্যাংক কলোনী মাদরাসা)ও জামে মসজিদ, প্রিন্সিপাল ও ইমাম-খতীব: মাওলানা আব্দুল্লাহ্ সাহেব।
  • সাভার ডেইরি ফার্ম মসজিদ
  • সাভার ব্যাপটিস্ট চার্চ,সাভার দক্ষিণ পাড়া হরির আখড়া মন্দির এবং পঞ্চাবতী আশ্রম মন্দির।
  • নূর মোহাম্মদ জামে মসজিদ,টানগেন্ডা,সাভার'[6]
  • কর্ণপাড়া জামে মসজিদ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

স্কুল ও কলেজ

সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়

উপজেলায় অসংখ্য স্কুল ও কলেজ রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলঃ

  • সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ|সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
  • জিরাবো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ
  • সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
  • সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
  • সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • সাভার মডেল কলেজ
  • রেডিও কলোনি মডেল স্কুল
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ
  • বিপিএটিসি স্কুল এন্ড কলেজ
  • সাভার ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা
  • কাতলাপুর প্রি-ক্যাডেট স্কুল।
  • আল-মদিনা প্রি-ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুল।

মেডিক্যাল কলেজসমূহ

  • এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
  • গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
  • গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল
  • নাইটিংগ্যাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সমূহ

চিকিৎসা কেন্দ্র

সিআরপি

সাভারে অবস্থিত সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্‌ড সিআরপির প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম চালানোর ১১ বছর পর ১৯৯০ সালে সিআরপি সাভারে চলে আসে। সিআরপিতে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য গাছপালা এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বিভিন্ন ঋতুতে সিআরপিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সুশোভিত করে রাখে। এখানে খেলাধুলা এবং আমোদ প্রমোদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা হাসপাতালের রোগী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং Bangladesh Health Professions Institute (BHPI) এর ছাত্র-ছাত্রীরা উপভোগ করে। এছাড়া বহুমুখী কার্যের জন্য নিযু্‌ক্ত সভাগৃহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলাপ-আলোচনা, সভা, খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্ট এবং রোগীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামসংখ্যা[6]
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (Upazila Health Complex)১ টি
মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সাভার ক্যান্টনমেন্ট) (Combined Military Hospital)১ টি
কোরিয়া বাংলাদেশ বন্ধুত্ব হাসপাতাল (Korea Bangladesh Friendship Hospital)১ টি
পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র (Family Planning Centre)৭ টি
উপগ্রহ ক্লিনিক (Satellite Clinic)২ টি
বেসরকারী ক্লিনিক (Private Clinic)২১ টি
গণস্বাস্থ মেডিকেল কলেজ ও

সংবাদপত্র ও সাময়িকী

সাভার থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পত্রিকা হল:

  • সমুদিত (ত্রৈমাসিক সাহিত্য ডাক)
  • দৈনিক মানুষের কন্ঠ
  • বাংলা ফটো নিউজ
  • সাভার সংবাদ (সাপ্তাহিক)
  • দৈনিক এশিয়া/জ্বালাময়ী
  • সাভার কন্ঠ/যথা তথা
  • গণভাষ্য (পাক্ষিক)
  • জাগ্রত কন্ঠ (সাপ্তাহিক)
  • সাফকথা (সাপ্তাহিক)
  • দৈনিক ফুলকি
  • সেফসাভার২৪ডটকম

এনজিও কার্যক্রম

সাভারের গুরুত্বপূর্ণ এনজিওসমূহ হচ্ছে ব্র্যাক (brac), আশা (Asa), টেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (TMSS), প্রশিকা (Proshika), গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (Ganasastha Kendra), ওয়াল্ড ভিশন (World Vision), স্বনির্ভর বাংলাদেশ (Swanirvor Bangladesh), ভিইআরসি (VERC), পল্লী মঙ্গল কর্মসূচী (Palli Mangal Karmasuchi), সিডিডি (CDD), আদেশ (Adesh), এইচডিডি (HDD) ইত্যাদি।

অর্থনীতি

সাভার থেকে কাঁঠাল, পেঁপে, ফুল, চারা, দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস, রূপান্তরিত কাপড়, ছোপানো, ঔষধ, তৈরি পোশাক প্রস্তুত, ইলেকট্রনিক্স এবং বৈদ্যুতিক পণ্য, জুতা, ইট, সন্দেশ ইত্যাদি রপ্তানী করা হয়।

