গারো
গারো ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় ও বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়। ভারতে মেঘালয় ছাড়াও আসামের কামরূপ, গোয়ালপাড়া ও কারবি আংলং জেলায় এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ছাড়াও টাঙ্গাইল, সিলেট, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকা ও গাজীপুর জেলায় গারোরা বাস করে।
![]() ঐতিহ্যবাহী পোশাকে একটি গারো দম্পতি | |
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
২,০০০,০০০ (২০০১) | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চলসমূহ | |
ত্রিপুরা | ৬,০০০ |
ঢাকা বিভাগ | ২০০,০০০ |
ভাষা | |
মান্দি ভাষা | |
ধর্ম | |
খ্রিস্ট ধর্ম[1] • সাংসারিক (প্রকৃতি পুজারী) |
গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক গারোই নিজেদেরকে মান্দি বলে পরিচয় দেন। গারোদের ভাষায় 'মান্দি' শব্দের অর্থ হল 'মানুষ'।[2] গারোদের সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত। তাদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম 'ওয়ানগালা'; যাতে দেবতা মিসি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা হয়। উল্লেখ্য ওয়ানগালা না হওয়া পর্যন্ত মান্দিরা নতুন উৎপাদিত ফসলাদি খেত না। আশ্বিন মাসে একেক গ্রামের মানুষদের সামর্থ্যানুযায়ী সাত দিন কিংবা তিনদিন ধরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। অতীতে গারোরা সবাই তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করত। তাদের আদি ধর্মের নাম 'সাংসারেক'। ১৮৬২ সালে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে ৯৮ ভাগ গারোরাই খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে তাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানে বেশ পরিবর্তন এসেছে।
গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। এছাড়াও অন্যান্য দেবতারা হলেন- মিসি সালজং, সুসমি, গয়ড়া প্রমুখ। বিভিন্ন গবেষকগণ বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গারো বর্ণমালা আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো উচ্চ গবেষণার জন্য বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি-তে সংরক্ষণ করা আছে।গারোদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। তাদের সমাজে মাতা হলো পরিবারের প্রধান । গারোদের সমাজে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে । সাংমা , মারাক , মোমিন , শিরা ও আরেং হচ্ছে প্রধান পাঁচটি দল ।
ভাষা
গারোদের ভাষার স্থানীয় নাম মান্দি ভাষা বা গারো ভাষা । তবে ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, গারোরা যে ভাষায় কথা বলে তা মূলত সিনো-টিবেটান (Sino Tibetan) ভাষার অন্তর্গত টিবেটো বার্মান (Tibeto Burman) উপ-পরিবারের আসাম-বার্মা শাখার অন্তর্গত বোডো বা বরা (Bodo/Bora) ভাষা উপ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। গারোদের কোনো লিপি বা অক্ষর নেই।
দৈহিক বৈশিষ্ট্য
গারোদের দৈহিক আকৃতি মাঝারি ধরনের, চ্যাপ্টা নাক, চোখ ছোট, ফর্সা থেকে শ্যামলা রং। দৈহিক গঠনে বেশ শক্তিশালী। তাদের চুল সাধারণত কালো, সোজা এবং বেশ ঘন হয়ে থাকে। আবার অনেক কোকড়া চুলের অধিকারীও লক্ষ্য করা যায়।
ধর্ম
বাংলাদেশে বসবাসকৃত বর্তমান গারোদের ৯০% ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান। প্রায় ২% মুসলিম ও হিন্দু এবং বাকি ঐতিহ্যবাহী ধর্ম পালন করে(২০০৮ সালের তথ্যমতে)। গারোদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মের নাম সংসারেক। এর অর্থ কেউ জানে না। তবে গবেষকদের মতে সম্ভবত বাংলা সংসার থেকে সংসারেক শব্দটি এসেছে। গারোরা হিন্দু ধর্মালম্বীদের মত পূজা করে থাকে। এদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা বারুগা। গাড়োরা পুরোহিতকে কামাল বলে। সালজং(Saljong) তাদের উর্বরতার দেবতা এবং সূর্য সালজং এর প্রতিনিধি। ফসলের ভালোমন্দ এই দেবতার উপর নির্ভর করে বলে তাদের বিশ্বাস। সুসাইম(Susime) ধন দৌলতের দেবী এবং চন্দ্র এই দেবীর প্রতিনিধি। গোয়েরা(Goera) গারোদের শক্তি দেবতার নাম। কালকেম(Kal Kame) জীবন নিয়ন্ত্রণ করে বলে গারোদের বিশ্বাস।
খাদ্যাভাস
বাংলাদেশি গারোরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল,শূকর প্রভৃতি খায়। মদ তাদের অন্যতম পানীয়। বর্তমানে গারোরা লেখাপড়া ও চাকুরিতে বেশ এগিয়ে আসছে। নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি তারা বাঙালী খাবার খেতেও ভালোবাসে। গারোদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে-নাখাম কারি। যা পুটি মাছের শুটকি দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শুকুরের মাংস গারোদের অতি প্রিয়। গারোদের বিশেষ খাদ্য হচ্ছে কচি বাঁশের গুঁড়ি । এর জনপ্রিয় নাম মেওয়া।
উৎসব
তাদের ফসল ঘরে তোলার উৎসব ‘ওয়ানগালা’।
তথ্যসূত্র
- "People of Meghalaya"। ৮ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- "Official Homepage of Meghalaya State of India"। ৮ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে গারো সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
আরও দেখুন
- গারো রাজাদের রাজ্য শাসন