শিবপুর উপজেলা

শিবপুর বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

শিবপুর
উপজেলা
শিবপুর
বাংলাদেশে শিবপুর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°২২′৪৬″ উত্তর ৯০°৪৪′৩৩″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলানরসিংদী জেলা
আয়তন
  মোট২১৭.৭১ কিমি (৮৪.০৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট৩,১৫,৬৬৭
  জনঘনত্ব১৪০০/কিমি (৩৮০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৬৮ ৭৬
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

সীমানা

এই উপজেলার দক্ষিণে রায়পুরা উপজেলা, নরসিংদী সদর উপজেলাপলাশ উপজেলা, পূর্বে বেলাবো উপজেলারায়পুরা উপজেলা, উত্তরে মনোহরদী উপজেলা এবং পশ্চিমে পলাশ উপজেলা ও গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা অবস্থিত।

প্রশাসনিক এলাকা

  • জয়নগর ইউনিয়ন
  • যোশর ইউনিয়ন
  • বাঘাব ইউনিয়ন
  • আয়ুবপুর ইউনিয়ন
  • চক্রধা ইউনিয়ন
  • মাছিমপুর ইউনিয়ন
  • পুটিয়া ইউনিয়ন
  • সাধারচর ইউনিয়ন
  • দুলালপুর ইউনিয়ন, শিবপুর

ভৌগোলিক অবস্থান

২৩.৫৬ হতে ২৪.০৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.৩৮ হতে ৯০.৫০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে শিবপুর উপজেলা অবস্থিত

নামকরণ

এ এলাকায় খড়গ রাজাদের শাসন আমল ছিল ৬০০-৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। খড়গ রাজাদের ৫ জন রাজা ছিলেন। তাদের নাম: (১) রাজা খড়োগাদ্যাম, (২) মহারাজা জাতখড়গ, (৩) মহারাজা দেব খড়গ, (৪) রাজা রাজভ্রট্ট ও (৫) রাজা বলভ্রট্ট। এ বংশের প্রথম তিন রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং পরবর্তী দুই রাজা ছিলেন শৈব হিন্দু। এই শৈব শব্দ থেকে শিব শব্দের উৎপত্তি এবং তা থেকে জায়গাটির নাম শিবপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। পূর্বে এলাকাটি হিন্দু দেবতা শিব পুজার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তাই ধারণা করা হয় হিন্দু দেবতা শিব এর নামানুসারে জায়গাটির নাম শিবপুর নামকরণ করা হয়েছে

ইতিহাস

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শীতলক্ষা, আড়িয়াল খা, পাহাড়িয়া ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর বিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্য লালিত এবং বাঘাব, জয়নগর ও যোশর ইউনিয়নের লালমাটির উচু নিচু, সমতল, ছোট বড় টিলা, টেক ও পাহাড়ের নয়নাভিরাম অরণ্য আবরণে আবৃতে গড়া শিবপুর উপজেলার মানুষের খাদ্যাভাস, আচার-আচরণ ভাষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এ এলাকায় খড়গ রাজাদের শাসন আমল ছিল ৬০০-৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। খড়গ রাজাদের ৫ জন রাজা ছিলেন। তাদের নাম: (১) রাজা খড়োগাদ্যাম, (২) মহারাজা জাতখড়গ, (৩) মহারাজা দেব খড়গ, (৪) রাজা রাজভ্রট্ট ও (৫) রাজা বলভ্রট্ট। এ বংশের প্রথম তিন রাজা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং পরবর্তী দুই রাজা ছিলেন শৈব হিন্দু। পূর্বে এলাকাটি হিন্দু দেবতা শিব পুজার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় শিবপুর উপজেলার সভ্যতা বহুপ্রাচীনন ও ঐতিহ্যবাহী। এই এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে প্রমাপক।

সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে শিবপুর উপজেলার অবদানও অনস্বীকার্য।উপজেলার‘জয়মঙ্গল’ নামে পাহাড়ী গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা।আশ্রাফপুরে আবিস্কৃত হয়েছে সপ্তম শতাব্দীর মহারাজাদেব খড়গের তাম্রলিপি এবং অষ্টধাতুর নির্মিত বৌদ্ধ নিবেদন স্ত্তপ।এই আশ্রাফপুরেই আবিস্কৃত হয়েছে গৌড়ের স্বাধীন নরপতি আলাউদ্দিন হোসেন শাহেরপুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন নসরৎ শাহের রাজত্বকালে নির্মিত একটি অতিপ্রাচীন মসজিদ।