হাট, বাজার এবং মেলা

সাভারে হাট এবং বাজারের সংখ্যা ১৪ টি। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বাজার হচ্ছে- সাভার বাজার, নবীনগর বাজার, আমিন বাজার, বলিভাদ্র এবং বাগবাড়ী বাজার। উল্ল্যেখযোগ্য হাট হচ্ছে- আশুলিয়া, সাভার, শিমুলিয়া, কাঠগড়া, সাদুল্লাপুর এবং ভাকুরার হাট। মেলা হয় ৬ টি স্থানে- দারোগালি বয়াতি মেলা (নয়ারহাট), বাহাত্তর প্রহার মেলা (সাভার), ঘোড়া পীরের মেলা (নালাম), মুহার্রাম মেলা (কাৎলাপুর), পৌষ মেলা (ধামসোনা)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান

সমবায় সমিতি৮১ টি
শিশু সংগঠন১ টি
চলচ্চিত্র সমাজ৩ টি
সিনেমা হল৪ টি
নাট্যদল৫ টি
থিয়েটার স্টেজ১ টি
সঙ্গীত কেন্দ্র৩ টি
অনাথ আশ্রম৫ টি
অপেরা পার্টি১ টি
মহিলা সংঘ৩ টি
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ১ টি
এ্যামনেস্টি সংস্থা২ টি
গলফ ক্লাব১ টি
চিড়িয়াখানা১ টি
বিনোদন পার্ক২ টি (ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্ক)
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন১ টি (স্বদল বাংলাদেশ)
প্রেসক্লাব১ টি (সাভার প্রেসক্লাব)
সাংবাদিক সমিতি১ টি (ঢাকা সাংবাদিক সমিতি)

সিনেমা হল

১. বিলাস সিনেমা হল : এটি বাজার রোডে অবস্থিত। এটি সাভার বাসস্ট্যান্ড হতে কিছুটা পশ্চিমে অবস্থান করছে।

২. সাভার সেনা অডিটরিয়াম : এই সিনেমা হলটি নবীনগরে অবস্থান করছে।

৩. চন্দ্রিমা সিনেমা হল: এই সিনেমা হলটি ই.পি.জেড এ অবস্থান করছে।

সাপের বাজার

সাভারের পোড়া বাড়ীতে প্রতিদিন ছোট-বড় নানা জাতের সাপ বেচাকেনার হাট বসে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অধিকাংশই বেদে সম্প্রদায়েরময়মনসিংহ, শেরপুরমধুপুরের পাহাড়ি এলাকার গারো এবং উত্তরাঞ্চলের সাঁওতালরাও বাড়তি রোজগারের জন্য এ হাটে সাপ বিক্রি করতে আসেন। মাঝেমধ্যে বিদেশিরাও আসেন সাপ কিনতে।

এ হাটে ১৫ থেকে ২০ জন বেদে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টি বিভিন্ন জাতের সাপ বিক্রি করেন। গোখরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, দাঁড়াশ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, অজগর এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। লাউডগা, কেউটে, কালনাগিনী, কাটা দুবলশঙ্খিনী ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে দাম বেশ উঠা-নামা করে। তবে বর্তমানে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে বেদেরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

কৃতি ব্যক্তিত্ব

শহরাঞ্চল

নবীনগর, জাহাঙ্গীরনগর, চাঁপাইন, সি.আর.পি, ডগরমোড়া, কাঠগড়া, জামগড়া, আকরাইন, রাজাশন, শাহীবাগ, রেডিও কলোনী, সাভার বাসস্ট্যান্ড,মজিদপুর, পাকিজা, ব্যাংক কলোনী, গেন্ডা, থানা স্ট্যান্ড, উলাইল, ব্যাংক টাউন, ফুলবাড়িয়া, হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুর, আশুলিয়া, আমিন বাজার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

উল্ল্যেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে সাভার উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৫
  2. ঢাকায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে ১৭০০ মানুষ - দৈনিক প্রথম আলো (১২ নভেম্বর, ২০১৬ ইং)
  3. Help for Disability and Distress (HDD) কর্তৃক প্রকাশিত বই : সাভার ডিরেক্টরি (সাভার উপজেলার তথ্য সংবলিত বই); প্রকাশকাল: ডিসেম্বর, ২০১২ ইং
  4. কালিয়াকৈর-সাভার মুক্ত দিবস আজ - কালের কন্ঠ (১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ ইং)
  5. শহীদ টিটুর আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল সাভার মুক্ত দিবস - দৈনিক ইত্তেফাক (১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ ইং)
  6. "বাংলাপিডিয়া"। ১৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.