প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনসমূহ

উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কামরাবর ধুপিরটেক গ্রামে বৌদ্ধ পদ্ম মন্দির আবিস্কার করা হয়েছে। আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধ পদ্ম মন্দিরটির স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট দেব খড়গের স্বাক্ষর অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে ৭ম দশকের বলে অনুমতি হয়। ধারনা করা হয় প্রায় ২৫০০ বছর আগে এই জায়গায় বৌদ্ধদের পদ্ম নামে একটি মন্দির ছিল। কারণ এখানে যা পাওয়া গিয়াছে তার মধ্যে ৭০ সেঃ মিঃ দৈর্ঘ্য ও ৭০ সেঃ মিঃ প্রস্থ ইটের দেওয়াল পাওয়া গেছে এবং ওয়ালের পূর্ব দিকে ৩ ফুট দূরে বারান্দার মত আরেকটি ওয়াল পাওয়া গেছে এবং দুই দিকে দুইটি দরজার মত পাওয়া যায়। এই জায়গাটি খননের জন্য বাংলা মাপে প্রায় ৫ গন্ডা জমি ক্রয় করে খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যোশর ইউনিয়নের টঙ্গিরটেক নামক স্থানে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের প্রত্নতাত্বিক প্রচুর নিদর্শন আবিস্কারের পর্যায়ে খনন কাজ চলছে। জানখারটেক এলাকায় প্রত্নতাত্বিক প্রাচীন নিদর্শন আবিস্কারের পর্যায়ে রয়েছে। জয়মঙ্গল পাহাড়ী গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা। আশ্যাফপুরে আবিস্কৃত সপ্তম শতাব্দীর মহারাজাদের খড়গদের তাম্রলিপি এবং অষ্টধাতুর নির্মিত বৌদ্ধ নিবেদন স্তুপ। কুমরাদী গ্রামে লালমাটি এবং প্রাচীন পুরাকীর্তির নমুনা বাংলার সুলতানি আমলের স্থাপত্য শৈলীর এক উজ্জল নিদর্শন। প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী হাড়িদোয়ার পশ্চিম তীরে অবস্থিত কুমারটেক এলাকার প্রায় ১০/১২ হাত মাটির নিচ থেকে প্রাচীন মৃৎপাত্র, ভগ্নটুকরা এবং মাটির তৈরি ছোট ছোট গোলা পাওয়া গেছে। কতিথ আছে এগুলো খ্রিস্টপূর্ব হাজার হাজার অব্দের সময়কালের মৃৎপাত্র এবং শিকারীদের ব্যবহার উপযোগী গোলা।

জনসংখ্যার উপাত্ত

জনসংখ্যা: ৩,১৫,৬৬৭ জন (পুরুষ ১,৫৪,২২৩জন ও মহিলা ১,৬১,৪৪৪জন)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: ১.৩৫ %। জনসংখ্যার ঘনত্ব: ১,৪৫০ জন/বর্গকি:মি:।

অর্থনীতি

শিবপুর উপজেলা মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল তবে টেক্সটাইল কারখানা গড়ে উঠেছে।

চিত্তাকর্ষক স্থানসমূহ

  • সোনাইমুড়ি টেক: শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া বাজারের পাশেই সোনাইমুড়ি টেক বা পাহাড় (Sonaimuri Tek) অবস্থিত। লাল মাটির পাহাড়ি টিলা এবং পাহাড়ের উপর সমতল ভূমিতে বসতবাড়ী সমৃদ্ধ সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সোনাইমুড়ির এ এলাকাটি। এখানে রয়েছে একাধিক লাল মাটির টিলা। টিলার বুকচিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অতিক্রম করেছে। লাল মাটির টিলার উপর থেকে এলাকার মনমূগ্ধকর পাহাড়ি ও সমতলের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। এখানে নাটক ও সিনেমার সুটিং হয়ে থাকে। এখানে রয়েছে পিকনিক ষ্পট ও পার্ক। প্রতিদিন আগত পর্যটকদের উপস্থিতিতে এলাকা জমজমাট হয়ে থাকে। বিশেষ করে সপ্তাহিক ছুটির দিন গুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো|
  • আশ্রাফপুর গায়েভী জামে মসজিদ: শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের আশ্রাফপুর গ্রামে অবস্থিত।
  • শহীদ আসাদের সমাধিস্থলঃ সমাধিস্থল নরসিংদী জেলাধীন শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে শহীদ আসাদের সমাধিস্থল।
  • জমিদার মোহনী মোহন সাহার বাড়ীঃ শিবপুর ইটাখোলামোড়/শিবপুর কলেজ গেইট হতে পশ্চিমে দিকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর সাধারচর গারদ বাজার অবস্থিত।
  • লাখপুর জমিদারবাড়ী
  • ধুপিরটেক বৌদ্ধ পদ্ম মন্দির: শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কামরাব ধুপিরটেক গ্রাম
  • জানখারটেক পুরাকীর্তি
  • কুমরাদী শাহ মনসুরের মসজিদ ও দরগাহ
  • আনন্দ ভবনঃ সৈয়দ নগর, শিবপুর

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে শিবপুর উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই, ২০১৫ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.